হুমায়ুন আহমেদকে নিয়ে অনেক সমালোচনা-ভালোচনা চলে। কিন্তু আমার ব্যাক্তিগত মনোভাব হল,তিনি একজন অসাধারন লেখক। তিনি লেখার একটা খুব সহজ স্টাইল এনেছিলেন যা আমার মত স্বল্পবুদ্ধির পাঠকদের জন্য খুব উপাদেয়!তাছাড়াও তাঁর প্রথমদিককার উপন্যাস যেমন শঙ্খনীল কারাগার,নন্দিত নরকে বইগুলো তো এক কথায় অসাধারন। আর মিসির আলী,হিমুর কথা তো নতুন করে বলার কিছু নেই। হিমুর একটা ক্রেজ তৈরি করা কি সবার জন্য সম্ভব??
কিন্তু কালের প্রভাবে,প্রকাশকদের চাপে এবং অনেকটা হয়ত অর্থের মায়াতেও এই লেখকই একের পর এক বই লিখতে লাগলেন বানিজ্যিকভাবে।
আসলে যে লেখাটা স্বতঃস্ফুর্তভাবে আসে,আর যা কোন চাপে পড়ে লেখা হয়,দুটোর মান কখনোই এক হতে পারে না তা লেখক মাত্রই জানেন!তাই দিনকে দিন একজন ভালো লেখকের ভালো ভালো লেখা হতে আমরা বঞ্ছিত হচ্ছিলাম। (এভাবেই অনেক খ্যাতিমান লেখকের লেখার মান নেমে যেতে থাকে!)
আমাকে যখন কেউ বলত,বইমেলায় এবার কার বই কিনবে,আমার লিস্টে কখনই হুমায়ুন আহমেদ এর নাম আসত না। মিসির আলীর মত সিরিজের খোজ নেয়াও বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এই লেখকের সাথে আমার যোগাযোগ ছিল শুধু ঈদের নাটক পর্যন্তই। কিন্তু এক সময় দেখলাম সেটার মানও নিম্নদিকে ক্রমবর্ধমান !খুব খারাপ লাগত নিজের একজন প্রিয় লেখকের এ হেন অবস্থা দেখে।
কারন জানি যে তিনি চাইলেই অসাধারন কিছু লিখতে পারেন,যা তিনি চেষ্টা করছেন না। তিনি তখন অর্থ আর খ্যতির মোহে বিভ্রান্ত,পথভ্রষ্ট!আর কখনো তার সেরকম লেখা পাব কিনা,কিংবা পড়া হবে কিনা ভেবে হতাশ হতাম।
তারপরও হঠাৎ কখনো বোনের বাসায় বেড়াতে গেলে হয়ত তার নতুন বইয়ের এক ঝলক দেখা হয়ে যেত। কারন আমার বড় বোন আর ভাগ্নে বইমেলায় যায়ই শুধু হুমায়ুন আহমেদ এর বই কিনতে!!অন্য আর কোন লেখকের বই তারা পড়ে কিনা সন্দেহ!!আমিও টাইম পাস হিসেবে বেড়াতে গিয়ে দুই একটা নেড়ে চেড়ে দেখতাম। কিন্তু বাসায় এনে পড়ার কথা ঘুনাক্ষরেও মনে আসত না!কারন,আমার কাছে এটা সময় নষ্ট ছাড়া কিছু ছিল না!বাংলাদেশী নাটকগুলোর মতই যেন তার বইও থাকত ভাঁড়ামি পূর্ণ।
কিন্তু এবারের বইমেলায় আমি অন্যরকম ভাবছি। কোনবার যা ভাবি না,এরকম হবেও কোন দিন যেখানে ভাবিনি,এবার সেটাই করতে যাচ্ছি। অর্থাৎ এবার আর কারো বই কিনি বা না কিনি,হুমায়ুন আহমেদ এর সবক'টি বই কেনার চিন্তাভাবনা নিয়েই বইমেলায় যাচ্ছি । কারন তার এই দুঃসময়ে আমি তার পাশে দাড়াতে চাই। জানি এই লেখকের আত্মসম্মান অত্যন্ত বেশি।
তিনি অনেক গন্যমান্য ব্যাক্তিকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তার যে অসাধারন কিছু বই এবং অনন্য স্বকীয়তা,যা বাংলা ভাষায় অনেক লেখকই দিতে পারেন নি,সে কথা স্মরন করেই তার প্রতি আমার এই শ্রদ্ধাঞ্জলী। একজন পাঠক হিসেবে এর বেশী কিছু দেয়া তো সম্ভব নয় । যদিও সেই হুমায়ুন আহমেদকে হারিয়ে ফেলেছি কালের চক্রে,যিনি আমাদের চিনিয়েছিলেন এক নতুন সাহিত্যর সম্ভার!যদিও তার বই আর আগের মত পড়া হয় না। কিন্তু সাহিত্যে তার অবদান তো অনস্বীকার্য! তাই আমার মত অন্য পথে চলে যাওয়া পাঠকের এ সামান্য প্রয়াস তার পাশে দাড়ানোর,তার এই দুঃসময়ে।
শুধু সেই স্বর্ণ যুগের কথা স্মরন করেই আমার এই শ্রদ্ধার্ঘ!
[আমার পোস্ট পরে অনেকেই মত দিয়েছেন যেন করুনা প্রকাশ না করি। সত্যি বলতে আমি নিজেও বুঝিনি যে লেখাটার মধ্য দিয়ে করুনা প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু সবার মতামত পড়ে যখন নিজের ভুল বুঝতে পারলাম তখন নিজের বিবেকের কাছেই খারাপ লাগল। কারন লেখকের লেখা আজকাল পড়ার যোগ্য না হলেও একসময় তিনি যা লিখতেন এবং যে স্বকীয় ধারা তিনি সৃষ্টি করেছেন,তার অবদান কখনই অস্বীকার করা যাবে না!আর তাই তার বই না পড়লেও তাকে অসাধারন লেখক হিসেবে মেনে এসেছি সবসময়ই। সুতরাং তার আত্মসম্মান হানি হয় এমন কিছু করা আমার উচিত নয়!বিশেষ করে যে মানুষটির প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল তার এই আত্মসম্মানবোধের কারনে,সেই মানুষটিকে আর যাই হোক,এভাবে হেয় করা আমার উচিত হয়নি।
আমি তাই সত্যিই দুঃখিত আমার পূর্বের পোস্টের কারনে যা অনেকের অনুভুতিকে আঘাত করেছে!!শুধু এটুকুই বলব যে যা ছিল তা ইচ্ছাকৃত ছিল না। মনে যা ছিল কিংবা যা বলতে চেয়েছিলাম,তার প্রকাশভঙ্গিটা সঠিক ছিল না!তাই একটু পরিবর্তন করে নিলাম। আসলে এমন একজন লেখককে করুনা করার উদ্দেশ্যে কিছু লেখার ইচ্ছে কখনোই ছিল না। বরং এ প্রসঙ্গে বলতে পারি,এই লেখকের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বেড়ে গিয়েছিল সেইদিন,যেদিন দেখলাম সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলতে এবং আবুলকে নিয়ে রম্য রচনা লিখতে তিনি একবারো ইতস্তত করলেন না। সরকারের অনুদানে যে তিনি নুয়ে পড়েন নি সেটা দেখেই তার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছিল শতগুন।
কিন্তু তারপরো তার বই পড়ার ইচ্ছা আমার হয়নি,এটাও সত্য। কারন পাঠক হিসাবে আমি স্বল্প বুদ্ধির হলেও কিছুটা সুক্ষ্ম রুচির তো বটেই। যা পেলাম তাই খেলাম এটা পারি না কিছুতেই। আর সেকারনেই,আজ যদি তার সব বই নির্দ্বিধায় কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করি তো সেটা তার প্রতি ভালোবাসা থেকেই,করুনা থেকে নয়। আর তিনি সেই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যও ।
যারা আমার চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ,তানাহলে আমার করুনার প্রকাশভঙ্গী এই অসাধারন লেখকের সম্মানহানী হত বলে আমি মনে করি। ]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।