বেশী কিছু লিখার নেই..কারণ বেশী কিছু জানাও নেই। । সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করতে চাওয়ার প্রসংগে অনেকেরই প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম আজ দুপুর থেকেই, সেই প্রেক্ষিতে একটা গল্প মনে পড়ে গেল, এবং গল্পচ্ছলেই মনে পড়ে গেল বেশ কিছু কথা, কিছু দ্বায়িত্ব....
তখন সবেমাত্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে...হিরোসিমা, নাগাসাকির পতন সহ জাপানের তখন সামরিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো একেবারে মুমুর্ষু প্রায়....চারিদিকে হাহাকার, অভাব আর ক্ষুধা... সেটা এতটাই যে এক টুকরো রুটি বিতরণ করার যে লাইন সেটা গিয়ে দাঁড়ায় দুই / আড়াই মাইল লম্বায় । এই অবস্থা দেখে এক বিশ্বনেতা বললেন জাপানের রুটির লাইনে দাঁড়ানো এক মানুষকে , “ তোমাদের অবস্থা তো খুবই খারাপ , তোমরা আবার কি কোনদিন দাড়াতে পারবে ? ”
লোকটার কোলে ছিল সদ্য মা হারা এক শিশু । সেই বাচ্চাটা হয়তো কথাটার কিছুই বুঝতে পারেনি সেদিন , কিন্তু রুগ্ন সেই শিশুটা সেদিন কিছু না বুঝেই বাবার কোল থেকে পিছলে নেমে হামাগুড়ি দিয়ে দাড়িয়ে আধো এক হাসি উপহার দিয়েছিল সেই প্রশ্নকর্তা বিশ্বনেতাকে সেদিন ।
আজ সেই জাতির মাথাপিছু গাড়ীর সংখ্যা তিনটি । কোনরকম খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য না থাকার পরেও আজ তাঁরা শুধুমাত্র নিজেদের ইচ্ছা ক্ষমতার জোরে পৃথিবীর অন্যতম বড় শক্তি । যাদের মাথাপিছু গড় আয় শুধুমাত্র ৩৫ হাজার ডলার এরও বেশী নয় বরং পৃথিবীর সামষ্টিক উন্নয়নের অন্যতম বৃহত্তম অংশীদার। ।
কর্মসুত্রে এবং তার বাইরেও বেশ কিছু জাপানীকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি ।
শুধু তারা নয়, বরং তাদের সাথে যারা কাজ করেন, তাদের মধ্যেও সেইকর্মনিষ্ঠাই আমি দেখতে পাই...
একদিন কথাচ্ছলে এক জাপানী বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, আমাদের দেশটা তোমাদের মত কবে হবে?
তার নিপাট উত্তর ছিল- "তোমাদের যা আছে সেটা দিয়ে আমাদের মতো অনেকগুলো জাপান গড়তে পারবে যদি তোমরা চাও । "
সাপ্তাহিক ছুটি একদিন করতে চাওয়ার সিদ্ধান্তকে অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হবে এটা যেমন অনিবার্য সত্য, তেমনি রাজনৈতিক হানাহানি আর বিদ্বেষের কারণে প্রায় ভঙ্গুর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর বৈপ্লবিক চ্যালেন্জ নয়, বরং ভঙ্গুর অবস্হা থেকে কিছুটা স্থীতি এবং অত:পর প্রগতির পথে এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে সেটা হবে অন্যতম প্রথম চ্যালেন্জ...আরেকটা কর্মদিবস মানে আরেক দিন হরতাল ডাকার সুযোগ, এ কথা ভূলে যাওয়াটা উত্তম হবে নিন্দুক ও নৈরাজ্যবাদীদের...
আমার জানামতে অনেকেই আছেন যারা সপ্তাহে নিভৃতে ৩৭.৫ ঘন্টার জায়গায় ৭০ ঘন্টা কাজ করে চলেছেন...শুধুমাত্র এই তালিকায় আরও সমসংখ্যক লোক দরকার...একটু একটু করে আমার, আপনার দেশটাকে এগিয়ে নেবার জন্য.....অগ্রগতির টানে বাকীরা নিজ থেকেই আসবে.......তবে সেটা শুধু কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত হবার জন্য নয়...নিজের উপর অর্পিত দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য......এবং বাস্তবতা বলে, কিছু কুলাংগার কখনই আসবে না এবং সম্ভবত তারাই এখনো সংখ্যাগরিষ্ঠ...
সংগত কারনেই বিল গেটসের একটা উক্তি চলে আসে সামনে, যে "IF YOU BORN POOR, IT'S NOT YOUR MISTAKE; BUT IF YOU DIE POOR, IT'S YOUR MISTAKE".....
আমরাও পারি অনেকগুলো জাপান গড়তে, যদি আমরা চাই, এবং একথা শুধু আমরা নই, সারা বিশ্ব যখন জানে.. তখন তা প্রমাণ করার, এবং নিজেদের ও আমাদের পূর্বপুরূষদের "MISTAKE" মোচনের দ্বায়িত্ব যে আমাদেরই...... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।