The only person u should try to be better than, is the person u were yesterday.
এই সপ্তাহের প্রথম দিন শুরু হয়েছিল আমার সকাল ৯ টা কি ১০টা থেকে। আমি, অর্পন আর রিজভী ঘুমিয়েছিলাম আমার রুমের সেমি ডাবল খাটটাতে আড়াআড়ি ভাবে। তার আগের দিন রাতে ঘুমাতে ঘুমাতে বেজে গিয়েছিল সকাল ৬টা। যদিও সেদিন রাতে আমি কিছুই করি নাই, পিসিতে বসে ফুটবল খেলছিল অর্পণ দাদা, আর রিজভী। আর আমি শুয়ে শুয়ে তখন মোবাইলে গুঁতাগুঁতি করছিলাম আপন মনে।
আমার কিছু মেজের সমস্যার মধ্যে একটা সমস্যা হচ্ছে, আমি ঘুমানো অবস্থাতেও আশেপাশের সকল প্রকার শব্দও খুব ভালোভাবে শুনতে পাই। যেসব শব্দের সাথে পরিচিত থাকি, ওসব শব্দে আমার ঘুমের কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু অপরিচিত নতুন কোনো শব্দ শুনতে পাওয়া মাত্র আমার ঘুম চট করে ভেঙ্গে যায়। কেউ যদি চুপ চাপ করেও রুমে ঢুকে, সেক্ষেত্রেও আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। একটা মজার জিনিস কি জানেন, মনে করেন আপনি আমার রুমে জেগে আছেন, আর আমি ২ ঘন্টা ধরে ঘুমাচ্ছি।
এখন মনে করেন সেই সময় আপনি আমাকে একটা প্রশ্ন করলেন... আমি কিন্তু সাথে সাথেই আপনার প্রশ্নের জবাব দিয়ে দিব। আপনি বুঝতেও পারবেন না, আমি কি আদো ঘুমাচ্ছিলাম নাকি না। আর এই কারণেই ফেব্রুয়ারী মাস থেকে আমাকে গড়ে ৫-৬ ঘন্টার মতো ঘুমাতে হচ্ছে। কারণ আমার বন্ধু রিজভী গত ফেব্রুয়ারী থেকে আমার সাথে থাকছে, আর সে ভোর ৫ টা ৬ টার আগে ঘুমাতেই যায় না। আর আমাকে ঘুম থেকে উঠতে হয় সকাল সাড়ে ছয়টা কি সাতটায়।
প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় আসার পথে ভাবি আজ বাসায় যেয়ে ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পরবো। তারপর ফাও আলাপ, রাতের খাবারে অপেক্ষা আর বিড়ি টানতে টানতে বেজে যায় ১১ টা। তারপর ১১ টা ৩০ থেকে শুরু হয় আমার ঘুম আয় আয় অবস্থা। এই আয় আয় করতে করতেই বেজে যায় ১ টা... যাইহোক শুক্রবারে আমার যেহেতু অফিস নাই, আর অফিস যেহেতু নাই, তাহলে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠার কোনো বাধ্যবাদকতা নাই, আর যেহেতু বাধ্যবাধকতা নাই, সেহেতু যেমন খুশী তেমন সাজোর মতো যখন খুশী তখন ঘুমাও নীতিতে ঘুমিয়েছিলাম সকাল ৬ টায়। ভেবেছিলাম উঠবো অনেক লেট করে... কিন্তু আফসোস... বড়ই আফসোস... ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল সকাল ৯টায় !!
শুক্রবার
শুক্রবারে দেখেছিলাম The Curious Case of Benjamin Button।
চলচিত্রটি একটা অসাধারণ কনসেপ্ট এর উপরে দাঁড় করিয়ে বানানো হয়েছে। আমার জীবণে আমি এই ধরণের কনসেপ্ট নিয়ে এই পর্যন্ত কোনো ছবি দেখিনি, সামনেও হয়তোবা দেখবো না। ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছে ব্রাড পিট, আর তা পরিচালনা করেছে ডেভিড ফিঞ্চার। ডেভিড ফিঞ্চারকে চিনেছেন তো ?
Fight Club, Seven, The Girl with the Dragon Tatto, The Social Network, Panic Room, The Game, Zodiac এর মতো অসাধারণ সব চলচিত্রের পরিচালকের নাম হচ্ছে ডেভিড ফিঞ্চার। আর তার পরিচালনার কথা কি বলবো !! যারা তার একটা ছবিও দেখে থাকবে তাঁরা ভালোভাবেই বুঝতে পারবে তার ক্যামেরার পিছনের চোখ কি জিনিস।
তার প্রতিটি ছবি দেখতে বসলে আপনি একটা টান অনুভব করবেন, যে টানের কারণে আপনার বার বার ইচ্ছে করবে জানতে যে মুভির শেষাংশে কি চমক অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। আর শেষে যেই চমকটা পাবেন... আমি তা হরফ করে বলতে পারি আপনি তা কল্পনাও করেন নি কখনো। আর এই ডেভিড ফিঞ্চারই পরিচালনা করেছে চলচিত্রটি।
ছবিটি শুরু হওয়ার একটু পরেই বুঝতে পারলাম এর গল্প কোনো না কোনো লেখকের গল্প থেকে নেওয়া। তা না হলে এতোটা নিখুত হতে পারে না কোনো স্ক্রিপ্ট।
তাই মুভিটা পজ দিয়ে নেটে যেয়ে দেখলাম কোথা থেকে স্ক্রিপ্টটা নেওয়া। দেখলাম ছবির কনসেপ্ট নেওয়া হয়েছে ১৯২২ সালে প্রকাশিত হওয়া ছোটগল্প অবলম্বনে। ছোটগল্পটার নাম অনুসারেই মুভিটির নাম রাখা হয়েছে The Curious Case of Benjamin Button।
গল্পটি ডাউনলোড করতে পারবেন নিচের এড্রেস থেকেঃ Click This Link
তারপর আবার শুরু করলাম দেখা,... মুভিটি শুরু হয়েছে... আমি যদিও সাবটাইটেল সহকারে মুভিটি দেখছিলাম তারপরও একটু পর পর ব্যাকওয়ার্ডে টেনে টেনে ডায়ালগ গুলো শুনতে হচ্ছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম খুব ভালোভাবেই কিন্তু ডায়লগ গুলো একটু পর পর এতো ভালো লাগছিল যে, বার বার টেনে টেনে দেখছিলাম।
ঠিক যেই কাজটা করেছিলাম Forest Gump মুভিটা দেখার সময়। তাই একসময় আগ্রহবোধ করলাম স্ক্রিপ্ট রাইটার কে নিয়ে। তাই আবার পজ দিলাম মুভিটির কিছু যাওয়ার পর। দেখলাম মুভিটির স্টোরিলাইন লিখেছে “Eric Roth" আর "Robin Swicord"। এখন বলেন "Eric Roth" কে চিনেছেন তো ?
"Eric Roth" ই হচ্ছে ফরেস্ট গাম্প মুভির স্ক্রিনরাইটার।
যে মুভির জন্য সে ১৯৯৪ সালে অস্কার পেয়েছিল। আর আরেকটা জিনিস বলে রাখা ভালো, আর তা হচ্ছে, আপনি মুভিটার মাঝামাঝি এসে লক্ষ্য করবেন যে মুভিটার সাথে ফরেষ্ট গাম্প মুভির একটা ছাপ রয়েছে। আর অনেক কিছুই মিলাতে পারবেন হয়তো। কি কি মেলাতে পারবেন তা আর বলতে চাচ্ছি না, না হয়তো রিভিউতে স্পয়লার হয়ে যাওয়ার একটা আসংখ্যা থেকে যেতে পারে। তাই আমি শুধু শুধু রিস্ক নিতে চাচ্ছি না।
এখন মুভিটার বিভিন্ন উল্ল্যখযোগ্য দিক নিয়ে কথা বলা যাক। প্রথমেই যে দিকটি লেখার জন্য হাতটা নিশপিশ করছে, তা হলো এই ছবির মেকাপ এবং ভিজুয়্যাল ইফেক্টস এর কাজ। ছবির প্রচ্ছদে বা পোস্টারটি লক্ষ্য করলে আপনি দেখবেন সেখানে ব্রাড পিট আর কেট ব্লাঞ্চেট এর মুখের ছবি দেওয়া। আমিও মুভিটা শুরু করার আগে পোস্টার দেখেছিলাম। তাই মুভিটা দেখা শুরু করার পর থেকেই ব্রাড পিট কে খোঁজা শুরু করলাম।
এক পর্যায়ে এসে আবার মুভিটা পজ দিলাম। এবার কোন ক্যারেক্টারে কে কে অভিনয় করেছে তা দেখার জন্য IMDB তে গেলাম। এবং আমি যেয়ে মোটামোটি অবাকই হয়েছিলাম। কারণ এতোক্ষণ ধরে যে কেন্দ্রীয় চরিত্র ফুটে উঠেছিল মুভিতে, সে ই কিনা ব্রাড পিট !!। কিন্তু আমি বুঝতেই পারিনি তখনো।
টিনের চালে কাক, আম তো অবাক !!
আমি নিশ্চিত আপনিও অবাক হবেন... শুধু একবার নয় বরং বার বার... মুভিটির পরতে পরতে চমকিত হবেন, এবং মনের অজান্তেই মনে মনে তালি দিয়ে উঠবেন ভিজুয়াল ইফেক্টস আর মেকাপের অসাধারণ কারসাজি দেখে। এবং এজন্যই মুভিটি ৮১তম এক্যাডেমি এওয়ার্ডসে ১৩ টি ক্যাটাগরির মধ্য হতে ৩ টি ক্যাটাগরিতে অস্কার পায়। আর এই তিনটি ক্যাটাগরির মধ্য হতে Best Makeup এ একটি আর Best Visual Effects এ একটি করে অস্কার পায় মুভিটি। কেন এই দুই ক্যাটাগরিতে পেলো তার উত্তর আপনি মুভিটি দেখার পর অবশ্যই ধরতে পারবেন।
মুভির সারসংক্ষেপ:
মুভিটি শুরু হয় মৃত্যু পথযাত্রী এক বৃ্দ্ধা আর তার মেয়ের কথোপকথন মধ্য দিয়ে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে বৃ্দ্ধা তার মেয়ে ক্যারোলিন কে বলে ‘বেঞ্জামিন বাটন' নামক এক ব্যাক্তির ডায়েরি পড়ে শোনানোর জন্য। আর ক্যারোলিনের পড়ে শোনানোর মধ্য দিয়েই আস্তে আস্তে পর্দায় ফুটে উঠে বেঞ্জামিনের জন্ম থেকে শুরু করে তার পরবর্তী জীবণের অধ্যায়গুলো। ডায়েরিটি ক্যারোলিন পড়া শুরু করলেও আস্তে আস্তে বেঞ্জামিনের নিজের কন্ঠস্বর ভেসে উঠে গল্পের কথক হিসেবে...
বেঞ্জামিন জন্মেছিল বিদঘুটে চেহেরা এবং অঙ্গ নিয়ে। তার চামড়া এবং অঙ্গ প্রতঙ্গের ধরণ ছিল ৭০ উর্দ্ধো বয়ষ্কের মতো। তার মা তার জন্মের কিছুক্ষণ পরেই মারা যায়।
আর তার বাবা তাকে সেদিনই ফেলে রেখে আসে একটা নার্সিং হোমের সিড়িতে। নার্সিং হোমের কর্মী ‘Queenie’ এবং Tizzy" Weathers তাকে খুঁজে পায়। আর নিঃসন্তান Queenie সিদ্বান্ত নেয় যে বাচ্চাটাকে সে নিজের মনে করে বড় করে তুলবে। মায়ের ভালোবাসায় দূর্বল ও বৃদ্ধ (!!) বেঞ্জামিন বড় হতে থাকে নার্সিং হোমে। বেঞ্জামিনের বয়স যখন চার বছর, তখনই সে বৃদ্ধদের মতো হুইল চেয়ারে ঘুড়াঘুড়ি করতে হতো দূর্বল জোড়া হাত নিয়ে।
যদিও তার বয়স ছিলো ৪, তারপরও তাকে দেখতে এবং চলাফেরা ছিল বৃদ্ধদের মতো। আস্তে আস্তে তার বয়স বাড়তে থাকে, আর সাথে সাথে তারও শারিরীক পরিবর্তন দেখা দিতে থাকে... কমতে থাকে তার বয়স... !! তারপর !!
শনিবার
গতকাল অফিসে সবার সাথে ভাব ধরে বসেছিলাম। আমি সাধারণত সব সময়ই ফাজলামি করি সবার সাথে, কিন্তু গতকাল ছিলাম একেবারেই চুপ-চাপ। আমার ল্যাপটপ নিয়েই সারাদিন অফিসে পরেছিলাম একাকি... চুপচাপ থাকার পিছনে কোনো আলাদা কারণ ছিলো না। আমার মনে হয় সবার সাথেই মাঝে মাঝে এরকম হয়... যখন হয় তখন আর কারো সাথেই কথা বলতে ইচ্ছে করে না, এমন কি নিজের সাথেও না।
সেই সময়টাতে কোনো কিছু যেমন ভালোও লাগে না, তেমনি কোনো কিছু তেমন খারাপও লাগে না। শুধু মনে হয় সময় আসছে, সময় যাচ্ছে... ১ টা... ২ টা... ৩ টা... ৫টা... ৭টা...
...ঠিক ৭ টা ১০ এ আমি অফিস থেকে বের হয়েছিলাম। অফিস থেকে আমার বাসা দূর আছে যেমন আবার কাছেও আছে তেমন। চার পাঁচ ভাবে এবং রাস্তায় আমার বাসায় যাওয়া সম্ভব। আমার বাসা মেরুল বাড্ডায় বোদ্ধ মন্দিরের বিপরীত পাশে, আর আমার অফিস কাওরানবাজার সোনারগাঁও হোটেলের মোড়ে।
মালিবাগ, হাতিরঝিল, মহাখালী, এই তিন রুটেই আমার বাসায় যাওয়া যায়।
রুট ৪: বাংলা মটর-মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ রেলগেট-রামপুরা-মেরুল বাড্ডা
মোট পথঃ ৬.০৬ কি.মি.
এখন আমি যদি মৌচাক-মালিবাগ রেলগেট হয়ে বাসায় যাই, তাহলে আমাকে প্রথমে ৬ নম্বার বাসের জন্য অপেক্ষা করা লাগবে অফিসের সামনে থেকে। ৬ নাম্বার বাসের আবার A, B, C তিন ক্যটাগরির বাস আছে। আমার অফিসের সামনে থেকে ৬ নাম্বারের C আমাকে মৌচাক নামিয়ে দিবে (যদি ৬ নাম্বার বাসের তব দেখা পাই, এবং উঠিবার সুযোগ পাই)। তারপর মৌচাক থেকে সুপ্রভাত/ বন্ধু/ ভিক্টর পরিবহণ/ এ দস্তা দস্তি করে উঠা লাগবে (যদি উঠিবার সুযোগ পাই)।
তারপর বান্দর ঝোলা ঝুলতে ঝুলতে সোজা বাসার সামনে নামতে হবে। এখন কথা হচ্ছে মোট কতক্ষণ লাগবে এই রুটে আসতে ?
৬ নাম্বার বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হবে গড়ে ১৫ মিনিট (কমে), তারপর মৌচাক পৌঁছাতে লাগবে ২০ মিনিট (কমপক্ষে)। তারপর মৌচাক থেকে মেরুল পৌঁছাতে লাগবে ৩০ মিনিট (সর্বোচ্চ)। তারমানে এই রুটে এভাবে আমার বাসায় যেতে সময় লাগে ১ ঘন্টা ১০ মিনিট থেকে ১৫ মিনিট।
রুট ৩: এফডিসি-৭ রাস্তার মোড়-মহাখালী-গুলশান ১-বাড্ডা লিঙ্ক রোড- মেড়ুল
মোট পথঃ ৭.৫২ কি.মি.
অফিসের প্রায় সামনে থেকেই বসুন্ধারা সিটির সামনে হয়ে এফডিসি ক্রস করে মহাখালী আমতলী পার হয়ে গুলশান-১ দিয়ে যেয়ে লিঙ্ক রোডের মোড়ে যদি আমি এক গাড়িতে ঝুলে নামতে চাই... তাহলে আমাকে উঠতে হবে ‘উইনার’ এ।
‘উইনার’, ‘দিবানিশি’ এগুলা হচ্ছে ঢাকা শহরের নামকরা বাস সার্ভিস। এদের দেখা আপনি ঘন্টায় একবার করে পাবেন... তারপর আবার হাওয়া !!! এক্ষেত্রে ‘দিবানিশি’ কে নামকরণের সার্থকতা রক্ষার জন্য পুরস্কার দেওয়া উচিত। এদের বাস ‘দিবা’ তে যায় আবার ‘নিশি’ তে আসে। যদিও দিবানিশি আগে বসুন্ধারা সিটি হয়ে যেত বনশ্রীতে, তবে এখন আর তা যায় না। তো যাইহোক যেটা বলছিলাম আরকি, রুট ২ দিয়ে যদি আমি বাসায় পৌঁছাতে চাই, তাহলে এক হয় আমাকে উইনার এ চেপে যেতে হবে (যা আশা করা বোকামি হবে) আর না হয় এই রুটেও ভেঙ্গে ভেঙ্গে আমাকে লিঙ্ক রোড যেতে হবে।
রুট ২: বিএফডিসি-হাতিরঝিল-মেরুল
মোট পথঃ ৫.৭৭ কি.মি
এই রুটের নাম হচ্ছে হাতিরঝিল রুট। সিএনজি কে ডাক দিবো, দরকষাকষি করে ৮০-১০০ টাকার মধ্যে রাজি করাবো... আর তারপর ১০ মিনিটের মধ্যে বাসায়!! আপাত দৃষ্টিতে এই রুট টাকে বেষ্ট মনে হলেও, আমার বর্তমান ফকিরাবস্থার জন্য এই রূট অনেকাংশে দায়ী। গত ৩০ দিনে ৪০ বারের মতো সিনজিতে আসা যাওয়া করে আমি এখন নিঃস্ব !!
রুট ১: বিএফডিসি-কাওরানবাজার রেললাইন-মগবাজার রেললাইন-মালিবাগ রেললাইন-রামপুরা-মেরুল
মোট পথঃ ৫.১৯কি.মি
এই রুট আমি আবিষ্কার করছি গতকাল, রাস্তার ডিরেকশন মাথায় অবশ্য ঢুকিয়ে দিয়েছিল ‘অর্পন’ দাদা। অর্পন দাদা আবার উত্তরা মটরস এর ইস্কাটন ব্রাঞ্চে আছে। সে অবশ্য বলেছিল সন্ধ্যার আগে এই রূট ব্যবহার করতে, আর না হয় ছিনতাইকারীর হাতে পরে পেটের সেলাই কাটানোর আগেই আরেকবার সেলাই করাইতে হবে... আমি এই পর্যন্ত ছিনতাইকারীর হাতে পরে নাই, তাই ছিনতাইকারীর হাতে পরা আমার জন্য কিছুটা হলেও থ্রিলারজনিত ব্যাপার।
সে আশা নিয়েই হোক, আর ৬ নাম্বার বাসের অপেক্ষাতে বিরক্ত হয়েই হোক আমি শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে কাওরানবাজার রেললাইন ধরে সোজা হাটা ধরেছিলাম। ছিন্তাইকারীর ভয় তো দূরের কথা, এক মূহুর্তের জন্যেও একা মনে হয়নি নিজেকে। আমার মতোই অনেক মানুষ রেললাইন ধরেই হেটে হেটে যাচ্ছিল। আর রেল লাইনের দুপাশেও অসংখ্য মানুষ বিচ্ছিন্নভাবে জড় হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিল।
রেললাইন ধরে হাটার সময় একটা জিনিস খুব ভালোভাবে অনুভব করলাম।
আর তা হচ্ছে আমি যখন রেললাইনের এক একটা পাটাতন ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম, আমার ভিতরে একটা মোহ কাজ করছিল। একটা নেশা নেশা লাগছিল... মোহচ্ছন্নভাবটা আরো জেঁকে বসেছিল রেললাইনের আশপাশের পরিবেশ দেখে। কাওরানবাজার রেল লাইন ধরে যখন আপনি হেটে যাবেন তখন দেখবেন, ডান পাশে সারি বেধে ছোকড়া থেকে শুরু করে থুড়থুড়ে বৃদ্ধ পর্যন্ত ক্যারাম খেলছে। একটা দুইটা বোর্ড না বরং সারি বেধে রাখা ক্যারাম বোর্ড রয়েছে সেখানে। কিছু কিছু জায়গায় দেখলাম আবার টিনশেডের ছাউনি তোলা ঘরের মতোন জায়গায় খেলছে সবাই।
মনোযগ দিয়ে খেলার পাশাপাশি মনোযোগ সহকারে যে তারা আর একটা জিনিস খুব ভালোভাবে করছিল তা আমি খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম, আর তা হচ্ছে ‘গঞ্জিকা’ সেবন।
আবার যখন মগবাজার রেলগেইট পাড় হলাম তখন আবার দেখলাম রেললাইনের পাড় ঘেঁষেই ছোট ছোট অনেক বাসা। ভদ্রলোকের ভাষায় বললে বলতে হবে ‘বস্তি’। এই বাসাগুলোর মধ্যে একটা বাসা খুব ভালোভাবে আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছিল। অবশ্য বাসা বললে ভুল বলা হবে, বলতে হবে বাসার সামনে বসানো চুলাটার কথা।
যে মাটির চুলার পাশে বসে একজন নারীকে দেখেছিলাম রান্না করতে। পাশ ঘেঁষে যখন হেটে যাচ্ছিলাম তখন ইচ্ছে করছিল খুব তাকে জিজ্ঞাসা করি তার প্রিয় মানুষটির জন্য কি রান্না করছে আজ রাতের খাবার। তার কাছের মানুষটি হয়তো এখনো বাসায় ফিরেনি, অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তার জন্য... রেলগাড়ি আসে... রেলগাড়ি যায়... তবুও হয়তোবা তার প্রিয়জন আসে না...
রবিবারঃ
গতকাল অফিসে সারাদিন ছিলাম বলতে গেলে একাই, আমরা ৪ জন কলিগের মধ্যে মাত্র ২ জন ছিলাম। বাকি দুই জনের ভার্সিটিতে ফাইনাল এক্সাম চলছে। সারাদিন ধরেই একা ছিলাম।
উল্ল্যেখযোগ্য কিছুই হয়নি সেদিন... আপলোড করেছিলাম বেশ কিছু ফিল্ম আর ই-বুক... লিঙ্ক পেতে চান ? আচ্ছা দিচ্ছি...
(আগেই বলে দিচ্ছি লিঙ্ক শো না করলে আমাকে গালাগাল করবেন না। প্রয়োজনে এই লিঙ্ক (Click This Link) থেকে পুরো পোষ্ট সুস্থ অবস্থায় পাবেন
১। Anisul haque: http://www.mediafire.com/?85ijll9r78vxb
২। Buddha dev ghuho: http://www.mediafire.com/?tcgku5l3wzq6e
৩। Drubo Esh: http://www.mediafire.com/?zs6vf8ihi7bk6
৪।
educational: http://www.mediafire.com/?f3og2g383ekmg
৫। Humayun Ahmed: http://www.mediafire.com/?15bvkhlioldu7
৬। Humayun Ajad: http://www.mediafire.com/?q0ltbondq3kcp
৭। Jafor Iqbal: http://www.mediafire.com/?owd6duzeib5bl
৮। Rabindranath Tagor: http://www.mediafire.com/?klar8mi39g12p
৯।
Rafiqun Nabi: http://www.mediafire.com/?owl8lcd99w19p
১০। Recipi's Book: http://www.mediafire.com/?xdr9lchrnu9dz
১১। Sathayjit Roy: http://www.mediafire.com/?q396yrln1l5nb
১২। Shirshendu: http://www.mediafire.com/?sbkokvtabvq8t
১৩। suchitra b: http://www.mediafire.com/?ui03qcxqozpxw
১৪।
Sukumar Roy: http://www.mediafire.com/?ijd64jmad542f
১৫। Sumonto Aslam: http://www.mediafire.com/?k47t2e7uc0mfa
১৬। Sunil Gangopadhyay: http://www.mediafire.com/?4khp7fq7z6hdr
১৭। Taslima Nasreen: http://www.mediafire.com/?0rgcvigcymctg
১৮। western onubad: http://www.mediafire.com/?vpl4c45cpc66l
মুভিঃ
১।
9 (Animation) Blurey Rip: http://www.mediafire.com/?c4a7p33jbf5uc
২। Cars (2006-Animation) Blurey Rip: http://www.mediafire.com/?gqjgujfjsz42u
৩। Dragon Hunters (Animation): http://www.mediafire.com/?qutduvo1q3b10
৪। Hotel Transylvania (2012) (Animation): http://www.mediafire.com/?9vkeien5i7d95
৫। Life of Pi Blyrey Rip: http://www.mediafire.com/?3oba749ebaf3c
৬।
Rio (blurey- Dual Audio): http://www.mediafire.com/?9461rf7k7pjt5
৭। Sherlock Holmes (2009) (Blurey Rip): http://www.mediafire.com/?eav3508asum08
৮। Sherlock Holmes- A Game of Shadows (BluRey Rip): http://www.mediafire.com/?hsbzymfvv2cuh
৯। Shrek 2001 (Blurey Rip): http://www.mediafire.com/?42v959vaj2kvg
১০। The Dark Knight Rises (2012) (BluReY Rip): http://www.mediafire.com/?3i8q9to26eka4
মুভিগুলো ফাইল স্লিটার দিয়ে ভাগ করে আপলোড করা হয়েছে।
তাই জোড়া লাগিয়ে দেখতে হলে নিচের লিঙ্ক থেকে ১ এমবির ফাইল স্প্লিটার সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে হবে। লিঙ্কঃ Click This Link
আর আবারও বলছি, লিঙ্ক দেখতে সমস্যা হলে Click This Link লিঙ্ক থেকে কপি করতে পারেন,
সোমবারঃ
গতকাল একটা ছাতা কিনেছি মোস্তফা মার্কেট থেকে, ৫২০ টাকা রেখেছে। মোস্তফা মার্কেট টা চিনেছেন তো ? ওইযে বসুন্ধারা সিটির গ্রাউন্ড ফ্লোরের ২ টা নিয়ে যেই বিশাল বড় সুপার শপটা। খুব ভালো একটা দোকান, আবার দামও অতোনা। তন্দ্রার জন্য গত বছর একটা ছাতা কিনেছিলাম নিউমার্কেট থেকে।
দাম রেখেছিল ৪৫০ টাকা। ওই ছাতাই মোস্তফাতে দেখলাম ৪৮৫ টাকা লেখা। আমি অবশ্য ওইরকম ছাতা কিনি নাই, আমি যেরকম কিনেছি তাকে আপনি বৃদ্ধ মানুষের ছাতা চাইলেও বলতে পারেন। আমার ছাতাটা ভাঁজ করা যায় না, আবার ছাতার আন্টা টাও বেকানো। মোট কথা হচ্ছে এটাকে আপনি ছাতা হিসেবেই ডাক দিতে পারবেন।
যাইহোক ছাতা শব্দটার ইংরেজি তো নিশ্চয়ই জানেন ? তারপরও বলছি ছাতা শব্দটার ইংরেজি হচ্ছে Umbrella যা ল্যাটিন শব্দ Umbra থেকে এসেছে। আর Umbra এর অর্থ হচ্ছে ছায়া। আর ল্যাটিন এই Umbra শব্দটা এসেছে প্রাচীন গ্রীক শব্দ ómbros (όμβρος) থেকে। "umbel" মানে হচ্ছে চ্যাপ্টা মাথার গোল ফুল। আবার অন্যদিকে "umbra" মানে হচ্ছে ছায়া।
"Parasol" শব্দটাও হচ্ছে Umbrella এর একটা সমার্থক ইংরেজি শব্দ। যার "para" এর অর্থ হচ্ছে ‘বন্ধ করা’ অথবা রক্ষা করা, আর "sol" এর অর্থ হচ্ছে ‘সূর্য’। একসাথে করলে অনেকটা এরকম দাঁড়ায়, “সূর্য থেকে রক্ষা করা”। বৃটেনে ছাতাকে "gamps" ও বলা হয়ে থাকে। "gamps" কথাটি আসছে চার্লস ডিকেন্সের Martin Chuzzlewit উপন্যাস এর Mrs. Gamp's চরিত্র থেকে, যে ওই উপন্যাসে সবসময়ই একটা ছাতা সাথে রাখতো, যেখানেই সে যেত না কেন।
আমিও ভাবছি এখন থেকে সব সময়ই আমার সাথে নতুন কেনা ছাতাটা রাখবো... যেখানেই যাই না কেন...
সোমবার রাত ৯ ঘটিকার কিছু সময় পর আমি আমার জীবণের একটা মূল্যবান অংশ হারিয়েছি। যা হারিয়েছি তা হচ্ছে আমার ৩২ জিবি মাইক্রো এসডি মেমরি কার্ড। আমার কার্ডে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ফাইল ছিল, যেগুলো কষ্ট করে দিনের পর দিন মোবাইলের ছোট স্ক্রীনে একটু একটু করে লিখেছিলাম...এমনকি আমি হয়তো কোনোদিনও মনেও করতে পারবো না আমি কি নিয়ে লিখেছিলাম। সে সব ফাইল হয়তো আর কোনো দিনও আমি খুঁজে পাবো না। অবশ্য ৩২ জিবির মধ্যে পরোটাই গুরুত্বপূর্ণ ফাইলে ঠাসা ছিল না।
বরং যা দিয়ে ঠাসা ছিল, তা হারিয়ে বরং আমার স্বাস্থ্যের জন্য লাভই হয়েছে। Lisa Ann, Julia Ann, Shyla Stylez, Joen Deen, Rocco Shefardi, Phonix Maria, আরো অনেকেই হয়তো আমাকে প্রচন্ডভাবে মিস করবে... তাদের জন্যও কিছুটা খারাপ লাগছে...
মঙ্গলবারঃ
আজ মঙ্গলবার, এখন পর্যন্ত তেমন কিছুই করছি না, বা উল্ল্যেখ্যযোগ্য তেমন কিছুই হয় নাই আমার সাথে। বাসায় গিয়েছিলাম ও গতানুগতিক অন্যান্য দিনের মতো ৩.৫ কিলো এর মতো পথ রেল লাইন ধরে হেটে হেটে। তবে কালকে সব থেকে যাকে বেশী মিস করেছি, সে হচ্ছে আমার গুরু এমিনেম কে। কারণ সোমবারে নষ্ট হয়ে যাওয়া মেমরি কার্ড এর কারণে আমার কানে আজ বাজেনি এমিনেমের ঝাঙ্কার...
কাওরানবাজার রেললাইন ধরে মগবাজার রেললাইন হয়ে মালিবাগ রেল লাইন পার হয়ে আবুল হোটেলের সামনে আসার পর একজনের সাথে আমার দেখা হলো।
ঠিক ‘দেখা হলো’ বললে ভুল বলা হবে, আমাকে সে জড়ানো গলায় ‘এক্সিউজমি’ বলে থামালো। মেয়ে না... পুরুষ মানুষ, আর দেহের অঙ্গভঙ্গিও যেন কেমন কেমন। আমাকে থামিয়ে বলল,
“আক্ষা ভায়া এই লহ রেড টা কোন দিকে বলতে পারেন ?”।
আমি তার কথা পরিষ্কার ভাবে বুঝতে না পারলেও ধারণা করলাম সে বলতে চাচ্ছে লিঙ্ক রোডটা কোন দিকে। আমি বললাম...
-লিঙ্ক রোড ?
-হ্যা...লি... র্যোড...
-এই রাস্তা ধরেই সোজা গেলে লিঙ্ক রোড পাবেন, মধ্য বাড্ডার পরপরই।
-আপনি কি এখানে থাকেন ভায়া ?
- না, আমি লিঙ্ক রোডের ও খানেই থাকি।
- আচ্ছা ভায়া, আমি বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী স্কুলে পডি, আমার না খুব ক্ষুধা লেগেছে। আমাকে কি দশটা টাকা দেওয়া যাবে ?
- ভাই আমার কাছে টাকা নাই দেইক্ষাই আমি হাইটা হাইটা বাড্ডায় যাচ্ছি...
-টাকা তাহলে নেই... না ?
আমি তার উত্তর দেওয়ার আগেই দেখলাম সে আমাকে ফেলে আমার পিছনের পথযাত্রিকে ধরেছে, আর লক্ষ্য করলাম তার বাম হাতের মুঠোও কিছু টাকা ভাঁজ করে রাখা। আমার কাছে কেন জানি মনে হলো লোকটা ফ্রড, বেশী টাকা পাওয়ার আশায় ইচ্ছে করেই ভান ধরে আছে প্রতিবিন্ধীর। যদি সে সত্যিই প্রতিবন্ধী হতো, তাহলে সে দেখা হওয়া মাত্রই টাকা চেয়ে বসতো, ‘লি’ রোড কোথায় বলে প্রতিবন্ধী সাজার চেষ্টা করতো না।
যাইহোক তার এপ্রোচটা আমার ভালো লেগেছে... ভাবছি একদিন আমিও এরকম ভান ধরে সারাদিন কামাই করার চেষ্টা করবো, তারপর কিছু টাকা নিজের অভিনয় ভাতা হিসেবে নিজের পকেটে রেখে বাকিটা কোন এক প্রতিবন্ধীকে দিয়ে দিবো।
যাইহোক তারপর একসময় বাসায় আসলাম...
আর বাসায় এসে তো আমি অবাক !!! টিনের চালে কাক, আমিতো অবাক !!!
বাসায় এরা কারা বসে আছে !! আমার জিগরী দোস্ত ‘বাপ্পা’, ‘রিজভী’ আর ‘অর্পণ দাদা’ !! কতদিন পর আমরা একসাথে একই রুমে হলাম... শেষ যেদিন হয়েছিলাম সেদিন একটা খুব খারাপ কাজ করেছিলাম আমি। অবশ্য সেদিন আমার মাথা ঠিক ছিল না, খুব বেশীই হয়েগেছিল সেদিন... অবশ্য দোষ আমার না... দোষ ছিলো অন্য জিনিসের...বাপ্পার ভাষায় সেগুলো ছিলো নাকি দিনাজপুরের ‘অরিজিনাল জিনিস’ !! যাইহোক সেদিনের ঘটনা নিয়ে আজও দাদা আর রিজভী আমাকে ক্ষেপানোর চেষ্টা করে। আমি মনে মনে অনেক ক্ষেপীও, ইচ্ছে করে ধইরা দুইডারে আছাড় মারি তখন, কিন্তু মুখে এক চিলতে হাসি ঝুলিয়ে রেখে ভাব ধরি, ‘আরে ধুরো, এডি কেডা কেয়ার করে’ !!!
তাঁদেরকে যেই গতিতে দেখেছিলাম... সেই গতিতেই তারা চলে গিয়েছিল রাতের ১০ টার দিকে। তারা যাওয়ার পর বসে বসে পেপার পড়ছিলাম... সোমবারের বাসী পত্রিকা (আমি আবার গত বছরের ডিসেম্বর থেকে পেপার পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করেছি।
আগে দিনের পেপার ২ ঘন্টা লাগিয়ে মুখস্থ করতাম। এখন এক মাসেও পেপার ধরে দেখি না)। তো হঠাৎ করেই ৯ নং পাতার একটা নিউজ দেখে কিছুটা হতচকিত হয়ে উঠলাম। কাওরানবাজার রেল লাইনে এক ঘন্টার ব্যবধানে দুইজন কাটা পড়েছে। আমি পড়ছিলাম সোমবারের পত্রিকা, তারমানে ঘটনা রবিবারের।
এতো কাহিনী করে কি বারে কাটা পরেছে তা না বললেও পারতাম, কারণ সময় এবং বার পেপারেই দেওয়া আছে। তারপরও একটু কাহিনী করছি। কারণ ‘কাওরানবাজার বাজারসংলগ্ন রেললাইন’ পড়েই আমাকে বাকিটুকু না পড়েই হিসেব করতে হয়ছিল দিনটি কি বার ছিলো সেদিন। আমি শনিবার থেকেই শুরু করেছিলাম হেটে হেটে বাসায় আসার যাত্রা। শনিবার সন্ধ্যায় যেদিন হাটা ধরেছিলাম সেদিনও হয়তো মানুষ দুটি বেঁচে ছিলো, সন্ধ্যার আব-ছায়া অন্ধকারে হয়তো নিজের ছোট ছেলেটাকে নিয়ে বের হয়েছিল ঘুড়তে নিয়ে যাওয়ার জন্য... সন্ধ্যা মেলাবার পর পরই হয়তো সেই ছেলেটা তার বাবাকে ভয়ে ভয়ে আবদার করেছিল কিছু একটার...
আমি রবিবার সন্ধ্যায় যখন হাটছিলাম রেল লাইনের পাটাতন দিয়ে, আমার পায়ে হয়তো লেগে গিয়েছিল সেই দুইজনের কাটা মাংসের কিছুটা... আমি হয়তো বুঝতে পারিনি... মনটা নিজের অজান্তেই খারাপ হয়ে গিয়েছিল...
বুধবারঃ
বুধবার অফিসে আসার পর থেকেই ব্যাস্ত হয়ে গিয়েছিলাম আমার আগের ল্যাপটপ থেকে ফাইলগুলো সরানোর কাজে।
আমার ৩২ জিবি মেমরি কার্ডতো আগেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তাই মেমরি কার্ডেও ট্রান্সফার করতে পারছিলাম না। ঠিক এ সময়েই শুনেছিলাম সাভারের বিলন্ডিং ধ্বসের কথা। সত্যি করেই বলবো, আমার ভিতরে তখন কোনো আবেগেই কাজ করেনি (পরেও অবশ্য ততোটা করেনি, যতটানা অন্যদেরকে হতে দেখেছি)। আমি আসলে ছোটবেলার থেকেই স্বার্থপর।
অবশ্য এইক্ষেত্রে স্বার্থপর বলাটা খাটে না, বরং যেটা খাটে সেটা হচ্ছে ‘নিষ্ঠুর’। আমি প্রচন্ড ‘নিষ্ঠুর’ প্রকৃতির একজন খারাপ মানুষ। অনেকে অবশ্য ভাব ধরে নিজেকে খারাপ বলতে পছন্দ করে, আমি আবার ঐ দলের না। আমি সত্যিই খারাপ, যদি কিনা আপনি ইমোশন ছাড়া একজন মানুষকে খারাপ বলতে চান। তবে, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন ‘আমি নিজেকে কি মনে করি ?’ আমি বলবো, ‘আমি নিজেকে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে ভাবতে পছন্দ করি’।
আমি নিজের ভিতরে ইমোশন আনার জন্য এই পর্যন্ত অনেক অনেক বার চেষ্টা করেছি। আমি কিভাবে ইমোশন আনার চেষ্টা করেছি তা যদি আপনাকে বলি, তাহলে আপনি কিছুটা বুঝতে পারবেন। অনেকেই হয়তো আবেগ আনে একটা চিরচারিত উপায়ে, আর তা হচ্ছে নিজের প্রিয় কারো মৃত্যু নিয়ে কল্পনা করা। তারপর যা চিন্তা করি, তা হচ্ছে মৃত্যুর পর আমরা কি করবো, আমরা কিভাবে থাকবো, কার সাথে কথা বলবো, ইত্যাদি ইত্যাদি...
আমি কিন্তু এভাবে এখন আর আবেগ আনার চেষ্টা করি না, বা চেষ্টা করলেও আবেগ কাজ করে না। অনেকটা একই জিনিস বার বার করতে করতে অভস্ত্য হয়ে যাওয়ার মতো।
নেশাখোড়দেরকে নিয়ে বুঝালে সহজে বুঝতে পারবেন। প্রথম প্রথম যখন মানুষ নেশা করে, তখন তার সিগারেটে একটা টান দিলেই জগত উল্টা পাল্টা হয়ে যায়। মাথা ঘুড়ায়, বমি বমি লাগে, তারপরও সিগারেটের একটা টানকে অপূর্ব বলে মনে হয়। তারপর আস্তে আস্তে যখন সে সিগারেটে অবস্থ হয়ে যায় তখন আর তার কাছে তা ভালো লাগে না। তখন দৌড়াতে দৌড়াতে সিগারেট খেলেও তার আর মাথা ঘুড়ায় না।
তাকে তখন তৃপ্তি লাভ করার জন্য উঠতে হয় উপরের লেভেলে, খেতে হয় ‘গাঞ্জা’, পেতে হয় হয় সুখ, আর বুঝার চেষ্টা করতে হয় জীবনের দুখ। ‘গাঞ্জা’ প্রথম প্রথম সে যখন খায়, তখন দুই টান দেওয়ার পর তার আশ পাশের সব জগত তখন ঘুড়তে থাকে, হার্টবিট এর প্রতিটা বিট তখন বুঝতে পারে সে, সময় তখন আর যায় না... ওহ কি সুখ... !!! আস্তে আস্তে ওই সুখে তখন সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। তখন তাকে ধরতে হয় হিরোইন। আর হিরোইন প্রথম প্রথম যখন সে খায় তখন তাকে খেতে হয় ফয়েল পেপারে পুড়িয়ে। একটান দেওয়ার আগেই চিৎ হয়ে পরে থাকতে হয়।
তখন ঐ চিৎ হয়ে পরে থাকাতেই সুখ। এরপর আস্তে আস্তে ফয়েল পেপারের পোড়ানো হিরোইনের ধোয়াতেও যখন নেশা তেমন কাজ করে না, তখন তাকে টান দিতে হয় ফয়েল পেপারে পোড়ানো ছাড়াই হিরোইন।
আমারও এখন আর অন্যের মৃত্যুর কথা চিন্তা করে আবেগ আসে না। চিন্তা করতে হয় আমার মৃত্যুর কথা, ভাবতে হয় কি করবে আমার কাছের মানুষগুলো যখন তাঁরা জানতে পারবে আমার মৃত্যুর কথা, ধরতে পারবে আমার শীতল শরীরটা... মানুষের মৃত্যুর সময় যে ইন্দ্রিয়টি নাকি সবার শেষে অকার্যকর হয়, সেটা হচ্ছে ‘শ্রবণেন্দ্রিয়’। আমার মৃত্যুর পরও হয়তো আমার ‘শ্রবণেন্দ্রিয়’ এর কারণে আমি আমার আশপাশের মানুষের কান্নার আওয়াজ শুনতে পারবো।
বুঝতে পারবো, কারা আমাকে সত্যিই ভালোবেসেছিল মনের একেবারে ভিতর থেকে...
আমি প্রায়শই আমার মৃত্যুর কথা চিন্তা করে কান্নাকাটি করি, কিন্তু অন্যের মৃত্যুর সংবাদে কেন জানি মনটাতে খুব একটা ঝড় উঠে না। বুধবারে যখন শুনেছিলাম সাভারের দালান ধ্বসের কথা, তখন আমি আমার অফিসে বসে ফাইল ট্রাস্ফার করছিলাম আর এক কলিগের পিসিতে। একটিবারের জন্য নেটে যেয়ে দেখিনি, কি হয়েছে আর কি হয়নি... আমি আসলেই অনেক নিষ্ঠুর...
বৃহঃপ্রতিবারঃ
সেদিন রাতে আমার পকটে ৫০টাকার একটা নোট আর একটা ১০ টাকার নোট ছিল। মালিবাগে আসতে আসতে তা এসে পড়ে শূন্যের কোঠায়। বাকিটা পথ এখন যেতে হবে শূন্য হাতে।
সেদিন আবার আমি ইচ্ছে করেই মোবাইলটা নেই নি। আর যেহেতু নেইনি, তাই কানেও এমিনেম বাজছিল না। আর যেহেতু কানে এমিনেম বাজছিল না তাই হাটতে হাটতে আশপাশের শব্দগুলোকে অন্যরকম লাগছিল। এক অদ্ভুত মুগ্ধতা কাজ করছিল আমার ভিতরে। জীবণটাকে আমার কখনোই খারাপ মনে হয়নি, আর সেদিন মনে হচ্ছিল জীবনটা অসাধারণ।
যার থেকে কখনোই বিচ্যুত হলে আমার চলবে না।
রাতের বেলা রেললাইন ধরে যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ধরতে পারলাম রেললাইন ধরে হাটার সময় নেশা কাজ করে কেনো। রেললাইনের পাটাতনের উপর দিয়ে হাটার সময় আপনাকে সব সময় লক্ষ্য রাখতের হয় প্রতিটা পাটাতনের উপর, তা না হলে যে কোনো সময় আপনি পা ফসকে পরে যেতে পারেন। তাই চোখ রাখতে হবে পাটাতনের উপর আর প্রতিটা পাটাতনের উপর চোখ রেখে যখন আপনি সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন তখন প্রতিটা পাটাতনের নির্দিষ্ট দূরত্বের কারণে আপনার চোখে একপ্রকার ভ্রম তৌরি হবে। আর যেকোন ভ্রমই চোখকে এক প্রকার প্রশান্তি দিয়ে থাকে, যার কারণে নেশা নেশা লাগে।
আমারও সেদিন প্রচন্ড নেশা নেশা লাগছিল.. যার তুলনা হয়তো কোনো কিছুর সাথে চলেনা। তুলনা চলেনা যখন দেখি রেললাইনের পাশ ঘেঁষে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে দুইভাইবোন, বা ঐ দুটি শিশুর দৌড়, যারা ট্রেন অনেকদূর চলে যাওয়ার পরও দৌড় দিয়েই যাচ্ছিল ট্রনটাকে একটিবার ধরবে বলে... তুলনা চলে না যখন শুনি রেললাইনের বস্তিতে থাকা মানুষগুলো চায়ের দোকানের টিভিতে ভিড় জমিয়ে আর একজন চাপা পরা মানুষের উদ্ধারের খবর শুনে চিৎকার করে করে উল্লাস প্রকাশ করছে... তুলনা চলে না, যখন বুঝতে পারি এদেশের মানুষকে কখনোই কোনো শক্তি বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না। আর তুলনা চলেনা... যখন অনুভব করতে পারি আমি শুধু একা হাটছি না... আমার সাথে সাথেই হাটছে আমার পরিচিত একজন কাছের মানুষ, যার মুখটা দিন কে দিন আমার কাছে ঝাপসা হয়ে আসছে... আর ঠিক তখনই আমার চোখ বেয়ে একফোটা, দুফোটা করে জল ঘড়িয়ে পরে রেলেলাইনের উপর... যার প্রতিটা পাটাতন ঘড়া হয়েছিল আমার জন্য... একজন ত্রিভকালের জন্য...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।