"ব্লগকে সিরিয়াসলি নেবার কিছু নেই"...গরীব স্ক্রীপ্ট রাইটার আজকাল পুরানো কথাগুলো খুব মনে পড়ছে। ছোটবেলায় আমরা ঈদের সময় পাড়াতে বেড়াতে যেতে চাইতাম না। আমাদের অভিমান ছিল আমরা সবার বাসায় যাই ওরা আমাদের বাসায় আসে না তো! পাড়ায় এক মামা ছিলেন উনি অনেকদিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে ছিলেন। নানী ওই মামার সাথে প্রতিবারই ঈদের দিন দেখা করতেন আর সাথে আমাদেরকেও নিয়ে যেতেন সালাম করাতে। ওই মামার বাসায় যাওয়া মানে পুরো পাড়া বেড়িয়ে আসা।
এই নিয়ে নানীর সাথে আমরা তিনজন প্রতি ঈদে ঝগড়া করতাম। বুবুর কুকুর ছিল। সেই কুকুর আবার বুবুর পিছু পিছু সবখানে যেতো। একবার বুবুর কুকুর আর পাড়ার আরেক কুকুর এমন মারামারি শুরু করলো যে বুবু তার কুকুর নিয়ে পাড়ার ভিতর দিয়ে না গিয়ে রাস্তা দিয়ে ওই মামার বাসায় যেতে বাধ্য হল। ওই মামা যতদিন বেঁচে ছিলেন আমরা উনাকে সালাম করে দোয়া চাইতে যেতাম নানীর সাথে।
মামা মারা যাবার খবরটা যখন নানী শুনলো কেমন যেন একটা বিমর্ষ ভাব ছিল নানীর। এর কয়েকদিন পরেই নানী অসুস্থ হল আর মাসখানেক পর মারা গেলেন। তবে এখন নিজের ইচ্ছায় ওই মামীর কাছে দোয়া চাইতে যাই ঈদে
আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন বেশ কয়েকটা হিন্দু পরিবার ছিল। এর মধ্যে শম্ভুদা, কণিকাদি, নারায়নদা, পুতুল দের বাসা ছিল একদম আমাদের পাশে। পুতুলদের বাসার সাথেই ছিল পুকুর।
পুকুরের পাড়ে ২টা ফুল গাছ ছিল। একটা কাঠ মালতী আরেকটা লাল লাল পূজা করার ফুল নামটা মনে আসছে না। পুকুরে পানি ঘোলা করার জন্য সবসময় মুরুব্বীদের বকা খেতাম আমরা। মনের দুঃখে আমরা (আমি, বড়বোন আর মামাতো বোন) বড় মামার কাছে একটা পুকুরের আবদার করতাম প্রায়ই। মামাকে আমরা বলতাম আমাদের একটা মাঠ ছিল ওখানে পুকুর কেটে দিতে কিন্তু মামা আমাদের বলতো পুকুর কাটলে বড় জামরুল গাছটা কেটে ওখানে কেটে দিবে।
আমরা জামরুল গাছটার মায়া ছাড়তে রাজি ছিলাম না তাই পুকুর কাটাও হতো না। একবার ঝড়ে জামরুল গাছটা পড়ে গেল।
শম্ভুদারা সুতায় রং করে কি যেন বানাতো ঠিক মনে নেই। তবে আমরা মাঝে মাঝে উনাদের সুতা গুটিয়ে দিতাম। শম্ভুদার চাচা ছিল পুতুলের বাবা।
পুতুলের একটা ভাই ছিল তাপস দা। ছোটবেলায় আমি তাপস বলতে পারতাম না, বলতাম তার্পস দা। শম্ভুদার মায়ের খুবই শুচিবায়ু ছিল। উনি মুসলমানদের হাতে কিছু লাগলে অপবিত্র হয়ে যাবে এই ভয়ে খুবই সাবধান থাকতেন। একবার উনি পূজার থালা যাতে ছোট ছোট বাটি গ্লাস ছিল কলের পাড়ে রেখে ঘরে কি যেন কাজ করতে গিয়েছেন এমন সময় পাড়ার আর তখনকার দুই পিচ্চি নিজেদের খেলনা মনে করে খেলাধুলা শুরু করেছে।
এরপরে যখন শম্ভুদার মা দেখলেন ওনার পূজার থালা মুসলমানের হাতে উনার অবস্থা আর নাই বা বললাম… উনারা পরে ভারতে চলে গিয়েছেন।
নারায়নদার বউ বেশ সুন্দরী ছিলেন। শ্যামলা রং, মাথায় বেশ বড় একটা খোপা, মিষ্টি চেহারা। খবুই ঠান্ডা ধরনের মানুষ ছিলেন। অনেকদিন ভূগেছেন উনি।
বাতের কারণে উনি হাটতে চলতে পারতেন না। শেষ দিকে উনার মানসিক সমস্যাও দেখা দিয়েছিল। শেষবার উনাকে যখন দেখতে গিয়েছি তার আগেরদিন মশার কয়েল থেকে উনার বিছানার তোশকে আগুন লেগেছিলো। এটা থেকে উনার ধারণা আরো হয়ে গিয়েছিল কেউ একজন উনাকে মারতে চায়। আম্মু আর আমি দেখতে গিয়েছিলাম।
উনি আম্মুকে ইশারা করে বুঝাচ্ছিলেন যে উনাকে মেরে ফেলতে চায় কেউ। এরপরের দিনই উনি মারা গেলেন। ছোটবেলায় উনার সেই পরিপাটি মিষ্টি চেহারাটা যেন আজও চোখে ভাসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।