আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ছিনতাই আতঙ্ক সর্বত্র 'আংকেল ট্যাকা দেন মিষ্টি খামু'

গোপীবাগ আর কে মিশন রোডে একটি মাজারের সামনে দাঁড়িয়ে একটি দোকানে চা পান করছিলেন এক ব্যাংক কর্মকর্তা। অল্প বয়সের এক ছেলে তাঁর কাছে এসে সালাম দিয়ে বলল, 'আংকেল আপনি ভালো আছেন। আংকেল আমরা এলাকার ছেলে। আপনার দুই ছেলে এক মেয়ে আছে। আপনার বড় ছেলেও ব্যাংকে চাকরি করে।

আংকেল আপনি অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। মিষ্টি তো খাওয়াইলেন না। আংকেল আমার কোমরে একটা পিস্তল আছে। জানি চিৎকার করলে অনেকে আপনার সাহায্যে এগিয়ে আসবে। আমারে ধইরা পুলিশে দেবে।

কিন্তু জেলে গেলেও জামিনে ছাড়া পাইতে বেশি সময় লাগব না। ছাড়া পাইয়া আমি আপনার একটা ক্ষতি কইরা দিমু। হয়তো গুলিও করতে পারি। আংকেল আপনি নিশ্চয়ই ঝামেলা চান না। যা ট্যাকা আছে দিয়া দেন।

চইলা যাই। মিষ্টি খামু। ' তিনি ভয়ে ওই ছেলেকে সঙ্গে থাকা পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে দেন ঝামেলা এড়াতে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এ ব্যাংক কর্মকর্তা ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে কালের কণ্ঠকে জানান, ঝামেলা এড়াতেই আর কাউকে জানাননি তিনি। মামলাও করেননি।

অভিনব এ ছিনতাই ঘটনার মতো প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় ঘটছে ছিনতাই ঘটনা। প্রকাশ্যে গুলি করে ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটাচ্ছে। ছিনতাই আতঙ্কের কারণে বিশেষ করে বিভিন্ন জেলা থেকে রাজধানীমুখী মানুষ রাতে ঢাকায় নামলেও সকাল না হওয়া পর্যন্ত বাস কাউন্টার ত্যাগ করছেন না, বসে অপেক্ষা করছেন। ৩০ জানুয়ারি ভোররাতে গাবতলীতে কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা আতাউল গণির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'আমরা ভোর ৪টায় এসে গাবতলীতে নামছি, কিন্তু এত ভোরে পথে ছিনতাই হতে পারে।

তাই বাস কাউন্টারে বসে আছি। ' ভোরে বরিশাল থেকে সাকুরা পরিবহনে গাবতলীতে পেঁৗছে কাউন্টারে বসে ছিলেন তিনি। পাশেই ঈগল পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক পরিবহনসহ আরো কয়েকটি বাসের যাত্রীদের এভাবেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। যাত্রীরা সবারই এই একই আতঙ্কে। ছিনতাইকারীদের এ দৌরাত্ম্যের মাঝে গত ২২ জানুয়ারি রাজধানীর শান্তিনগরে বাবা-ছেলে ছিনতাইকারীর গুলিতে আহত হয়েছেন।

তাঁরা হলেন_অ্যাডভোকেট নাজির আহমেদ (৫৫) ও ছেলে আশিক আহমেদ (২২)। খোয়া গেছে তাঁদের প্রায় ১২ লাখ টাকা। একই দিনে যাত্রাবাড়ী শনির আখড়া এলাকার একটি পেট্রল পাম্পের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম পাম্পের তিন লাখ ৭৬ হাজার টাকা নিয়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ব্রিজের সামনে দিয়ে ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। সে সময় মোটরসাইকেলে করে তিন-চারজন ছিনতাইকারী নজরুলকে গতিরোধ করে ফাঁকা গুলি করে তাঁর কাছে থাকা টাকার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন যাত্রাবাড়ী থানাধীন দোলাইরপাড় এলাকা থেকে ভোরে জাকির মিয়া (৩০) নামের এক সিএনজি অটোরিকশাচালককে ছুরিকাঘাত করে টাকাসহ মালামাল নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা।

যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল কাশেম কালের কণ্ঠকে বলেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় মানুষের বসতি অনেক বেশি। এ ছাড়া ভাসমান মানুষও রয়েছে অনেক। ছিনতাই হলেও এখন অনেক কমে গেছে। প্রতিদিন ১১টি মোবাইল ও ফুট প্যাট্রল সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ছিনতাই প্রসঙ্গে শৈলী প্রিন্টার্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, 'ব্যবসায়িক কাজে অনেক টাকা বহন করতে হয় এবং রাতে চলাফেরা করতে হয়।

এ অবস্থায় আতঙ্কের মধ্যে থাকি। কারণ আমার পরিচিত অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে ছিনতাইকারীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। এক-দুই লাখ টাকা বহনে পুলিশ সাহায্য করে না। এতে ঝামেলাও অনেক। ' পুলিশসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ছিনতাইপ্রবণ এলাকা রয়েছে শতাধিক।

পাড়া-মহল্লার উঠতি সন্ত্রাসীরাও নামছে ছিনতাইয়ে। রাজধানীর মালিবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, রাজারবাগ, পীরজঙ্গী মাজার, কমলাপুর, গোলাপবাগ, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, ধলপুর সিটি পল্লী, শ্যামপুর, কদমতলী, দোলাইরপাড়, ধোলাইখাল, গুলিস্তান, মতিঝিল, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, কল্যাণপুর, শ্যামলী রিং রোড, মিরপুর, পল্লবী, কাফরুল, খিলক্ষেত, বাড্ডা, গুলশান বনানীসহ বিভিন্ন স্থানে সকালে ও রাতে প্রায় প্রতিদিনই ছিনতাইয়ের সংবাদ মেলে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগীরা পুলিশের দ্বারস্থ হন না। ছিনতাই বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে জানান, ছিনতাইকারীসহ অন্যান্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা পুলিশ বরাবরই তৎপর। রাজধানীতে মাঝেমধ্যে ছিনতাই বেড়ে যায়, আবার কমেও যায়।

এর আগে অনেক ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকে জামিনে বের হয়ে আবার একই কাজ করছে। জামিনে বের হওয়া ছিনতাইকারীদের কারণে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ( কালের কন্ঠ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।