ভালবাসি সবাইকে, বিনিময়ের আশা রাখিনা ওটা মহাকালে হারিয়ে যাক!!
১)
রাস্তা ধরে হেটে যাচ্ছি, খুব দ্রুতলয়ের হাটা না ঝুকে ঝুকে যাচ্ছি যেন হাটতে খুব কস্ট হচ্ছে এমন ভাব। কস্ট হচ্ছে তবে ততটা না যতটুকু আমি ভাণ করছি সকাল থেকে কিছু খাওয়া হয়নি মাত্র দুইটাকা পকেটে সেটা দিয়েও কিছু কেনা যেত কিন্তু টাকাটা মাঝখানে দুইটা অংশ কে জোড়া দিয়ে বানানো হয়েছে কারো কাছ থেকে চাইব কিনা ভাবছি ভাবছি বললাম এই কারনে রাস্তা দিয়ে যারা আসা যাওয়া করছেন তারা কেউ দিবেন বলে আমার মনে হচ্ছে না টাকা চাওয়ার কাজটা আমি আগেও অনেকবার করেছি লোকেরা অবাক হয়ে তাকাত অনেকে টাকা দেওয়ার সাথে কিছু উপদেশও দিত যেমন দেখে তো ভাল ঘরের সন্তান মনে হচ্ছে তা এই লাইনে কতদিন? আজকে চিন্তা করছি টাকা না চেয়ে ছিনতাই করব ছিনতাই করার উপকরন যিনি বিক্রি করছেন তার কাছ থেকেই ছিনতাইটা করব। লোকটি দা ছুরি বিক্রেতা। সামনে গিয়ে সালাম দিলাম চাচা মিয়া কেমন চলতাসে ? চাচা মিয়া হেসে উত্তর দিলেন চলতাসে বাজান মোটামুটি, মানে বওনিটা আমার ভালই হবে । ছুরি একটা হাতে নিয়ে চাচা মিয়াকে বললাম আসেন টাকা বাসা থেকে দিমু।
চাচা মিয়া হাসি হাসি মুখ নিয়ে আমার পিছনে পিছনে আসছেন। সুবিধামতন একটা জায়গা পেতেই চাচা মিয়াকে ডাক দিলাম, নগদ প্রাপ্তির আনন্দে চাচা মিয়ার চোখ দুটো জ্বলজ্বল করছে..…..…..…
ছুরিটা ভুড়ি বরাবর ধরেই চাচা মিয়াকে বললাম, শালা যা আছে দিয়ে দে নয়লে ভুড়ি নামিয়ে দেব চাচা মিয়ার মনে হয় নিজের ছুরির প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাস আছে বা আমার আচরনটা তাকে এতই অবাক করল সে কথা মত পকেটের থেকে টাকা গুলো বের করে দিয়ে দিল। টাকা গুলো পকেটে ভরে হাটা দেওয়ার সময়ে চাচা মিয়া ডুকরে কেদে উঠল আর বলল বাবাজি,এগুলো আমার মেয়ের ফরম ফিলাপের টাকা। বলতে বলতে চাচা মিয়া অজ্ঞান হয়ে গেল ছুরিটা কোমরে গুজে চাচা মিয়াকে পাজকোলা করে হাসপাতালের দিকে ছুটলাম..…..…..…..…।
আবার রাস্তায় হাটছি পকেটে সেই দুইটাকা পেটের ক্ষুধাটা কিছুটা কমেছে দুই গ্লাস পানি খাওয়ার পর চাচা মিয়ার একটা কিডনি ফেইলিউর, টাকা গুলো যাবতীয় ঔষধ কিনতে শেষ।
চাচা মিয়া কি কারনে জানি আমার নামে কাউকে কমপ্লেইন দিলনা, কালকে নাকি ওনার মেয়ের ফরম ফিলাপ টাকা নেই কাদ্ছিলেন কি কারনে ওনার বাসার ঠিকানাটা নিয়েছি নিজেও ঠিক জানিনা। কোমরে ওনার ছুরিটা এখনো গুজা আছে ফরম ফিলাপের টাকাটা জোগাড় হবে কিনা ভাবছি..…..…..…
অনেকদুর হেটে এসেছি! চাচা মিয়ার ছুরিটা আছে এখনো পকেটে!কিন্তু ঠিকানার কাগজটা ছিড়ে ফেলেছি!!! আর এমনিতেই ঠিকানাটা মনে আছে! একটা লোক হেটে আসছে হেলেদুলে সম্ভবত মালকড়ি আছে! সামনে আসতেই!!
-আসসালামু আলাইকুম!
-ওয়ালাইকুম আসসালাম!
পিছনে হাত দিয়ে ছুরিটার অস্ত্বিত্ব বুঝে বললাম!
-আমার একটু সাহায্যর দরকার
-কি সাহায্য ?বলুন!
-আমার চাচার কিডনি ফেইলিউর আর আগামীকাল আমার বোনের ফরমফিলাপের টাকা দরকার!
-কত টাকা?
-আপাতত হাজার দশেক হলেই চলবে!
-সত্যি বলছ তো?
-কিছুটা মিথ্যে!
-যেমন?
-যাদের টাকার দরকার তারা আমার চাচা বা বোন না!! কিন্তু টকাটা তাদের সত্যি দরকার!
-বুঝলাম!!! আচ্ছা আপাতত হাজার পাচেক টাকা হলে চলবে?
আমার কাছে পাচ হাজার চারশ টাকাই আছে!!! এর বেশি থাকলে দিতাম!
-আচ্ছা থাক! টাকার দরকার নেই!
বলেই উলটো দিকে ঘুরে হাটা দিলাম! ঐ লোকটা আমাকে বিষ্ময়ের চরম পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ফেলেছিল, ঐ রকম মানূষের মুখোমুখি দাড়ান যাই না,পিছন ফিরে তাকালাম না!লোকটা হয়তবা অবাক হয়ে ভাবছে! ছুরিটা ফেলে দিলাম রাস্তায় এটা আর আমার কাজে আসবে না!
২)
চাচা মিয়া বাদ! পেটে ক্ষুধা! আপাতত পেটকে শান্তি দেওয়াটাই প্রধান লক্ষ্য! রাস্তায় দামি একটা হোটেল দেখেই ঢুকে পরলাম। ঢুকার সময়ে একপাশে ম্যানেজারের নাম দেখলাম।
'কালীম চৌধুরী' আলিম চৌধুরী শুনেছি!!! কলিম চৌধুরী শুনেছি!!! কিন্তু 'কালীম চৌধুরী' টা জীবনে প্রথম শুনলাম!!! শেষের দিকের একটা টেবিলে বসতেই ওয়েটার মেনু কার্ড নিয়ে হাজির হল!!!দামি হোটেল গুলোর ওয়েটাররা একটু লুতুপুতু টাইপ হয়!!! বললাম!!
-মেনু কার্ডটা আমাকে দিন দেখি! সাদা ভাত আর খাসির মাংস আছে?
-জ্বী স্যার?
-তাহলে চটপট নিয়ে আসুন!
-জ্বী স্যার??
-কি জ্বী স্যার? সাদা ভাত আর খাসির মাংস আনতে বললাম!
-ওইটা তো আমাদের কাছে নেই স্যার!!!
-ঘোড়ার ডিম আছে?
-জ্বী স্যার??
আর কথা বাড়ালাম না!! মেনু দেখে একটা অর্ডার দিয়ে দিলাম, আর মেনু কার্ডটাকে গোল করে মুছড়ে কোমড়ে গুজে রাখলাম!!! কাজে দেবে!
খাবার আসতেই খেয়ে নিলাম চটপট! যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে অনেক মজাদার!! সম্ভবত ক্ষুধার কারনে ব্যাপারটা ঘটেছে! ওয়েটার ব্যাটা বিল নিয়ে এসেছে, চোখে নগদ প্রাপ্তির আশা!
-কালীম ভাইকে ডাকুন!
-কোন কালীম ভাই?
-আপনাদের এখানে কালীম ভাই কইটা?( চিবিয়ে চিবিয়ে বললাম কথা গুলো!!! অনেক সময় কাজে দেয়)
কালীম ভাই এল! যা আশা করেছিলাম তার ঠিক উলটো। কালীম ভাই আটাশ বছরের এক যুবক।
আমি ভেবেছিলাম চল্লিশ- পয়তাল্লিশ বছরের এক লোক , সম্ভবত প্ল্যান ভন্ডুল হবে, তারপরেও ট্রাই করি। কালীম ভাইকে দেখে একটা হাসি দিলাম!! এতে অনেকেই বিভ্রান্ত হন,কিন্তু কালীম ভাইয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি সন্দেহের দৃস্টিতে তাকিয়ে আছেন। এই প্রকারের মানুষ গুলোকে আরো সহজে বোকা বানানো যায়। এদের পিঠে সামান্য কোকের বোতল টেকিয়ে পিস্তলের ভয় দেখানো যাই । কালীম ভাইয়ের সাথে কোলাকুলি করতে গেলাম কালীম ভাইয়ের নিষেধ সত্বেও জড়িয়ে ধরলাম! মওকা বুঝেই কালীম ভাইকে আমার কোমরের দিকে ইশাড়া করলাম।
কালীম ভাই ভয়ে শক্ত হয়ে গেল! এবার কালীম ভাইকে আমার সামনা সামনি বসতে বললাম! ওয়েটার ব্যাটা অধিক শোকে পাথর নাকি অধিক আতঙ্কে পাথর বুঝলাম না। সম্ভবত দুইটাই!!! কালীম ভাই চোখ মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকিয়ে আছেন!ওয়েটার কে বললাম
-তুমি যাও!! সে দৌড় দিল!
আমি আর কালীম ভাই মুখোমুখি একটু পরপর কোমরে গুজা মেনু কার্ডটাই হাত দিচ্ছি আর কালীম ভাই কেপে কেপে উঠছেন!
বলা কওয়া ছাড়া হটাত পুলিশ হাজির!ওয়েটার ব্যাটাও সাথে,ব্যাটা চাকরিটা আবার পাকা করে নিল!!!
আমি শুকনো মুখে দাড়ালাম! পুলিশ ব্যাটাও ভয় পাচ্ছে!! মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কোমরে থেকে মেনু কার্ডটা বের করতেই কালীম ভাই, ওয়েটার আর পুলিশ অবাক হয়ে তাকা্ল। হটাত সুর্যের থেকে বালি গরমের মত কনস্টেবল ব্যাটা এসে গালে প্রচন্ড একতা থাপ্পড় দিল! সাথে সাথে নাক দিয়ে রক্ত বেরুল, গরম গরম তরল রক্ত! আরেক দফা সবাই অবাক হল, সবার আগে দেখি ওয়েটার ব্যাটাই এসেই আমার নাকটা চেপে ধরল । ব্যাটা নিশ্চয় অপরাধ বোধে ভুগছে!
৩)
থানার ভিতরে শিক ধরে দাঁড়িয়ে আছি। নাম জিজ্ঞেস করেছিল, বলেছিলাম বজলু!এখন কোন ঘাঘু বজলুর সাথে হয়তবা মেলাচ্ছে! মেলাক আমার ঘুম পাচ্ছে!হটাত একটা কথা শুনেই ঝিমুনি ভেঙ্গে গেল!! কনস্টেবল ব্যাটা বলছে!!
-স্যার!! আমার মনে হয় এই সেই বজলু!
-কোন বজলু?
-আরে স্যার সেই!! সেই!
- কোন সেই?
-গোল্ডেন বজলু! ট্রীপল মার্ডার!
আমার দিকে ভয়ে ভয়ে থাকিয়ে বলল কনস্টেবল "তারিক মিয়া" নামটা এতক্ষনে পড়তে পারলাম! সাব ইনসপেক্টর আমাকে সম্ভবত জাজ করতে এসেছেন!ইনস্পেক্টর কে বললাম!!
-একটা পান হবে স্যার? রাতের খাবার খেয়েছি তো তাই পান খেতে চাচ্ছি! সুপারি ছাড়া
আসলে উনাকে বুঝাতে চাইছিলাম আমি গোল্ডেন বজলু না! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে গোল্ডেন বজলু পান খেত না, উনি আমার দিকে আরও কিছুক্ষন তাকালেন হয়তবা আরও কিছু আশা করেছিলেন , তাই আবারো বললাম!
-নুরানি জর্দা দিবেন স্যার! আমার ফেভারিট!
ইনস্পেটরের চোখ উজ্জ্বল হয়ে ঊঠল! সম্ভবত উনি গোল্ডেন বজলুর খোজ পেয়ে গেছেন!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।