আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিষয় বস্তুর অভাবে হলো না একটি গল্প.....

আনাড়ী রন্ধন শিল্পীর ব্লগ B-)। ব্লগের বাজে-মানহীন লেখাগুলোর মাস্টার পিস দেখতে চাইলে এই ব্লগারের পোষ্ট গুলো পড়ে দেখতে পারেন। কথা দিচ্ছি, নিরাশ হবেন না। B-) ছুটির সকাল। ছেলে-মেয়ে ও তাদের বাবা আজ বাসায়।

সবাই ঘুমাচ্ছে। স্কুলের চাকরীটি নেয়ার পর থেকে বয়স্ক একজন বাধা কাজের মহিলা থাকলেও রান্নার কাজটি কখনো তাকে দিয়ে করাই না, নিজেই করি। আজ তাকে দিয়েছি লেখা-লেখি করবো বলে। সচরাচর রাত বারোটা থেকে তিনটে এই সময়টি একান্তই নিজের লেখালেখি বা নিজের মত কাটাই। কিন্তু আজ মনে হলো সকালে বসি।

বুয়া খালাকে সকালের নাশতার মেনু বলে টেবিলে এসে বসলাম। যে ফুরফুরে মেজাজ নিয়ে লিখতে বসেছিলাম তা এখন একেবারেই উধাও। একটি গল্প লিখতে বসেছিলাম কিন্তু কোন টপিক পাচ্ছিনা। মাথাটা একেবারেই ফাকা। এর মাঝে খালা এসে কয়েকবার ঘরের এইসেই খবর দিয়ে গেল।

লেখার মাঝে বিরক্ত! তিন ঘন্টা যাবত বসে আছি একটি লাইনও লিখতে পারলাম না। ছেলে-মেয়ে ও সাহেবকে নিয়ে নাশতা শেষ করে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলে আমি আবার বসলাম আমার টেবিলে। আচ্ছা কি নিয়ে লেখা যায়, মিষ্টি প্রেম বা বিরহ....এ নিয়ে তো বহুবার লিখেছি। এই বিষয়টি আপাতত বাদ। সদ্য সংসারে প্রবেশ করা এক দম্পতিকে নিয়ে লিখলে কেমন হয়....তাদের চড়ুই পাখির মত ফুড়ুৎ ফুড়ুৎ করা উড়ে বেড়ানো আর ছোট্ট ছোট্ট হাড়িপাতিলের সংসার; নাহ ভাল লাগছে না এটিও।

আচ্চা, আমারতো অসমাপ্ত কিছু গল্প আছে সেগুলো নিয়ে ভাবছিনা কেন...... = মা মনি কাল কি হয়েছে জানো..... ক্লাস এইটে পড়ুয়া মেয়ের কথায় ধ্যান ভংগ হয় =>> হ্যা, না বললে কি করে বুঝবো কি হয়েছে বুঝতে পারলাম মোটামুটি ঘন্টাখানেক এখন মেয়ের সাথে যাবে। হেন ব্যাপার নেই যা সম্পর্কে সে আমার সাথে গল্প করবে না। স্কুলে যাওয়ার পথে গলির মোড় থেকে কলেজ পড়ুয়া ছেলেটি তাকে লিফট দিতে চাইলে সে কিভাবে ভদ্র ভাষায় শিক্ষা দিলো, স্কুলে পড়া না পারার বা দুষ্টুমীর জন্যে কান ধরে ক্লাসে বা প্রিন্সিপালের রুমে দাড়িয়ে থাকা কিংবা চুরি করে বান্ধবীর টিফিন খেয়ে এসে নিজের বক্স খুলে দেখে টিফিন উধাও, কোন ব্যাপার-ই বাদ যায় না। মেয়েটি গল্প করতে খুব ভালবাসে। মাথা নেড়ে নেড়ে চোখে মুখে উচ্ছলতা নিয়ে যখন গল্প করে; আমি তন্ময় হয়ে তা শুনি।

ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হারিয়ে যাই, ফিরে যাই নিজের এ সময়টিতে। ওর মত এতটা উচ্ছল ছিলনা আমার কৈশর। অনেক বিধিনিষেধ ছিলো। অনেক ভুলত্রুটির মাঝে দিয়ে যেতে হয়েছে। ঠেকে ঠেকে শিখতে হয়েছে আমাকে অনেক কিছু যা এখন ও আমার কাছ থেকে সহজেই শিখছে।

= মামনি তুমি আমার কথা শুনছো না.... ! =>> অ্যা, হা শুনছিতো, বলো তুমি = শুনছিলে না? তাহলে বলো আমি কি বলেছি? দুষ্টুমীর হাসি দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয় আমার দিকে। মেয়ে জানে মা তার উত্তর দিতে পারবে না, কারন মামনি শোনেইনি তার কথা। =>> ইয়ে, ঐ কি যেনো বলেছিলে ঘুরতে-টুরতে যাবে আর কি, কি ঠিক বলিনি? (ছুটির দিন আজ তাই আন্দাজে বলেছিলাম, মনে মনে প্রমাদ গুনছি) = ইয়াহহুঊঊঊ....এক্সাক্টলি তাই! বাবা বলেছিলো আজ আমাদের নিয়ে বেড়াতে যাবে। চলোনা মামনি অনেক মজা হবে। =>> তোমরা যাও আমি আজ বাসায় থাকবো।

অনেক কষ্টে মেয়েকে বুঝিয়ে রাজী করে পাঠালাম। তিন ছেলেমেয়ে আর তাদের বাবা মিলে বের হয়েছে। যাক ঘরটা ফাকা এবার একটু শান্তিতে ভাবা যাবে গল্পটা নিয়ে। কি নিয়ে যেনো লিখতে চেয়েছিলাম.....হ্যা মনে পড়েছে। নতুন দম্পতিকে নিয়ে.....।

নাহ এটাও পছন্দ হচ্ছে না। আচ্ছা এক বৃদ্ধাকে নিয়ে লিখলে কেমন হয় যার সারাটি জীবন কেটেছে ছেলে মেয়ে নিয়ে সংগ্রাম করে। অভাবের সাথে যুদ্ধ করে ৫টি ছেলেমেয়েকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন এখন তার ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম! নাহ, ধুর মনটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এটাও বাদ। ~~ খালা আইজ দুফুরে আমারে আমারে রানতে কইলা, তা বাজার-সদাই ত নাই, খালুও গেলোগা পুলাহান নিয়া গুরতে, কী রানমু এহন? উফফ...আবার বাধা! ঘরটা ফাঁকা হয়েছিলো এখন আবার বুয়া।

খেকিয়ে উঠে বলতে চেয়েছিলাম আমার খাতাটা নিয়ে নিয়ে ঝোল রান্না করো গিয়ে। কিন্তু নিজেকে সামলে বললাম, =>> ওরা কেউ দুপুরে ফিরবে না তাই তুমি ভাজি ভর্তা কিছু একটা করো। রাতে ফেরার সময় ওরা খাবার নিয়েই ফিরবে। বুয়াকে বিদায় করে আবার খাতা কলম নিয়ে বসলাম। খালি বসে থাকলেই হবে না।

কি লিখবো! আচ্ছা আমি কি লেখার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছি? কি ভয়াবহ কথা! ভোর থেকে বেলা একটা পর্যন্ত কাগজ-কলম নিয়ে বসে থেকেও পারছিনা কিছু একটা লিখতে। না...না লেখআর ক্ষমতা হারাবো কেন, গত দু'মাস আগেও পাঁচটি পত্রিকায় লিখেছি। কোনটায় ভ্রমন কাহিনী, কোনটায় জীবন কাহিনী, কোনটায় সাহিত্য পাতায় কবিতা আবার কোনটায় নিছকই গল্প। লেখা ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে এটাতো ভাবতেই পারিনা! অনেকটা এই লেখালেখি নিয়ে রাফাতের সাথে সম্পর্কটা ভেংগে গেলো। ছেলেটা চায়নি আমি লেখালেখি করি।

রাফাতের কথায় মনে পড়ে গেলো, ওর সাথে শেষ দেখা হয়ে ছিলো ৩বছর আগে, মাশরুরের এক আত্নীয়ের বিয়েতে। পুরো ফ্যামিলি নিয়ে এসেছিল, এক ছেলে একমেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে। ছেলেমেয়ে দুটো চমৎকার হয়েছে। যেমন দেখতে তেমন তাদের ব্যবহার, কি মিষ্টি। কি সব ভাবছি আমি! নাহ বুঝতে পারছি আজ আমার গল্প লেখা হবে না।

তরা চেয়ে খেয়ে দেয়ে ঘুম দেই। দিনটাই নষ্ট হল। বাচ্চাদের সাথে গেলেই পারতাম। *********************************************** গল্পের আইডিয়া: আলাউদ্দিন আহমেদ সরকার বাকিটা: আমি নিজে ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।