আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২১শে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল : অসাধারণ গর্বের সেই ইতিহাস

আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। মনে হয় না এর থেকে বেশী কিছু চাওয়ার আছে। ভাষা আন্দোলন জোরালো হওয়ার পেছনে ২৭শে জানুয়ারি ১৯৫২ সালের খাজা নাজিমুদ্দিনের(উন্মাদ) ভাষণ প্রধান নিয়ামক হিসেবে ধরা যায়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ২৭শে জানুয়ারি পল্টন ময়দানের এক জনসভায় দীর্ঘ ভাষণ দেন। তিনি মূলত জিন্নাহ্‌-র কথারই পুনরুক্তি করে বলেন, "পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।

" রেডিওতে সরাসরি সম্প্রচারিত তার ভাষণে তিনি আরো উল্লেখ করেন "কোন জাতি দু'টি রাষ্ট্রভাষা নিয়ে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। " নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯শে জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০শে জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। সেদিন ছাত্র ও নেতৃবৃন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারী প্রদেশব্যাপী হরতাল পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। "২১শে ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ সাল" ২১শে ফেব্রুয়ারী সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। তারা ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে এবং পূর্ব বঙ্গ আইন পরিষদের সদস্যদের ভাষা সম্পর্কে সাধারণ জনগণের মতকে বিবেচনা করার আহ্বান জানাতে থাকে।

পুলিশ অস্ত্র হাতে সভাস্থলের চারদিক ঘিরে রাখে। বিভিন্ন অনুষদের ডীন এবং উপাচার্য সে সময় উপস্থিত ছিলেন। বেলা সোয়া এগারটার দিকে ছাত্ররা গেটে জড়ো হয়ে প্রতিবন্ধকতা ভেঙে রাস্তায় নামতে চাইলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস বর্ষণ করে ছাত্রদের সতর্ক করে দেয়। কিছু ছাত্র এই সময়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের দিকে দৌড়ে চলে গেলেও বাকিরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিস দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে এবং পুলিসের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে। উপাচার্য তখন পুলিসকে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ বন্ধ করতে এবং ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেয়।

কিন্তু ছাত্ররা ক্যাম্পাস ত্যাগ করার সময় কয়েকজনকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগে পুলিস গ্রেফতার শুরু করলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক ছাত্রদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় ছাত্ররা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের বিক্ষোভ পুনরায় শুরু করে। বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেয় এবং সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানায়। কিন্তু পরিস্থিতি নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে যখন কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেয় তারা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবেন।

ছাত্ররা সেই উদ্দেশ্যে রওনা করলে বেলা ৩টার দিকে পুলিশ দৌড়ে এসে ছাত্রাবাসে গুলিবর্ষণ শুরু করে। পুলিশের গুলি বর্ষণে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। এছাড়াও আব্দুস সালাম, আবুল বরকতসহ আরও অনেকে সে সময় নিহত হন। ছাত্র হত্যার সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে জনগণ ঘটনাস্থলে আসার উদ্যোগ নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সমস্ত অফিস, দোকানপাট ও পরিবহণ বন্ধ হয়ে যায়।

ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলন সাথে সাথে জনমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। রেডিও শিল্পীরা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে শিল্পী ধর্মঘট আহবান করে এবং রেডিও স্টেশন পূর্বে ধারণকৃত অনুষ্ঠান সম্প্রচার করতে থাকে। এই সময় গণপরিষদে অধিবেশন শুরুর প্রস্তুতি চলছিল। পুলিশের গুলির খবর জানতে পেরে মাওলানা তর্কবাগিশসহ বিরোধি দলীয় বেশ কয়েকজন অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে বিক্ষুদ্ধ ছাত্রদের পাশে এসে দাঁড়ান। গণপরিষদে‌ মনোরঞ্জন ধর, বসন্তকুমার দাস, শামসুদ্দিন আহমেদ এবং ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সহ ছোট ছয়জন সদস্য মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনকে হাসপাতালে আহত ছাত্রদের দেখতে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং শোক প্রদর্শনের লক্ষ্যে অধিবেশন স্থগিত করার কথা বলেন।

কোষাগার বিভাগের মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ, শরফুদ্দিন আহমেদ, সামশুদ্দিন আহমেদ খন্দকার এবং মসলেউদ্দিন আহমেদ এই কার্যক্রমে সমর্থন দিয়েছিলেন। যদিও নুরুল আমিন(বেঈমান) অন্যান্য নেতাদের অনুরোধ রাখেননি এবং অধিবেশনে বাংলা ভাষার বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। ফেব্রুয়ারির ২২ তারিখে সারা দেশ হয়ে উঠে মিছিল ও বিক্ষোভে উত্তাল। জনগণ ১৪৪ ধারা অমান্য করার পাশাপাশি শোক পালন করতে থাকে। বিভিন্ন অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কর্মস্থল ত্যাগ করে ছাত্রদের মিছিলে যোগ দেয়।

সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শহরের নাগরিক ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাস পরিদর্শন করেন। পরে তাদের অংশগ্রহনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে বিশাল মিছিলে অংশগ্রহণ করে। বেলা ১১ টার দিকে ৩০ হাজার লোকের একটি মিছিল কার্জন হলের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। প্রথমে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে এবং এক পর্যায়ে তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে।

এই ঘটনায় সরকারি হিসেবে ৪ জনের মৃত্যু হয়। শহরের বিভিন্ন অংশে একইভাবে জানাজা ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন কলেজ, ব্যাংক সহ অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এই মিছিলে অংশগ্রহন করতে আসে। বিকেলে আর একটি বিশাল মিছিল পুলিশ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বিক্ষুদ্ধ জনতা সরকার পক্ষের প্রথম সারির দুটি সংবাদপত্র জুবিলী প্রেস এবং মর্নিং নিউজ অফিসে অগ্নিসংযোগ করে।

একই দিনে পুলিশ দ্বারা আক্রমণ ও হত্যার বিভিন্ন ঘটনা ঘটে। নবাবপুর রোডের বিশাল জানাজার মিছিলে পুলিশের গুলিবর্ষন করে। এই গুলিবর্ষনে শহীদ হন ঢাকা হাইকোর্টের কর্মচারী শফিউর রহমান, ওয়াহিদুল্লাহ এবং আবদুল আউয়াল। একই রাস্তায় অহিদুল্লাহ নামে নয় বছরের এক বালকের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়। জনশ্রুতি আছে পুলিশ কিছু লাশ কৌশলে সরিয়ে ফেলে।

"একজন পুলিশের ভাষ্যে সেই উত্তাল দিন" ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার লালবাগ থানার ওসি ছিলেন এম এ গোফরান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাটি সেদিন তার দায়িত্বে ছিল। ঐ দিন ছাত্রদের প্রধামমন্ত্রী নুরুল আমিনকে বাংলা ভাষার দাবিতে স্মারকলিপি দেবার কথা ছিল। ২১ ফেব্রুয়ারি এসেম্বলি চলাকালীন ছাত্রদের কর্মসূচিতে বাধা দেবার নির্দেশ আসে রাওয়ালপিন্ডি থেকে। তখন ঢাকার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট (ডিএম) ছিলেন কোরেইশী নামের এক পাঞ্জাবি।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে রাজারবাগ থেকে স্পেশাল আর্মস ফোর্সের একটি বড় দল ক্যাম্পাসে আসে। তাদের ইনচার্জ ছিলেন পাঞ্জাবি কর্মকর্তা আর আই নবীশের খান। ঢাকার ডিএম কোরেইশী, ডিআইজিপি এ জেড ওবায়দুল্লাহ, এসপি ইদ্রিস ও এডিশনাল এসপি মাসুদ মাহমুদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ছাত্ররা ৫ জন একত্রিত হলেই ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করেছে বলে ধরে নিতে প্রস্তুত ছিল পুলিশ।

এ অবস্থায় বেলা সাড়ে ৩টার দিকে ছাত্ররা ৪ জন করে অ্যাসেম্বলির হলের দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাতেও বাধা দেওয়া হয়। পুলিশের মারমুখী আচরণের প্রতিবাদে ইটপাটকেল নিক্ষেপও শুরু হয়ে যায়। হোস্টেল থেকে বয়রা টুকরিতে করে, লুঙ্গিতে ভরে ইটের টুকরো ছাত্রদের কাছে সরবরাহ করতে থাকে। তারা নিজেরাও ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশকে প্রতিরোধের চেষ্টা করে।

ওই সময় ডিআইজিপি ওবায়দুল্লাহর পিঠে ইট পড়ে। আর আই নবীশের খানের মাথায় পড়ে ইটের একটি টুকরো। তখনই ডিএম কোরেইশী(হারামজাদা) গুলি করার নির্দেশ দেন। অন্যদিকে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার নিয়াজ মোহাম্মদ খান(ধন্যবাদ) ছাত্রদের মিছিল সমাবেশে বাধা দেওয়ায় বিপক্ষে অবস্থান নেন। পুলিশ লাশগুলো সরিয়ে ফেলে।

একমাত্র আবুল বরকতের মা ছাড়া কাউকে লাশ দেখার সুযোগ দেওয়া হয় নি। মিল ব্যারাক পুলিশ লাইন মসজিদের ইমাম সাহেব লাশের গোসল ও জানাজা পড়ান। কাফনের জন্য থান কাপড় আনা হয় পুরোন ঢাকার পাটুয়াটুলীর "আম্বিয়া ক্লথ স্টোর" থেকে। লাশ দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন ডিআইজি এজেড ওবায়দুল্লাহ, এসপি ইদ্রিস। দাফনের কাজ রাত চারটার দিকে শেষ হয়।

"বেঈমান ও নালায়াকদের বেহায়ার মতো কিছু মিথ্যাচার" ২১ ও ২২ শে ফেব্রুয়ারির ঘটনার পর সরকার আন্দোলনের বিপক্ষে জোর প্রোপাগান্ডা চালাতে থাকে। তারা জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করতে থাকে যে কমিউনিস্ট ও পাকিস্তানবিরোধীদের প্ররোচনায় ছাত্ররা পুলিশকে আক্রমণ করেছিল। তারা বিভিন্নভাবে তাদের এই প্রচার অব্যাহত রাখে। তারা সারা দেশে লিফলেট বিলি করে। সংবাদপত্রগুলিকে তাদের ইচ্ছানুসারে সংবাদ পরিবেশনে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে।

পাশাপাশি ব্যাপক হারে সাধারণ জনগন ও ছাত্র গ্রেফতার অব্যাহত থাকে। ২৫শে ফেব্রুয়ারি আবুল বরকতের ভাই একটি হত্যা মামলা দায়ের করার চেষ্টা করলে, উপযুক্ত কাগজের অভাব দেখিয়ে সরকার মামলাটি গ্রহণ করেনি। রফিকউদ্দিন আহমদের পরিবার একই ধরনের একটি প্রচেষ্টা নিলে, একই কারণে তাও বাতিল হয়। ৮ই এপ্রিল সরকার তদন্ত শুরু করে। কিন্তু এর রিপোর্টে মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রদের উপর গুলি করার কোন উল্লেখযোগ্য কারণ দেখাতে পারেনি।

সরকারের প্রতিশ্রুত রিপোর্ট কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ প্রত্যাখান করে। এছাড়াও মোহাম্মদ আবদুল্লাহেল বাকী এর সভাপতিত্বে ২৩ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারী কয়েকটি মিটিং হয়েছিলো। এরপর তারা ‘ঢাকার গোলযোগ সম্পর্কে মুসলিম লীগ’ শিরোনামে চারপাতার একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করেন। এতে ছিল নেতৃবৃন্দের বিবৃতি, মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির প্রস্তাব, মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির প্রস্তাব। স্বাক্ষর করেছিলেন আবদুল্লাহেল বাকী, সহ-সভাপতি খাজা হবিবুল্লাহ, সম্পাদক ইউসুফ আলী চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক গিয়াসুদ্দীন পাঠান ও শাহ্ আজিজুর রহমান।

প্রচারপত্রে বলা হয়, “"দুঃখের বিষয়, আমাদের সরলপ্রাণ ছাত্রবৃন্দের এই আন্দোলনকে অবলম্বন করিয়া রাষ্ট্রের দুশমন ও স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিগণ জনসাধারণের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি এবং আইন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিয়া দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করিবার প্রয়াস পাইতেছে। এই আন্দোলন আরম্ভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বহু সন্ত্রাসবাদী ও কম্যুনিস্টবাদী এবং পাকিস্তানের শত্রুর গুপ্তচর অলক্ষ্যে পাকিস্তানে প্রবেশ করিয়া ভিত্তিহীন, উত্তেজনামূলক, অতিরঞ্জিত প্রচারণা ও গুজব রটাইয়া এবং অজস্র অর্থ ব্যয়ে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করিবার চেষ্টা করিতেছে। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ক্ষমতালোলুপ কতিপয় ব্যক্তি ইহাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করিয়া ইন্ধন যোগাইতেছে। ... যে মুসলিম লীগের আপ্রাণ চেষ্টায় এবং ত্যাগের ফলে পাকিস্তান অর্জিত হইয়াছে তাহার মূলোৎপাটন এবং কম্যুনিজমের বীজ রোপণ করিয়া পাকিস্তানের ধ্বংস সাধনই আমাদের দুশমনদের মুখ্য উদ্দেশ্য। "” প্রচারপত্রটি সরকারি প্রেস থেকে ৫ লক্ষ কপি ছেপে বিলি করা হয়েছি।

"অবশেষে ভয় পেয়ে অত্যাচারীদের বাংলা ভাষার স্বীকৃতি প্রদান" ৭ মে ১৯৫৪ সালে মুসলিম লিগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ২৯ ফেব্রুয়ারী ১৯৫৬ সালে। সংবিধানের ২১৪(১) অধ্যায়ে রাষ্ট্রভাষা সম্পর্কে লেখা হয়: "214.(1) The state language of Pakistan shall be Urdu and Bengali" অর্থাৎ উর্দু এবং বাংলা হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। যদিও আইয়ুব খানের(উন্মাদ) প্রতিষ্ঠিত সামরিক সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্ঠা করেছিল। ৬জানুয়ারী ১৯৫৯ সালে সামরিক শাসন কোনো সরকারী বিবৃতি জারি করে এবং ১৯৫৬ সালের সংবিধানে উল্লেখিত দুই রাষ্ট্র ভাষার সরকারী অবস্থান পুনরায় ব্যাক্ত করে।

"প্রথম শহীদ মিনার" ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারির রাত শেষে শহীদ মিনার তৈরির কাজ শুরু করে। কাজ শেষ হয় ২৪ ফেব্রুয়ারির ভোরে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহিদ মিনারের খবর। ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন।

২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দীন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়। "একুশে ফেব্রুয়ারী গানটির সৃস্টি" ২১ ফেব্রুয়ারি গুলিবর্ষণের ঘটনার পর, একুশ নিয়ে প্রথম গান লেখেন আবদুল গাফফার চৌধুরী। গানটি হল, "আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।

" প্রথমে আব্দুল লতিফ সুর দেন। পরে করাচী থেকে ঢাকা ফিরে ১৯৫৪ সালে আলতাফ মাহমুদ আবার নতুন সুর দিলেন। সেই থেকে ওটা হয়ে গেল একুশের প্রভাত ফেরীর গান। ১৯৫৪ সালে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে সংকলনে প্রকাশিত গানটি। তৎকালীন সরকার সংকলনটি বাজেয়াপ্ত করে।

জহির রায়হান তার জীবন থেকে নেয়া ছবিতে এই গানটি ব্যবহার করার পর এর জনপ্রিয়তা আরো বাড়ে। ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবার পর এই গানটিও আন্তর্জাতিকতা পেতে শুরু করে। **আরেকটি তথ্য দিই: একুশে ফেব্রুয়ারী নিয়ে প্রথম কবিতা লিখেছিলেন মাহবুবুল আলম চৌধুরী, 'কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি' । "যেভাবে পালন করা শুরু অমর একুশে ফেব্রুয়ারী" ভাষা আন্দোলনের প্রথম বার্ষিকী সারা দেশব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়। অধিকাংশ অফিস, ব্যাংক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মানুষ প্রভাত ফেরীতে যোগ দেন। হাজার হাজার মানুষ কালো ব্যাজ ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আসে এবং মিছিল করে প্রাঙ্গন ত্যাগ করে। প্রায় লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে আরমানিটোলায় বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্রাবাসের ছাত্ররা শহীদদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী ফজলুর রহমান(ছাগল) বলেন যে, "বাংলাকে যারা রাষ্ট্রভাষা করতে চায় তারা দেশদ্রোহী।

" ১৯৫৪ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ছাদে কালো পতাকা উত্তোলনের সময় পুলিশ কিছু ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো সরকারের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতায় ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। শহীদ মিনার নতুন করে তৈরী করার লক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহন করা হয়। পুলিশের গুলিতে নিহত ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে পাকিস্তানের গণপরিষদে কার্যক্রম পাচ মিনিট বন্ধ রাখা হয়। সারাদেশব্যপী পালিত হয় শহীদ দিবস এবং বেশীরভাগ প্রতিষ্ঠান ছিল বন্ধ।

এই হলো আমাদের গর্বের রক্ত ঝড়ানো সেই ইতিহাস। আমাদেরকে আজীবনের জন্য গর্ব করিয়ে দিয়ে গেছেন এই ভাষা শহীদ ও সৈনিকরা। অমর ২১শে ফেব্রুয়ারীর এই সময়ে আপনাদের জানাচ্ছি গর্বভরা সালাম ও বুকভরা শ্রদ্ধা। আপনাদের কারণেই আজ আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারছি ও লিখতে পারছি। এই ঋণ কোনদিনও কারোপক্ষে শোধ করা সম্ভব হবে না।

আপনাদের সালাম জানালাম। ***সম্পূর্ণ লেখাই উইকিপিডিয়া থেকে নিয়ে এডিট করে/একটু সাজিয়ে লেখা। সম্পূর্ণ ধন্যবাদ উইকিপিডিয়ার। আমি শুধু একটু সাজিয়ে সংক্ষিপ্ত করে দিয়েছি এখানে। সবাইতো জানেন...তাহলে কেন দিলাম?? অনেকে হয়তো এখনো সম্পূর্ণ ইতিহাসটির হালকা কিছু জানে।

তাদের যেমন জানা উচিত তেমনি আমরা যারা জানি তাদেরো উচিত এই গর্বের ইতিহাস জানিয়ে দেওয়া। নিজের সেই দায়বদ্ধতা থেকেই এই লিখা। *** ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।