আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"২১শে ডিসেম্বর" ফুয়াদ উদ্দিন।

বিদ্রোহি রণ ক্লান্ত আমি সেই দিন হব শান্ত

জবাবদিহিঃ ”২১ শে ডিসেম্বর” একটি সরাসটি রাজনৈতিক উপন্যাস । রাজনৈতিক কাহিনীতে কাল একটি বড় বিষয় । রাজনীতি নিদিষ্ট সময়ের গন্ডীতে এক ধরণের আবেদন সৃষ্টি করে । সময়ের ব্যবধানে সেই আবেদন ফিকে হয়ে যায় । “২১ শে ডিসেম্বর“ সমসাময়িক রাজনৈতিক সংকটের উপর লেখা ।

আমলা,ব্যবসায়ী, কেরানী, ছাত্র, রিকশাওযালা, কৃষক কিংবা স্বামী-স্ত্রী, পিতা-পুত্র, মাতা-পুত্র, প্রেমিক-প্রেমিকা এবং সর্বপরি শ্রেণীগত সম্পর্ক সবকিছু উপন্যাসে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে । কৃষক-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের অবেগও অংশগ্রহণের বিষয়টি এই লেখায় রয়েছে । এই উপন্যাস হয়েছে শুধু ব্যক্তিগত রাজনৈতিক অঙ্গিকার এর কারণে “২১শে ডিসেম্বর” ৪র্থ পর্বঃ সরকারী চাকরী করে বরে কি আমরা আমাদের মতামতটাও বন্ধক দিয়ে দিয়েছি নাকি ? আমরা কি তাদের ক্রীতদাস যে কথামতো চলতে হবে ? চেয়ারে বসে ছটফট করতে লাগলেন মোতাহার । রাগে গজগজ করতে লাগলেন । ব্যাস কাল হরতাল ।

আমি অফিসে আসবো না। যা হয় হোক । হিসেবের খাতাটা বন্ধ করে টেবিলের এককোনে রেখে দিলেন তিনি । ওসব হরতালের হুমকিতে মাথা নোয়ালে দেশ চলবে না । হরতাল বন্ধ করতে হবে ।

সভা-সমিতি ভেঙ্গে দিতে হবে । রাস্তায় মিছিল বে-আইনি ঘোষণা করতে হবে । আমলাদের সামনে লম্বা-লম্বা ভাষণ দিলেন আলী আহমেদ। মন্ত্রীরা ছুটাছুটি করছে । এক মুহূর্তের জন্য বিশ্রাম নেই ।

নেতারা তর্কে-বিতর্কে মেতে উঠেছেন। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলছেন । যে করেই হোক হরতাল বন্ধ করতে হবে। পাড়ার নেতাদের পুলিশকে বলা হল - হরতাল মিছিল বন্ধ করতে হবে । ঘাড় নোয়ালেন - নামাজের সেজদা দেয়ার মতো ।

রাস্তায় পুলিশ-বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে । পুলিশ-বিজিবির গাড়ি ইতস্তত ছূটাছুটি করছে পথ –ঘাটগুলো জনশূন্য । একটা খালি জায়গা পেয়ে গামছা বিছিয়ে শুয়ে পড়লো আলম । দুটো শাড়ি এক শিশি আলতা কিছু চুড়ি একটা নাকফুল কিনেছে সে । বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে নানা কথা ভাবতে লাগলো – বিয়ের পর কেমন করে সংসার করবে সে কথা ।

ইচ্ছে করলে সে আজ গ্রামে ফিরে যেতে পারতো । কিন্তু যায়নি । কারণ সে হরতাল দেখবে । হয়ত আর শহরে আসা হবে না । দু-একটা কেনাকাটা বাকী রয়ে গেছে ।

একটা লাল লুঙ্গি কিনবে ভেবেছিল সে । চড়াদাম চায় । তাই কিনা হল না । যদি কমদামে পাওয়া যায় তাই । দু-একটা দোকানে ঘোরাঘুরি করেও মন মতো দামে কিনতে পারেনি ।

লাল লুঙ্গি জোহরা ভীষণ পছন্দ করে । আলম - শুয়ে শুয়ে দেখলো দুটো পুলিশের গাড়ি ছুটে চলে গেল রাস্তা দিয়ে । আলেয়া শোন! তোমার সঙ্গে আমার কিছু কথা আছে । নীরব দৃষ্টিতে প্রশ্ন করলো – কি বলুন ? ধরো যদি কাল আমি মারা যায় তাহলে ? মেয়েটি শিউরে উঠলো । চোখ-জোড়া মুহুর্তে ছলছল করে উঠলো তার ।

ছি- এসব কী বলছেন আপনি ! মরবে কেন ? উত্তরের অপেক্ষা না করেই সামনে থেকে সরে গেল আলেয়া । তুমি কি কাল বাইরে বেরুবে- না ঘরে থাববে ? বিছানায় শোবার আগে মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে স্বামীকে প্রশ্ন করলেন বিলকিস বানু । হ্যাঁ বেরুবো । বেরুবো না কেন ? না বলছিলাম কী – যদি হরতাল হয় তাহলে ! হরতালের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছি । হরতাল হবে না ।

তুমি নিশ্চিত থাকতে পারো । কিন্তু ছাত্ররা একটু আধতু গোলমাল করতে পারে । তাও আমরা ভেবে রেখেছি । ক্রিম ঘষা শেষ হলে বিলকিস বানু বিছানায় শুয়ে গেলেন । চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলেন আলী আহমেদ ।

ভোর হরার আগেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো আলমের । চেয়ে দেখলো পথ ঘাটগুলো তখনো জনশূন্য । দুটো কুকুর রাস্তার মাঝখানে ঝগড়া করছে। আলম উঠে বসলো । পুটলিতে রাখা জিনিসপত্রগুলো পরখ করে দেখলো একবার।

দুটো মেয়ে রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে ঝাড়ু দিচ্ছে । রাস্তার পাশে একটা কল থেকে হাত-মুখ ধলো আলম । দু-একটা রিকশার টুং টাং আওয়াজ শোনা যাচ্ছে । অটোরিকশাগুলো মানুষ ভর্তি করে ছুটছে উর্ধ্বশ্বাসে । হরতাল ।

কোথায় হরতাল ? আলম অবাক হয়ে তাকালো চারদিকে । সেলিম তার রিকশাটা নিয়ে রেরিয়ে পড়লো রাস্তায় । কালুকে আজ রাস্তায় রেরুতে দিস না । গোলমাল হতে পারে । কালু তার ছেলের নাম।

হরতাল সমর্থনে রাস্তায় মিছিল করার চেষ্টা । পুলিশ-বিজিবি সতর্ক অবস্থায় আছে । ছাত্ররা জড়ো হতে লাগলো বিভিন্ন জায়গায় । বেশী জড়ো হয়ে আছে রাস্তার মোড়গুলোতে । অফিসগামী মানুষগুলো হেটেঁ চলছে ।

কেউ রিকশা করে কিন্তু হরতাল সমর্থকদের দেখলো যাত্রীরা রিকশা থেকে নেমে যাচ্ছে । আনোয়ারা বেগম । ককটেলের আঘাতে মগজের কিছু অংশ উড়ে যায় । সাংবাদিক ওই দৃশ্যের বিবরণ দিচ্ছে টিভি চ্যানেলকে । আনোয়ারা বেগম সাধারণ মানুষ ।

একটি ব্যাংকে রান্নার কাজ করতেন । দেশে যা ঘটছে এর সঙ্গে যার কোনো সম্পর্ক নেই । জৈনিক সিএনজি অটোরিকশা চালক পেট্রোলবোমায় আগুনে দগ্ধ হন । পুড়ে যায় মুখমন্ডলসহ শরীরের ১৫ শতাং। টিভি চ্যানেলে আলোচনা হচ্ছে “জানুয়ারী-নভেম্বর রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৯০ জন নিহত ।

শুধু নভেম্বরে ৩৪ জন। অনৈতিক কুরুচিপূর্ণ নৃশংস স্বার্থান্বেষী ও ধ্বংসাত্মক রাজনীর প্রতি ধৈর্য এখন শেষ সীমায় ”। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল । জরুরি বিভাগের গেইট দিয়ে ঢুকতেই পূর্ব পাশে বার্ণ ইউনিট এর স্বতন্ত্র ভবন। ভবনের নিচে ৪/৫ জনের ছোট ছোট জটলা ।

করও মুখে চোখে আতঙ্ক চোখে পানি । আবার কেউ অঝোরে কাদঁছে । ফটকে আনসার বাহিনীর পাহারা । দু-তলা থেকে ভেসে আসছে গোঙঁনির শন্দ । কখনও যন্ত্রনায় –কাতর মানুষগুলোর চিৎকার ।

দুই-তলার ফটকে মানুষের ভিড়। বাম-পাশে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিই্উ) । ডান পাশে সাধারন ইউনিট । সেখানে বোমা আর আগুনে পোড়াঁ আহত মানুষ । শরীরের গভীর ক্ষত নিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন ভাগ্যহতরা ।

স্বজনদের চেহারা মলিন । ঘুমহীন ঢুলঢুল চোখ আর উসকুখুসকু চুল । আইসিইউ ফটকে তালা- প্রবেশ নিষেধ – রোগীদের সমস্যা হচ্ছে তাই প্রবেশ নিষেধ । অপেক্ষারত স্বজনদের কিছুক্ষণ পর পর জানানো হচ্ছে সংবাদ । চিকিৎসক এসে জানাচ্ছেন তাদের প্রিয় মানুষটি না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার খবরটিও ।

রোগীদের সেবায় নার্সদের দৌড়ঝাপঁ । চিকিৎসকদের ব্যস্ততা । আইসিইউ বিছানায় শুয়ে আছে সজ্ঞাহীন পোড়াঁ মানুষ । মুখে অক্সিজেন মাউস । হাতে পায়ে স্যালাইন ।

শরীরে সাদা ব্যান্ডেজ । মাথার পাশে মনিটরে নিদের্শনা আসছে রোগীর শারীরিক অবস্থা । বার্ণ ইউনিটের পরিবেশ স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে আসছে । স্বজন চিৎকার করে কাঁদছে আর বলছে “আত্মহত্যা করলে এর চেয়ে কম যন্ত্রণা কম হতো । অশুভ রাজনীতির ডলডলিতে আমার বোন কেন পুড়েঁ কয়রা হবে“।

পোস্ট-অপারেটিভ কক্ষে শুয়ে আছেন আগুনে দগ্ধ কিছু রোগী । যন্ত্রণায় কাতর কিশোরী ব্যাংকের শ্যামবাজার শাখার সিনিয়র অফিসার । আইসিইউতে আরও আছে কলেজ ছাত্র এবং পুলিশের এএসআই । তারা উভয় বিপজ্জনক অবস্থায় । বার্ণ ইউনিটে রোগীদের দেখতে – স্বাস্থ্য মন্ত্রী তথ্য মন্ত্রী যোগাযোগ মন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ।

আহতদের দেখে বক্তৃতা দিচ্ছে “অপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে”। (চলবে)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।