পথ শেষ কোথায় কি আছে শেষে পথের .. বুঝি তৃষ্ণার শেষ নেই নেই মনে ভয় লাগে সেই ..
মাটির পৃথিবী । আকারে গোল ,লক্ষকোটি মানুষ এর বসতি । কত দেশ,মহাদেশ নিয়ে পার করছে এক একটা দিন,সেই হাজার হাজার বছর ধরে। যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে মানুষ কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞানের আশীর্বাদে কমছে তাদের মধ্যে দূরত্ব। দিনে দিনে মানুষের কল্যাণে আবিষ্কৃত হচ্ছে নিত্যনতুন বিনোদনের মাধ্যম।
যাকে হাতের কাছে পেলে মুহূর্তেই জীবন্ত হয়ে উঠছে মানুষের আবেগ, কর্মব্যাস্ত সকাল, আর শান্তিময় রাত । আহ কত মজা ,ভাবল রিতা। আসলেইতো আধুনিক বিজ্ঞান যদি মোবাইল আবিষ্কার না করত তাহলে ভাইয়ার বন্ধু কি সেই সুদূর কঙ্গো থেকে বাংলাদেশের রাজশাহীতে তার সাথে দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার ১০ ঘণ্টা কথা বলতে পারত ? যদি কম্পিউটার না থাকত তাহলে প্রতিদিন ফেসবুকে জায়ান এর জন্য নিজের ছবি আপলোড করতে পারত ? যদি ওয়েবক্যাম না থাকত তাহলে কি যখন ইচ্ছা সে জায়ানকে চোখের সামনে দেখতে পারত ? পারতনা। ভাবল রিতা আপ্লুতমনে । বিজ্ঞানের কাছে তাই রিতা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।
যদি বিজ্ঞানের কথা বলার ক্ষমতা থাকত তাহলে রিতা সেই কবেই তাকে ওয়েবক্যামে সরাসরি ধন্যবাদ জানাত এ কথা রিতা তার বান্ধবীদের প্রতিদিন একবার করে বলবেই। কলেজে গেলেই আজকাল ওর বান্ধবীরা ওকে দেখলেই বলে থাক আর বলতে হবে না তোর আমরাই বলে দিচ্ছি , “ থ্যাঙ্ক ইউ সো সো সো...... মাচ মিস্টার বিজ্ঞান”! অন্ধপ্রেমিকা রিতা সেই খুশিতে সকালে আর একবার breakfast করায় তার বান্ধবীদের। afterall আরকেউ না হোক তার বান্ধবীগুলো তো বুঝে সে জায়ান কে কতটা ভালবাসে । এভাবেই দিন শুরু হয় রিতার। সারাটাদিন কলেজে চাতক পাখির মত উতলা হয়ে ক্লাস-ল্যাব গুলো শেষ করতেই ব্যাস্ত থাকে সে যেন ক্লাস শেষেই জায়ান দাড়িয়ে থাকবে কলেজের বাইরে ।
ব্যাপারটা ক্লাস এর আর সবার দৃষ্টি এড়ালেও রিতার ঘনীষ্ট বান্ধবী তিয়ার দৃষ্টি এড়ায়না। অন্য বান্ধবীরাও এটা লক্ষ করে কিন্তু ওরা রিতার এই অস্থিরতা উপভোগ করতে মজা পায়। আর একটা treat এর আশায়। কিন্তু তিয়ার কাছে এটার অন্যরকম অর্থ ধরা দেয় । তিয়া ঠিক বুঝতে পারেনা কি এমন কারণ থাকতে পারে যে রিতা দুনিয়াতে শুধু জায়ানকেই দেখতে পায়।
রিতার দুনিয়া এখন হয়ে গেছে mobile,laptop কেন্দ্রিক। সে দুনিয়ার কেন্দ্রে আছে জায়ান আর তাকে ঘিরে ঘুরছে রিতা আর তার কল্পলোকের স্বপ্নরাশি। জায়ানকে দেখেছে তিয়া, ফেসবুকে রিতার প্রোফাইলে । ছেলেটা সুন্দর ,অনেক সুন্দর আর অনেক handsome .তিয়া ভাবে সে নিজেও তো মেয়ে। কই যখন রিতার ভাইয়া তাকে propose করে তারতো উলটা ভয় লেগেছিল , বাবা-মা কি বলবে,ঘুরতে বেরহলে রাস্তায় যদি কোন পরিচিত মানুষের সাথে দেখা হয়ে যায় কি লজ্জায় পড়বে সে ,আর যদি সেই রিকশাওয়ালাটা তার মহল্লার হয় ! আর ভাবতে পারেনি তিয়া ।
অল্প বয়স,শিহরন তারও হয়েছিল । রিতার ভাইয়া তার কাছে এসে দাড়িয়ে যখন তাকে একটা গোলাপ দিয়ে বলেছিল এটা রাখলে বুঝব অপেক্ষা করার অধিকারটুকু দিলে। শুধু মাথাটুকু নাড়াতে পেরেছিল তিয়া, পরেরদিন অনেক সাহস সঞ্চয় করে বলেই ফেলেছিল আমি পারবনা । আর একটি কথাও বলেনি রিতার ভাইয়া। চলে গিয়েছিল মাথা উঁচু করে বড় বড় পা ফেলে ।
অনেকখানি অবাকও হয়েছিল তিয়া আর ভেবেছিল আসলেই বড়আপু সত্যিকথা বলে ,ছেলেরা এই বলে ভালবাসি ,না করলে আর একটি মেয়ের দিকে চলে যায়। ভাবে আর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে তিয়া ,কতবড় ভুল করতে গিয়ে একটুর জন্য বেচে গেল । যদি এই ছেলেকে হ্যাঁ বলে দিত ও? পরে পস্তাতে হত। কিন্তু বাসায় গিয়েই ভুলটা ভাঙ্গে তিয়ার । সে অন্য কাহিনী ।
বর্তমানে ফিরে আসে তিয়া । এতকিছুর পরও তিয়া কখনো ভোলেনি তার পড়াশোনার কথা,বড়আপু,বাবা-মার সাথে বিকালে ঝালমুড়ি খাওয়ার কথা,রাতে নিজের homework এর কথা। বাবা অনেক সাধার পর একটা cellphone সে নিয়েছে সত্যি কিন্তু ওটা বেশিরভাগ সময় বড়আপুর কাছে থাকে। সামনে HSC exam তাই ওটা যত কম use করা যায় ততই ভাল । সারাদিন রাতে একটা fixedtime সে আলাদা রেখেছে তার নিজের জন্য যখন সে কথা বলে রিশাদ এর সাথে ।
এখনো রিশাদ ভাইয়াই বলে তিয়া ,হাজারবার বলার পরেও শুধু রিশাদ বলতে পারেনা সে। এসব সবই চলছে নিয়ম মেনে । তাহলে রিতার বেলায় কেন নয়, আনমনে ভাবে তিয়া। কয়েকবার রিশাদ ভাইয়াকে বলবে ভেবেও বলেনি তিয়া রিতার কথা, এই অদ্ভুত অস্বাভাবিক পরিবর্তনের কথা । কোন নিয়ম নাই,যখন ইচ্ছা কলেজে আসে , নিজের আলাদা জগত নিয়ে একাই থাকে ।
তিয়া ওর সাথে কলেজে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু রিতা যখন কলেজে আসে তখন হয় তিয়ার ক্লাস চলে নয়ত যখন ফ্রি হয় তখন রিতা বান্ধবীদের cafeteria তে নিয়ে বসে থাকে। কথা বলার জন্য যে একান্ত পরিবেশ এর দরকার সেটা হয়ে ওঠেনা । অনেক দিন করে যাব যাব করে রিতাদের বাড়িতে যেতে পারছেনা তিয়া। আসলে লজ্জার কারনে পারেনা যেতে , যদিও রিশাদ থাকে ঢাকা তে । আজ decision নিয়েই ফেলে তিয়া আজই সে যাবে এবং কথা বলবে রিতার সাথে।
কি বলবে জানেনা কিন্তু বলতে হবে এটা তিয়া বুঝতে পারছে । মনটা এখন একটু শান্ত হোল তিয়ার । শান্ত পায়ে এগিয়ে গেল cafeteria দিকে ।
বিকালবেলাটা অদ্ভুত শিহরনে কাটে রিতার। জায়ান নাকি একটা surprise দেবে আজ ওকে ।
ওয়েবক্যাম খুলে অধীর আগ্রহে বসে থাকে রিতা । এখনো ৩০ মিনিট বাকি আছে জায়ানের আসার । চাইলেই রিতা অন্য কাজ করতে পারে । কিন্তু অপেক্ষারও একটা মধুর অনুভূতি আছে যা সে জায়ানের সাথে পরিচয়ের পর বুঝেছে । একটা মিনিটও কখনো মিস করতে রাজিনা রিতা।
অপেক্ষা দিয়ে অনুভব করতে পারে তার হৃদয়ের ব্যাকুলতা যা ওকে আনন্দ দেয় কখনো কষ্ট দেয়না । জায়ান ভাইয়ার online friend.ভাবে রিতা । ৬,৭ মাস আগে ভাইয়া ওকে ফেসবুকে একটা ID খুলে দেয় যখন ঢাকা তে যায় এবং বোনাসস্বরূপ ভাইয়ার পুরানো laptop টা দিয়ে যায় ওকে computer games খেলতে। যদিও মোটেও পুরানো নয় ,মাত্র ২ বছর আগে আব্বু ভাইয়াকে কিনে দেয় ওটা । Office এ ভাইয়া কে নতুন laptop দিয়েছে বলে এটার কোন দরকার পড়েনা ভাইয়ার ।
তারপর একদিন অচেনা একজন friend request পাঠায় রিতাকে । চেক করে দেখে ভাইয়ার সাথে mutual friendship । তাই রিতা তাকে accept করেনা, ignore ও করেনা । তাছাড়া ভাইয়ার এই বন্ধুটিকে ও চেনেনওনা । এরপরও ছেলেটি প্রায়ই ফেসবুকে তাকে message পাঠাতে থাকে ।
একদিন সাহস করে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে বসে রিতা “ভাইয়া তুই শ্রীমঙ্গলে গিয়েছিস কখনো ? উত্তরে নাবোধক মাথা দোলায় ভাইয়া”। প্রশ্নসূচক চাহনি দেখে সত্যি কথাটাই বলে ফেলে রিতা । “তাহলে শ্রীমঙ্গলে তোর ফ্রেন্ড থাকে কীভাবে ? ভাইয়া উত্তরে হেসে বলে আমার তো আমেরিকাতেও ফ্রেন্ড আছে। কিন্তু আমি কি কখনো আমেরিকা গিয়েছি পাগলী”? নিজের বোকামি বুঝতে পারে রিতা। চুপ করে যায়।
কিন্তু জায়ানের ব্যাপারে আরকিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয়না ওর । কিছু একটা বলতে হয় তাই বলে, “ভাইয়া আমাকে শ্রীমঙ্গল নিয়ে যাবি”? মনেমনে ভাবে আমি যদি accept করে ছেলেটির প্রোফাইল ইনফর্মেশন দেখে আবার delete করেদিই তাহলেইতো জানা হয়ে গেল ছেলেটির পরিচয়। ভাইয়াও কিছু বুঝবেনা, ছেলেটিওনা । যেই ভাবা সেই কাজ। প্রোফাইল খুলে অবাক হয়ে গেল রিতা।
অসংখ্য ছবি তোলা ,অসম্ভব সুন্দর ভঙ্গিমায় । প্রতিটি ছবিই অনন্য । দেখে মনে হয় মেয়েপক্ষের বাড়িতে পাঠানোর জন্য তুলেছে । মনে মনে হাসে রিতা । কয়েকটি ছবি save করে রাখে ও বান্ধবীদের দেখাবে বলে ।
তবে খারাপ না দেখতে, নিজের সাথে একমত হয় রিতা । রীতিমত টাস্কি খায় রিতা ছেলেটির প্রোফাইল ইনফর্মেশন দেখে । ছেলেটি পাইলট ! শান্তিরক্ষা মিশনের হয়ে এই মুহূর্তে আছে কঙ্গোতে । রিতা জানে জারা শান্তিরক্ষা মিশনে থাকে তারা দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ায় দেশের কল্যাণে । গর্বিত বোধ করে রিতা ,কেন জানেনা ভাল লাগতে শুরু করে তার।
আর ডিলিট করা হয়না । থেকে যায় জায়ান তার ফ্রেন্ডলিস্টে ।
সৎবিত ফিরে পায় রিতা রুমের দরজা খোলার শব্দে । তাকিয়ে একটু অবাক হয় তিয়াকে সামনে দেখে। দুষ্টুমি মাথায় চাপে রিতার ।
মুচকি হেসে বান্ধবীর মুখটা লজ্জায় লাল করে দেয় । “ কি গো সুন্দরী , তোমার তিনি তো আসেননি এখনো , তো শ্বশুরবাড়ি কেন এই অসময়ে ? যাও গিয়ে ছাদে দাড়িয়ে ফোনে প্রেমালাপ কর । ”কথাগুলো হজম করে তিয়া আনমনে , কারন আজ সে লজ্জা পেতে আসেনি এখানে । সব লজ্জা ভুলে বান্ধবীর জন্য এসেছে । তাকে কথা বলতে হবে রিতার সাথে,জায়ানের ব্যাপারে ।
তিয়া বলে, “ ডিস্টার্ব হলি নাকি ?”
রিতাঃ তা একটু হয়েছি , কিন্তু তোর জন্য মাফ ।
তিয়া বুঝতে পারে রিতা হয়ত জায়ানের সাথে কথা বলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল । এসেই ওয়েবক্যামটা নজরে পরেছে তিয়ার ।
তিয়াঃ তারপর বল , ফাইনাল কোচিং কোথায় করবি । কথা বলেছিস বাসায় এই ব্যাপারে ?
রিতাঃআরে এখনো তো অনেক সময় ।
বলব একসময় । তাড়াহুড়ার কি আছে ।
তিয়াঃহুম। নোটপাতি কিছু করতেছিস ?
রিতাঃহ্যাঁ মানে আছে ওইরকওমই। জেবিন দিয়েছে কিছু ।
ওগুলো বাদে করতে হবে ।
তিয়াঃতুই অন্যের নোট পড়বি ?!
রিতাঃঅসুবিধা কিসের। readymade আছে আর খামোখা কি দরকার ।
অবাক হয়েও প্রকাশ করলনা তিয়া। যে রিতা নিজের ভাইয়ার নোট ও পড়েনাই কোনোদিন ,নিজেই করছে নিজের নোট সে এখন সময় বাঁচিয়ে রাখছে আর একজনের জন্য!
রিতাঃতা তুই এখন এখানে কেন?মা ডেকেছে ? রিতা জানে মা মাঝে মাঝে তার ভবিষ্যৎ বউমাকে ডেকে আনে এটা , ওটা খাওয়ানোর জন্য ।
বোধহয় ছেলে কাছে নাই তাই পুত্রবধূকে খাইয়েই আনন্দ পায়। এজন্য তিয়ার ফ্যামিলি ও কিছু মনে করেনা ।
তিয়াঃনাহ। আসলাম আর কি । কোন কারণ নাই ।
তোর সাথে তেমন কথা হয়না ক্লাসে ।
রিতাঃহুম সত্যি । ভাইয়ার কথা ভাবতে ভাবতেই তো তোর দিন চলে যায় তাই বান্ধবীকে চোখে পড়েনা ।
তিয়া কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে লক্ষ করে রিতাকে । হটাত ওর মনে হয় রিতা ওকে এই মুহূর্তে চাইছেনা।
ও চলে গেলেই মনে হয় খুশি হয় রিতা। আর কিছু না ভেবেই উঠে দাড়ায় তিয়া । একটু অবাক হলেও রিতা মনে মনে খুশিই হয়।
তিয়াঃ যাইরে , বড়আপু আসবে এখনি বাইরে ।
আর কিছু না বলে পা বাড়ায় তিয়া ।
ব্যাপারটা অসামঞ্জস্য দেখালেও নিজের জগতে থাকা রিতা দ্বিতীয়বার ভাবেনা তিয়ার এই অদ্ভুত আগমন আর তার চেয়েও অদ্ভুত গমন এর কারণ সম্পর্কে। ভালই হোল। ।
আবারো ওয়েবক্যাম নিয়ে পড়ে রিতা। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখে জায়ানের ইউনিফর্ম পরা ছবিটি ।
ফেসবুক প্রোফাইল খুলে নিজের প্রোফাইলে যায় রিতা। জায়ানের সাথে relaation হওয়ার পর অন্য একটা ID ব্যাবহার করে রিতা যেটাতে ভাইয়া নেই । নাহলে ওর ছবিতে জায়ানের কমেন্ট দেখলে ভাইয়া নাজানি কি করত । আর ভাবতে চাইলনা রিতা । ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনি ভাবতে চায়না ও।
বর্তমান ওকে অনেক অনেক সুখী রেখেছে । ভবিষ্যৎ যখন আসবে তখন দেখা যাবে । আনমনে নিজের ছবির দিকে তাকায় রিতা। পাশে জায়ানের ছবিটা রাখে। মিলিয়ে দেখে কেমন মানিয়েছে দুজনকে ।
খারাপ না তো ! বরং জায়ানের পাশে ওকে ছাড়া আর কাউকেই মানায়না । একবার ভাবে রিতা, ছবিদুটোকে একসাথে বাধিয়ে আনবে যেমন বিয়ের সময় বর-বধুর ছবি বাধানো হয়। সাথে সাথেই চিন্তাটা নাকচ করে দেয় রিতা । ছবিটা ও রাখবে কোথায়? জায়ান বলেছে এখনি কেউ কারো পরিবারকে ওদের বিষয়টা জানানো উচিত হবেনা । রিতা ও মেনে নিয়েছে ।
পরিবার জানলে চুপি চুপি প্রেম করার মজা নষ্ট হবে। তাছাড়া জায়ান তো qualified ছেলে। ওকে না মানার কোন কারণই নেই । মাঝে মাঝে রিতার অনেক ইচ্ছা করে ওর এই handsome হিরোটিকে কাছ থেকে দেখার । কিন্তু সেটা সম্ভব নয় ।
জায়ান আছে অনেক দূরে কঙ্গোতে । ওর training চলছে এখন । দেশে ফিরবে আরও প্রায় ১ বছর পর । ভাবে রিতা তখন ওর hsc শেষ হয়ে হয়ত কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে যাবে তখন । জায়ান আসলে ওর সাথে সারাদিন ঘুরবে ,একসাথে খাবে ,কেউ বাধা দিবেনা ।
খুবই রোমাঞ্চিত হয় রিতা । এটাইতো প্রেমের মজা। দুরে থাকলে প্রেম বাড়ে , জায়ানও এমনটাই বলে । ওর ও নাকি খুব thrill feel হয় । কাছে থাকলে হয়ত এটা হতনা ।
মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে রিতা। একটা বই লিখবে ওর আর জায়ানের এই না দেখা প্রেম নিয়ে । ওর যখন অনেক টাকা হবে তখন বইটার একটা কপি পাবলিশ করবে ও আর ওটা পড়তে দেবে বিয়ের পর ওর বাসায় কেউ আসলে । ওদের দুজনের ছেলে মেয়েকেও পড়তে দেবে আর বলবে দেখ তোমাদের বাবা – মা আধুনিক যুগে হাজার হাজার মাইল দূরে থেকেও দুজন দুজনের খুব কাছে থেকেছে প্রতিটিদিন। আরও একবার রোমাঞ্চিত হয় রিতা ।
যখন ওয়েবক্যামে জায়ানের মুখটা দেখে ও ওর চারপাশে পিয়ানো মনে হয় জায়ান পিয়ানো বাজাচ্ছে আর ওকে ঘিরে রিতা নাচছে , এই পিয়ানোর সুর,আর ওর নাচের ছন্দ পৃথিবীর আর কেউ বুঝছেনা। এ সুর,এ ছন্দ যেন শুধু ওদের দুজনের জন্যই সৃষ্টি । চেনা সুরের ভালবাসার গানগুলো হৃদয় ছুয়ে দিয়ে যায় । ওর জানা নেই আর কারো এমন হয় কিনা। তিয়ার কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে ওরও এরকম হয় কিনা।
মুচকি হাসে রিতা বেচারি তিয়া , লজ্জায় লাল হয়ে যায় ভাইয়ার সাথে কথা বলার সময় । এমনি সময় তিয়া অনেক সিরিয়াস । চশমার ফাকে ওর বুদ্ধিদীপ্ত চোখদুটো সবসময় জলতে থাকে , কিন্তু ভাইয়া এলেই ঐ চোখের পাতা আর উপরে ওঠেনা । এটা নিয়েও জায়ান ওকে অনেক খেপায় । বলে তোমার ভাবির তো লজ্জা-শরম আছে , কিছু শিখে নাও নয়ত আমার ফ্যামিলি বলবে কিরে জায়ান বেহায়া বউ এনে দিলি শেষমেশ ! বলে আর হেসে কুটিকুটি হয় জায়ান ।
আর এদিকে রাগে গজগজ করে রিতা। সব রাগ গিয়ে পড়ে তিয়ার উপর। কেন বাবা তোমার এত লজ্জা । যার সাথে আজীবন থাকবা তার কাছে এত লজ্জার কি আছে বাপু বুঝিনা!জায়ান বলে বাঙালি মেয়েদের লজ্জায় তো বড় সম্পদ । নাহলে সে বাঙালি মেয়ে কিসের ।
কোথা থেকে আসে জানেনা ঠিক তখনই রিতা লজ্জা পায় জায়ানের কথায়! পরে এগুলা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দিন যায় রিতার । এভাবেই চলে যায় দিনের পর দিন ।
একসময় ওয়েবক্যাম কথা বলে ওঠে । ভাবনার জগত থেকে বিদায় নিয়ে বাস্তবতায় আসে রিতা । ওয়েবক্যাম না আসলে জায়ান এর কথা শুনেছে ও ।
অনেক্ষন পর ওকে দেখে মিষ্টি হাসি হাসে রিতা । সামনে বসে আছে ওর সপ্নপুরুষ । হাতে কি যেন একটা । ভাল করে লক্ষ করে দেখে ওটা একটা হাতির দাত । অবাক হয় রিতা।
কি এটা ? বিস্মিত প্রশ্ন
জায়ানঃ তোমার জন্য আনলাম । ভাল করে দেখ এটাতে তোমার নাম লেখা
আসলেই তো তাই ! খুশি হয় রিতা । জায়ান প্রায়ই এরকম ছোটখাটো উপহার দেখায় ওকে আর বলে যখন বাংলাদেশে আসব এগুলা এক একদিন তোমাকে দিব ।
রিতা আবারো একটুকরা হাসি দেয় । আজ অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে জায়ানকে ।
ও বলে ওঠে “ তুমি রেস্ট নাও আজ । অনেক ক্লান্ত মনে হচ্ছে। ”
জায়ানঃহুম। একটু । কিন্তু কথা বলি কিছুক্ষণ ।
আজ হয়ত রাতে আর কথা হবেনা
শুনে রিতার মনটা খারাপ হয় কিন্তু মুখের হাসিটা নষ্ট হতে দেয়না । মানুষটার আজ রেস্ট দরকার । এই সুযোগে ও নাহয় একটু পড়ালেখা করবে। সম্মতিসূচক মাথা দোলায় রিতা। তারপর অনেক কথা ,হাসি , নীরবতা দিয়ে ১ ঘণ্টা পার হয়ে যায় ।
রিতাই বলে জায়ান কে “ যাও এখন ঘুমাও। কাল কথা হবে। আমিও আজ একটু পড়ালেখা করি। ” শুনে খুশি হয় জায়ান । ও এটাই চাইছিল ।
অল্পকিছুদিন পরই রিতার HSC । এখন পড়ালেখার দিকে নজর বেশি করে দেওয়া দরকার। এটা জায়ানকেই দেখতে হবে । তাছাড়া নিজের শরীরটাও ভালনা । বিদায় নিল দুজন দুজনের থেকে ।
জায়ান গেল ঘুমাতে ,রিতা বিছানায় শুয়ে পড়ে চোখ বুঝল । যখন খুলল তখন আজকের করনিও রুটিনটা ওর মাথায় এসে গেছে ।
এভাবে জায়ানের কড়াকড়ি শাসন আর পরীক্ষার আসন্ন তারিখ দেখে আস্তে আস্তে রিতা মনোযোগী হতে লাগল । তিয়াও ব্যাপারটা খেয়াল করল এবং মনে মনে আল্লাহ্কে অসংখ্য ধন্যবাদ দিল ।
রিতা এতটাই মনোযোগী হয়ে গেল যে আস্তে আস্তে জায়ানের শরীরটা যে খারাপ হচ্ছে ও সেটা খেয়াল করলনা ।
জায়ান কিছুই বলেনা রিতাকে। শুধু সাহস যোগানো আর অবসর সময়টুকু ওকে চাঙ্গা করেই ও সন্তুষ্ট থাকল । একসময় রিতার এক্সাম শেষ হোল এবং যতটা ভাল হবে ভেবেছিল তার চেয়েও ভালভাবে শেষ করতে পারল। মনে মনে জায়ানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল কিন্তু মুখে কিছুই বললনা রিতা। কারন এক্সামের পর ও যখন জায়ানকে দেখল ওর মুখে কথা আটকে গেল।
এ কি চেহারা হয়েছে তার জায়ানের ! অভিমানে কিছুই জিজ্ঞেস করলনা রিতা। জায়ান তাকে কিছুই নাবলে এতদিন কীভাবে থাকল। কিন্তু এই অভিমান বেশিদিন টিকলনা । একসময় জায়ানকে হসপিটালইযড করা হোল । বন্ধ হয়ে গেল ওয়েবক্যাম ।
দিশাহারা হয়ে গেল রিতা । কি করবে কিছুই মাথায় আসেনা । কাকে বলবে সে? কে বলে দিবে তাকে তার জায়ানের খবর ? অগত্যা তিয়া জানাল রিশাদকে আগাগোড়া সব কথা। একটিও গোপন করলনা,একটিও বাড়িয়ে বললনা । বোনের কাছে এসে রিশাদ ভাষা খুজে পেলনা ।
কি বলবে অবুঝ এই ছোট বনটিকে যাকে সে এতদিন চিন্তেই পারেনি । ভাইয়াকে দেখে মুচড়ে মুচড়ে উঠল রিতা, কিছুই বলতে পারলনা । রিশাদ সিদ্ধান্ত নিল তাকে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল ,জায়ানের বাড়ি,জানতে হবে কি অবস্থা তার । তার এই ছোট বনটিকে সে এভাবে তিলে তিলে কষ্ট পেতে দেখতে পারেনা ।
দিন যায়, আর রিতা ভাবতে থাকে এই আধুনিক বিজ্ঞান কি তাকে পারেনা জায়ানের কাছে নিয়ে যেতে ।
হয়ত পারে কিন্তু তখন হয়ত অনেক দেরি হয়ে যাবে । আর ভাবতে পারেনা রিতা । ক্লান্ত হয়ে যায় তার অবসন্ন মস্তিষ্ক । একটু বিশ্রাম দরকার । আজ ২ দিন হোল ভাইয়া শ্রীমঙ্গল গেছে ।
কাল ফোনে কথা বলেছে ভাইয়া। বলেছে জায়ান ভাল আছে। দেশে ফিরছে । এখানেই treatment করে সুস্থ হয়ে আবার যাবে পরে । তিয়া ঘুমাতে বলেছে রিতাকে ।
ভাইয়া হয়ত কাল সকালেই চলে আসবে । তখন ভাইয়ার মুখে শুনবে ও সবকিছু । ঘুমিয়ে যায় রিতা তিয়ার কোলে । তাকিয়েই থাকে তিয়া , অপলক দৃষ্টিতে ,ঘুমন্ত মেয়েটির দিকে। কীভাবে বলবে একে যে জায়ান আর বেচে নেই , ম্যালেরিয়া জ্বরে মারা গিয়েছে ৪ দিন আগেই,কিভাবে বলবে ওর ভাইয়া যে বলেছে ওকে দেশে আনবে ওর ফ্যামিলি আসলে ওকে নয় আনবে ওর লাশকে।
না পারবেনা তিয়া। কিছুতেই পারবেনা এত বড় আঘাত দিতে । ও শুধু ওকে ধরেই থাকবে এখন । ওর প্রিয় বান্ধবীটির মাথা ধরে বসে থাকবে এভাবে যেন ওর ঘুম না ভেঙ্গে যায় । ।
উদাসী মেয়ে
ফেসবুক থেকে দেখার লিঙ্ক -
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।