[যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে পেশাদার মনোবিজ্ঞানী হতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই লেখা]
ফেসবুকে মাস্টার্স পড়ুয়া (ঢাবি) শুভ্র’র স্ট্যাটাস পড়লাম, ‘মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা করছে সবার মনে...among clinical…education…counselling and general….!!!’. যার অর্থ, সদ্য স্মাতক শেষ করা মনোবিজ্ঞানের ছাত্র-ছাত্রীরা মাস্টার্সে কী নিয়ে পড়বে বা কোন দিকে ঝুঁকবে, এই নিয়ে বহুত চিন্তায় আছে। মনের মধ্যে, মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার বল বা বালিশের মতো তিন-চারটা অপশনস ঘুরছে! তাদের এই বালিশ ঘুরাটা একটু কমিয়ে (বা বাড়িয়ে) দিতেই আজকের এই লেখা।
শুরুতেই সম্ভাব্য অপশনস গুলো নিয়ে কিছু কথা। হ্যা, যেমনটা শুভ্র বলেছে, বর্তমানে ঢাকা ভার্সিটিতে ক্লিনিক্যাল, এডুকেশন, কাউন্সেলিং এর ওপর বিশেষায়িত মাস্টার্স প্রোগ্রাম রয়েছে। সাথে সাধারণ মাস্টার্সতো আছেই।
এখানেই আবার থিসিস, নন-থিসিসের ভাগ আছে, আছে বিভিন্ন স্পেশাল পেপার নেয়ার ব্যাপার। প্রশ্ন হলো কোনটা আমি বেছে নিব? কোনটার ভবিষ্যৎ ভালো? অথবা কোনটার চাকরির বাজার বেশি? ইত্যাদি নানা প্রশ্নই মুলত মনের মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া সেই মিউজিক্যাল চেয়ারের প্রিমিয়াম অওনার (owner) । বুঝলাম, তারপর? ওকে, সামনে বাড়াই...
পেশাগত কোর্সগুলোর কথা দিয়ে শুরু করি। পেশাদার মনোবিজ্ঞানী হতে চাইলে এইসব স্পেশাল কোর্সে ডিগ্রী ও প্রশিক্ষণ নিতে হবে। শুধু ডিগ্রী নিলেই হয় না, ধারণ করতে হয় বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্যের।
নিজেকে জানার, চেনার আন্তরিক আগ্রহ, আর এর মাধ্যমে অন্যকে সহযোগিতা করার অকৃত্রিম ইচ্ছাই মুলত প্রধান। এর সাথে প্রয়োজন ধৈর্য ও পরিশ্রম করার মানসিকতা। কেননা, পেশাগত কোর্সগুলোতে নিয়মিত ক্লাশের পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে (যেমন, স্কুল, হসপিটাল ইত্যাদি) প্লেসমেন্ট, ক্লায়েন্ট দেখা, সুপারভিশন নেয়া, নানারকম প্রশিক্ষণ, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়াও কোর্সের অংশ হিসেবে রয়েছে গবেষণা প্রজেক্ট। কাউন্সেলিং এবং এডুকেশনাল সাইকোলজিতে কোর্স ফাইনাল পরিক্ষার পর প্রায় চার মাসের প্রাতিষ্ঠানিক ইন্টার্নশিপ করতে হয়।
আর এই সবকিছুই আনন্দের সাথে শেষ হয়, যদি থাকে মনোবিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা, মনোবিজ্ঞানী হওয়ার বাসনা। একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানীকে এন্টিভাইরাস সফটওয়ারের মতো আপডেট থাকতে হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি সব বিষয়ের ওপর আগ্রহ থাকতে হবে, জানাশোনা থাকতে হবে। চারপাশে প্রতিনিয়ত যে পরিবর্তনগুলো ঘটছে সে সম্পর্কে সজাগ থাকাও জরুরি। থিওরিতে বা বইয়ের পাতায় কী আছে বা কোন মনোবিজ্ঞানী কী বলেছে তা চরিতার্থ করলেই বা আত্মস্থ করলেই দক্ষ পেশাদার মনোবিজ্ঞানী হওয়া যায় না।
সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে থিওরিকে বিশ্লেষণ করে তা নিজের মতো করে বুঝতে হবে। হতে পারে সেটা অন্যের থেকে ভিন্ন। সেই ভিন্নতাই তৈরি করবে একজন নতুন ফ্রয়েড অথবা কার্ল রোজার্স। যে নিজের কাছে নিজে থাকবে খুব স্বচ্ছ। নিজের আবেগ, অনুভুতি, বিশ্বাস, মুল্যবোধের ব্যাপারে থাকবে তার পরিস্কার ধারণা।
বইয়ের পাতার কনসেপ্টগুলোকে নিজের সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে উপস্থাপন তথা ব্যবহার করবে নিজের জন্য, অন্যের জন্য। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে?
কি, খুব কঠিন লাগছে? হ্যা, বিষয়টাকে সিরিয়াসলি না নিলে কঠিনই মনে হবে। ফাকি-ঝুকি দিয়ে হয়তো পাশ করা যাবে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হবে না। অনেকটা হাতুরি চিকিৎসকের মতো অবস্থা! যারা শর্টকাটে পড়া শেষ করে শর্টকার্টে চাকরি পেতে আগ্রহী, তাদের এ দিকে না ঝোকাই ভালো।
এবার জানি, যারা পেশাদার ফিল্ডে আসছে তাদের সম্পর্কে।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ১৯৯৫ সাল থেকে স্বতন্ত্র বিভাগ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ ইতোমধ্যে অনেক ব্যাচ বেড়িয়েছে। কাঠামোগত ভাবে এই বিভাগ অনেকটা সুসঙ্গত। প্রতি বছর মাস্টার্স এবং এমফিল-এ ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে। পাশ করে বিভিন্ন হসপিটাল, ক্লিনিক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওতে কাজ করছে।
গবেষণা এবং শিক্ষকতার সাথেও অনেকে জড়িত। নির্দিষ্ট জবের পাশাপাশি অনেকে আবার প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন।
সময়ের সাথে চাহিদার ব্যাপকতা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগ ২০০৬ সালে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান এবং ২০০৯ সালে কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান এর ওপর তিন বছর মেয়াদী বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করে যার প্রথম বছরে মাস্টার্স এবং পরের দুই বছরে এম ফিল ডিগ্রী দেওয়া হয়। পরবর্তীতে এই দু’টি বিশেষায়িত কোর্স একত্রিত করে শিক্ষা ও কাউন্সেলিং মনোবিজ্ঞান নামে একটি নতুন বিভাগ চালু হয়েছে ২০১১ সাল থেকে। বর্তমানে এডুকেশনাল সাইকোলজির ৭ম ব্যাচ এবং কাউন্সেলিং সাইকোলজির ৩য় ব্যাচ ক্লাশ করছে।
ইতোমধ্যে শিক্ষা মনোবিজ্ঞান থেকে মাস্টার্সকৃতরা বেসরকারি স্কুল, স্পেশাল স্কুল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পে সুনামের সাথে কাজ করছে। অন্যদিকে, কাউন্সেলিং এর মাত্র দু’টো ব্যাচ মাস্টার্স শেষ করেছে। প্রথম ব্যাচের সবাই জব করছে। যেমন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, এনজিও, কিংবা হসপিটালে। আর নির্দিষ্ট কাজের সাথে সাথে সবাই নিয়মিত সুপারভিশন, প্রশিক্ষণের মধ্যে আছে।
এসব কোর্সের শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বেশ আন্তরিক। ছাত্র-ছাত্রীরাও নিজেদের মধ্যে সুসম্পর্কের মাধ্যমে সংগঠিত থাকে। যেটা তাদের পেশাদারিত্ব তৈরিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক বয়ান দিলাম! আশা করছি বিরক্ত হননি। এতক্ষণ মনযোগ দিয়ে লেখাটা পড়ার জন্য জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।
যেকোন মন্তব্য, প্রশ্ন বা সংশোধণী সাদরে গ্রহণ করা হবে। ভালো থাকবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।