আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাক মুভিটি যখন মুগ্ধতায় বাকহীন করে দেয়; মুভি রিভিউ: The Artist (2011)

© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। মুভিটি মুক্তির পরপরই এটি দর্শক আর সমালোচক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে দিয়েছিলো, সেই কান থেকে শুরু। অলরেডি গোল্ডেন গ্লোব আর ক্রিটিকস চয়েস অ্যাওয়ার্ডস সহ বিভিন্ন প্রথিতযশা অ্যাওয়ার্ড সিরেমানিতে ভুরি ভুরি পুরষ্কার বগলদাবা করে নিয়েছে, আসছে বাফটা আর অস্কারের নমিনেশানেও যে এটি মাঠ কাঁপাবে সেটা চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায়। ফ্রান্সের তৈরি The Artist মুভিটি সর্বপ্রথম গতবছর মে মাসের ১৫ তারিখে কান চলচ্চিত্র ফেষ্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয় আর সেখানেই হুলস্থুল ফেলে দেয় মুভিটি, অনবদ্য অভিনয়ের জন্য Jean Dujardin শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরষ্কার এবং Palme d'Or ক্যাটাগরিতে ডিরেক্টর Michel Hazanavicius নমিনেশান পান। এরপর মষ্কো, টরোন্টো, মন্ট্রিওল সহ বাঘা বাঘা সব চলচ্চিত্র ফেস্টিভ্যালে মাতিয়ে আসে মুভিটি।

পরে মুভিটি ১২ই অক্টোবর বেলজিয়ামে অফিসিয়ালি মুক্তি পায় এবং সীমি্ত আকারে ২৩ নভেম্বর হলিউডে মুক্তি পায়। মুভিটির সম্পর্কে আগে যা জানতাম তা হলো এটি সম্পূর্ণ সাদাকালো এবং একেবারেই নির্বাক একটি মুভি। এর আগে আমি মাত্র দুইটি নির্বাক মুভি দেখেছিলাম, কেমন জানি একটা অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি হয়েছিলো ঐসব দেখে। এমনিতেই সাদাকালো ক্ল্যাসিক মুভির প্রতি আমার ঝোঁকটা একটু বাড়াবাড়ি লেভেলের তাই এই মুভিটি দেখবার জন্য ভীষন উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছিলাম। কিছুদিন আগেই এই মুভিটির DVDSCR কোয়ালিটির প্রিন্ট পেয়েছিলাম, ভাবলাম একেতো সাদাকালো তার উপর আবার সাইলেন্ট ফিল্ম, তাই প্রিন্টের তোয়াক্কা না করে ঐ DVDSCR কোয়ালিটিরটাই নামালাম, আজকে দেখে বুঝলাম আমার DVDSCR কোয়ালিটি ডাউনলোড করা শতভাগ উশুল হয়েছে।

তবে সামনে ব্লু রে প্রিন্ট বের হলে আরেকবার দেখবো মুভিটা। এইবারে মুভিটার ব্যাপারে কিছুটা জেনারেল ইনফো দেই। মুভিটার রানিং লেংথ পাক্কা ১০০ মিনিট, মানে খুব বেশি বড়ো না, সংলাপ একেবারেই নেই, নির্বাক মুভি আগেই বলেছি। যারা নির্বাক মুভি আগে দেখেছেন তাদের ভালোই আইডিয়া থাকার কথা এইটাইপের নির্বাক মুভিগুলো কি রকম হয়, কিন্তু যারা আগে কখনো দেখেন কি তারা হয়তো ভাবছেন, সংলাপ ছাড়া সিনেমা দেখাবে কি ভাবে? কাহিনী বুঝবো কি করে? তাদেরকে বলছি, মনে করুন কোনো মুভি আপনি মিউট করে দেখছেন , তবে এইখানে একটা ব্যাপার আছে, নির্বাক মুভির ক্ষেত্রে গোটা স্টোরিটেলিংটাই এমনভাবে দেখানো হয় যেখানে সিকোয়েন্সের অভিনেতা-অভিনেত্রিরা কি বলতে চাচ্ছেন আপনি নিজে থেকেই তা আন্দাজ করে নিতে পারবেন, আর যদি নাও পারেন তাহলেও ক্ষতি নেই, সেই গুরুত্বপূর্ণ সংলাপগুলো একটি কালো পর্দায় আপনাদের আলাদা দেখিয়ে দেয়া হবে। যারা নির্বাক মুভির ইতিহাস জানতে চান তারা Silent Film এইখানে ক্লিক করে বিস্তারিত পড়াশোনা করে আসতে পারেন।

যাই হোক, The Artist (2011) মুভিটি একটি কমেডি ড্রামা যার মূলে রয়েছে চমৎকার রোমান্টিক স্টোরি। মুভিটির স্ক্রিনপ্লে লিখেছেন ডিরেক্টর Michel Hazanavicius নিজেই, (যাদের এই বিদঘুটে নামটি উচ্চারন করতে কষ্ট হচ্ছে তাদেরকে বলছি, উনার নাম বাংলায় মিশেল হাজানাভিসিয়াস)। The Artist পুরোদস্তুর নির্বাক মুভি এবং প্লটেও সেই নির্বাক চলচ্চিত্রের সময়কালকেই দেখানো হয়েছে। ১৯২৭ সালের কথা। হলিউডে তখন নির্বাক চলচ্চিত্রের ধুম, আর সেই নির্বাক যুগের মহানায়ক George Valentin পর্দা কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছেন, তার যশ খ্যাতির মহিমা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে, তিনি এককথায় সুপারস্টার।

George Valentin এর মুভি মানেই সুপারহিট। একদিন এক জাঁকজমক অনুষ্ঠানে George Valentin এর সাথে পরিচয় হয় সাদামাটা এক তরুনীর Peppy Miller এর। প্রথম দেখাতেই একজনকে আরেকজনের ভালো লেগে যায়। George Valentin এর সাথে দেখা করার আশায় একদিন প্রোডাকশান স্টুডিওতে হাজির হয় Peppy Miller, সেখানে হঠাৎ করেই নাচের এক্সট্রাদের জন্য অডিশান দিয়ে সিলেক্টেড হয়ে যায় সে। আস্তে আস্তে সুন্দরী Peppy Miller এক্সট্রাদের রোল থেকে নিয়মিত চরিত্রে অভিনয় করতে থাকে, এবং ততোদিনে হলিউডে চলে এসেছে পরিবর্তন।

মানুষজন নির্বাক থেকে আস্তে আস্তে সবাক চলচ্চিত্রের দিকে আগ্রহী হয়ে যায়, ততোদিনে টেকনোলজিও অগ্রসর হয়েছে। আর সেই পরিবর্তনের হাওয়ায় বদলে যায় George Valentin আর Peppy Miller এর ভাগ্য, নির্বাক যুগের সেই পুরোনো অভিনেতাকে আর কোনো পরিচালক নিতে চায় না, আর ঐদিকে Peppy Miller হয়ে পড়ে হালের সেনশেসান নায়িকা। আর এভাবেই নানান কাহিনীর মাঝে মুভিটি এগিয়ে যায়। আর সবশেষে চমৎকার একটি পরিণতির মাধ্যমে সিনেমাটি শেষ হয়। পুরা মুভিটি এক কথায় দুর্দান্ত লেভেলের।

মুভিটিতে সংলাপ নেই, কিন্তু সেই সংলাপহীনতাকে একেবারেই ঠুনকো করে দিয়েছে মুভিটির আউটস্ট্যান্ডিং মিউজিক কম্পোজিশান। সেই মিউজিক্যাল স্কোরগুলোই যেনো মুভিটির একেকটা সংলাপ। কোনো নির্বাক মুভিকে ব্রিলিয়ান্ট করতে দুইটা জিনিস লাগে আর তাহলো স্টোরিটেলিং আর অভিনেতাদের পারফরম্যান্স। আর এই দুই দিয়ে শতভাগ সফল The Artist মুভিটি। Michel Hazanavicius অসাধারন দক্ষতায় গোটা মুভিটি পরিচালনা করেছেন, মুভিটির প্রত্যেকটা দৃশ্যই অত্যন্ত মার্জিত এবং যথেষ্ট পরিমিত ও সৃজনশীল লেগেছে।

আর কাস্টিংয়ের ব্যাপারে কি বলবো, ইচ এন্ড এভরিওয়ান ডিড এ স্প্লেন্ডিড জব। বিশেষ করে কেন্দ্রীয় চরিত্রে Jean Dujardin আর Bérénice Bejo অসাধারন অভিনয় করেছেন। ভ্যালেন্টিন চরিত্রে Jean Dujardin এর পারফরম্যান্স রীতিমতো মুগ্ধ করার মতো, আমার ধারনা উনি এইবার অস্কার জিতবেনই, কেউ তাকে ঠেকাতে পারবে না। আরেকজনের কথা না বললেই নয়, এইখানে গোটা মুভিতে একটা কুকুর অভিনয় করেছে, তার পারফরম্যান্স আমায় যথেষ্ট আনন্দ দিয়েছে। আজকে আমরা এখন আইম্যাক্স আর থ্রিডি টেকনোলজি নিয়ে মাতামাতি করি, আর সেই সবাকের যুগে নির্বাক মুভি বানিয়ে এমন সফল এক্সপেরিমেন্ট করায় ডিরেক্টর ও প্রযোজককে স্যালুট দিতেই হবে।

মুভিটির মেকিং, অ্যাক্টিং পারফরম্যান্স, স্টোরিলাইন, স্টোরিটেলিং, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কষ্টিউম ডিজাইন সবকিছু মিলিয়ে একটা মডার্ন ক্ল্যাসিকাল মাস্টারপিস। এইবারের অস্কারের আসরে সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে পুরষ্কার জিতলে মোটেও অবাক হবো না। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৮.৫ এবং আইএমডিবি টপ ২৫০ তালিকায় এটি ১৬৯ তম স্থানে আছে, তবে অবধারিতভাবে এটি টপ ১০০ এর মধ্যে চলে আসবে একথা বলাই যায়। আমার পার্সোনাল রেটিং ৯/১০। এই মুভিটি আমি সবার জন্য হাইলি রেকমেন্ড করলাম।

ডাউনলোড লিংক: Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।