নিজ ভাবনাটা আজ আমি হারিয়ে দেই...স্বপ্নটা আজ নীল আকাশ ছুঁই... সময়কাল ২০০৮। ২৯ শে ডিসেম্বর।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখন অপেক্ষা ভোট গণনা আর ফলাফল ঘোষণার। রাত যত গভীর হচ্ছে একটি একটি আসনে বেসরকারি ভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম বলা হচ্ছে।
নির্বাচনী ফলাফলে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাঐক্যজোটের প্রার্থীদের জয় জয়কার আর নিরঙ্কুশ প্রাধাণ্য। নির্বাচনী ভাবধারাই বলে দিচ্ছে পরবর্তী সরকার গঠণ করতে যাচ্ছে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাঐক্যজোট।
অন্যের কথা জানি না। আমার পরিবার-পরিজন-আপনজনের অনেকে চোখের পানি ফেলছেন। এই অশ্রু বেদনার ছিল না।
এই অশ্রু ছিল আনন্দের। এই অশ্রু ছিল বিশ্বাসের, এই অশ্রু ছিল ভালবাসার।
দলের কোনো দায়িত্বে না থেকেও, দল থেকে কোনো প্রতিদান আশা না করেই এই অশ্রু ছিল ভালবাসার।
এই অশ্রু ছিল বিশ্বাসের। স্বাধীনতার স্বপক্ষের আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় জীবনে একটি গুনগত পরিবর্তন আনবে।
আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব অটুট রেখে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের পাশে দাঁড়াবে রাষ্ট্র নিজেই।
এই অশ্রু ছিল আনন্দের। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসছে। বঙ্গবন্ধুর সু্যোগ্য কন্যা হবেন প্রধানমন্ত্রী। দূর্নীতির স্বজনপ্রীতির আগাছা দেশ থেকে হবে সমূলে উৎপাট।
এখনো কিছু মানুষকে কাঁদতে দেখি। এই কান্না বেদনার। এই কান্না দুঃখের। এই কান্না আত্বমর্যাদাহানির।
সেও একজন বাংলাদেশী।
সে তো আমার ভাই। হোক না চোরাকারবারি, তাকে উলংগ করে যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী পেটায়, সে আঘাত তো আমার গায়ে ও লাগে, সে আঘাত যদি আমাদের গায়ে নাই লাগে আমরা কিসের বাংলাদেশী? কি নিয়ে আমাদের গর্ব?আমরা কিভাবে ভাই হলাম?
ফেব্রুয়ারী এলে তো আমরা আজো গেয়ে উঠি- ‘আমার ভাই এর রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী, আমি কি তা ভুলিতে পারি?’। নাহ। ভুলি নাই। ভুলব ও না।
আজকে আমার ভাইকে যখন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সীমান্তরক্ষী উলংগ করে পিটাচ্ছে তখন আমাদের সরকারের মাননীয় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলছেন –‘সীমান্তের ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়’।
ইত্যবসরে, ব্যাপক সমালোচনার উপেক্ষা করেই যশোর ধান্যখোলা সীমান্তে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে আরেক বাংলাদেশী যুবক কে। ফেলানী কে হত্যা করে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখবার ঘটনা অ খুব বেশি পুরোনো নয়।
যদি তারা চোরাকারবারি হয়ে থাকে, রাষ্ট্র অভিযোগ আমলে নিবে, অভিযান চালিয়ে, প্রয়োজনে সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করবে। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে।
কিন্তু অন্য রাষ্ট্রের গুলিতে কেন আমার ভাইকে-বোনকে মরতে হবে? অজ্ঞতার জন্যই হয়তো বুঝে উঠতে পারছি না আমাদের মাননীয় মন্ত্রী সাহেব কি বোঝাতে চাইছেন- “এসব অতীতে ঘটেছে, এখনো ঘটছে এবং ভবিষ্যতেও ঘটবে। এগুলো নিয়ে সরকার খুব বেশি চিন্তিত নয়। ” "সীমান্তের ঘটনা নিয়ে রাষ্ট্র চিন্তিত নয়"
২০০৮ এর নির্বাচনে আওয়ামীলীগ এর জয়ে অনেকে কেদেছে। নানা কারণে এখনও অনেকে কাদছে। এই দুই কান্নার পানি কিন্তু এক নয়!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।