আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনায় সেনাবাহিনীর গণতন্ত্রে বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে

Student : B.Sc in EEE সেনাবাহিনীর কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা নস্যাৎ এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সে খবর জনসমক্ষে প্রকাশের বিষয়টি এখন সারা দেশের বহুল আলোচিত প্রসঙ্গ। এ বিষয়ে দেশের সামরিক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সেনা নেতৃত্বের কয়েকজন গতকাল শুক্রবার বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আর আগের অবস্থায় নেই যে কেউ ইচ্ছা করলেই তাদের মধ্যে অতীতের মতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারবে। আমাদের সেনাবাহিনী যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তার বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে ওই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের ঘটনা সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশের মাধ্যমে। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে ৪০ বছরে বাংলাদেশে ২৯টি অভ্যুত্থান ও অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করে একজন বলেছেন, জেনারেল জিয়াউর রহমানের শাসন আমলেই ২২টি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার ঘটনা ঘটে। কিন্তু সে সময় বিষয়টি জনসাধারণকে জানানোর কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি।

এদিকে সেনাবাহিনীকে ঘিরে সর্বশেষ পরিস্থিতির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের অনেকে এই মুহূর্তে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাতে অনীহা প্রকাশ করেন। টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন না। কয়েকজনের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কেউ বলেছেন, বয়সের কারণে তাঁরা বাসা থেকে খুব কম বের হন। কোথায় কী ঘটছে না ঘটছে সে খবর রাখেন না।

কারো বক্তব্য, বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর বলে মন্তব্য করা ঝুঁকিপূর্ণ। এতে নিজের নিরাপত্তা বিঘি্নত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি কালের কণ্ঠের প্রথম পাতায় 'সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলার অপচেষ্টা' শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ সংবাদ প্রকাশের পর ওই দিন বিকেল ৩টায় সেনা সদর দপ্তর ঢাকা সেনানিবাসের অফিসার্স ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর চিফ অব জেনারেল স্টাফ (সিজিএস) লে. জেনারেল মো. মইনুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেনা কর্মকর্তা এবং আইএসপিআরের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পিএস (পার্সোনাল সার্ভিস) পরিদপ্তরের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাসুদ রাজ্জাক সেনা সদরের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।

সেনা সদরের পক্ষে বলা হয়, 'অবসরপ্রাপ্ত এবং সেনাবাহিনীতে কর্মরত কতিপয় ধর্মান্ধ কর্মকর্তা কর্তৃক অন্যদের ধর্মান্ধতাকে পুঁজি করে দুরভিসন্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সেনাবাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার একটি বিফল প্রয়াস চালানো হয়। এই অপপ্রয়াসটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় প্রতিহত করা হয়েছে। ' এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) আতিকুর রহমান বলেন, '২২ বছর ধরে সেনাবাহিনী সম্পর্কে তেমন কোনো খবর রাখি না। এখন বাড়ি থেকেও আর বের হই না। তবে সংবাদমাধ্যমে অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার যে খবর জেনেছি, তা ভালো লাগার কথা না।

' ডিজিএফআইয়ের সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) এম এ হালিম বলেন, 'যোগাযোগ না থাকার কারণে সেনাবাহিনীর বর্তমান অনেক বিষয়ই আমার জানা নেই। অতীতে বাংলাদেশে অনেক সেনা অভ্যুত্থান বা অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে। জিয়াউর রহমানের সময়েই কমপক্ষে ২২টা অভ্যুত্থান চেষ্টা হয়েছে। এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আমাদের সেনাবাহিনী অনেক ভালো কাজ করেছে এবং করছে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। সেনা সদর সংবাদ সম্মেলনে বিপথগামী কিছু সেনা সদস্যের সাম্প্রতিক অভ্যুত্থান চেষ্টা সম্পর্কে যা বলেছে, তা নিশ্চয়ই সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বলেছে। জনসমক্ষে বিষয়টি প্রকাশ করাও একটি ভালো উদ্যোগ। না হলে নানা ধরনের গুজব থেকে জনগণ নানা রকম ধারণা পেত। ' সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম সফিউল্লাহ বীর-উত্তম বলেন, 'যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন একটি পর্যায়ে রয়েছে, তখন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বিষয়টি অন্যদিকে মোড় নেওয়ানোর জন্য দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে।

সেনাবাহিনীতে সাম্প্রতিক ওই ঘটনা এই অপচেষ্টারই অংশ। আমাদের সেনাবাহিনী এখন ১৯৭২ সালের মতো শিশু-কৈশোরকালে নেই। অনেক বছর, অনেক চড়াই-উৎরাই পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন বহির্বিশ্বেও প্রশংসিত। তারা যে সুনাম অর্জন করেছে, তা তারা নষ্ট করতে চায় না। আমি সেনা গোয়েন্দাদের এ বিষয়ে এই জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই যে তাঁরা সজাগ এবং সময়োচিত পদক্ষেপ নিয়েছেন।

সেনা সদর বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যম জনগণকে জানানোর ব্যবস্থা নিয়েও একটি প্রশংসার কাজ করেছে। এতে সেনাবাহিনী যে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। ' বাংলাদেশ রিটায়ার্ড আর্মস ফোর্সেস অফিসার্স অ্যাসোশিয়েশন (রাওয়া)-এর প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল (অব.) জামির ডি আহসান বীরপ্রতীক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। নিজের নিরাপত্তা ও অন্যান্য বাস্তবতার কারণে এখন অনেক কিছুই সত্য হলেও বলা যায় না। আবার অনেক কিছু আমার জানাও নেই।

' ডিজিএফআইয়ের আরেক সাবেক প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) সাদিক হাসান রুমি বলেন, 'সেনাবাহিনী ওই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা নস্যাৎ করে এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশের ব্যবস্থা করে খুবই ভালো কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। এভাবে বিষয়টি প্রকাশ না করা হলে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত। ' ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাফায়েত বলেন, তিনি বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। বিষয়টি সম্পর্কে আরো প্রতিক্রিয়া জানতে সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) নুরুদ্দিন খান, সামরিক বিশেষজ্ঞ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খান ও মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁদের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহেদুল আনাম খানের বাসায় টেলিফোন করা হলে জানানো হয়, তিনি সেনাবাহিনীর এই বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাবেন না বলে নিজের কাছে মোবাইল ফোন রাখেননি।

লে. জেনারেল (অব.) নুরুদ্দিন খান ব্যস্ততার কথা জানিয়ে টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন। মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের টেলিফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি সুত্রঃকালের কন্ঠ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.