আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যাথিত হৃদয়ে আর্তনাদ জামায়াত পন্থিদের উদ্দেশ্যে..............

...............................................................................................................................................................। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ আজ যে দেশের অধিকাংশ জুড়ে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। মনে হচ্ছে ক্রমাগতই এদের অনুসারির সংখ্যা বেড়ে চলেছে। আর দেশের একটি নির্দিষ্ট জাতিতো তাদের হয়েই আছে। এই শ্রেনীটির হাতও অনেক বড়।

তাদের আমরা সমাজের কর্তার চোখেও দেখে থাকি। তারা অধিকতর সম্মানযোগ্য। এতক্ষনে হয়ত এই শ্রেনীটিকে আপনি চিনেও গেছেন তারা হলেন ইমাম সমাজ। এদের ঘনিষ্ঠ সহোচর হিসেবে আমরা মাদ্রাসার ছাত্র,শিক্ষকদেরও ধরতে পারি। যারা ইতমধ্যে তাদের মায়াজালে আমাদের মুরুব্বি শ্রেনীর অধিকাংশকে বন্দি করতে সক্ষম হয়েছেন।

তারা এমন এক যাদু বহন করে বেড়ান যার কাছে পুরো মুসলমান জাতি বন্দি। তাদের ধর্মজ্ঞান যাদু আমাদের সাধারন সহজ সরল মুসলমানদের সহজ্র কাবু করে ফেলতে বাধ্য। আমরা বাঙ্গালী মুসলমানরা অনেক বেশি আবেগী। ধর্ম ভয় আমাদের অনেক তবু দুর্নীতি বন্ধ করিনা,ঘুষ খাওয়া ছাড়তে পারিনা,হজ্জ করে এসেও সুদ খেয়ে যাই এবং দিয়ে যাই,পন্যে ভেজাল দিই,বেশি মুনাফা নিই,একজনের নামে আরেকজনের কাছে কুতসা রটাই…অথচ আমাদের ধর্ম ভয় অনেক। আমরা ধর্ম ভয়কে শুধু কাজে লাগাই কোন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে।

হায়!!! সেদিন শুক্রবার মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়তে গিয়েছে। ইমাম সাহেব নামাজ শেষ করে মোনাজাতে গেলেন। মোনাজাত করছেন। আমাদের প্রতিদিনের গতবাধা প্রার্থনা শেষে তিনি বলে উঠলেন-হে আল্লাহ আমাদের দুইজন লোক(দেলোয়ার হোসেন সাঈদী এবং গোলাম আযম/মতিউর রহমান নিজামী) ষড়যন্ত্রমুলক মামলায় আটক আছেন আপনি তাদের হেফাজত করেন,ষড়যন্ত্র মুলক মামলা থেকে তাদের উদ্ধার করেন। আমার কানে ইমাম সাহেবের এই দোয়া বজ্রের মত আঘাত হানলো,বুকের ভিতরে কেমন করে উঠল।

এতক্ষন ধরে ইমাম সাহেবের সাথে সকল দোয়ায় আমীন আমীন বলে আসলেও এই দোয়াটির পরে আমি যেন আমীন বলার সাহস হারিয়ে ফেলেছি। । বাকিদের অধিকাংশই তাদের আমীন আমীন বলা থেকে বিচ্যুত হল না শুধুমাত্র আমি ছাড়া। মোনাজাত শেষ হল। ইমাম সাহেব একবারও মোনাজাতে বললেন না-হে আল্লাহ আপনি বাংলাদেশের সার্বভোমত্বকে রক্ষা করেন বা দেশকে সুষ্ঠভাবে পরিচালনার তওফিক দান করেন বা দেশে যেন ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় সে তওফিক দান করেন বা আমাদের রাজনীতিবিদদের দেশের কল্যানে কাজ করার তওফিক দান করেন বা…।

না ইমাম সাহেব কোন দোয়ায় করলেন না। নামাজ শেষের পরিস্থিতির দিকে আমি জোর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলুম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটল না। বুঝলাম ব্যাপারটি শুধু মাত্র আমাকেই ভাবিয়ে তুলেছে আর কাউকে নয়। একই পরিনতি এর পরের শুক্রবারের জুম্মার নামাজের মোনাজাতেও দেখা গিয়েছে।

এবং এখন পর্যন্ত কোনরুপ অপ্রীতিকর ঘটনার আওয়াজ পাওয়া যায়নি। মসজিদের ইমাম নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা সত্যিই কাম্য নয়। তবে মসজিদ পরিচালনা কারী বিজ্ঞজনেরা পরবর্তিতে ইমাম সাহেবকে বুঝিয়ে ভবিষ্যতে অপ্রিতিকর ঘটনা এড়ানোর চেষ্টা করলে বোধহয় ভালো হত। ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এতে কারো দ্বিমত নেই। সেখানে অনেক বাঙ্গালী রাজাকার পাকবাহিনীদের সহযোগিতা করেছে এতেও কারো দ্বিমত নেই।

কেননা তারা আমাদের পথঘাট ভালো করে চিনতেন না,কোন বাড়িতে মুক্তিবাহিনী থাকে তারা জানতেন না। তখনকার জামায়াতে ইসলামী রাজনীতির সাথে ওতপ্রতভাবে জড়িয়ে ছিলেন-জনাব গোলাম আযম,দেলোয়ার হোসেন সাঈদী,মতিউর রহমান নিজামী সহ আরো অনেকে। মুক্তিযুদ্ধে এদেশের মানুষের উপর গনহত্যা,ধর্ষন আর অত্যাচার ও লুটের দৃশ্য বর্তমান প্রজন্ম টেলিভিশন আর্কাইভ,সিনেমা,পত্রিকা,বই-পুস্তক,দাদা-দাদী বা মুক্তিযোদ্ধাদের মুখ থেকে শোন গল্পের মধ্যদিয়ে কিছুটা নয় বেশ ভালোভাবেই আচ করতে পেরেছে। এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তারা দৃঢ়তার সাথে সোচ্চার। সে তুলনায় যারা সচোক্ষে মুক্তিযুদ্ধ অবলোকন করেছেন বা ভুক্তভোগী তারা আরো বেশী সোচ্চার।

সর্বোপরি দেশের অধিকাংশ জনগনই এই বিচারের পক্ষে এবং তা হওয়া উচিত। একশ্রেনীর দল স্বার্থ হাসিলে এ বিষয়ে মুখ খুলতে চায়না বা নিজের সাথে জোর করে এ বিচারের পক্ষে নিজেদের রাখতে চায় সাথে অনেক শর্ত জুড়ে দিয়ে। আর তাদের অনুসারী আমাদের একশ্রেনীর মানুষও,তাদের ভাষ্যও এক। আর একশ্রেনীর মানুষতো চায়ই না,কেননা অভিযোগের ভার যে তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিকে। তাদের অভিযোগ এ বিচার সুষ্ঠ হচ্ছেনা।

আমার প্রশ্ন-স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পর এসে কেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে হচ্ছে?-এখন এক পক্ষ যখন বিচারের উদ্যেগ নিয়েছে আপনারা কেন অভিযোগের তীর ছুড়ছেন?আপনারা ক্ষমতায় বেশী ছিলেন,আপনারা এ বিচার শুরু করে জনগনের বাহবা কুড়াতে পারেননি কেন?এখন অন্যদের বাধা দিচ্ছেন। এটাতো দলীয় দাবী নয়,এটা একটা জাতীয় দাবী। যাই হোক,তর্ক বিতর্ক আমার কাজ নয়। সম্প্রতি এ বিচারের দাবীতে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের তিনজন নেতাকে প্রধান আসামী হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে পুরোপুরি মিথ্যা নয় তাও আমাদের সবার জানা।

এতক্ষন ধরে এতবকবকানি করে যে কথাটি বলতে চেয়েছি তা হল- ইমাম সাহেবেরা সমাজের কর্নধারদের মধ্য অন্যতম। সকলের সম্মানের পাত্র। একটা সমাজকে বদলে দিতে একজন ইমাম গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করতে পারেন। তাদের উচিত হচ্ছে কারো পক্ষপাতিত্ব না করা। কেননা তারা পক্ষপাতিত্ব করলে পুরোসমাজ তাদের দিকে হেলে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।

তাদের উচিত হচ্ছে সমাজে,দেশে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করে যাওয়া। ইসলাম অর্থ শান্তি। ইসলাম শান্তি চায়। অথচ আমাদের এখনকার ইমামগন সমাজে শান্তি কামনার কথা মুখে বললেও অশান্তির পরিস্থিতি নিজেরাই তৈরী করেন। কেন তাদের পক্ষ নিতে হবে সাঈদী,নিজামী বা গোলাম আযমের?তাদের বাহ্যিক দৃষ্টি দেখে এতটাই অন্ধ ভক্ত হয়ে গেলেন?ইসলামে তো স্বদেশপ্রেমের কথা বলা আছে,তারা যে মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বদেশ প্রেম ভুলে গিয়ে অতিথি প্রেমে মুগ্ধ ছিল এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন?তারা অপরাধী হলে তাদের বিচার হতেই হবে।

আর যদি নিরপরাধ হন অবশ্যই কেউ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না। চোর চুরি করে শেষ জীবনে হজ্জ করে ভালো হয়ে গেলে সবাই কি তার চুরি জীবন ভুলে যাবে?তার বৃহৎ চুরির কারনে যে একটা পরিবার ধ্বংস হয়ে গেল বা এখনো যন্ত্রনা বয়ে বেড়াচ্ছে তার কিছুই হবেনা?তার কোন শাস্তি হবেনা?যদি সে ভালোই হয়ে গেল তাহলে সে তো তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হতে পারতো?মুখ ফুটে বলত আমি আমার ভুলের জন্য ক্ষমা চাচ্ছি?কই একবারও তো বলেনি?বারংবার সৃষ্টিকর্তা আর ইসলামের দোহাই দিয়ে সহজ সরল সাধারন মানুষের মন কেড়ে নিচ্ছে। ইমাম সমাজসহ তাদের অনুগত আরো যারা আছেন যেমন মাদ্রাসার ছাত্র শিক্ষক,জামায়াত ভক্ত অন্যান্য যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্য বিনীত অনুরোধ জিহাদের নামে জঙ্গি হামলার সমর্থ করে ইসলাম কায়েমের নাম করে অরাজকতা সৃষ্টি করবেন না। জনগনের মনে/সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করবেন না। ইসলাম শান্তির কথা বলে।

আপনাদের ইসলামপ্রীতিকে কাজে লাগিয়ে সাধারন জনগনদের সমাজে শান্তি কায়েমের প্রচেষ্টা চালান। আপনাদের শক্তি অনেক বড়। আপনারা অতি সহজে সাধারন মানুষের মনে প্রবেশ করতে পারবেন। রাজনৈতিক হঠকারিতা পরিহার করে দেশে ভালো কাজের সাথে নিজেদের যুক্ত করুন। সব ধর্মের মানুষের সাথে সৌহার্দ্যপুর্ন সম্পর্ক বজায় রাখতে জনগনদের উপদেশ দিন।

শুধু শুধু রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব করে শান্তির ধর্ম,সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম নিয়ে খেলা করবেন না। সমাজের সহজ সরল মানুষদের মনে ইসলামের ভয় ঠেকিয়ে বিভক্ত করবেন না। দেশের স্বার্থে,সমাজের স্বার্থে,শান্তির জন্য যে দলই হোক ভালো কাজের সমর্থন দিতে জনগনকে অনুরোধ করেন। রাজনৈতিক হঠকারিতার পরিবর্তে ইসলামের শক্তি দিয়ে পারলে জনগনের মন থেকে হিংসা,ঘুষ,রাহাজারি,দুর্নীতি,…দূর করার চেষ্টা করেন। তবেই সমাজে/দেশে শান্তি আসবে,সেটাই হবে ইসলামের জন্য সুসংসবাদ।

সবার আগে সমাজে/দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। যদিও আপনারা নিজেরাই হিংসার সাথে বসবাস করছেন। দেশ আজ রাজনৈতিক বৈষম্য বিভক্ত। আপনাদের কাছে করজোড়ে অনুরোধ এ বৈষম্য থামান!আপনারাই পারবেন সহজ সরল মানুষদের মন থেকে এ বৈষম্য দূর করতে। আর এ বৈষম্য দূর হলে যে কিছুটা হলেও দেশে শান্তির বিরাজ করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।

রাজনীতির মাঠে কে ভালো কে খারাপ তা আপনাদের ধরিয়ে দেয়া কাজ নয়,এ ভার জনগনের,তারা তাদের বিবেক দিয়ে বিচার করবে। আপনাদের উচিত জনগনকে ভালো কাজের দিকে ধাবিত করা,ভালো কাজের সঙ্গে থাকতে আদেশ করা,সমাজে যে ভাবে শান্তি ফিরিয়ে আসবে সে পথে চলা। একটা সমাজের মানুষের চলাফেরা,সৎ কর্মকান্ড দিয়ে সে সমাজে শান্তি ফিরিয়ে আনা শতভাগ সম্ভব। এর জন্য রাজনৈতিক দল দরকার পড়ে না। আপনাদের সহযোগিতাই সর্বশ্রেষ্ঠ।

নিজেদের ভিতরকার ময়লা পরিষ্কার না হলে,রাজপথে রক্ত ঝরিয়ে কোন লাভ নেই। যে সমাজে সর্বত্রই বিশৃংখলা বিদ্যমান,অশান্তির জয়জয়কার,সে সমাজে ইসলামের কোন দাম নেই। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.