মাথায় অনেক গল্প আসে; কিন্তু লেখার মত পর্যাপ্ত ধৈর্য-শ্রম-অধ্যবসায় নেই। গল্পগুলোকে তাই ছোট করে কবিতা বানাই.... (১৩ জানুয়ারি'র পিকনিক। যাকে যা করতে দেখেছি আর যাকে যা বলতে শুনেছি - সবটা লিখে ফেলছি। কেউ মাইন্ড করলে আমি দায় নেব না!!!!)
কাঠের তলোয়ার (আরম্ভ পর্ব)
এবার আসি, কাঠের তলোয়ার নাম'টা কিভাবে মাথায় আসলো সেকথায়। গল্প-গানে কখন যে স্পটে পৌঁছে গেলাম টের পেলাম না।
বাস থামার পরই আস্তে আস্তে সবাই নামতে শুরু করল। একটা তিন রাস্তা'র মাঝে এসে দাঁড়িয়ে সবাই কেমন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল। বুঝতে পারছিলাম এটা স্পট না, আরও ভেতরে যেতে হবে, তবে মাঝের এ সময়টুকুও কেউ নষ্ট করতে রাজি না ! রাস্তা'র মাঝেই ক্রিকেট, ফটোসেশন। মওকা দেখে এক ফেরিওলা ভ্যান করে কাঠের সামগ্রী নিয়ে এল - বেত, লাঠি, তলোয়ার...
এ হল কাঠের তলোয়ার আমি কখন দেখলাম সে কথা, তবে পোস্টের নাম কেন দিলাম, সেটা আরেকটু পরে বলব। সময় আসুক।
তো ওখানে সবাই নিজেদের মত ঘুরছিল। পাশে একটা মাঠে কোনও আনুষ্ঠানিক ক্রিকেট ম্যাচ হচ্ছে, ধারাভাষ্যকারও আছেন! এবং তিনি বাংলা ধারাভাষ্যকারদের মান রক্ষা করেছেন এ কথা হলপ করে বলতে পারি। হঠাৎ হঠাৎ শুনি, "পরের বল, চমৎকার শট খেলেছেন.... আরে না ! উনি তো বোল্ড !", "সম্ভবত বোল্ড!" - বোল্ড আউট নিয়েও তার ব্যাপক কনফিউশান, ছিল বেশ খানিকক্ষণ ধরেই !
(আমি জানি না আমি ছাড়া আর কেউ ওসব খেয়াল করেছেন কিনা, আমি একা অনেক হেসেছি)
আমরা এমন বিনোদন ছেড়ে আবার বাসে উঠলাম। স্পটে পৌঁছে, অবাক ভাল লাগা ! জিসান ভাই বললেন, "দারূণ না শাহেদ? দেখো তিনদিকেই কিন্তু লেক !" সত্যিই তাই, আমরা যে পথে এসেছি সেদিক ছাড়া তিনদিকেই টলটলে জল !
ছবিতোলক আছে বেশ ক'জন, মডেলের তো অভাব নেই - শুরু হয়ে গেল ! আমি বেশ খানিকক্ষণ একা ঘুরলাম। একটা ছোট বাঁধানো ঘাট আছে, বেশ ফটোজেনিক একটা জায়গা।
এদিক ওদিক ঘুরছি। হঠাৎ দেখি ক্লাইন্ট ইস্টউড একটা গাছে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ! ওয়েস্টার্ন গেটাপে স্বর্ণমৃগ বেশ আলোড়ন তোলেন ! আমি ছবিতোলক না, তবু উনার পারমিশন নিয়ে এই ছবি তুললাম। (পরে আরও অনেকের ছবি তোলার ইচ্ছা ছিল, তবে একবার গীটার নিয়ে বসার পর আর উঠতে পারিনি)
এরপর সম্মিলিত জনতাকে মঞ্চের কাছে জমায়েত করলেন ছোট মির্জা, শিপু ভাই, মাহি আর সবাই। জিসান ভাই তার অন-ঐতিহাসিক ভাষণে সবাইকে একদম সহজ-সচ্ছন্দ করে দিলেন (আমার মত অমিশুক ছাড়া বাকিরা বেশিরভাগই আগে থেকেই বেশ সচ্ছন্দ ছিল যদিও)। একজন একজন করে সবাই পরিচিত করালেন নিজেদের।
আমার ইচ্ছা ছিল পালিয়ে বাঁচি ! ফারজুল ভাই ধরে রাখলেন ! আমি উঠে নিজের নাম বলেই নেমে গেলাম। স্পষ্ট মনে আছে, আমি স্পষ্ট বলেছি, তবু কেউ নাকি শোনে নাই, আবার উঠতে হল। আমার এসব মোটেও ভাল্লাগে না।
এসবের পর, সবাই নিজেদের মত ছড়িয়ে পড়ল, কাছাকাছিই। একদল নামল ক্রিকেট খেলতে, আপু'রা-ভাবি'রা বসে গেল নিজেদের আড্ডায়।
ছবিতোলকেরা স্বর্গে গেলেও বোধহয় ছবিই তুলতে যাবেন, এখানেও ব্যাতিক্রম না ! নষ্ট কবি আমার পাশে বসে অর্গানে সুর তুললেন। সি-মেজর স্কেল। আমিও তাল মেলাতে বসলাম রিদমে।
খানিক বাদে আশেপাশে অনেকেই আসলেন। ছোটমির্জা, মাহি, রুমকী আপু, নিশাত রহমান, আশকারি, ফারজুল ভাই, অন্তরা মিতু, পুশকিন ভাই, গুরুজী, সবুজ ভীমরুল আরও অনেক অনেক অনেকে...যাদের সবার নাম হয়তো জানি না, বা এখন মিস করে যাচ্ছি।
আমি চরম হতাশ হয়ে আবিষ্কার করলাম, সবার মাঝে আমিই সবচেয়ে কম গান জানি ! অনেকের অনুরোধেই বলতে হল, "গান'টা জানি না, শুনিও নি"। নষ্ট কবি'র কথা কী বলব ! দুনিয়ার সমস্ত গানের লিরিক রাজিব ভাই জানেন !!! আর সে কী দম তার অর্গানে ! আমি কত অসংখ্যবার গীটার থামিয়ে তার পিঠ চাপড়েছি !
ব্লগার অন্তরা মিতু বললেন, "ইঞ্জিনিয়ারদের এত গুণ তো জানতাম না !"
আমি যে 'মেকা ইঞ্জিঃ' সেটা তেমন কারও জানার কথা না। বুঝলাম রাজিব ভাইকেই বলা হচ্ছে। স্বগোত্রকে খানিকটা ডিফেন্ড করলাম, "এখন সময় এমন, শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং জানলে হয় না, সাথে দু'চারটা বাড়তি দখল থাকতে হয়"
সাথে সাথেই মিতু জবাব দেন, "চাকরি'র জন্য তো ইঞ্জিনিয়ারিং-ই যথেষ্ট। তাহলে বাড়তি দখল কেন? মেয়ে পটাতে?"
আমি এমনিতে কথায় পারি না।
কেউ আচানক কিছু বললে, এর পার্ফেক্ট জবাব'টা আমার দু'তিনদিন পর মনে আসে। আর কোনও চেষ্টা না নিয়ে চুপ হলাম আপাতত।
এর মাঝে আবার ক্রিকেট দলে ডাক আসল ! আমার পক্ষে খেলা সম্ভব না। আমার চশমা'র পাওয়ার মাইনাস টু পয়েন্ট ফাইভ। অবহেলায় পড়ি না।
এমনি সবকিছু হালকা'র উপর ঝাপসা দেখলেও চলন্ত বল বুঝতে না পেরে প্রতি বলেই টাইমিং মিস করব। চশমা'র পাওয়ারের ব্যাপারটা একজনকে বললাম, সে বিশ্বাস করল না। অগত্যা খেলতে নামলাম, আর দু'বল খেলেই কট আউট হলাম। আর ওমুখো হইনি !
উঠে এসে জাহিদ ভাইয়ের সাথে কথা বললাম। খুব হাসিখুশি মানুষ, কথা বললে মন ভাল হয়ে যায় ! তিনি সেই কবে মাস-ছয়েক আগে আমার একটা পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন, এরপর আমার ব্লগে তার আসা হয়নি আর।
অথচ ওই পোস্টের কথা তাকে বলতেই তিনি আমাকে অবাক করে দিয়ে কী কমেন্ট করেছিলেন আর তার জবাবে আমি কী বলেছিলাম - সেটা পর্যন্ত বলে ফেললেন !!! আর এই মানুষটাই কিনা তার পিকনিক পোস্টে নিজের স্মরণশক্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন ! কেমনটা লাগে??
ওদিকে নষ্ট কবি তখনও অর্গান হাতে বসে। গান ছুটে গিয়ে সবাই তখন একটু ঘুরে ফিরে দেখছে আশপাশ। হঠাৎ কি মনে হল, রবি'ঠাকুরের কৃষ্ণকলি গাইলাম, এ গানটা প্রতিবার গাওয়ার সময় আমি অসীম আনন্দ পাই ! আবার গানওয়ালা'র দল এসে জুটল। যার কথা না বললেই নয়, ব্লগার পানকৌড়ি অনেক আনন্দ দিলেন দারূণ সব বিনোদনের গান করে !
তারপর নিমচাঁদ ভাই-ও এসে গানের দলে বসলেন। আমাদের সাথে তপু থেকে শুরু করে বিটলস-ঈগলসের গানেও সুর মেলালেন ভাইয়া, বাকি সবাই তো অবশ্যই !
এর মাঝে জিসান ভাই আর শিপু ভাই গেলেন দুপুরের খাবার আনতে, কিন্তু ততক্ষণে অনেকেরই ক্ষুধা লেগে গেছে।
আশপাশ থেকে কেউ কামরাঙা, কেউ বাদাম আরও কত কি কিনে খাওয়া শুরু করল। আমি গিটার নিয়ে বসার পর আর উঠিনি, একটু পর পর রুমকী আপু এসে আমাকে বাদাম দিয়ে যাচ্ছিলেন, ফারজুল ভাই (নাকি আরেকজন কে যেন) আমার পাশে পানি'র বোতল রেখে গেলেন। আমাকে আর উঠতেই হল না !
মধ্যান্হভোজনের আগ পর্যন্ত চলল গান, ক্রিকেট আর সব সমান্তরালে।
(আরও অনেকেই নিজেদের মত উপভোগ করছিলেন, আমি শুধু সেসবই লিখতে পেরেছি, যাতে আমি নিজে ছিলাম)
পরের পর্বও আসছে খানিক বাদেই !
পরের পর্ব ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।