মাউসের জনক ডগলাস এঙ্গেলবার্ট ১৯৬৩ সালে তৈরি করেছিলেন বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার-মাউস। এটি তৈরি করার পেছনে ছিল বিশ্বকে বদলে দেওয়ার এক অদম্য ইচ্ছা ও প্রয়াস।
যখন মাউস উদ্ভাবন করছিলেন, তখন তিনি ছিলেন ৩০ বছরের যুবক। সদ্য বিয়ে করেছিলেন। গবেষক হিসেবে কাজ করতেন স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে।
সেখানে বিশাল এক প্রকল্পে কাজ করছিলেন তিনি। বড় বড় কম্পিউটার কীভাবে ছোট করা যায় এবং ভাবনায় নাড়া দেওয়া জিনিসগুলোকে কীভাবে বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়, তা নিয়ে ছিল এই প্রকল্প। প্রকল্পটির একটি ক্ষুদ্রাংশ এই মাউস উদ্ভাবন।
কাজে লেগে থেকে এক ধরনের বিষণ্নতা আর হতাশা পেয়ে বসেছিল এঙ্গেলবার্টকে। বিয়ের পর তিনি হিসাব করে দেখলেন, তাঁর জীবনের লক্ষ্য সীমিত হয়ে এসেছে।
অফিসে গবেষণা ও চাকরি ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য নেই। এ উপলব্ধি থেকে মানুষের কল্যাণে কিছু করার কথা ভাবেন। একই সঙ্গে বিশ্বকে সুন্দর করার বিষয়টিও ভাবেন। এ জন্য মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগাতে হবে তাঁর। লক্ষ্য পূরণে কম্পিউটার হতে পারে আদর্শ।
এবার তিনি শুরু করেন কাজ। ভ্যানেভার বুশের লেখা ‘অ্যাজ উই মে থিংক’ নামের বইটি থেকে অনুপ্রাণিত হন এঙ্গেলবার্ট।
কম্পিউটার আর ইন্টারনেটনির্ভর এই বিশ্বে কম্পিউটার চালানোর জন্য এখন অসংখ্য মাউসের ব্যবহার হচ্ছে। ডগলাস এঙ্গেলবার্ট একাধারে মাউসের উদ্ভাবক, আবার তিনি হাইপারটেক্সট, নেটওয়ার্ক কম্পিউটার ও গ্রাফিকস ইউজার ইন্টারফেসেরও গবেষক।
এঙ্গেলবার্ট ১৯২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের পোর্টল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িেকৗশল বিষয়ে পড়াশোনা করেন। পরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বার্কলে থেকে এমএস এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি এসআরআই ও অগমেন্টেশন গবেষণা কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি একজন রাডার টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন।
১৯৬৩ সালে কম্পিউটারের জন্য বিশ্বের প্রথম মাউসটি তৈরি করেন এঙ্গেলবার্ট।
স্ট্যানফোর্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে এটি তৈরি করেন তিনি। এ হার্ডওয়্যারটিকে ব্যবহারের সুবিধার্থে ‘ইঁদুর’ আকৃতি দেওয়া হয়েছিল। তাই এর নামও হয়ে যায় ‘মাউস’। এটি একটি ইনপুট ডিভাইস, এর মাধ্যমে প্রোগ্রাম কমান্ড দেওয়া যায়। মাউসের ফলে কম্পিউটারের গ্রাফিকস ইউজার ইন্টারফেস বা অপারেটিং সিস্টেম জনপ্রিয় হয়।
স্ট্যানফোর্ডে গবেষণার সময় মাউস আবিষ্কার করায় এর পেটেন্ট যায় স্ট্যানফোর্ডের নামে। তাই মাউস আবিষ্কারের পেটেন্ট থেকে কোনো অর্থ পাননি এঙ্গেলবার্ট। মাউস আবিষ্কারের পর স্ট্যানফোর্ডের গবেষকেরা একে ‘বাগ’ নামে ডাকতে শুরু করেন। তবে মাউসের সঙ্গে ইঁদুরের লেজের মতো তার যুক্ত থাকায় এর নাম ‘মাউস’ রাখেস এঙ্গেলবার্ট। তাঁর দেওয়া নামটিই জনপ্রিয় হয়।
প্রথম সেই মাউসটির আকার আজকের পরিচিত মাউসের মতো ছিল না, বরং এটি তৈরি করা হয়েছিল একটি বাক্সের মধ্যে। মাউস নাড়াচড়া করার মতো বিশেষ চাকা ছিল বাক্সে। আকারে এটি ছিল বর্তমান মাউসগুলোর তুলনায় বেশ খানিকটা বড়। এ মাউসটি তৈরি করতে পুরোনো টিন ব্যবহার করা হয়েছিল।
সত্তরের দশকে জেরক্সের কম্পিউটারে মাউসের ব্যবহার শুরু হয়।
১৯৮০ সালে অ্যাপল কম্পিউটার তাদের ম্যাকিনটোশ সিরিজে প্রথম মাউসের ব্যবহার শুরু করেছিল।
কম্পিউটার মাউসের উদ্ভাবক ডগলাস এঙ্গেলবার্ট ২ জুলাই ৮৮ বছর বয়সে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তাঁর মেয়ে ক্রিস্টিনা এক ই-মেইল বার্তায় এঙ্গেলবার্টের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।