মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অবশেষে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেওয়া হয়। নির্দেশের পর বুধবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গোলাম আযমকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বুধবার সকালে শুনানি শেষে বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তার জামিন না-মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ সময় ট্রাইব্যুনাল জানায়, আগামী ১৫ ফেব্র“য়ারি তার অভিযোগ গঠনের শুনানি হবে।
সেদিন তাকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় যথাসময়ে শুনানি প্রক্রিয়া শুরু হয়। শুরুতেই গোলাম আযমের করা জামিন আবেদনের ওপর শুনানি করে ট্রাইব্যুনাল। গোলাম আযমের পে শুনানি করেন তার আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার এড়াতে প্রথমবারের মতো ট্রাইব্যুনালে হাজির হন গোলাম আযম।
সকাল ১০টার দিকে তিনি তার কয়েকজন আইনজীবীর সঙ্গে ট্রাইব্যুনালে হাজির হন। এর পর তাকে হুইল চেয়ারে করে হাজতখানায় নেওয়া হয়। সেখানে তার সঙ্গে তার বড় ছেলে ব্রি. জেনারেল (অব.) আজমী ছিলেন।
তার আইনজীবী আব্দুর রাজ্জাক শুনানির শুরুতেই বলেন, অধ্যাপক গোলাম আযামের বয়স প্রায় ৮০ বছরের বেশি। তার স্বাস্থ্যের অবস্থাও বিশেষ ভালো নয়।
এর আগে একই অভিযোগের মামলায় ট্রাইব্যুনাল বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীমকেও জামিন দিয়েছে। সুতরাং গোলাম আযমও তা পেতে পারেন।
এদিকে, গোলাম আযমের বিচারের দাবিতে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন নিয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণের বাইরে বুধবার বিভিন্ন সংগঠন সমবেত হয়। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি হাইকোর্টের সামনে থেকে ট্রাইব্যুনালের ফটক পর্যন্ত রাস্তায় সকাল ১০টা থেকে মানববন্ধন করে।
এ ছাড়া সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদও আলাদাভাবে মানববন্ধন করে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি জানায়।
গোলাম আজমকে গ্রেপ্তারের দাবিতে খণ্ড খণ্ড মিছিল চলতে থাকে ট্রাইব্যুনালের বাইরে।
আদালতের আদেশের প্রতিক্রিয়ায় ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘তার জামিন না-মঞ্জুর হওয়ায় আমরা সন্তুষ্ট। তবে গ্রেপ্তারই যথেষ্ট নয়। বিচার যতো দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে। ’
এ ছাড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১০ প্লাটুন পুলিশসহ ডিবি পুলিশ, এসবি, এনএসআই ট্রাইব্যুনালে মোতায়েন করা হয়।
সকাল থেকেই হাইকোর্টে ১নং গেট ও মাজার গেটে সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। পরিচয়পত্র ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
গত ২৬ ডিসেম্বর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে রাষ্ট্রপ। কিন্তু অভিযোগ সুবিন্যস্ত নয় মর্মে সেদিন তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ওইদিন ৫ জানুয়ারির মধ্যে আবারো অভিযোগ দাখিলের নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল।
পরে অভিযোগ সুবিন্যস্ত করে ৫ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে জমা দেয় প্রসিকিউশন। ওই দিন গোলাম আযমের অভিযোগ আমলে নেওয়া ও তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা এ ব্যাপারে সোমবার আদেশ দেওয়ার দিন ঠিক করে ট্রাইব্যুনাল।
সে অনুযায়ী, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাকে বুধবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে তার আইনজীবীকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
হাজিরার ২৪ ঘণ্টা আগে মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে আগাম জামিনের আবেদন করেন গোলাম আযম। মঙ্গলবার দুপুরে তার আইনজীবী তাজুল ইসলাম ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কাছে এ আবেদন জমা দেন।
গোলাম আযমের আইনজীবী জানান, জামিন আবেদনে তার (গোলাম আযমের) বার্ধক্যজনিত স্বাস্থ্যগত জটিলতার কথা তুলে ধরা হয়।
প্রসঙ্গত, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সুনির্দিষ্ট ৬২টি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে চক্রান্তের ৬টি, পরিকল্পনাকারীর ৩টি, উস্কানিদাতার ২৮টি এবং ২৪টি হত্যাকাণ্ডে তার সম্পৃক্ততা ও নিজ হাতে একজনকে হত্যা করার অভিযোগ রয়েছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এ মর্মে উল্লেখিত রয়েছে যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগী বাহিনীসমূহ কর্তৃক সংগঠিত আইন ও যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধের যৌথ ও একক অপরাধের দায়ভার অধ্যাপক গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রয়েছে। ’
উল্লেখ্য, গত বছরের ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে প্রসিকিউশন।
পরদিন ট্রাইব্যুনালের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় প্রসিকিউশন। ৩৬০ প্রষ্ঠার ওই তদন্ত প্রতিবেদনে মোট ৪০ জনের স্যাগ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবেদনটির সঙ্গে ১০ হাজার পৃষ্ঠার নথিপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে।
যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- বিএনপির সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লা।
একই অপরাধে গ্রেপ্তার হওয়া বিএনপি নেতা আব্দুল আলীম শর্তসাপেে জামিনে রয়েছেন।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে গ্রেপ্তার নেতাদের মধ্যে আলীমই প্রথম জামিন পেয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।