Prothom Alo
ঢাকা, ১৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার, ২০১১, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪১৮, ১৭ মহররম ১৪৩৩
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫২টি অভিযোগ
মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার
গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫২টি অভিযোগ
জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের ৫২টি অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে গতকাল সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে এগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটকের আবেদনও জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা।
এদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর পক্ষে গতকাল আইনজীবী নিয়োগ করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সাকা চৌধুরীর ছয়টি আবেদনের বিষয়ে ১৯ ডিসেম্বর আদেশের দিন ধার্য করা হয়েছে।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগেই কাশিমপুর কারাগার থেকে সাকা চৌধুরী এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপিত ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
দিনের কার্যক্রমের শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৫২টি অভিযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রক্রিয়া অনুসারে তাঁকে গ্রেপ্তারের আবেদনও করা হয়েছে। এ সময় ট্রাইব্যুনাল বলেন, পদ্ধতি মেনে অভিযোগ প্রথমে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দিতে হবে।
তারপর অভিযোগ আমলে নেওয়ার বিষয়ে দিন ধার্য করা হবে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা বেলা দুইটার দিকে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ এবং তাঁকে গ্রেপ্তার বা আটকের জন্য রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আবেদন দাখিল করেন। এসব দাখিলের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার মেজবাহউদ্দিন আহমেদ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত এই ট্রাইব্যুনালে এর আগে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মো. কামারুজ্জামান ও বিএনপির নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিলের জন্য ১৮ ডিসেম্বর দিন ধার্য রয়েছে।
গোলাম আরিফ সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষা শেষে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়ে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে তাঁর বিরুদ্ধে প্রক্রিয়া অনুসারে সমন বা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ তৈরি করা হয়েছে। এতে ৫২টি পৃথক ঘটনায় গোলাম আযমের বিরুদ্ধে শতাধিক অপরাধে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি রানা দাশগুপ্ত বলেন, একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সামরিক অভিযান চালায়।
এর চার দিন পর গোলাম আযমসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নর টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা সামরিক অভিযান চালানোয় সন্তোষ জানান এবং টিক্কা খানকে নাগরিক কমিটি, শান্তি কমিটি প্রভৃতি গঠনের অনুরোধ করেন। পরে খাজা খয়েরউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে ১৪০ সদস্যের শান্তি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটি দেখাশোনার দায়িত্ব পড়ে ছয়জনের ওপর। গোলাম আযম ছিলেন তাঁদের মধ্যে দুই নম্বর সদস্য।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, গোলাম আযমের তত্ত্বাবধানে এই শান্তি কমিটি থেকে পরে রাজাকার বাহিনী, মুজাহিদ বাহিনী, আলবদর, আল-শামস প্রভৃতি গঠন করা হয়। তিনি সারা দেশে এসব বাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণশিবির ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করতেন এবং অস্ত্র সরবরাহের জন্য পাকিস্তান সরকারের কাছে অনুরোধ জানাতেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির গোলাম আযমের নেতৃত্বে একাত্তরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঈদের দিন গভীর রাতে পৌরতলা কারাগার থেকে ৩৮ জনকে বের করে গুলি করে হত্যা করা হয়। গোলাম আযম এই গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন।
গত রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গোলাম আযম বলেন, ‘একাত্তরে এমন কিছু করিনি যার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে। ’
তদন্ত সংস্থা গত ৩১ অক্টোবর গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ৩৬০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন ও আনুষঙ্গিক নথিপত্র রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের কাছে জমা দেয়। প্রতিবেদনে ৪০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
সাকা চৌধুরীর পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ: সাকা চৌধুরীর পক্ষে কোনো আইনজীবী না থাকায় ট্রাইব্যুনাল গতকাল তাঁর পক্ষে স্টেট ডিফেন্স হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী বদিউজ্জামানকে নিয়োগের আদেশ দেন। আদেশে আরও বলা হয়, বদিউজ্জামানকে সাকা চৌধুরীর পক্ষে মামলার নথিপত্র সোমবারের (গতকাল) মধ্যে রেজিস্ট্রারের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
এর আগে গতকাল সাকা চৌধুরী নিজেই তাঁর করা ছয়টি আবেদনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল এসব আবেদনের বিষয়ে আদেশের জন্য ১৯ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন।
প্রথম সাক্ষীকে জেরা চলছে: সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রথম সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা মো. মাহাবুবুল আলম হাওলাদারকে গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। বেলা তিনটার দিকে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। আজও মাহাবুবুলকে জেরা করবে আসামিপক্ষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।