আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরান- পারস্য সাম্রাজ্যের পুনঃজন্ম-১

পারস্য উপসাগরে সৃষ্ট সাম্প্রতিক উত্তেজনার সূত্রপাত ২৪ ডিসেম্বর থেকে সেখানে চলা ইরানের ১০ দিনের নৌমহড়ার মধ্য দিয়ে। আর উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে পারস্য উপসাগরের সরু একটি নৌপথ। হরমুজ প্রণালী নামের এই নৌপথের একদিকে রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি সামরিক শক্তির দেশ ইরান আর অন্যদিকে ওমান কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সামরিকভাবে দুর্বল দেশগুলো। ৩৪ মাইল প্রশস্ত এই সরু নৌপথ দিয়ে ২০১১ সালে প্রতিদিন ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি তেল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে বলে আমেরিকান এনার্জি ইনফরমেশন এজেন্সি সম্প্রতি তথ্য দিয়েছে। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল।

ইরান এ নৌপথ ব্যবহারের মাধ্যমেই তার প্রধান ক্রেতা চীনসহ বিভিন্ন দেশে তেল রপ্তানি করে রাজস্বের আশি শতাংশ আয় করে। জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ব্যস্ততম নৌপথগুলোর মধ্যে হরমুজ প্রণালীর অবস্থান তৃতীয়। হরমুজ প্রণালী নামের এই নৌপথের একদিকে রয়েছে এ অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি সামরিক শক্তির দেশ ইরান আর অন্যদিকে ওমান কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো সামরিকভাবে দুর্বল দেশগুলো। ৩৪ মাইল প্রশস্ত এই সরু নৌপথ দিয়ে ২০১১ সালে প্রতিদিন ১৭ মিলিয়ন ব্যারেল জ্বালানি তেল বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে বলে আমেরিকান এনার্জি ইনফরমেশন এজেন্সি সম্প্রতি তথ্য দিয়েছে। ২০০৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ১৫ মিলিয়ন ব্যারেল।

ইরান এ নৌপথ ব্যবহারের মাধ্যমেই তার প্রধান ক্রেতা চীনসহ বিভিন্ন দেশে তেল রপ্তানি করে রাজস্বের আশি শতাংশ আয় করে। জ্বালানি তেল পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত ব্যস্ততম নৌপথগুলোর মধ্যে হরমুজ প্রণালীর অবস্থান তৃতীয়। যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম নৌবহর হরমুজ প্রণালী তথা ইরানের কাছাকাছি অবস্থান করছে। বারাক ওবামা ইতঃমধ্যে ঘোষনা দিয়েছেন, যুক্ত্ররাষ্ট্র যে কোন পদক্ষেপ নিতে পারে, হরমুজ প্রণালীর নিয়ন্ত্রন বজায় রাখার স্বার্থে। তবে এটা নিশ্চিত যে, যে কোন সংঘাতের শুরুতে ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দিবে, যার জন্য তেলের ব্যারেল প্রতি মূল্য ৪০ ডলার বেড়ে যাবে রাতারাতি।

আমরা এর প্রভাবের বাইরে থাকব না। বাংলাদেশে তেলের উচ্চমূল্যের জন্য জিনিস পত্রের দাম বেড়ে যাবে রাতারাতি। আসুন এক নজর দেখে নেই, কোন ইরান বিশ্বের সেরা সামরিক শক্তির বিরোধিতা করার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। ইতিহাস আরব মুসলিমেরা ৬৩৬ খ্রিস্টাব্দে পারস্য সাসানীয় সাম্রাজ্যে আক্রমণ শুরু করে। পরবর্তী ৫ বছরের মধ্যে তারা এলবুর্জ পর্বত ও কাস্পিয়ান সাগরের তীরবর্তী সমভূমি ব্যতীত সমগ্র ইরান করায়ত্ত করে।

৬৫১ সালে তারা সাসানিদ সাম্রাজ্যের পূর্ণ পতন ঘটাতে সক্ষম হয়। এর পর প্রায় দুই শতাব্দী ধরে ইরান আরব ইসলামিক সাম্রাজ্যের অধীনে থাকে। এসময় মূল ইরানের বাইরে বর্তমান পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাতেও এই সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটেছিল। ইসলামের খলিফারা প্রথমে মদীনা, ও পরবর্তীতে সিরিয়ার দামেস্ক ও শেষ পর্যন্ত ইরাকের বাগদাদ থেকে ইরান শাসন করতেন। ৯ম শতাব্দীর শেষে এসে পূর্ব ইরানে স্বাধীন রাজ্যের আবির্ভাব ঘটে এবং ১১শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে বাগদাদের আরব খলিফা ইরানের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।

ইসলামের ইরান বিজয়ের পর ইরানীরা ধীরে ধীরে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া শুরু করে। এর আগে বেশির ভাগ ইরানী সাসানিদ সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম জরথুষ্ট্রবাদে বিশ্বাসী ছিল ও কিছু সংখ্যালঘু ইরানী খ্রিস্ট- ও ইহুদী ধর্মাবলম্বী ছিল। ১০ম শতকের মধ্যেই ইরানের অধিকাংশ জনগণ মুসলিমে রূপান্তরিত হয়, এবং এদের আধিকাংশই ছিল সুন্নী মুসলিম, তবে কেউ কেউ শিয়া ইসলামের ভিন্ন ভিন্ন ধারা অনুসরণ করত। এদের মধ্যে ইসমাইলি নামের একটি শিয়া গোত্র এলবুরুজ পর্বত এলাকার রুদাবার অঞ্চলে ১১শ থেকে ১৩শ শতক পর্যন্ত একটি ছোট কিন্তু স্বাধীন রাজ্যে বসবাস করত। ১৬শ শতকের আগে ইরানের বর্তমান জাফরি শিয়া ইসলাম-ভিত্তিক পরিচিতি গঠন করেনি।

(উইকি) আয়তন সৌদি আরবের পর ইরান মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। দেশটির মোট আয়তন ১,৬৪৮,০০০ বর্গকিলোমিটার। দেশটি মোটামুটি ত্রিভুজাকৃতির, যার দীর্ঘতম বাহু প্রায় ২,৫০০ কিমি দীর্ঘ এবং যা উত্তর-পশ্চিমে তুরষ্কের সাথে সীমান্তে শুরু হয়ে দক্ষিণ-পূর্বে পাকিস্তান সীমান্তে এসে শেষ হয়েছে। ত্রিভুজের তৃতীয় শীর্ষটি উত্তর পূর্বে ইরানের সাথে তুর্কমেনিস্তানের সীমানার মাঝামাঝি অবস্থিত। উত্তর-দক্ষিণে ইরানের সর্বোচ্চ বিস্তার ১,৬০০ কিমি, আর পূর্ব-পশ্চিমে ১,৭০০ কিমি।

সংস্কৃতি ইরানের চলচ্চিত্র বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত। আব্বাস কিয়োরস্তামি ইরানের প্রসিদ্ধ পরিচালক দের একজন। গত ২৫ বছরে ইরানের সিনেমা প্রায় ৩০০ র বেশি পুরুষ্কার লাগ করেছে। বল্গার সংখ্যার হিসাবে ইরান ৪র্থ। স্থাপত্য শিল্পকলার দিক দিয়েও ইরান বিশ্বের শির্ষস্থানীইয় দেশ গুলোর একটি।

অর্থনীতি ইরানের অর্থনীতি বিশ্বে ১৮ তম। মাথাপিছু আয় ১২,৯০০ মার্কিন ডলার। জিডিপি ৩৩৬ বিলিয়ন ডলার। প্রধান আয়ের উৎস ক্রড অয়েল রপ্তানী। পর্যটন আরেক্টী উল্লেখযোগ্য খাত।

ইরান বর্তমানে পর্জটন ব্যবসায় ১০ম। ইরানের অটোমবাইল শিল্প বেশ উন্নত। গাড়ি উৎপাদনে ইরান ১২তম। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইরানী বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী মৌলিক কোষ তৈরি করতে সক্ষম হওয়ায় ইরান এ ক্ষেত্রে বিশ্বের ৫ টি দেশের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। রোইয়ান গবেষণা কেন্দ্রের গবেষকরা এর আগে ভ্রুণের মৌলিক কোষ তৈরি করতে সক্ষম হন।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সংক্রান্ত খ্যাতনামা সাময়িকী বা নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রোইয়ান গবেষণা কেন্দ্রের এসব সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের খ্যাতনামা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানগুলো আই. এস. পি বা শক্তিশালী মৌলিক কোষ নির্মাণে ইরানের সাফল্যের কথা স্বীকার করেছে। ফলে ইরান এক্ষেত্রে বিশ্ব অঙ্গনে জার্মানী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও চীনের পরই নিজের বিজয় পতাকা উড্ডীন করতে সক্ষম হলো। শক্তিশালী মৌলিক কোষ থেকে এই কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় এবং এর মাধ্যমে মানব দেহের প্রতিটি অঙ্গের কোষই তৈরি করা যায়। আর এভাবে এ কোষের মাধ্যমে মৌলিক ভ্রুণ কোষগুলোকে কার্যক্ষম করা সংক্রান্ত অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।

এ ছাড়াও মৌলিক কোষের মাধ্যমে জেনিটিক চিকিৎসা, ওষুধের মান উন্নয়ন, ভ্রুণের বিভিন্ন সমস্যা চিহ্নিত করা ও বংশগতি বা জিন সংক্রান্ত গবেষণা করা যায়। ন্যানো টেকনোলজিতে ইরান পিছিয়ে তো নেই-ই বরং এতো অগ্রসর যে কোনো কোনো উন্নত দেশের পর্যায়ে প্রায় পৌঁছে গেছে। ইরান এখন চাচ্ছে এই প্রযুক্তিকে আরো বেশি কাজে লাগিয়ে বৈজ্ঞানিক ক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের পনেরটি দেশের তালিকায় স্থান করে নিতে। বিশ সালা কর্মসূচির আওতায় এ বিষয়টির ওপর ইরান এখন ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে। এক্ষুণি ইরান ন্যানো প্রযুক্তিজাত পণ্য সামগ্রী উৎপাদনের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য এবং মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে,আর বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে রয়েছে চৌদ্দতম স্থানে।

তবে ইরান ২০২৫ সালের মধ্যে তার গৃহীত লক্ষ্য বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। ইরানের পরিকল্পনা হলো ২০২৫ সালের মধ্যে ন্যানো টেকনোলজির সাহায্যে উৎপন্ন পণ্য সামগ্রীর বাজার তৈরির ক্ষেত্রে যেন যথার্থ অবস্থানে পৌঁছে যাওয়া যায়। ন্যানো প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ইরান এরিমধ্যে বহু ধরনের ঔষধ তৈরি করছে। প্রায় এক দশক হলো ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে ন্যানো প্রযুক্তির চর্চা করছে। শুরু থেকেই ন্যানো প্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর গবেষণা চালিয়েছে ইরান।

এইসব গবেষণার ফলে ইরান বর্তমানে নিজেদের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমেই ন্যঅনো টেকনোলজির ক্ষেত্রে বড়ো ধরনের সাফল্য অর্জন করেছে। উদাহরণস্বরূপ কার্বন ন্যানো টিউবের কথা বলা যায়। বলা যায় কৃত্রিম রক্তবাহী ধমনী তৈরিতে ন্যানো মলিকিউলের ব্যবহারের কথা কিংবা ন্যানো ব্যাকটেরিয়াল এবং ম্যাগনেটিক সামগ্রী উৎপাদনের কথা। তেহরানের শহিদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক ইতোমধ্যে ন্যানো প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ঔষধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। গুরুত্বপূর্ণ এই ঔষধটির নাম হলো ইন্টারফেরন গামা-১।

মহাশুণ্য গবেষণায় ইরানী বিজ্ঞানীদের সাফল্যের একটি দর্শনীয় দিক হল, রকেট উৎক্ষেপণের কাজে জমাটবদ্ধ জ্বালানী ব্যবহার। ইসলামী বিপ্লবের আলোকোজ্জ্বল দশ প্রভাত উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিনে ইরান মহাশুণ্য গবেষণা সংক্রান্ত ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সফলভাবে চালু করেছে। চিকিৎসা খাতে গবেষণা ও বিভিন্ন উদ্ভাবনের দিক থেকে ইরান এখন বিশ্বে একুশতম অবস্থানে রয়েছে। মহাশুণ্য গবেষণায় ইরানী বিজ্ঞানীদের সাফল্যের একটি দর্শনীয় দিক হল, রকেট উৎক্ষেপণের কাজে জমাটবদ্ধ জ্বালানী ব্যবহার। ইসলামী বিপ্লবের আলোকোজ্জ্বল দশ প্রভাত উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিনে ইরান মহাশুণ্য গবেষণা সংক্রান্ত ৫ টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প সফলভাবে চালু করেছে।

চিকিৎসা খাতে গবেষণা ও বিভিন্ন উদ্ভাবনের দিক থেকে ইরান এখন বিশ্বে একুশতম অবস্থানে রয়েছে। ইরানের তৈরি ড্রোন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.