আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইরান: বেহেশতের আরেক নাম।

বাধ ভাইঙ্গা যায় আওয়াজের ঠেলায়! ইরান একটি ইসলামিক প্রজাতান্ত্রিক দেশ। ৯৮ শতাংশ মুসলমান অধ্যুষিত দেশ যার মধ্যে ৯০ শতাংশই শিয়া। ১৭ তম বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির সংস্কৃতির সাথে আমাদের পরিচয় যুগ যুগ আগে থেকে। ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম আহমেদিনিজাদ, যিনি পেশায় একজন সিভিল ইন্জ্ঞিনিয়ার ছিলেন এবং সূত্রমতে তার মতো সৎ চরিত্রের শাসক বর্তমান সময়ে বিরল। অর্থনীতি: ১৭ তম বৃহত্তম অর্থনীতির এই দেশটির প্রধান চালিকাশক্তি এর তেল।

যদিও জাতিসংঘের উপর্যুপরি চাপ এবং আমেরিকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তেমন একটা ক্ষতি করতে না পারলেও সম্প্রতি ইরানের দীর্ঘদিনের বন্ধু রাশিয়ার হঠাৎ পিছুটান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের অবনতির ফলে মূল্যস্ফীতির হার ৩০ শতাংশে পৌছেছে। (১) বর্তমান ১ ডলারের বিপরীতে ইরানের মুদ্রা ইরানী রিয়ালের মান ৩৮,৫০০ যেখানে ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশী টাকার মান ৮২ মাত্র। এখানে বেকারত্বের হার ১৫.৩% যেখানে বাংলাদেশের বেকরত্বের হার মাত্র ৫%। (২)ইরানী সরকারের তথ্যমতে দারিদ্রসীমার নীচে প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। (৩) এদের অবস্হা বাংলাদেশীদের চেয়েও খারাপ।

বাংলাদেশে অবশ্য দারিদ্রতার হার ৪৯ শতাংশ এখন। কথা হলো এত বড় অর্থনীতি এবং এত সম্পদ থাকা সত্বেও কেন দেশের এতো করুন অবস্হা? তাহলে কি দুর্নীতি? দুর্নীতি: ২০১১ সালে বাংলাদেশ ১৮২ টা দেশের মধ্যে ১২০ তম (৪) স্হান অধিকার করে সেখানে ইরান অধিকার করে ১২০ তম(৫)। তার মানে দেখা যাচ্ছে ওখানে ইসলামী মোড়কে বিশাল বিশাল দুর্নীতি চলছে যেগুলো আমাদের দেশের মতোই। এখানে ধারনা পাওয়া যায় এত বড় অর্থনীতির দেশ হবার পরও কেন এই দেশ ধুকছে। কিন্তু জন গন কিছু বলছে না কেন? কারন এখানে শিক্ষিত মানুষের হার ৮০.৩% এর মতো।

সমস্যা কি? নির্যাতন? এভিন কারাগার: এভিন কারাগারকে বলা হয় এভিন বিশ্ববিদ্যালয়। কারন এখানকার বেশীরভাগ আসামীই হলো দেশের বুদ্ধিজীবি, শিক্ষক, ছাত্রসহ উচ্চশিক্ষিত সম্প্রদায় যারা মূলত সরকারের অত্যাচারের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করেছে তাদেরকে ছোট খাটো অভিযোগে এই জেলে পুরা হয়েছে। আপনারা হয়তো মনে করতে পারেন এসব কারাগারে ইসলামী পরিবেশ বজায় রাখা হয়!(৬) ইউটিউবের এই লিংকটি এভিন কারাগারের সামনে রমজানের প্রথম দিনে স্বজনদের একটা প্রতিবাদের আহাজারীর মিছিল। না তা হয় না। এখানে ইন্টারোগেশনের নামে মহিলাদের গণধর্ষনের শিকার হতে হয়।

এগুলো নিয়ে কুহিয়ার গুডরাজী নামের একজন লেখালেখি করেন। ফলে তাকে দু'বার গ্রেফতার করা হয়। দ্বিতীয় বার যখন গ্রেফতার করা হয় তখন তার বিরুদ্ধে সরকার কোনো অভিযোগ আনেনি। এবং সবাই ধারনা করলেও তার পরিবার এখনও জানেনা তিনি কোথায় আছেন। (৭) আরো জানতে চাইলে এমনেস্টির এই লেখাটা পড়তে পারেন।

(৮) রাজনৈতিকভাবে যতপ্রকারের মানুষদের ধরা হয় সবার কাছে এই জেলখানা একটা আতংকের নাম। এটাকে ইরানের সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে বেশী সুবিধাসম্বলিত এবং তেহরানের পার্শ্ববর্তী জায়গায় অবস্হিত। এটার যদি এই অবস্হা হয় বাকীগুলোর কি অবস্হা খোদা জানেন। কাহরীজিয়াক প্রিজন সেলের একটা দৃশ্য ইউটিউবে আছে। আমি লিংকটি দিয়ে গেলাম।

এটা অবশ্যই স্পর্শকাতর দৃশ্য সম্বলিত। বাকস্বাধীনতার টুটি চেপে ধরা: বাংলাদেশে আপনি হাসিনা বা খালেদাকে ব্লগে যাই বলুন এখন আর আপনাকে র‌্যাবে হয়তো ধরবে না। আমিও অনেক গুলো পোস্ট লিখলাম আমাকে কেউ ধরেনি আপনি নিজের মত পত্রিকায়, ব্লগে এমনকি আপনার ইমেইলেও সেটা প্রচার করতে পারবেন। কিন্তু ইরানে সেটা সম্ভব না। ইরানে সেন্সরশীপ খুবই কড়া।

সেন্সরের বিষয় সমূহ হলো যারা রিফর্ম চায়, ধর্মীয় বা ইসলামী প্রজাতান্ত্রিক সরকারের বিরোধী কোনো কথা, শান্তিকামী হোক অথবা সহিংস, যদি কোনো ব্যাক্তি বা অর্গানাইজেশন যুক্ত থাকে। উদাহরন হিসেবে ইরানী ৫ জন মহিলা রাস্তায় নামে ইরানী নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরনের প্রতিবাদে এক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহ করবে। তাদেরকে গ্রেফতার করা হয় দেশের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে কাজ করার অপরাধে। (৯) এমনকি সরকারের বর্তমান অতীত ব্যার্থতা, নিগৃহ, নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা লিখলে তারও রেহাই নেই যার মধ্যে ইরানের বর্তমান অর্থনৈতিক দুরবস্হার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দটিও করতে পারবে না। এছাড়া এই সেন্সরশীপের ক্ষমতা শুধু সরকারের হাতেই নয়, ওখানকার মোল্লাদের হাতেও কিছুটা বরাদ্দ।

২০০৭ সালে এরকমই ঘটেছিলো আমীরকবির ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজীর ৮ জন ছাত্রের কপালে যাদেরকে বাকিটা জীবন কুখ্যাত এভিন কারাগারে কাটাতে হচ্ছে। ইরানী সরকার এই সেন্সরশীপের উপর এতটাই কট্টর যে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যাবস্হা চালুর আগে ওখানকার প্রতিটা নাগরিকের ইমেইল (ইয়াহু, জিমেল ইত্যাদি) চেক করবার জন্য রাশিয়ার বিভিন্ন এনক্রিপশন কোম্পানীর কাছে হন্যে হয়ে ঘুরতো। তবু এটা রুখতে না পেরে সেদেশে ইন্টারনেট সার্ভিসের বিকল্প হিসেবে নিজেদের ইন্টারনেট সার্ভিস রাশিয়ার সহায়তায় চালু করে। এবং সেদেশে এখনও ফেসবুক, ইউটিউব স হ আরো অন্যান্য পত্রিকার ওয়েবসাইট পর্যন্ত ব্লক করা। নোবেল বিজয়ী শিরিন এবাদীর কথা মনে আছে? তার নোবেল প্রাইজের মেডেল থেকে শুরু করে সবকিছুই ইরানীয়ান সরকার নিয়ে যায়।

(১০) চলবে..... রেফারেন্স: ১) Click This Link ২) http://en.wikipedia.org/wiki/Economy_of_Iran ৩) Click This Link ৪) http://www.transparency.org/country#BGD ৫) http://www.transparency.org/country#IRN ৬)http://www.aljadid.com/content/caskets-and-rape-prison-irans-islamic-republic-review-chahla-chafiqs-new-islamist-man-politi ৭) http://en.wikipedia.org/wiki/Kouhyar_Goudarzi ৮) Click This Link ৯) Click This Link ১০)http://en.wikipedia.org/wiki/Shirin_Ebadi ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.