সুখ চাহি নাই মহারাজ—জয়! জয় চেয়েছিনু, জয়ী আমি আজ। ক্ষুদ্র সুখে ভরে নাকো ক্ষত্রিয়ের ক্ষুধা কুরুপতি! দীপ্তজ্বালা অগ্নিঢালা সুধা জয়রস, ঈর্ষাসিন্ধুমন্থনসঞ্জাত,সদ্য করিয়াছি পান—সুখী নহি তাত, অদ্য আমি জয়ী।
ঘড়ি নিয়ে একটি দীর্ঘতম অবসেশন আমৃত্যু তোমাকে তাড়া করে ফিরবে নিশ্চিত।
সেই যে ছেলেবেলায় রোজ রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তুমি মনছবিতে আঁকতে একটি বিশাল ডায়ালের গ্রান্ডফাদারস ক্লক। কাঁটা দুটি বনবন ঘুরতে ঘুরতে যখন উলম্ব আকারে সোজা হয়ে দাঁড়াতো, অর্থাৎ কী না ভোর ছয়টা, তুমি মনে মনে শুনতে পেতে ঢং...ঢং...ঢং...কলজে-কাঁপানো ছয়-ছয়টি ঘন্টাধ্বনি।
তুমি মনের ভেতরে এই ছবিটি বার বার মকশ করে, মোটা তুলিতে এঁকে ঘুমিয়ে পড়ার পর কী আশ্চর্য, পরদিন ঠিক ভোর ছয়টায় ঘুম ভাংতো তোমার। তারপর ফ্রেশ হওয়া, দাঁত ব্রাশ, হাফ বয়েল্ড ডিম, পাউরুটি দু-এক পিস, হাফ গ্লাস ওভাল্টিন খেয়ে, চক দেওয়া সাদা কেডস, নীল প্যান্ট শাদা শার্ট স্কুল ড্রেস পরে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ছুট...সকাল সাতটায় তোমার স্কুল এসেম্বলি!
আর প্রতি ভোরেই ওই মনছবির কর্তা, তোমার রিটায়ার্ড নানার ঘর থেকে ভেসে আসতো বিবিসি রেডিওতে প্রভাতি সংলাপ। ...
এখন অবশ্য অতিবড় বেলায় ওইসব মনছবি-টবি ধুয়ে-মুছে কোথায় যে গেছে! তুমি এখন সপ্তাহে পাঁচ-পাঁচটি লেট-নাইট ডিউটি সেরে প্রায় শেষ রাতে বিছানায় যাও। মাঝে মাঝে একেবারেই নির্ঘুম...পাঁচ তলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে একের পর এক সিগারেট ধবংস করো।
তোমার মুখোমুখি এটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে দীর্ঘ বছরের সাক্ষী বিশাল এক নারিকেল গাছ।
আচ্ছা এই যে নিশুতি রাতে তুমি এইমাত্র বিশ কি পঁচিশতম সিগারেরটটি পুড়িয়ে ফেললে, একবারও কি ভাবো, এই টাকায় একটি দিনমজুর কতো কেজি চাল কিনতে পারে? আর ড্রিংকসের পেছনে তুমি যে পরিমাণ টাকা ওড়াও...।
মর্নিং ডিউটির ভোরটি তোমার কাছে বরাবরই বিচ্ছিরি রকমের বিরক্তিকর। প্রথমে পিপ পিপ করে এলার্ম দেবে দেয়াল ঘড়ি, এর তিন সেকেন্ড পর মোবাইল ফোন। ...এরপর অজান্তেই আবারো তুমি তলিয়ে যাবে গহিণতম ঘুমের অতলে। মিনিট পনের কী আধ ঘন্টার ঘুম পর্বের ভেতরে তোমার জিওন-এলার্ম বৃদ্ধ নানী ডেকে বলবেন, ''ষড়জ...এই ষড়জ! জলদি ওঠো।
তোমার অফিস আছে না?''
তুমি ধড়মড় করে এইবার নির্ঘাত উঠবেই উঠবে। ফিটবাবু হয়ে তিনগুন ভাড়ায় একটি গ্যাস চালিত ত্রি-চক্রযান পাকড়ে পৌঁছে যাবে অফিসে।
অবসেশনের লেবেল তুঙ্গে উঠলে কী মারাত্মক কান্ড-কারখানাই না ঘটে। তার একেকটা এতোই দুঃখের...ওই যে সাহিত্য করে বলে না, দুঃখে একেবারে বুক ভেঙ্গে যায়।
আর মনছবি নেই বলে যে চাপাবাজী করে আসছো তা-ও মিথ্যে করে দেখো তুমি প্যারাসিটামল আকৃতির...।
বার্গম্যানের ওয়াইল্ড স্ট্রবেরি-র সেই বৃদ্ধটির কথা মনে পড়লো। যে স্বপ্নের মাঝে ডায়াল ছাড়া একটা সাদা (সাদা-র চেয়ে সাদা নাকি বেশি সাদা) ঘড়ি দেখে চমকে ওঠে। এর কয়েকটা শট পরেই মুখোমুখি নিজের মৃতদেহের সঙ্গে। কফিন থেকে বেরিয়ে আসা হাতের ভীতিকর হাতছানি। এ থেকে বুঝে নিই মানুষের মৃত্যু মানে সময়েরও মৃত্যু হয়।
আসলেই।
সময় বলতে আমরা কী-ই বা বুঝি! সময় আর সময়ের পরিমাপ তো আর এক জিনিস নয়। আমরা সারাজীবন সময় মেপেই গেলাম। কিন্তু সময় কী বস্তু (বা নির্বস্তু) তার বোধ হলো না।
তবুও সময়ের পেছনে ধাওয়া করি।
মানবীয় সীমাবদ্ধতা আর ভুল বোঝাবুঝির কারণে, সময়কে ভেবে নেই আমারই মতো ছুটে চলা আরেকজন মানুষ। আমার প্রতিদ্বন্দ্বি। নিয়তি।
সেলুলয়েডের মতো একের পর এক তোমার ভেতরে তৈরী হয় কতশত দৃষ্টিসুখ! আর না চাইতেই তারা আবার ভেঙ্গেও যায় কতোই না সহজে! প্রেম...হায় প্রেম!!!
তোমার হাতে রয়েছি যেটুকু আমি, আমার কাছে আমি আছি যতোটা, একদিন মনে হবে এটুকুই আমি, বাকি কিছু আমি নই, আমার করুণ ছায়া।
“আমার মাঝে এক মানবের ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবের তুমুল সহবাস।
। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।