জীবনের মুহূর্তগুলো ভালবাসার স্পর্শে রঞ্জিত হোক,জীবনের মুহূর্তগুলো স্বাধীনতার স্পর্শে মুখরিত হোক **
আমার ছোট থেকে একটা অভ্যাস সব সময় ব্যাগে খুচরা পয়সা রাখার চেষ্টা করি। কোন ভিক্ষুক চাইলেই তা দেই। আম্মা থাকলে আম্মাকে জ্বালিয়ে কতবার পয়সা দিয়েছি। মাঝে মাঝে এইসব ভিক্ষুকদের দেখি বিভিন্ন কায়দা বের করে ভিক্ষা করতে। শাহজাহানপুরে আমার জন্ম।
ওইখানে মনে আছে একদল ভিক্ষুক “আমার আল্লাহর নবীর নাম্, , মিউজিক্, আবার আমার আল্লাহর নবীর নাম” কেউবা অন্ধ কেউবা খোড়া, কেউবা বয়সের ভারে খুবই করুন অবস্থা। বাসায় মাঝে মাঝে খুব বুড়া-বূড়ি ভিক্ষুক আসলে তাদেরকে আমরা পুরান বাসী রাখা খাবার দিয়েছি। পেট ভরে খেয়ে তাদেরকে দোয়া করতে দেখেছি।
আমি সবে ৭/৮ বছর হঠাৎ দেখলাম কিছু অল্প বয়সী বাচ্চারা ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছে। আম্মা বা গুরুজনরা তাদেরকে দেখলেই “চল বাসায় নিয়ে যাব কাজ করবি।
“ বললেই একছুটে পালাতে দেখেছি।
আবার কেউ কেউ নাছোড়বান্দা বলে “আমারে দুই টাকা দেন আমি সকাল থেকে রুটি কিনে খাব । “বলা বাহুল্য ওদের ভিক্ষাবৃত্তিতে লাভ হত না।
মাঝে কিছু ভন্ড ফকির-ভিক্ষুককে দেখলাম বিভিন্ন কায়দায় ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করল। মগবাজারে ইস্পাহানী কলেজে পড়া অবস্থায় দেখতাম এক লোককে ল্যাংড়া হয়ে ভিক্ষা করতে।
আমি রোজ তাকে ভিক্ষা দিতাম, হঠাৎ একদিন আবিস্কার করলাম সে ল্যাংড়া নয়, একদিন ডান পা উঠিয়ে ভিক্ষা করে আরেকদিন বা পা উঠিয়ে ভিক্ষা করে।
খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। মানুষ এরকম বিশ্বাসকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। বইয়ের সাথে বাস্তবতার কত অমিল।
ওই সময়ই ইত্যাদিতে ভিক্ষুকদের ব্যঙ্গ করে তাদের বিশ্বাসঘাতকতার নমুনা দেখালো।
ভয়াবহ খবর শুনলাম ৪/৫ বছর আগে যে এইসব ভিক্ষুকরা পেশাদার ভিক্ষুক তাদেরকে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে রাখা হয়। কারো বা হাত বা পা ভেঙ্গে অথবা কারো চোখ নষ্ট করে ফেলা হয়। এদেরকে প্রতিদিন ভিক্ষা করে কিছু অংশ বা পুরোটাই তাদেরকে দিতে হয়।
তাই আজ যখন ধানমন্ডির ৮ নং ব্রিজে হাত-পা উঠিয়ে ভিক্ষা করে আর কাঁপতে থাকে তাকে দেখে আর আগের মত মায়া লাগে না। মাথা ফাটিয়ে/রক্তাত্ত (অন্য কোন অঙ্গহানী বা ব্যাথায় কাতর )কিছু ভিক্ষুক আসলেও আর আগের মত চোখ ভরে উঠে না।
আমি আজও সবাইকে দেয়ার চেষ্টা করি কিন্তু টের পাই যে আর আগের মত মন কেঁদে উঠে না।
আসলে ওরা কেমন একটা পরিস্থিতির শিকার, ওরা এত গরীব যে ওদের ভাগ্য-উন্নয়ন সম্ভব না।
কিন্তু পুলিশদের যখন দেখি সাধারন যাত্রীদের হয়রানী করতে। ট্রাফিকেরা তো রিক্সা-আলাদের কাছ থেকে ৫/১০ টাকা ভিক্ষা, সি,এন,জি আলাদের থেকে ৩০-৫০ টাকা, ট্রাক/বাস আলাদের কাছ থেকে ৫০-১০০ টাকা আদায় করে থাকে।
ঢাকা মেডিকেলে গেলেও ভিক্ষাবৃত্তি দেখি ওয়ার্ডবয় / নার্সদের এক্সট্রা চার্জ দিতে হইয়ে, ডাক্তারদের পর্যন্ত এই এক্সট্রা চার্জ নিতে দেখি।
এই ভিক্ষাবৃত্তি যেন এদেরও মজ্জ্বাগত।
সরকারী দফতর গুলিতে যাই, ওই খানেও হরদম ভিক্ষাবৃত্তি চলে। অনেক এইটাকে ঘুষ বলে সম্বোধন করে । কিন্তু আমার কাছে তা ভিক্ষাবৃত্তিই মনে হয়।
স্কুল/কলেজ গুলিতে মেধাহীন ছাত্র-ছাত্রিকে ভর্তি হতে দেখি উক্ত প্রতিষ্ঠানের উচ্চ ডিগ্রীধারী চেয়ারম্যান কিংবা প্রধান অধ্যক্ষকে ভিক্ষা দিয়ে।
এই ভিক্ষার পরিমানও অনেক বেশি । ১০ লাক্ষ থেকে শুরু করে ৫০ লাক্ষ বা আরো বেশি হয়ে দাঁড়ায়।
জমি-জমা খাজনা দেয়া/ গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল জমিয়ে একবারে কম টাকা দিতে দেখি । শুধু কিছু ৫-১০ হাজার টাকা খেয়ে নাম মাত্র টাকা দিতে দেখি ২/৩ বছরের জমানো বিল।
সরকারী কোষাগারে জমা না হয়ে সরকারী কর্মচারীদের ঝুলানো পেটে সব ঢূকতে দেখি।
মাঝে হঠাৎ দেখি কিছু শিক্ষকদেরও কোচিং\ ধান্দাবাজী করে ছাত্র/ছাত্রীদের কাছ থেকে ভিক্ষা নিতে। ভিক্ষা এজন্য বলা যেহেতু এরা এইসব ছাত্র/ছাত্রীদের প্রয়োজন মাফিক ৪/৫ নম্বরের দয়াপরশ হয়ে নাম্বার দিতে দেখি।
আমি ঢাকা-জি,টি,ইউ,জ়ি এর অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকি।
তখন স্যার দের বললাম মিডিয়া কে ডাকতে, স্যার বললেন যে , এরা নিউজ ছাপাতেও টাকা নেয়। তাই মুনির হাসান স্যারকে আনার পরও তা পত্রিকার শিরোনাম হয়নি।
কিছুদিন আগে আমার দুলাভাই বাংলাদেশ বায়োমেডিকেল সোসাইটি থেকে আজীবন সম্মাননা পদক পেয়েছেন। তো গিয়ে শুনলাম খবর টা পাওয়ার সাথে সাথেই প্রথম আলো, যুগান্তর এটি নিয়ে লিখতে চেয়েছে, কিন্তু ওরা ২০০ টাকা চায়। আমার ভাগ্নে বলেছেন, “ আমি ২০০ না ৩০০ টাকাই দিব। কিন্তু
পত্রিকায় ভালো কাভারেজ চাই।
এই মিডিয়ার ভিক্ষাবৃত্তি নতুন নয়।
হানিফ সংকেতের অনুষ্ঠানে ইত্যাদিতেও ৫০ হাজার- ১/২/৩ লাখ টাকা ভিক্ষা দিয়ে কিছু একটা করে চেহারা দেখায়। যারা ভিক্ষা দেয়, তাদের কাভারেজ ভালো হয় ,যারা দেয় না তারা কাভারেজ পায় না।
ভিক্ষাবৃত্তি যেন আমাদের মজ্জ্বাগত। কেউ ভিক্ষা দেয় কেউ নেয়।
কখনও আমরা ভিক্ষুক আর কখনও আমরা দাতা।
ভিক্ষাবৃত্তির এই চক্র থেকে মুক্তি চাই।
মানুষের সাথে বিস্বাসঘাতকতা ও মানুষের আবেগকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা আর নয়, আর কত নিচে নামবে মানুষ।
আর ভাল লাগে না ।
>>>>>>ভিক্ষাবৃত্তি আর নয় আর নয়>>ভিক্ষাবৃত্তি আর নয় আর নয় ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।