ওলি
মহাকবি মাইকেল ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে তার কবিতায় লিখেছেন :
পরধন লোভে মত্ত করিনৃ ভ্রমণ
ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি..
কবি যদিও আন্যভাষা চর্চা করাকে ভিক্ষাবৃত্তির সাথে তুলনা করেছেন, কিন্তু ভিক্ষুকদের ভ্রমণের ইতিহাস বেশ পুরনো । বাংলাদেশ থেকে না-কি লোক ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া হয় হজ হওসুমে ভিক্ষাবৃত্তির জন্য । কি লজ্জার কথা । বিদেশে গিয়েও ভিক্ষাবৃতি । মাইকেলের ভাষায় "পরধন লোভে মত্ত করিনৃ ভ্রমণ" ।
বাংলাদেশের বড় বড় শহরগুলোতে বিভিন্ন কিসিমের ভিক্ষুক দেখা যায় । তারা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বড় সিটিগুলোতে সমবেত হয় । কোন কোন ভিক্ষুকের চর্মরোগ, ক্ষত এবং পচন দেখলে শিউরে উঠতে হয় । এরা এমন ভঙ্গিতে ভিক্ষা চায় যে ছোট শিশুরা ভয় পায় । শিশুদের ভয় দেখলে ঐ ভিক্ষুদের জোশ আরো বেড়ে যায় ।
তারা আঠার মত লেগে থাকে । বিরক্ত মায়েদের ভিক্ষা না দিয়ে উপায় থাকেনা কারণ শিশুটি ইতিমধ্যে কান্নার যোগাড় করছে । শিশুকে আতংকিত দশা থেকে মুক্ত করতে মায়েরা ভিক্ষা দিয়ে আত্মরক্ষা করেন ।
তবে, বড়রাও মাঝে মাঝে তাদের আওয়াজ এবং gesture এ আতংকিত হন । আপনি হয়ত ঝুকে সমস্ত মনোযোগ একত্রিত করে ফুটপাতে আম কিংবা অন্য ফল-ফলাদি পরিক্ষা করছেন ।
কারণ, এসময় মনোযোগী না হলে হকাররা আপনাকে ধরা খাইয়ে দিতে পারে । ঠিক সেসময় ফকির-ব্যাটা বা ব্যাটি পেছন থেকে আপনার শরীর স্পর্শ করে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করল । হঠাৎ এরকম দৃষ্টি আকর্ষণে আপনার পিলে চমকে উঠল । কিন্তু, আপনি তাকে কিছু বলতে পারবেননা ।
ঐ চর্মরোগ, ক্ষত এবং পচনওয়ালা ভিক্ষুকেরা না-কি treatment করাতে চায়না ।
কারণ তাতে তাদের ভিক্ষা করার কারণ দূরীভুত হবে । এই ভিক্ষুরা প্রায়ই উগ্র ও অশ্লীলভাষী । সুযোগমত তারা civil (সুশীল) লোকদের একহাত দেখে নায় । তাদের ভিক্ষা চাওয়ার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা প্রায়ই তীর্যক ভাষায় অভিশাপ দেয় । উগ্র লোলা ভিক্ষুকদের কিছু বলে এমনিতে ছাড়া পেয়ে গেছেন এরকম রেকর্ড নাই বললেই চলে ।
এইসব ভিক্ষুকদের site selection খুবই জুতসই ধরণের । বড় বিপনীবিতান, বার্গারশপ কিংবা রেস্তারার পার্কিংলট এবং এনট্রেন্সের মাঝামাঝি জায়গায় তারা Position নেয় । ধরা যাক, আপনি খাবার-দাবার শেষ করে আইসক্রিম চাখতে চাখতে দোকান থেকে বের হচ্ছেন; ঠিক সেসময় আপনার সামনে নোংরা বেশ-ভূষার লোলা কিংবা লোলার পোজ ধরা ভিক্ষুক এসে ভিক্ষা না চাইলে আপনি অবশ্যই ভাগ্যবান । কারণ, তারা জানে এ সময় আপনাকে ধরলেই কেল্লা ফতে । কারণ, তার বেশ-ভূষা দেখেই আপনার রূচি চলে গেছে ।
হয় আপনি পকেট থেকে টাকা কিংবা কয়েন বের করে দিয়ে তাকে তাড়াতাডি বিদেয় করে দিবেন । নিদেনপক্ষে আপনার হাতের আইসক্রীমটি কারণ আপনার রূচি ততক্ষণে গায়েব । অনেক ভিক্ষুকেরা বস্তিতে আবস্থান করে নগর জীবনের সুবিধাগুলো উপভোগ করে । পরিবার-পরিজন নিয়ে রাতে তারা কেবল টিভি দেখে । অনেকে আবার বেশ বৈষিয়ক ।
টাকা-পয়সা জমিয়ে তারা বাড়িতে জায়গা-জমি কেনে । ধুম-ধামের সহিত যৌতুক সহযোগে মেয়ের বিয়ে দেয় । তবে, সহজ পন্থায় আয়ের পথ তারা ছাড়তে পারেনা । অনেকেই ছেলে মেয়েদের এই পেশায় লাগিয়ে দেয় ।
এতক্ষণ আমি যা বললাম তা আপনাদের সকলের জানা ।
সরকার কি তাদের পূণর্বাসনের ব্যবস্থা করবে না । এই ডিজিটাল সরকারের নির্বাচণী ওয়াদায় বোধহয় কিছু ছিল । সরকার বাহাদুর তা ক্ষমতায় গিয়ে ভুলে গেছেন । আমরা জনগণ ও তা মনে করতে চাইনা ।
তবে, বৃটিশ সরকারের অর্থায়নে এবং বাংলাদেশ সরকারের অংশীদারিত্বে সিড়ি (SHIREE) নামে একটি অতি-দারিদ্রতা বিমোচন কর্মসুচী পরিচালিত হচ্ছে ।
পাঠকরা কেউ বেসরকারী সংস্থা তথা এনজিওতে কাজ করলে আপনার সংস্থাকে সিড়ির INNOVATION (http://www.shiree.org/innovationfund/) কর্মসুচীর মাধ্যমে ভিক্ষুকদের বিকল্প জীবিকায়নের কথা চিন্তা করতে পারেন । পাঠকদের পরিচিতরা কেউ এনজিওতে থাকলে তাদেরকে ও বলতে পারেন । ইতিমধ্যে প্রথম আলো ও অন্যান্য পত্রিকায় সিড়ি (SHIREE) ধারণা চেয়ে বিঞ্জপ্তি দিয়েছে । একটি সংস্থা সর্বোচ্চ দুইটি ধারণা জমা দিতে পারবে । তবে, ধারণাগুলো হতে হবে নবতর, অপরিক্ষিত এবং রেডিকেল ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।