ধুনটে পাঁচ যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
'ফাইভ স্টারস' মানে 'পাঁচ তারকা'। সাধারণত অনবদ্য সাফল্যের জন্যই জোটে এমন খ্যাতি। তবে এই প্রতিবেদনের পাঁচ মুখ 'ফাইভ স্টারস' আখ্যা পেয়েছেন তাদের সহিংস কর্মকাণ্ডের জন্য। এই পাঁচজনের সবাই যুবলীগ নেতা। তারা হলেন বগুড়ার ধুনট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বনি আমিন মিন্টু, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক গোলাম মুহিত চান, পৌর যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সদস্য বেনজির আহম্মেদ।
পাঁচ ক্যাডারের মধ্যে মিন্টুর বিরুদ্ধে চারটি, সাইদুল ও বেনজিরের বিরুদ্ধে দুটি করে এবং মুহিত ও জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ৩টি করে মামলা রয়েছে। তাদের সবার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা থাকার কথা স্বীকার করেন ধুনট থানার সেকেন্ড অফিসার ইব্রাহীম হোসেন। সাইদুল ইসলাম ও বনি আমিন মিন্টুকে কয়েক বার গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তারা জামিনে ছাড়া পান। সাইদুল ইসলামকে গত বছর কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণা করে দেড় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠলে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
যুবলীগের এই পাঁচ নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ সাংসদ আলহাজ হাবিবর রহমান।
তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, পুলিশকে বলে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ বা সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী হলেও অপরাধ করলে যেন তাদের ছাড় না দেওয়া হয়। সাংসদ হাবিব জানান, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি গণসংযোগ করতে ধুনটে আসেন। এ সময় হুকুম আলী বাসস্ট্যান্ডে বনি আমিন মিন্টু তার বাহিনী নিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে তাঁর সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে। তিনি অভিযোগ করেন, এই ক্যাডারদের দৌরাত্দ্যের পেছনে স্থানীয় কিছু নেতার প্রশ্রয় রয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নদী পার করতে দেরি হওয়ায় গত বছরের ৩ মার্চ বথুয়াবাড়ী ঘাটে নৌকার মাঝি আফছার আলীকে মারধর করে নদীতে ফেলে দেয় যুবলীগ নেতা মিন্টু।
এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করলে মিন্টু সাংবাদিকদেরও হুমকিধামকি দেন। সৌদি আরব থেকে পাঠানো ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়নের দুস্থদের জন্য বরাদ্দকৃত ৫ কার্টন দুম্বার মাংস ২৯ এপ্রিল ছিনতাই করে ফাইভ স্টার বাহিনী। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, বনি আমিন মিন্টু তার বাসার গৃহপরিচারিকাকে ধর্ষণ করেন। এর ফলে জন্ম নেওয়া সদ্যজাত কন্যা সন্তানকে হত্যা করে নদী-তীরে পুঁতে রাখা হয়।
থানা পুলিশ ২০০৯ সালের ৬ জুন শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। বগুড়া ডিবি পুলিশ এ ঘটনায় মিন্টুকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠায়। পরে মিন্টু জামিনে মুক্তি পান।
গত বছরের ২০ মে শিতলা বিল আবাসন প্রকল্পের ভূমিহীনদের ওপর হামলা, ভাঙচুর ও মারধর করে তাদের জলাশয় দখল করে নেওয়া হয়। এছাড়া বহালগাছা গ্রামের কৃষক শাহজাহান আলীর কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়।
চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় গত ১৯ ডিসেম্বর ঐ কৃষকের বাড়ি ভাঙচুর চলে। ছিনতাই করা মোবাইল ফোনের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে একই দিন রাতে জাহাঙ্গীর আলম ও গোলাম মুহিত চান গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে চান মিয়ার নেতৃত্বে যুবলীগের কর্মীরা পরদিন জাহাঙ্গীরের পিতার হোটেল মুনফুডসে হামলা চালায়। সেখানে ক্যাশ বাক্স ভেঙে ৩৯ হাজার টাকা লুট করা হয়। দুটি সহিংসতার ঘটনায় থানায় পৃথক মামলা হয়।
এছাড়া গত বছরের ১৭ আগস্ট সাইদুল ইসলাম জমির দলিল রেজিস্ট্রি করার কথা বলে স্থানীয় তিন কৃষকের কাছে থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা নেন। এই নিয়ে ধুনট থানায় মামলা হলে পুলিশ সাইদুলকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান।
এই বাহিনীর সদস্যরা চাঁদা চেয়ে না পেয়ে গত ২০ নভেম্বর স্থানীয় ব্যবসায়ী মকবুল হোসেনের বাড়িতে হামলা চালায়। এ ঘটনায় মামলা হলে ২৪ নভেম্বর পুলিশ সাইদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারের পর থানার এসআই আনোয়ার হোসেনের কাছে থেকে যুবলীগের আরেক ক্যাডার বেনজির আহম্মদের নেতৃত্বে একটি দল সাইদুল ইসলামকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ ব্যাপারে ঐ দারোগা থানায় ডায়েরি করেন।
যুবলীগের শীর্ষ এই পাঁচ ক্যাডারের অপকর্মের বিভিন্ন সংবাদ প্রকাশ করায় গত ১৬ ডিসেম্বর বনি আমিন মিন্টু ও চান মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল বারী বাদশা, মাসুদ রানা ও রফিকুল আলমকেও মারধর করে।
সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ধুনট উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শেখ মতিউর রহমান সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, দল থেকে এসব সন্ত্রাসীকে কোনো সমর্থন দেওয়া
হচ্ছে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।