আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটি সত্যিই এইরকম

I am She Lilith, Mistress of the dark. Of Sheba, First offender ......And succor to demons, Whose sweet seductions and wicked rites Lead all too enslaved by the flesh. To trespass against God's holy law, And tonight I come for you.. গ্রাম থেকে এই প্রথম ঢাকা শহরে আসছে আমেনা। বয়স খুব একটা বেশি না তার, বিশের কাছাকাছি হবে হয়তো। জন্মের সঠিক দিনক্ষন ঠিক জানা নেই---সবই অনুমান। এই দেশের রাজধানী ঢাকা, নামেও রাজধানী, কাজেও রাজধানী। আপা দুলাভাইয়ের কাছে শুনেছে এই ঢাকা শহরের চাকচিক্যের কথা।

বিশাল বিশাল দালান-কোঠা, বড়ো বড়ো রাস্তা, সেই রাস্তা দিয়ে দৌড়ে চলা সারি সারি গাড়ি,মানুষগুলো সব হনহন করে হেঁটে যায়। সাধে কি গানের সেই লাইন, "ঢাহা শহর আইস্যা আমার আশা ফুরাইছে, হায় লাল লাল, নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা ......" গুনগুন করে গেয়ে উঠে আমেনা। ঢাকায় এসেছে সে অনেক বড়ো স্বপ্ন নিয়ে। আমেনার বড়ো বোন বিয়ে করে এই শহরেই থাকে,জায়গার নামটা হঠাৎ করে ভুলে যায় সে, তারপর হাতের ভ্যানিটি ব্যাগের ভিতরে কাগজটি খুঁজে পায়, হাঁফ ছেড়ে বাঁচে,একটুখানি স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে সে। কারন ঐ কাগজেই লেখা রয়েছে তার দুলাভাইয়ের মোবাইল নাম্বার আর ঠিকানা।

অবশ্য গাবতলীর বাসস্ট্যান্ডে তার দুলাভাই তাকে নিতে আসবেন। ব্যাগটি হাতে নিতেই মনে পড়ে যায় গত ঈদে দুলাভাই এইটা তাকে কিনে দিয়েছেন। দুলাভাইয়ের নাম কালাম, ঢাকা শহরে ট্যাক্সিক্যাব চালায়, আর তার বোন ফরিদা চাকুরি করে একটা গার্মেন্টসে, দুই ঘরের ছোট্ট একটা ঘরে বেশ ভালোই আছে তারা। আমেনার ঢাকায় আসার কারন ঐ একই গার্মেন্টসে কাজ করবে সে। উপরমহলে টাকা খাইয়ে একটা কাজ যোগাড় করা গেছে।

আহারে কতোদিন পর বোনটার সাথে একসাথে থাকুম,সাথে দুই পিচ্চিরে সবসময় পামু, ভাবতেই শরীরের ভিতর পরম তৃপ্তি বয়ে যায়। আস্তে আস্তে বাসের গতি থেমে যায়, প্রায় একঘন্টা দুর্বিসহ জ্যাম শেষে গাবতলীতে পৌঁছায় বাস। মালপত্র বলতে তেমন কিছুই নেই, বড়ো একটা ব্যাগে সমস্ত কাপড়চোপড় আর অন্যান্য জিনিসপাতি রয়েছে, কিন্তু ভ্যানিটি ব্যাগটার উপরই আমেনার সজাগ দৃষ্টি। কারন ওতেই আছে আসল জিনিস, সেই উপরমহলে টাকা খাওয়ানোর জন্য নগদ দশ হাজার টাকা। সবকটা একহাজার টাকার নোট।

বাস থেকে নামার পূর্ব মুহূর্তে মনে পড়ে তার মায়ের সতর্কবাণী, "টাকার ব্যাগটা সাবধানে রাখবি মা, দরকার হইলে টাকাগুলান বুকের মইধ্যে রাইখ্যা দিবি", হঠাত করে কেমন জানি ভয় পেয়ে যায় সে, মনে হলো, বাস থেকে নামামাত্রই কেউ তার ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। খানিকক্ষন পর সে অনেক ইতস্তত করে বাস থেকে সবার শেষে নেমে পড়ে। তার দুলাভাই বলে দিয়েছেন, বাস থেকে নেমেই সোজা আন্ডারগ্রাউন্ড পাসের সামনে চলে আসতে। সেখানেই ক্যাব নিয়ে অপেক্ষা করবেন তিনি। আমেনা সেইদিকেই হাঁটা দেয়, একে ওকে জিজ্ঞেস করে পথ চলতে থাকে।

হঠাত কে যেনো তার কাঁধে খামচে ধরে। কিছু বুঝে উঠার আগেই সে আবিষ্কার করে মোটরসাইকেলে চড়া দুইজন তার ভ্যানিটি ব্যাগ টেনে নিয়ে গেছে,টানবার সময় তার ওড়নাটিও ছিঁড়ে ব্যাগের সাথে আটকে যায়। সম্বিৎ ফিরে পেতেই চিৎকার করে উঠে সে, হাতের বড়ো ব্যাগটা রাস্তায় রেখে মোটরসাইকেলের পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে, কিছুদূর দূরেই তার দুলাভাই তাকে দেখতে পেয়ে ঝটপট বুঝে যান কি হয়েছে। তিনি আর আমেনা দুইজনই "চোর চোর, ব্যাগ নিয়া গেলো" বলে দৌড়াতে থাকে সেই মোটরসাইকেলের পিছু পিছু, কিন্তু যন্ত্রের গতির কাছে হার মানে তারা। দূরের মোটরসাইকেল একসময় শূণ্যে হারিয়ে যায়।

মাথা চাপড়ে ধরে বসে পড়ে আমেনা। চরম বেদনার্ত গলায় দুলাভাইকে বলে আন্ডারপাসের আগে সে বড়ো ব্যাগটি রেখে এসেছে। দুলাভাই বললো, " তুমি খাড়াও এইখানে, আমি দেখি ঐটা পাই কিনা"। ৫ মিনিট পরে কালাম এসে দেখলো ঐ জায়গাটায় আমেনা নেই। এদিক ওদিক চেয়ে দেখে ঐ দূর থেকে লাল সালোয়ার কামিজ পড়া আমেনা দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ছুটে আসছে তার দিকে।

কাছে এসে দেখে আমেনা হড়বড় করে কি যেনো বলতে চাইলো, ক্যাবে রাখা পানির বোতল থেকে একটু পানি খেয়ে সুস্থির হয় সে। তারপর বলে, "এই দ্যাখো দুলাভাই, ওরা যখন আমার ব্যাগরে ধইরা টান দিছিলো, আমর ওড়নাখানও ঐটার লগে চইল্যা গেছিলো, কিছুদূর গিয়া ওরা আমার ওড়নাখান ফালায় দিছে"। কালাম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে বললো, "তো"? আমেনা উত্তেজিত কন্ঠে ওড়নার সাইডের গিঁট খুলতে খুলতে বললো, "এই যে দেখেন আমার টাকা। বাস থেকে নামার আগে এইখানেই টাকা লুকায়ে রাখছিলাম"। কথাগুলো বলতেই ক্যাবের পিছন সিটে চোখ পড়লো আমেনার, তার সেই কালো বড়োব্যাগটি রাখা।

চূড়ান্ত স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো সে। ফাঁকা রাস্তায় দুরন্ত গতিতে ছুটে যাচ্ছে কালামের ক্যাব। পিছনে গুনগুন করছে আমেনা, "ঢাহা শহর আইস্যা আমার আশা ফুরাইছে, হায় লাল লাল, নীল নীল বাত্তি দেইখ্যা ......" --------------------------------শেষ-------------------------------  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৬২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।