আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটি প্রকাশ হবার পর....!



সেদিন এক বন্ধুর সাথে দেখা। অনেকক্ষণ কথা হলো। কথার এক ফাঁকে লেখালিখি নিয়ে কথা উঠলো। সে এক ব্যাপক আড্ডা। আমি আবার এই সব ব্যপারে কথা বলে মজাও পাই।

চান্সে কিছু দার্শনিক মার্কা কথা বলার একটা সুযোগ পেয়ে যাই। আড্ডার এক পর্যায়ে সে আমাকে প্রশ্ন করে বসে, লিখিস না কেনো? অনেকদিন তো দেখি তুই কোনো লেখা ব্লগে দিচ্ছিস না। কথাটাতে আমি মোটেও ভড়কাই না। আসলেই অনেকদিন লিখতে পারছি না। লিখতে পারছি না মানে গল্প লিখতে পারছি না।

কিছুদিন আগে আমার একটি গল্প জনপ্রিয় দৈনিকে প্রকাশ হলো। আমার চেয়ে খুশীটা হয়েছে আমার মা। বার বার গল্পটি পড়ছে আর বলছে, আমার ছেলে এটা কিভাবে লিখলো? চুপচাপ নির্জনে থেকে ও এসব ভাবে? ঘটনাটা পরের দিনের। আমি দেখি, আমার মা মোবাইলে আমার ছোট খালাকে আমার পুরো গল্পটা পড়ে শোনাচ্ছে। আর কাঁদছে।

বুঝলাম। মায়ের অনুভূতি। এমনতো হবেই। নিজের ছেলের নাম পত্রিকায় দেখে তিনি খুশীতে আত্মহারা। সেদিনের পর থেকে অনেক পরিবর্তন আমাকে পুরই দুমড়ে দিচ্ছে।

মুখের দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে আমার পরিচিত মুখগুলো বলছে, বাহ ভালোই তো লিখেছো! লেখক হয়ে গেছো তাহলে! তবে আমি মোটেও খুশী হচ্ছি না। কারণটা আমি জানি। আমার মতো হাজারো চুনো-পুটি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ায়। লেখা ছাপানোর জন্য যুদ্ধ করে। আর একটি গল্প ছাপার পরই যদি কেউ লেখক হয়ে যায় তাহলে তো হতই।

আমি লেখক নই। লিখার চেষ্টা করি। তাও লেখার প্রদীপ যেনো আস্তে আস্তে নিভে যাচ্ছে। এই সব ব্যপার আমার বড় ভাইয়ার কথা মনে করিয়ে দেয়। লেখার হাতে-খড়িটা ওনার কাছ থেকেই পাওয়া।

তিনি এখন আর লেখেন না। তাঁর ডায়েরী ভরা লেখা তিনি স্ব- যত্নে নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন। এই ব্যপারে প্রশ্ন করলে বলে, জীবনের চাহিদার কাছে আমার লেখা পরাজিত। ইদানিং ভাইয়ার কথাটা মারাত্মক রকম কানে বাজে। অনেক বড় মাপের সাহিত্যিকরা কিন্তু বলেন, জীবনের ৪০ বছর পর্যন্ত লেখাটা ঠিক না।

কারণ, অভিজ্ঞতার ঝুলিতে তখন উপাদান খুব কম থাকে। তাই কলম চলতে চায় না। কিন্তু জীবনের ৪০ বছর পার করার পর অভিজ্ঞতার ঝুলি থাকে পরিপূর্ণ। তখন কলম দৌড়ায় সেচ্ছায়। তাকে প্রেসার দিতে হয় না।

আমিও একমত। তবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, আমার হাতে সময় খুব কম। তাই লিখে যাচ্ছি। যাইহোক। লিখাটা খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে।

লিখতে চাচ্ছিলাম গল্প। তবে গল্প শুরু করবার আগে কিছু কথা বলাটা জরুরী। আমার এক বন্ধু থাকে সুদূর আমেরিকায়। যার জন্ম ঐখানেই। বাঙালী হয়েও বেড়ে উঠেছে ঐ ধনীদের জগতে।

ভাঙা ভাঙা বাংলা বলতে পারে। তবে বুঝতে পারে। আমি যখন কলেজে পড়ি তখন ইন্টানেটের চ্যাটিং নামক ভাইরাস জগতে তার সাথে আমার পরিচয় হয়। সেই শুরু। এখনও আমরা বন্ধু হয়েই আছি।

আমি ব্লগে লিখালিখি করি। তবে বাংলায়। এই নিয়ে তার আফসুসের অন্ত নেই। বার বার বলে, ইউ শুড ট্রান্সটেল ইন ইংলিশ ওলসো। ওর এই কথা শুনে আমি হাসি।

হাসতে হাসতে বলি, আমি ইংলিশে একদম কাঁচা। তবে আমার লেখা গল্প “গল্পটি প্রেমেরও হয়ে উঠতে পারতো” তাঁকে অবশ্যই পড়তে বলি। কারণ, এই গল্পটি আমার খুব পছন্দ হয়েছিল। উপায় না দেখে বেচারি তার মাকে দিয়ে গল্পটি পড়ায়। সেদিনই আমাকে মেইল করে, বলে, তোমার গল্প আমার পছন্দ হয়নি।

এই লাইনটি পড়ে আমি খুব কষ্ট পাই। পাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি তো আর প্রফেশনার লেখক না যে সমালোচনা শুনে অভ্যস্ত হবো। ভাঙা হৃদয় নিয়ে আমিও এক লাইনের মেইল করি, কেনো.....কি হয়েছে গল্পের। কোন জায়গাটা পছন্দ হয়নি।

এরপর সে বিশাল এক বিশ্লেষণধর্মী মেইল করে। মেইলটি পড়ে আমি রীতিমত অবাক হই। যে কিনা কখনও কোনো বাঙলা গল্প পড়েনি। সে কি করে এতো সব বিশ্লেষণ করলো। যাইহোক।

তার সব কথা না বললেও হবে। তবে সে বার বার জানতে চাচ্ছিল, ঐ মেয়েটির কি হলো? মেয়েটার কি ফিলিংস? আশ্চর্য! আমি কি করে বলবো? আমি গল্পটি লিখেছি ছেলেটির চরিত্রের উপর ভর করে। মেয়েটির কথা আমি কি জানি? তারপরও তাঁর বিশেষ অনুরোধ ছিল, যে করেই হোক, আমি যাতে এই গল্পের দ্বিতীয় পর্ব লিখি। লাইনটি ছিল, এতো কিছু জানি না......আমি জানতে চাই মেয়েটির কথা....... এরপর তো আমার জীবনের স্বরণী ঘটনাটি ঘটলো। পেপারে গল্পটি আসলো।

পুরুষ্কার পেলাম। ফেইসবুকে সেদিন স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, যাতে সবাই আমার গল্পটা পত্রিকায় পড়ে। তবে দুপুরে একটি হতাশা মেশানো মেইল। আমার সেই প্রবাসী বন্ধু। তুমি আর এই গল্পটার সেকেন্ড পর্ব লিখবে না।

আমি জানি। পুরুষ্কার পেয়ে গেছো। তাই তুমি আর লিখতে পারবা না। লিখতে চাইলেও তুমি সেকেন্ড পর্ব লিখতে পারবা না। তোমার মাথায় এখন শুধু প্রথম পর্বই ঘুরবে।

কিন্তু তারপরও আমি তোমার সেকেন্ড পর্বটা দেখতে চাই। মেয়েটার কি হলো.....আমাকে বলো.....প্লিজ...... মেইলটা আমাকেও মুষড়ে দেয়। আমি যেনো সত্যিই আর কিছুই লিখতে পারছি না। সব কিছুই যেনো আটকিয়ে গেছে আমার ঐ গল্পটিতে। বাঙলায় একজন পাঠক।

আমার বন্ধু। যে কিনা কখনও কোনো বাঙলা গল্পই পড়েনি। আমার গল্প পড়েই যার বাঙলা গল্পের সাথে পরিচয় হলো। আমি তার মনটাই মনে হয় ভেঙে দিয়েছি। একটা অপরাধবোধও কাজ করছে আমার ভেতর।

তাই খুজে ফিরছি ঐ মেয়েটিকে। গল্পটি প্রেমেরও হয়ে উঠতে পারতো গল্পটির নায়িকা। সেই অজানা চরিত্র। সেই সাদা ধবধবে সেলোয়ার-কামিজ পড়া মেয়েটিকে। যার চোখের জল গড়িয়ে পড়া দেখে মুগ্ধ হয়েছিল গল্পের নায়ক মামুন।

যেই মেয়েটির হাসি দেখতে না পারার বেদনায় কাতর হয়েছিল মামুন। যে মেয়েটির জন্য মামুন এখনও অস্থির হয়ে ওঠে। সেই মেয়েটিকে আমি খুঁজে ফিরছি। আমার সেই বন্ধুর জন্য খুঁজে ফিরছি মেয়েটিকে। আমার চেতনায়-চিন্তায় এখন শুধু সেই মেয়েটিকে ফুটিয়ে তোলার আপ্রাণ প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছি।

নামহীন অদৃশ্য মেয়েটিকে কোথায় পাই! কোথায় পাই! কোথায়! ----------------------------------------------------------------------------- দেখলেন তো.....ভেবেছিলাম গল্প লিখবো। কিন্তু তারপরও লিখতে পারলাম না। সব কিছুই হয়ে গেলো আত্মকেন্দ্রিক। আমি সত্যিই দুঃখিত। সত্যিই দুঃখিত।

------------------------------------------------------------------------------- সবাই ব্লগে একবছর পূর্তি উপলক্ষে পোষ্ট দেয়। কিন্তু আমার দেয়া হয়নি। আজ হঠাৎ চেয়ে দেখি আমার বয়স ১ বছর ৩ সপ্তাহ। ব্লগকে নিজের লেখালেখির ফ্ল্যাট ফর্ম হিসেবে নিয়েছিলাম। নিজের হাতকে পাকানোর জন্য ব্লগিং শুরু করা।

আর এই ব্লগ থেকেই লেখার জগতে আমার প্রথম সফলতা। -------------------------------------------------------------------------- আমার যে লেখাটি দৈনিক প্রথমআলোতে প্রকাশ হয়েছিল তার লিংক: Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।