বৃষ্টি যেরকম আসতে আসতে ফিরে যায়..তেমনি বৃষ্টির মতো আমিও ফিরেছি বহুবার...
মাত্র ছয়মাস বয়সী শিশু সন্তান আর স্ত্রী সাফিয়া বেগমের অপেক্ষার পালা শেষ হলো। মা মরিয়মের কান্না আর বাবা আজেদ আলীর সন্তানকে ফিরে পাবার আশারও সলিল সমাধি হলো শেষাবধি। অপহরণের দীর্ঘ ৩২ দিন পর বৃহস্পতিবার রাঙামাটির বরকল উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের পাশে কাপ্তাই হ্রদে ভেসে থাকা রমজান আলীর লাশ পাওয়া গেলো। গায়ে কালো গেঞ্জি, পড়নে লুঙ্গি আর লাশের হাত বাঁধা।
সকালে লাশ পাওয়া গেলেও হ্রদের পানিতে দীর্ঘদিন থাকায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়া লাশটি চিনতে পারছিলোনা কেউই।
অতঃপর সেই ক্ষতবিক্ষত লাশ নিয়ে আসা হলো রাঙামাটিতে। দূরের ভূষণছড়া থেকে অজানা আশঙ্কা বুকে নিয়ে রাঙামাটি এলো অপহৃতদের পাঁচটি পরিবারের সদস্যরা। তখনো কেউই জানেনা, কার জন্য অপেক্ষা করছিলো প্রিয় স্বজনের লাশ।
বিকেল সাড়ে চারটায় প্রতীক্ষার অবসান হলো। স্বজনের কান্না আর চিৎকারই জানান দিলো এই বিশাল বোঝা কার, কার স্বজন ফিরে এসেছে লাশ হয়ে, লাশ ঘরে।
তবুও রমজান আলীর পিতা আজেদ আলী, স্ত্রী সাফিয়া বেগমের কান্না আর আর্তচিৎকারে ভারি হওয়া চারিপাশ অজানা আতঙ্কের স্রোত ছড়িয়ে দিয়েছে বাকী চারটি পরিবারের সদস্যদের মাঝেও।
পহেলা জানুয়ারি বরকল থেকে আসা প্রায় চার/পাঁচ হাজার সংক্ষুব্ধ মানুষের শ্লোগানের ভীড়েও যে সাফিয়ার কান্না ছুঁয়ে গেছে সবার হৃদয়, স্বামী হারা সেই রমণীর কান্না বৃহস্পতিবারের সাঁঝের বিকেলে ভূষণছড়া প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষগুলোকে কতটা ছুঁয়ে যাবে তার টের পাওয়া গেলো বিকেলে হাসপাতাল চত্বরেই। সেখানে উপস্থিত প্রায় শতাধিক নানা শ্রেণী পেশার মানুষ, যাদের কেউবা অপহৃতদের প্রতিবেশি, কেউবা সংবাদকর্মী, কেউ হাসপাতাল এলাকাবাসী, আর কেউ কেউ শুধুই উৎসুক জনতা। সবার চোখেই অশ্র“বিন্দু। এই কান্না, এই জল, এই অশ্র“ যেনো অপহরণ, নির্মম হত্যা আর কাপুরুষতার বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার আর প্রতিবাদ।
তারপরও রমজান আলীর লাশতো পাওয়া গেছে, বাকীরা ? আজহার, ইউসুফ, জাহিদ, মোখলেস, জীবিত না মৃত ? বেঁচে আছেন নাকি নেই, এই প্রশ্নের উত্তর কার কাছে ? না, এই প্রশ্নের জবাব নেই কারো কাছেই। এখন বাকী চারটি পরিবারের প্রতীক্ষার পালা, স্বজনের ফিরে আসা, অথবা লাশের। এমন নির্মম সময় যেনো কারো জীবনেই না আসে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।