আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্মম বাস্তবতা

কিছুটা পাগলামো ছাড়া বড় কোন প্রতিভাবানের দেখা মেলে না_ অ্যারিষ্টটল আনিস খুব মন দিয়ে পড়ছে। কাল তার বিসিএস এর চূড়ান্ত ভাইভা পরীক্ষা। গতবারও বিসিএস এ সে ভাইভা পর্যন্ত গিয়েছিলো কিন্তু শেষ পর্যন্ত চাকরি হল না। তবে এইবার সে অনেক আশাবাদী। গতবারের চেয়ে এইবার লিখিত পরীক্ষা অনেক ভাল হয়েছে।

তাছাড়া তার বন্ধু আরিফ এর মামা( সড়ক ও জনপথ বিভাগ এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ) এর সাথে ও এই ব্যাপারে আলাপ হয়েছে। তিনি নিশ্চিন্তে ভাইভা দিতে বললেন। বাকিটা উনি দেখবেন। আজ আনিস বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছে। সকালে সে বিসিএস এর ভাইভা দিলো।

ভাইভা তার অনেক ভালো হয়েছে। আরিফ এর মামা বিকেলে দেখা করতে বলল। মামা অনেক ব্যাস্ত, তিনি আনিস কে ওয়েটিং রুম এ বসতে বললেন। আনিস বসে বসে চিন্তা করছে, যাক শেষ পর্যন্ত চাকরিটা মনে হয় হয়েই যাবে। চাকরিটা তার আসলেই অনেক দরকার ছিল।

কিছুক্ষণ পর আনিস এর ডাক পড়ল। আসো, তোমার ব্যাপারেই একটু আগে কথা হচ্ছিল, তোমার তো পরীক্ষা অনেক ভালো হয়েছে, আশা করি তোমার চাকরি হয়ে যাবে,তবে......। তবে কি মামা? তুমি তো বোঝো বর্তমানে চাকরি পাওয়া আর সোনার হরিণ পাওয়া একই কথা। তাই কিছু খরচ এর ব্যাপার ও আছে। তুমি এক কাজ কর, ৭ দিনের মধ্যে পাঁচ লক্ষ টাকা জোগাড় কর।

তোমার চাকরি নিশ্চিত হয়ে যাবে। আনিস এর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। কি বলবে ভেবে পেলো না। শেষ পর্যন্ত নিজের মনকে অনেক কষ্টে শান্ত করে বলল, মামা আমার বাবা একজন গরিব কৃষক। আমার জানা মতে আমাদের বসতবাড়ি আর সব জমি বিক্রি করলেও পাঁচ লক্ষ টাকা হবে না।

ঠিক আসে, ৭ দিন তো সময় আছে। দেখো জোগাড় করতে পার কি না। আনিস আর কিছু বলল না, সালাম দিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে চলে আসলো। ব্যাপারটা নিয়ে আনিস অনেক চিন্তা করল, সে আরবি সাহিত্য নিয়ে পড়াশোনা করেছে, ইংলিশ ও আরবি ভাষা তার ভালো জানা আছে। হাজি সাহেবের ছেলেকে সে পড়ায়।

উনি দুই বছর হল travel agency এর ব্যাবসা খুলেছেন। মুলত হজ্জ এর সময় ই মানুষ সব চেয়ে বেশি আসে। তাই তিনি আনিস কে বলেছিলেন যে মক্কা এবং মদিনায় তার অফিস এ যেন সে যোগ দেয়। শুধু হজ্জ এর মৌসুম নয়, সার্বক্ষণিক ই একজন ভালো আরবি এবং ইংলিশ জানা লোক সৌদি আরবে থাকা দরকার। উনি প্রাথমিক অবস্থায় ২০০০ রিয়াল বেতন দিবেন বলেছেন, পরবর্তীতে ব্যাবসা বড় হলে বেতন ও আরও সুবিধা ও সে পাবে।

আনিস চিন্তা করে দেখল, পড়াশোনা শেষ হল আজ প্রায় ২ বছর হল। এখনও একটা চাকরি পেলো না। সবাইকে ছেড়ে দেশের বাইরে যাওয়ার তার ইচ্ছা নেই। কিন্তু কি আর করা, সন্ধায় গিয়ে হাজি সাহেব কে হ্যাঁ বলে আসলো। আজ ১০ বছর হল আনিস সৌদি আরবে আছে।

সচ্ছলতাকে যদি সুখ বলা যায় তা হলে সে সুখেই আছে। আগের চেয়ে তার বেতন অনেক বেড়েছে। থাকার জন্য বাড়ি এবং সার্বক্ষণিক ব্যাবহারের জন্য ড্রাইভার সহ একটা গাড়ি ও সে পেয়েছে। বাবা মা অনেক ভালো আছেন। ভালো ছেলে দেখে বোনের বিয়ে দিয়েছে।

ছোট ভাই ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে গত বছর চাকরীতে যোগ দিয়েছে। বছর পাঁচেক হল আনিস বিয়ে করেছে, তার একটি ছেলে ও আছে। সারাদিনের ব্যাস্ততা শেষে রাতে ফেসবুক এ ঢুকল। দেখল তার এক বন্ধু একটা লিঙ্ক শেয়ার দিয়েছে। আনিস ওই লিঙ্ক এ গিয়ে দেখে মেধা পাচার নিয়ে একটা প্রতিবেদন।

ওই প্রতিবেদনে লিখা কি ভাবে আমাদের দেশ এর মেধাবি ছেলেরা ভালো টাকা এবং উন্নত জীবনের আশায় এই দেশ ছেড়ে অন্য দেশ এ পাড়ি জমাচ্ছে। তারা শুধু নিজের সুখের জন্য বাইরে যাচ্ছে। দেশ এর কথা চিন্তা করছে না। এইবার আনিস কমেন্ট গুলো পড়ল। তার বন্ধুর কমেন্ট এ আনিস এর চোখ গেলো।

সে লিখেসে I HATE THOSE GUYS. আনিস কোন কমেন্ট দিলো না। কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। আসলেই কি আনিসরা অনেক ভালো আছে? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।