গত ৩রা জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন এবিসি নিউজ ওই পতিতালয় নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে ফুটে উঠেছে, সেখানে অবস্থানকারী প্রায় ৮০০ পতিতার দুঃখগাথার খণ্ডচিত্র। তাদের কয়েকজন জোসনা, পাখি, কাজল, পিয়া, রিয়া। তারা বাধ্য হয়ে ঠাঁই নিয়েছে ওই পতিতালয়ে। এক নরক যন্ত্রণা নিয়ে তারা সেখানে থাকতে চায় না।
কেউ চায় দুবাই পাড়ি জমাতে। কেউ চায় পিতামাতার কাছে ফিরে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে নতুন জীবন যাপন করতে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের পুরস্কার বিজয়ী ফটোজার্নালিস্ট এলিসন জয়েস সমপ্রতি বাংলাদেশ ও ভারতে বেশ কিছু প্রকল্প নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশের পতিতালয়গুলো দেখতে ও পতিতাদের দুঃখ-কষ্টের কথা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার কাছে তুলে ধরতে বছরে একবার বাংলাদেশ সফরের পরিকল্পনা নিয়েছেন। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ভূমিকা পালন করেছিলেন।
তিনি ছিলেন বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারণা বিষয়ক ফটোগ্রাফার। এবিসি নিউজে তার পাঠানো ফটো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মধ্য বাংলাদেশের ব্যস্ত শহর ফরিদপুরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পতিতালয়। এটি জয়নাল বাড়ি নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে চারটি দালান। এগুলোতেই গড়ে উঠেছে এই পতিতালয়।
সেখানে যেসব মেয়ে দেহ ব্যবসা করে তাদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী । তারা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে বা বিয়ের পর জটিলতা থেকে মুক্ত হতে ঘর ছেড়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের ঠাঁই হয়েছে পতিতালয়ে। অন্য অনেককে অপহরণ করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিক্রি করে দেয়া হয়েছে সর্দারনির কাছে।
ওইসব পতিতাকে দিনে গড়ে ৫ থেকে ১০ জন খদ্দেরের মনোরঞ্জন করতে হয়। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা কোন অর্থ পায় না। কারণ, সর্দারনির কাছে তাদের ঋণ রয়েছে। এসব পতিতা ‘চুকরি’ নামেও পরিচিত। ওই প্রতিবেদনে জোসনা নামে এক পতিতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
সে একজন সর্দারনি। বড়বাড়ি পতিতালয়ের তেতলায় ব্যবসা চালায়। সে বলেছে- এই পতিতালয়ে আমি ১৬ বছর ধরে আছি। নিজে দেহ ব্যবসা করেছি ৪ বছর। তারপর সর্দারনি হয়েছি।
এই নরকে কিভাবে সুখী হবো? যখন এখান থেকে মুক্তি পাবো, সেদিনই আমি সুখী হবো। জোসনা এখন পরিকল্পনা করছে যত তাড়াতাড়ি পারে দুবাই পাড়ি জমাতে। আরেক পতিতা পাখি। সে বলেছে- এখন আমার বয়স ২২ বছর। এই পতিতালয়ে আমি ২ বছর ধরে আছি।
তার আগে আমার বিয়ে হয়েছিল। চার বছর টিকে ছিল। কিন্তু আমার স্বামী ছিল ভীষণ ক্ষ্যাপাটে। তাই আমি পালিয়েছি। স্বামীর ঘর ছেড়ে পিতামাতার কাছে গেলে আমার এক আংকেল আমাকে ঢাকা নিয়ে যায়।
সে বলেছিল- আমাকে একটি ড্যান্স স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তার পরিবর্তে সে আমাকে নিয়ে যায় এক সর্দারনির কাছে। তার কাছে আমাকে বিক্রি করে দেয়। এখন আমি কাউকে ভয় পাই না। কখনও কখনও এই জায়গাটাই আমার কাছে ভাল লাগে।
কখনও ভাল লাগে না। কিন্তু আমার স্বামীর সঙ্গে বসবাসের চেয়ে এই জায়গাটা অনেক ভাল। আমি আর আমার পিতামাতার সঙ্গে কথা বলি না। তবে তাদের কথা খুব মনে পড়ে। কিন্তু আমি কি করতে পারি এজন্য? এখন আমার সর্দারনি আলেয়া।
তাকেই নিজের মা মনে হয়। আমি আমার পরিবারের মতোই তাকে ভালবাসি। কোন একদিন আমিও সর্দারনি হতে চাই। তবে ২২ বছরের রিয়ার কথা আলাদা। সে বলেছে- তার জন্ম যশোরে।
সেখানেই সে বড় হয়েছে। তার ভাষায়- এই পতিতালয়ে আমি ৫ বছর ধরে আছি। যশোরে এক স্থানীয় যুবকের শিকারে পরিণত হয়েছি আমি। এ বিষয়টি আমি পিতামাতাকে জানালে তারা উল্টো আমাকে দোষারোপ করেন। ফলে আমি বাড়ি থেকে বের হয়ে আসি।
তারপর এক নারী আমাকে রাস্তা থেকে ফরিদপুর পতিতালয়ে নিয়ে আসে। এখন আমি আমার পিতাকে খুব মিস করি। মাঝে মধ্যে তার সঙ্গে কথা বলি। আমি তাকে জানিয়েছি- আমি ঢাকার একটি গার্মেন্টসে চাকরি করি। তিনি আমাকে সব সময়ই বাড়ি ফিরে যেতে বলেন।
এলিসন জয়েস যখন রিয়ার সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ করেন তখন তার পরিকল্পনা ছিল পতিতালয় ছেড়ে গাঁয়ে ফিরে দর্জির ব্যবসা করার। পরে জয়েস তার সঙ্গে দ্বিতীয়বার দেখা করতে গিয়ে জানতে পারেন রিয়া পতিতালয় ছেড়ে গেছে। তার সর্দারনি জোসনা বলেছে- রিয়াকে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে। স্বর্ণের দুল দেয়া হয়েছে। তারপর তাকে যশোরে তার পরিবারের কাছে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
জয়নাল বাড়ি পতিতালয়ের তেতলায় এখনও খদ্দেরের জন্য অপেক্ষা করে পিয়া। এখানে যুবতীদের কদর বেশি। কিন্তু বয়স্ক পতিতাদের দিনকাল খারাপ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।