সাহিত্যের সাইটhttp://www.samowiki.net। বইয়ের সাইট http://www.boierdokan.com
আন্তর্জাতিক শব্দটা নিয়া ইদানিং খুব ভাবতে হয়। না ভাবলে চলে না। এই শব্দটা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে আকুল করে ফেলেছে। বাজারে গিয়ে দেখি চালের দাম বেড়েছে, উপদেষ্টারা বলেন, তাদের কিছু করার নাই।
কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে। বাজারে মরিচের দাম, তেলের দাম, কাঁঠালের দাম যাই বাড়ুক না কেন দোহাই একটাই : আন্তর্জাতিক বাজার। যে আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে আমাদের এত কষ্ট সে আন্তর্জাতিক বাজারে কোন জিনিষের কত দাম সেটা কিন্তু কোনো দিনই আমাদের জানা হয়ে ওঠে না। কোনো মিডিয়া আমাদের জানায় না, চালের দাম আমেরিকার কত, ইনডিয়া, পাকিস্তান বা নেপালে কত। কিছু খবর আমাদের কানে আসে।
শুনি যে, আমাদের বাজারে যখন শনৈশনৈ দাম বাড়ে তখন আশপাশের সব দেশের বাজার স্থিতিশীল। এমনকি পাশের পশ্চিমবঙ্গেও। কিন্তু আমাদের কোনো মিডিয়াই বলে না, পশ্চিমবঙ্গে মানুষ কত টাকায় চাল, ডাল, আটা কেনে। কেন আমরা তাদের থেকে বেশি দাম দিতে বাধ্য হই। কেন আমাদের সামনে একটাই দোহাই।
আগে শোনা যেত, সিন্ডিকেটের কথা। হোলসেল ব্যবসায়ীদের চক্রের কথা। কিন্তু এখন দুর্নীতি বিরোধী মচ্ছবের সময়, সে সব কথাও কেমন ফিকে হয়ে এসেছে। এখন দেশে কোনো সিন্ডিকেট নাই। অশুভ ব্যবসায়িক চক্র নাই।
কালোবাজারী, মুনাফাখোর নাই। এখন দাম এমনেই বাড়ে। কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না? কুনো সমস্যা নাই। আন্তর্জাতিক বাজার আছে না?
চাপিয়ে দাও। কিছু দিন নিরাপদে থাকো।
আন্তর্জাতিক বাজারের দাম বাড়ার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির কথাও কেউ বলে না। কেউ বলে না, আমেরিকার বাজার ইনডিয়ার বাজার করনেওয়ালারা মাসে কত পান, দিনে কত টাকার বাজেট করেন। কোনো কিছুর সঙ্গে কোনো কিছুর সম্পর্ক নাই যেন। বাজারে গিয়ে কুলাতে পারছো না? দোষ তোমারই। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে খবর রাখো না কেন?
এখন আন্তর্জাতিক বাজারের হাত থেকে আমাদের নিস্তার মিলবে কেমনে? যাদের মাথায় আন্তর্জাতিক বাজার বসত গেড়েছে তাদের মাথা ধোলাই করতে হবে।
নইলে তাদের মাথা সমেত দূরে কোথাও পাঠিয়ে দিতে হবে।
অন্য উপায় আছে, আমাদের বাঁচার?
আর এক আপদ হলো, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এরা কারা? এরা আমাদের দেশে বসবাসরত প্রভু। সাউথ এশিয়া কোম্পানি। আন্ডার সেক্রেটারি, আর এসিট্যান্ট আন্ডার সেক্রেটারি।
দয়াবান দাতা গোষ্ঠী, আদতে সুদী কারবারের মহাজন, ঋণ দাতা গোষ্ঠী। এরা কখনো ব্যাংক, কখনো রাষ্ট্রদূত, কখনো ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কখনো আন্তর্জাতিক বিবেকের প্রতিনিধি। দেশের এমন কোনো ইস্যু নাই যাতে এদের পক্ষে ও বিপক্ষে একটা করে বিবৃতি নাই। নির্বাচন দ্রুত হতে হবে/ নির্বাচন সরকার ঘোষিত রোডম্যাপ অনুসারে হবে : দুই বিষয়েই এদের বিবৃতি আছে। জরুরি অবস্থা দ্রুত তুলতে হবে/ হবে না : দুই বিষয়েই এদের মত আছে।
সরকারের সমালোচনাও আছে সমর্থনও আছে। এরা শেষ হাসিনার বিচার প্রক্রিয়ার ওপর গভীর নজর রাখে আবার গণতন্ত্রের পথে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের প্রশংসা করে। মানবাধিকার লংঘিত যাতে না হয় তার জন্য সদা তৎপর। আবার সরকার সমস্যায় থাকলে উদ্ধারের জন্য এক পায়ে খাড়া। আজকে এর বাসায় পার্টি তো কাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক।
অমুক এলেন, কথা বললেন। আমরা ভাবলাম, অমুকে চাপে আছে। পরের দিন দেখা গেল পুরাটাই নাটক। বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফ আর বিভিন্ন কোম্পানির স্বার্থ, ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানির স্বার্থ, আর আমাদের গণতন্ত্রের স্বার্থ সব মিলে মিশে একটা অ্যাবসার্ড নাটক। চলিতেছে, চলিতেই থাকিতেছে।
এদের হাত থেকে মুক্তি নাই। এরাই মুক্তি। এরাই গণতন্ত্র। এরাই সার্বভৗমত্ব।
আমাদের দেশে হাজার রঙের আন্তর্জাতিকের মধ্যে আরেক আন্তর্জাতিক হলো : আন্তর্জাতিক খ্যাতি।
কী জিনিশ এটা? ড. ইউনুস না হয় নোবেল পাইছেন। তার আন্তর্জাতিক খ্যাতি নাই, এইটা কেউ বিশ্বাস করবে না। কিন্তু এদেশে ডজন ডজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদ আছে। বিশ্বব্যাংকের একটা প্রজেক্টে কাজ পেলেই হলো। উনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ।
দেশের বাইরে দু একটা দেশে জাদু দেখালেই হলো। উনি আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জাদুশিল্পী। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মিসকিন, অধ্যাপক, সবই এই দেশে আছে ডজন ডজন। এরা দেশের কী কাজে লাগে বুঝি না। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বার্থ দেখাশোনায় তাদের জুড়ি নাই।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ইচ্ছায় আমাদের ওপর আন্তর্জাতিক বাজার চাপিয়ে দিতে এনারা বেশ উকিলের ভূমিকা পালন করেন। আন্তর্জাতিকের এই দেশে কিন্তু আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন উকিল একজনই। শোনা যায়, বাংলাদেশে শের্ন-কেয়ার্ন-ইউনিকোলসহ ট্রান্সন্যাশনাল কোম্পানির স্বার্থ ইনি দেখাশোনা করেন। ফলে, ইনি আন্তর্জাতিক উকিল। আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনার মেলা।
এই আন্তর্জাতিক খ্যাতির সঙ্গে যখন আমাদের বহুদিনের দেশ বিখ্যাত বাম নেতারা ঐক্যের আলোচনা করেন। হাত মিলিয়ে বসে থাকেন তখন মনে হয়, দেশীয় কোনো কিছুর খাওয়া এই দুনিয়ায় আর নাই। এখন যদি কিছু হতে হয়, তবে আন্তর্জাতিকই হতে হবে। দেশের মানুষকে এখন হরেদরে আন্তর্জাতিকই হতে হবে। এছাড়া আর উপায় কী?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।