কার্ণিশ ভাঙ্গা জানালার ফাঁক দিয়ে রাতের আকাশের যেটুকু অংশ দেখা যায়, অইটাই আমার পৃথিবী। Of course we're after Saddam Hussein, err, uh, I mean bin Laden, he's he's he's...
George W. Bush: live, 2004 vote
The religious myth is the most powerful device ever created, and serves as the psychological soil upon which other myths can flourish.
Narrator: Zeitgeist – The Movie, Author: Peter Joseph
অপরাধবিজ্ঞানে ভদ্রবেশী অপরাধ নিয়ে সর্বপ্রথম আলোচনা করেন মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক এডউইন হার্ডিন সাডারল্যান্ড (১৮৮৩-১৯৫০) ১৯৩৯ সালে। আর আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ (International white coller crime) ধারণটা আসে ভদ্রবেশী অপরাধ নিয়ে আলোচনার পরে, যখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এ ধরণের অপরাধ সংগঠিত হয়। সাডারল্যান্ড মূলত সমাজে প্রচলিত যে সব অপরাধ (Blue color crime) সংগঠিত হয় তার বাইরে যে সব সূক্ষ্ম অপরাধ রয়েছে যা ব্যক্তি তার জ্ঞান, দক্ষতা, শিক্ষা ও সামাজিক অবস্থান কে কাজে লাগিয়ে সংগঠিত করে এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ নির্ধাণের ক্ষেত্রে তার তত্ত্বের অবতারণা করেন। তিনি অপরাধ ও অভিজাত সমাজের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের চেষ্টা করেন তার তত্ত্বে যা ইতিপূর্বে আর কেউ করেননি।
White coller crime বা ভদ্রবেশী অপরাধ বলতে আর্থ- সামাজিকভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কর্তৃক তাদের পেশাগত কাজের প্রক্রিয়ায় এমন কিছু অপরাধমূলক কাজ করাকে বুঝায় যা প্রচলিত আইনে সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নেই বা এ ধরণের অপরাধের কোন সুনির্দিষ্ট শাস্তির বিধান উল্লেখ নেই, কিন্তু সামাজিকভাবে এগুলো অপরাধ হিশেবে স্বীকৃত। সাডারল্যান্ড ভদ্রবেশী অপরাধের সংজ্ঞায় বলেন, “it may be defined approximately as a crime committed by a person of respectability and high social status in the course of his occupation”. পরবর্তীতে ভদ্রবেশী অপরাধ নিয়ে নানা অপরাধবিজ্ঞানী কাজ করেছেন এবং নানা সংজ্ঞাও দিয়েছেন। দুইভাবে ভদ্রবেশী অপরাধ সংগঠিত হয়। ব্যক্তির বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধসমূহকে আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ হিশেবে চিহ্নিত করা হয়।
ভদ্রবেশী অপরাধের উদাহরণ হিশেবে বলা যায় যেমনঃ আয়কর ফাঁকি, জালিয়াতি, তহবিল তসরুপ, মিথ্যা সাক্ষ্যদান, ট্রেডমার্ক নকল করা, ব্লাকমেইলিং ও হুন্ডি বা মানি লন্ডারিং ইত্যাদি।
আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ মূলত বহু ব্যক্তির সমন্বয়ে সংঘটিত হয়। সাধারণত একই দেশের মধ্যে বা বিভিন্ন দেশের মধ্যে অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপরাধীচক্র সক্রিয় থেকে এ ধরণের অপরাধ সংঘটিত করে। আবার এ ধরণের অপরাধ একটি রাষ্ট্র অন্য একটি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধেও সংঘটিত করে থাকে।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ বেশী সংঘটিত হয়।
বলা হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ যা এড়িয়ে চলা সম্ভব নয় আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ট্রেড লিবারালাইজেশন, মেধাস্বত্ত্ব চুক্তি, বৃহৎ পরিসরে প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে যেমন হ্যাকিং, গ্লোবালাইজেশনের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এ ধরণের অপরাধ সংঘটিত করা হয়।
আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধসমূহ সংঘটিত হয় একটা রাষ্ট্রকে দূর্বল করে ফেলা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলা ইত্যাদি উদ্দেশ্যে। এ ক্ষেত্রে অস্ত্র বাণিজ্য, মাদকদ্রব্য পাচার, রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা চালিয়ে শাসক গোষ্ঠীর বিপরীতে বিদ্রোহী গ্রুপ সৃষ্টি করা ইত্যাদির মাধ্যমে এ ধরণের অপরাধসমূহ সংঘটিত করা হয়। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, গণতন্ত্রায়নের লেবাসে, সন্ত্রাসবাদিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করছে তাকে আমরা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক ধরণের আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ বা আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী সন্ত্রাসবাদিতা বলতে পারি।
ভদ্রবেশী অপরাধ সমূহ অনেকটা সন্তর্পনে ও নীরবে সংগঠিত হয়। প্রায় ক্ষেত্রেই তা কাগজে- কলমে জালিয়াতি বা মিথ্যার আশ্রয়ে সম্পন্ন হয়। তাই এ ধরণের অপরাধ সনাক্ত করাও বেশ কঠিন তার অর্থ এই নয় যে তা অসম্ভব।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক সংগঠনসমুহ সর্বোপরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাইবার অপরাধ, আন্তর্জাতিক আয়কর ফাঁকি, মেধাস্বত্ত্বকে কেন্দ্র করে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, সন্ত্রাসবাদিতা, সংঘবদ্ধ অপরাধ এ ধরণের আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ রোধে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু গ্লোবালাইজেশন, মুক্তবাজার অর্থনীতি, তথ্য- প্রযুক্তি সীমানাতিক্রম করে বিভিন্ন দেশের মধ্যে অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়ে উঠেছে।
আন্তর্জাতিক ভদ্রবেশী অপরাধ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রঃ ৯/১১ পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ নানা দেশ সন্ত্রাসবাদিতা ঠেকাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থ সংস্থান বাড়িয়ে দেয়। নতুন করে সন্ত্রাসবাদী হামলা ঠেকাতে অর্থ পাচার রোধ, সন্ত্রাসবাদী সংগঠনসমূহের সম্পত্তি জব্দ করার উদ্দেশ্যে নানা ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। কিন্তু ৯/১১ এবং তৎপরবর্তী যে যুদ্ধ তা কতটা যুক্তি সঙ্গত তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
যুদ্ধ কোনোকালেই শান্তি বয়ে আনতে পারেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের উত্থান তথা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য ভার্সাই চুক্তির ক্ষেত্রে মিত্র বাহিনীর যুদ্ধংদেহী ভূমিকা অনেকাংশে দায়ী।
শান্তির জন্য যুদ্ধ এই ধারণাটার মধ্যেই রয়েছে মস্তবড় গলদ। আর এ ধারাণাটার সাথে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই পরিচিত করে তুলেছে বিশ্ববাসীকে। সাথে সাথে এ ধারণাটা যে বানোয়াট এবং নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির কাজেই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তার ব্যবহার হয়েছে তার প্রমাণও তারা দিয়েছে। অন্ততঃ আফগান যুদ্ধ (না আগ্রাসন), ইরাক যুদ্ধ (আগ্রাসন বলা শ্রেয়) তাই বলে। তাহলে এই যুদ্ধগুলো কেন? যুদ্ধগুলো কী এজন্য যে, এখানে শক্তিসম্পদ আছে এবং তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করতলগত করা চাই, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ব্যবসাটা আরও চাঙ্গা হবে যেটা বর্তমান মধ্যপ্রাচ্যে অর্থাৎ সিরিয়া, লেবানন, মিশরে বিদ্রোহীদের দিয়ে করানো হচ্ছে।
অথবা সারা বিশ্বে তার ক্ষমতা ও শক্তিমত্তার প্রদর্শন করতে হবে যাতে করে সমস্ত বিশ্ব বুঝে যে আমেরিকা এবং একমাত্র আমেরিকাই পৃথিবীর পরাশক্তি।
একটি রাষ্ট্রের জনগণই সিদ্ধান্ত নেবে তারা কী ধরণের শাসন ব্যবস্থা এবং কোন শাসকের অধীনে শাসিত হতে চাই। এটাই একটা রাষ্ট্রের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃত স্বার্বভৌমত্ব এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এটাই গণতন্ত্র। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা, তৃতীয় বিশ্ব সর্বোপরি বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্রের চর্চা, গণতন্ত্রায়ণে অত্যধিক সোচ্চার, উদ্বিগ্ন। মোটামুটি যেকোনো ভাবেই গণতন্ত্রকে এই সব এলাকার জন্যে অকাট্য, পূর্ব নির্ধারিত ও জরুরি রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে চাপিয়ে দিতে উদ্ধত।
আমরা বলি এখানেই আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গণতন্ত্র বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে। গণতন্ত্রের সুস্থ চর্চা ও তার সুষ্ঠু বিকাশে বাধাদান করা হচ্ছে এবং তা করছে খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এইসব এলাকায় গণতন্ত্রায়নে উঠেপড়ে লাগার পেছনে বড় কারণ কী এটা নয়, যে এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। গণতন্ত্রায়নের নামে যা কিছু হচ্ছে এটাই তো হোয়াইট কলার ক্রাইম। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যে শক্তিশালী অবস্থান তাকে কাজে লাগিয়ে গত এক দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা করে চলেছে একটা ভয়ানক মিথ্যেকে আশ্রয় করে যা গোটা বিশ্ববাসীর সাথে ধোঁকাবাজি ও খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার জনগণের সাথে প্রতারণা পুর্বক অর্জিত (fraudalently gained) সমর্থন কে কাজে লাগিয়ে যে আগ্রাসন চালাচ্ছে যার ফলে একদিকে মুসলমানরা যেমন নিগৃহীত হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, এবং ইউরোপ জুড়ে, তেমনি আমেরিকানরা বা তার মিত্ররা ও হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে, যার দায়ভার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা গত একদশকের মার্কিন শাসকগণকেই নিতে হতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।