আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি বিচার অবশেষে সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরিণতি লাভ করল। ওই ঘৃণ্য অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর হয়েছে। বিয়াল্লিশ বছর পরে এই বিচার ও দণ্ড ইতিহাসের কলঙ্ক মোচন করে দেশ ও সমাজের শূচি সাধনের পথ পরিষ্কার করবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
দেশে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আইনে এই বিচারানুষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপরাধীরা এবং দেশে-বিদেশে নীতিহীন সুবিধাবাদীরা প্রবল বাধা তৈরি করেছে।
অপরাধের দায় বহনকারীরা দেশের ভেতরে আন্দোলনের নামে একাত্তরের সমপর্যায়ের নৃশংসতা চালিয়েছে, চালাচ্ছে। আমরা এর চেয়েও বেশি বিস্ময় বোধ করেছি কিছু কিছু আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া দেখে। বিশেষত কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে যখন সর্বোচ্চ আদালতে রায়ের পুনর্বিবেচনার আবেদন সংক্রান্ত শেষ বিচারিক ধাপটির কাজ চলছিল তখন গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেন। মিডিয়ায় প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, আসন্ন নির্বাচন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে তিনি কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে তা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করেত পারে বলে মন্তব্য করেন। সতর্ককরণ ধরে নিলেও এর মধ্যে যে প্রচ্ছন্ন হুমকির আভাস রয়েছে তা অনভিপ্রেত।
এই বিচারের বিরুদ্ধে আপ্তবাক্যের মতো এই অভিযোগ বেশি ব্যবহূত হয়েছে যে, প্রক্রিয়াটি ‘আন্তর্জাতিক মান’-এর হয়নি। অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের দীর্ঘ সময়-সুযোগ দিয়ে মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের সামনে যে উন্মুক্ত বিচার হয়েছে তা স্বচ্ছতার দিক থেকে এ ধরনের বিশেষ অপরাধের বিশেষ বিচারের ক্ষেত্রে অতুলনীয়। আপিলের সুযোগও নজিরবিহীন। আপিলবিহীন নুরেমবার্গের বিচারের দণ্ড কার্যকর হয়েছিল ১৫ দিনের মাথায়। আমরা কী দোষ করেছি যে আন্তর্জাতিক মোড়লরা আয়নায় নিজেদের চেহারা দেখার সময় পান না!
১৯৭১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাকিস্তানিদের গণহত্যায় মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখেনি।
যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্ত্য জগতে ‘মানবাধিকার’ নিয়ে হিপোক্র্যাসি রয়েছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তানে ড্রোন হামলায় নিহত শিশু-নারীসহ বেসামরিক নাগরিকদের মানবাধিকার বলে কিছু নেই। ইসরায়েলি গোলায় ফিলিস্তিনি শিশু হত্যায় কেন মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় না? গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে মার্কিন আচরণ কোন্ মান রক্ষা করছে? মিথ্যা অভিযোগে ইরাককে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়ার পর সাদ্দাম হোসেনকে ধরে দাঁতের ডাক্তারের সঙ্গে অমর্যাদাকর ছবি বিশ্বব্যাপী দেখিয়ে তড়িঘড়ি বিচার কোন্ আন্তর্জাতিক মানে হয়েছিল? বিচার ছাড়া ওসামা বিন লাদেনের লাশ গোপনে সমুদ্রে নিক্ষেপ কি নতুন আন্তর্জাতিক মান তৈরি করল? মার্কিন মিত্রদেশ সৌদি আরবে প্রকাশ্য শিরশ্ছেদের ‘আন্তর্জাতিক মান’ নিয়ে নিক্সন, কিসিঞ্জার, বুশ, কেরি ক’বার কথা তুলেছেন?
গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার নাভি পিল্লাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লেখা এক চিঠিতে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে বলেছিলেন, বিচারকাজ মৃত্যুদণ্ড প্রদানের উপযোগী আন্তর্জাতিক মান পূরণ করেনি।
এ কথা সত্য যে, অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড নেই। ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া এদিক থেকে হয়।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মান হচ্ছে আন্তর্জাতিক। কোনো একক বা গুটিকতক মোড়ল দেশ সে মান স্থির করে না। ভিন্ন মত থাকলেও কোনো সার্বভৌম দেশের জাতীয় বিচারিক প্রতিষ্ঠান, নিজস্ব আইন, সামাজিক অবস্থা, রীতি-নীতিকে অবজ্ঞা করা যাবে না। হয়তো আমাদের দেশেও ভবিষ্যতে কখনও মৃত্যুদণ্ড রহিত হতে পারে। তার আগে আমরা আমাদের মতো চলব।
বন্ধুত্ব ও পরামর্শ চলবে, মোড়লিপনা চলবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।