শেষ বারের মতো সতর্ক করছি... লজিং মাস্টার নিয়ে একটি জোক্স
একদিন ছাত্র স্যারকে একবাটি দই খেতে দেয়। স্যার মহা উৎসাহে খেতে থাকে। খেতে খেতে জানতে চায়। হঠাৎ আজকে তোমার মা আমাকে দই খেতে দিল কেন?
ছেলেটি সহজ ভাবে উত্তর দেয়। কাল রাতে আমাদের দুধের বাটিতে বিড়াল খেয়েছিল, তাই কেউ খেতে চায়নি।
সকালে দুধ দই হয়ে গেছে।
স্যার রাগে বাটিটা দূরে ছুড়ে ফেলে। বাটিটা ভেঙ্গে যায়।
ছাত্র মনক্ষুন্ন হয়ে স্যারকে বলে স্যার বাটিটা ভেঙ্গে ফেললেন? এটাতে তো আমাদের টমি খায়। (টমি হচ্ছে তাদের বাসার কুকুর।
)
আমি তখন অনার্সে ভর্তি হয়েছি। হোস্টেলে সিট পাচ্ছিনা। রুম ভাড়া করে থাকার মতো অবস্থা নেই। কলেজ থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে এক বাসায় পড়ানোর বিনিময়ে ফ্রি থাকার ব্যবস্থা হলো। গতানোগতিক অন্যান্য লজিং মাস্টরের মতো আমারও দিন কাটছে।
আমি প্রায় অনন্দে দুটি বকলম ছেলেকে পড়াই। পরীক্ষার পরে পকেট ভরে ডোনেশান নিয়ে উপরের ক্লাসে উঠিয়ে দেন এই গল্প প্রায়শই শুনে থাকি। আমারও চিন্তা নেই। বড়লোক বাবা ছেলেদের জন্য এইটুকো তো করতেই পারেন। আর কোটিপতি বাবা ডোনেশনের এই কটা টাকার জন্য কৃপনতা করেন না।
তাদের বিশাল বাড়িতে ভাড়া থাকে আরো অনেক পরিবার। একটি শিক্ষক পরিবারের সাথে আমার সম্পর্ক বেশ ভাল। তাদের দুটি ছেলে পড়ালেখায় ভাল। ছোট ছেলেটি মাত্র ২য় শ্রেনীতে পড়ে। নাম বিপ্লব।
সারাদিন আমার রুমে বসে থাকে। আমাকে ডাকে স্যার বলে। আমি তাকে অনেক বার অঙ্কেল বলতে বলেছি। কিন্তু ডাকেনি। তার বড় ভাইকে আমি পড়াতাম,সে ডাকতো আমাকে আঙ্কেল বলে।
কিন্তু বিপ্লব কে কখনো পড়াতাম না তবু আমি ছিলাম তার স্যার।
আমি কলেজ থেকে ফিরেই তাকে ডেকে নেই। চার পাশে আর বন্ধু বান্ধব বলে কিছু নেই। একটু কথা বলার লোকের বড় অভাব বোধ করি। বেশির ভাগ কথাই সেই ছোট ছেলেটির সাথে হয়।
ধীরে ধীরে সেও আমার অনুরক্ত হয়ে উঠে। আমারও তার সহচার্য ভালই লাগে।
আমি যা বলি করে। যা বারন করি শোনে। তার বাবা মাও নানা সময় তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়ে কিছুটা নিশ্চিন্ত হন।
তখন আমার মাথাভর্তি চুল। চেহারার তুলনায় চুলটাই বেশি চুখে পড়ে। নিয়মিত চিরুনি না পড়ায় কিছুটা উন্মাদের মতো দেখায়। এই অভ্যসটাও করেছিলাম এক বন্ধুর পরামর্শে। কলেজ থেকে আসার সময় আমি ভাড়া হাফ দিতে চেষ্টা করতাম।
আর প্রায় প্রতিদিনই বাসের হেল্পারের সাথে ঝগড়া হতো। আমার চেহারা দেখে হেলপাররা একটা ঝাড়ি মারার চেষ্টা করতো। বন্ধুর কথা মতো আমি যখই একটু রাফটাফ ভাবে কথা বলে দেখলাম। কাজ হয়। এখন আর হেল্পার ভাড়ার জন্যও ঝামেলা করে না।
সামনের দিকে চোখে এসে পরে। আমি কারনে অকারনে চোখ থেকে চুল সরাই। এটাই যেন একটা ফেশন।
এই চুলের অবস্থা দেখে চারপাশের মানুষে অনেক কথা শুনতে হতো। কিন্তু আমি গায়ে মাখতাম না।
তখন কিছুটা ক্ষমতা দেখানোর স্বাদ পেয়ে গেছি। এলো মেলো লম্বা চুল আর একটু রাফটাফ হতে সহযোগিতা করছে। কিন্তু আমার দৌড় বড়জোর হেল্পার পর্যন্তই।
আমার চুলের ফেশনটা কেউ পছন্দ না করলেও বিপ্লব খুব পছন্দ করতো। সে প্রতিবারই চুল কাটার সময় বলতো স্যারের মতো কাটতে হবে।
তার বাবা তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে কোন ভাবে নিয়ে আসেন। এসেই সে আমার কাছে কেঁদে কেটে তার বাবার নামে বিচার চাইতো। আমি কথা দিতাম তার পরে যখন চুল কাটবে তখন আমি তার সাথে যাব। দেখি কি করে সেলুনের লোক তার চুলন ছোট করে। সে আমার কথায় সান্তনা পেত।
এবং আবার চুল বড় করার জন্য অপেক্ষায় থাকতো।
সম্ভবত আট থেকে দশ মাস ঐ বাসায় লজিং মাস্টার হিসেবে ছিলাম। আমি লজিং মাস্টার থাকে কালিন সময়ে, একদিন কোন এক ছুটিতে বিপ্লবরা সপরিবারে তাদের বাড়িতে গেল। আট দশ দিন হলো। হাঠাৎ একদিন খবর পেলাম বিপ্লব খুব অসুস্থ।
আমি মনস্থির করলাম দেখতে যাব। কিন্তু যাই যাচ্ছি করে সাত দিন হয়ে গেল। খবর পেলাম বিপ্লব মারা গেছে। মনটা বিষন্ন হয়ে গেল।
থেমে গেছে তার দুরন্তপনা।
আর আমার চারপাশে ঘুরে ঘুরে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করবে না। অযথা তাকে কোথাও ঘুরিয়ে আনতে প্রস্তাব করবেনা। চুপিচুপি তার বাসা থেকে কিছু খাবার আমার জন্য নিয়ে আসবে না।
এতো সহজ কথা। আমিও জানি।
কিন্তু তবু মনটা হাহাকার করে উঠে। সে তো আমার কোন অত্মিয় নয়। অনেক দিনের চেনা জানাও নয়। তবু এই কয়দিনে এত আপন হয়ে উঠেছিল কি করে? আপন না হলে এতদিন পরেও তার কথা মনে হল কেন?
আমরা গেলাম। ছোট শিশুটির শব দেহ দেখতে।
বিছানায় শুয়ে আছে তার নিথর দেহ। তার বাবা পাশে বসে কাঁদছে। আমাকে দেখে ঝাপটে ধরলো। আমার জন্য তার শেষ মুহুর্তের আবদারের কথা গুলো বলে গেল কাঁদতে কাঁদতে। তার বাবা আমাকে তার চুলকাটার স্টাইলটা দেখতে বলে।
আমি এক পলক তাকিয়ে মাটির দিকে ফিরিয়ে নেই দৃষ্টি। আমি চেয়ে দেখলাম আমার চুলের মতো করেই কাটা তার চুল গুলো। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।