শ্বেতাঙ্গরা বাদামি বর্ণের চুল খুব পছন্দ করে। কিন্তু জন্মগতভাবে বেশিরভাগের বাদামি চুল না হওয়ায় চুলের রঙ বাদামি করার জন্য তারা আবিষ্কার করে কেমিকেল। আমেরিকার ১৮ বছরের বেশি মেয়েদের এক-তৃতীয়াংশ চুলে রঙ করে। আমাদের দেশের মেয়েরাও চুলে রঙ করার হার বেড়েছে বহুগুন। পার্লারগুলোতে চুলে রঙ করার জন্য দীর্ঘ লাইন পড়ে।
কিন্তু চুলে রঙ করার জন্য স্বাস্থ্যের বেশ ঝুঁকি বাড়ে। চুলের রঙে পাঁচ হাজারের বেশি কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। এ কেমিক্যালগুলোত্বকে এলার্জি, চুল ভেঙে যায় সহজেই। এছাড়াও বাড়ায় ক্যান্সারের ঝুঁকি।
চুলের রঙে পি-ফিনাইল ডাইঅ্যামিন ব্যবহার করা হয়।
এটি দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা, ত্বক, ¯œায়ু, শ্বাসতন্ত্র, কিডনী ও লিভারের ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এটি কোষের ডিএনএকে ধ্বংস করে। এ ধ্বংসপ্রাপ্ত ডিএনএ পরবর্তীতে ক্যান্সার হতে ভূমিকা পালন করে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটিকে পরিবেশের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্ণিত করেছে। কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইডেনে এটি কসমেটিক হিসেবে ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।
এটি ত্বকে অ্যালার্জি করে।
রঙের রিসরসিনল কেমিক্যালকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চোখ ও ত্বকের জন্য ক্ষতিকর, প্রদাহকারী বলে ব্যবহার না করার সুপারিশ করেছে। অ্যামোনিয়ার যৌগগুলো ত্বক ও চোখে অস্বস্থি করে। চুলের রঙে সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও অ্যামোনিয়াম সালফেটের গাঢ়ত্ব শতকরা ৬০ ভাগের বেশি ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে এর গাঢ়ত্ব ১৭.৫ ভাগের বেশি হলেই তা ত্বকে প্রদাহ ও এলার্জি করে।
ডাই-এ ব্যবহৃত লেড এসিটেট গর্ভস্থ শিশুর জন্মগত স্বাস্থ্য সমস্যা, ক্যান্সার ও প্রজনন আক্ষমতার জন্য দায়ী। ৪- অ্যামাইনো-বাই-ফিনাইল মানবদেহে ক্যান্সারের জন্য দায়ী তা অনেক আগেই প্রমানিত। এ কেমিক্যালগুলো অ্যাজমা বা হাঁপানির জন্য দায়ী। গবেষনায় দেখা গেছে যারা চুল রঙ করার সাথে জড়িত তাদের ১৭-৮০ ভাগ ত্বকের এলার্জিতে আক্রান্ত হন। দীর্ঘ দিন চুলে রঙ করার জন্য চুল শুষ্ক হয়ে চুল ভেঙে যায়।
অনেক সময় অতিরিক্ত চুল পড়ার কারণ হতে পারে এটি।
রঙের বেশ কিছু কেমিক্যাল ইদুর, গিনিপিগ শরীরে ক্যান্সার করতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন। ১৯৮০ সালের দিকে শুধু চুলে রঙ করার জন্য আমেরিকায় বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার যেমন নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, লিউকেমিয়া বেড়ে যায়। সে সময় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী অ্যামাইন ব্যবহার করা হত। পরে এ কেমিক্যালগুলো রঙ থেকে বাদ দেয়া হয়।
কিন্তু এখন যে কেমিক্যালগুলো ব্যবহার করা হয় তা মানবদেহে ক্যান্সার তৈরি করতে পারে কিনা তা নিয়ে বির্তক আছে। ২০০৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি)-এর একটি গবেষনাপত্র থেকে জানা যায় চুল রঙ করার পার্লারে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে মুত্রথলির ক্যান্সার বেশি। নতুন আর একটি গবেষণায় জানা গেছে যারা এ ধরণের পার্লারে ৫ বছর বা তারোও বেশি সময় ধরে কাজ কাজ করেছেন তাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি তিনগুন বেড়ে যায়। কয়েকটি গবেষনাপত্রে এ ধরণের ঝুঁকি নাই বলে জানানো হয়েছে।
প্রায় বিভিন্ন সময়ের চুলে রঙ করা ১১ হাজার মেয়ের ওপর গবেষণা থেকে দেখা গেছে এদের মধ্যে সাড়ে চার হাজার মেয়ে নন-হজকিন্স লিম্ফোমায় আক্রান্ত হয়েছে।
এর বেশির ভাগই ১৯৮০ সালের আগে আক্রান্ত হয়েছেন। ১৯৮০ সালের পর নন-হজকিন্স লিম্ফোমায় আক্রান্তের সংখ্যা কমলেও ফলিকুলার লিম্ফোমায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। আর একটি গবেষণায় দেখা গেছে রঙ করা ১৫শ’ মেয়ের মধ্যে প্রায় আটশ’ জন লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। ওই গবেষণায় আরো জানা গেছে ১৫ বছর বা তার বেশি সময় ধরে চুলে রঙ করলে লিউকেমিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। তবে কিছু কিছু গবেষনায় দেখা গেছে এ ধরণের ক্যান্সার ১৯৮০ সালে চুলে রঙকারীদের মধ্যে বেশি ছিল।
এখন তা কমে গেছে। তবে এখন রঙে যে কেমিক্যালগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে তা ক্যান্সারের জন্য দায়ী নয় তা নিশ্চিত করে বলতে পাচ্ছে না কেউ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।