কি আর বলবো!
মনে আছে ছোটবেলায় বাসায় নাপিত আসতো চুল কাটাতে। তখন আমার কাছে নাপিত মানেই জম। বিশেষ করে ঘারের কাছে কাটার সময় প্রচন্ড শুরশুরি লাগত। ভয়ে বেশি নরতেও পারতামনা যদি গুতা লেগে কেটে যায়। আরেকটু বড় হলে আম্মুর সাথে নাপিতের কাছে যেতাম চুল কাটতে।
প্রচন্ড বিরক্তিকর কাজ মনে হত। এখনকার পিচ্চি পুলাপানের মত এত হেয়ার কন্শাস ছিলামনা। একটাই কাট ছিল। পাতিল ছাট। স্কুলে স্যাররা পেছনে চুল মুঠ করে ধরে দেখতেন।
যদি মুঠোতে ধরা যায় তাহলে চলত সপাত সপাত বেতের বাড়ি।
নাইন টেনে থাকতে শুরু হল রাহুল কাটের প্রচলন । হঠাৎ চারদিকে এসি সেলুন গজানো শুরু হল। পোলাপান সব ধুমায়ে ঐ এক কাট। কিন্তু খুব বেশিদিন রাখা যেতনা।
অল্প কিছুদিনেই চুল বড় হয়ে যেত আর শুরু হত স্যারদের প্যাদানি।
অনার্সে থাকতে কোন নির্দিষ্ট কাট ছিলনা। মাঝখানে চালু হল স্কয়ার কাট। ভালই ছিল। অনেকদিন চালিয়াছিলাম।
এই স্কয়ারের উপরেই চালিয়ে নিচ্ছিলাম। চেন্জ করলাম এক সিনিয়র বন্ধুর পাল্লায় পড়ে। সারাক্ষন প্যান প্যান করত কৈ নাকি এক বিদেশিনী চুল কাটে। সেইরকম সুন্দরী। তার চিপাচিপিতে একদিন গেলাম।
দেখলাম মাইয়া চায়নিয। বাংলা/আংরেজ দুটিই চোস্ত বলে। সেইরকম এলাহি কারবার। প্রথমে তো সে চুলে হাত দেয়না। কাজের বুয়া টাইপের কাকে দিয়ে চুল ধুয়ায় নেয়।
তারপর চুলকাটা শুরু করে। গল্প করতে করতে যা বুঝলাম সে ছোটকাল থেকেই এখানে। মায়ের কাছ থেকে এই পেশায় আগমন। বেশি কথা বললে আবার তার মা এসে উঁকি দিয়ে যায়। বিল দেবার সময়তো চক্ষু ছানাবড়া।
যিন্দেগিতে এত টাকা দিয়ে চুল কাটাইনাই। সবচেয়ে মেজাজ খারাপ হল আমার নতুন হেয়ার কাট দেখে। আমার সাধের চুলগুলারে স্পাইক বানায়া ফেললো!? জিগাইলাম এটা কি করলা? 'তোমার মুখের সাথে এ্যাডজাস্ট করে এটা করলাম। এখন তোমাকে বেটার লাগছে'। 'হ তরে কৈছে' মনে মেন বলি।
যাইহোক, নতুন চুল স্টাইলে একটু অস্যস্তি লাগছিল। যদিও চারদিক থেকে ভালই সারা পাওয়া যাচ্ছিল। তারপরও কেন যেন এটা কন্টিনিউ করলামনা। ঐ বেটির কাছেও আর যাইনাই।
একদিন কি মনে করে নাপিতকে বললাম 'তোমার যেভাবে খুশি চুল কেটে দও'।
ওমা! সেও দেখি ঐ স্পাইক করলো! কেন? ঐ একই উত্তর। 'বস আপনার মুখের শেইপের সাথে স্পাইক ভাল যায়'। ব্যাস। তারপর থেকে নিয়মিত স্পাইকেই থাকলাম।
আবার কমাস আগ থেকে বুঝলামনা কি চুলকানি শুরু হল।
ভাবলাম এবার চুল লম্বা রেখে দেখি কেমন হয়। নাপিতরে বললাম 'তোমার মতো ঝাকরা চুল করা যাবে?' নাপিতও ভাল সেলস্ম্যান। 'হ্যা হবেতো। আমি জাস্ট সাইডে একটু ট্রিম করে দিচ্ছি। কয়েকমাস খালি এভাবেই অল্প করে কাটাবেন।
বড় হলে আমার মত হয়ে যাবে'। আজকে দেখলাম কাটা শেষ হলে ব্যাটা ব্যাকব্রাশ করে দিল। হায় হায়! পুরাতো ইলিয়াস কান্ঞন স্টাইল হয়ে গেল। তবু হাল ছারলামনা। আমি এর শেষ দেখতে চাই ।
নাপিতরে বললাম চুল কোনভাবে নামায়ে দেওয়া যায় কিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।