চলতি বছর সার্নের বিজ্ঞানীদের ‘হিগস বোসন’ শনাক্ত করা নিয়ে বিজ্ঞান বিশ্বে তৈরি হয়েছে তুমুল উত্তেজনা। বলা হচ্ছে, হিগস বোসন শনাক্ত হলে সমাধান হবে বস্তুর ‘ভর’ রহস্যের।
বিজ্ঞান বিশ্বের এই উত্তেজনার সাথে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গৌরবময় অধ্যায় জড়িত। ‘বোসন’ নামটি এসেছে এ বিশ্ববিদ্যালয়েরই এক সময়ের অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম থেকে।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার লগ্ন ১৯২১ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনাসূত্রে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সাথে জড়িত ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক থাকা অবস্থায় তার এক গবেষণারসূত্র ধরে পদার্থবিজ্ঞানে পরিসংখ্যান বলবিদ্যার সূচনা হয়। পদার্থবিদ্যায় বসু প্রবর্তিত পরিসংখ্যানের নাম তাই ‘বসু পরিসংখ্যান’।
এই পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করে জগৎ বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী আইনস্টাইন একক পরমাণুযুক্ত গ্যাসের একটি নতুন সংখ্যাতত্ত্ব প্রকাশ করেন, যার নাম দেওয়া হয় ‘বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন’। যে সব মৌলিক কণা তথা প্রাথমিক কণার ক্ষেত্রে এই সংখ্যায়ন কাজ করে তাদেরকে বোসন বলে।
ইলেকট্রন, প্রোটন, নিউট্রন ইত্যাদি কণাকে বলে প্রাথমিক কণা।
আমাদের বিশ্বের সমস্ত প্রাথমিক কণাকে এদের বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে দুটি দলে ভাগ করা হয়। একটি ভাগকে বলা হয় বোসন ও অপর ভাগকে বলা হয় ফার্মিয়ন।
বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নামে হয় ‘বোসন’ আর ইটালির বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মির নামে ‘ফার্মিয়ন’।
সত্যেন্দ্রনাথ বসু ১৮৯৪ সালের ১ জানুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। রোববার এই মহান বাঙালি পদার্থবিজ্ঞানীর ১১৭তম জন্মবার্ষিকী।
সুরেশচন্দ্র বসু ও আমোদিনী দেবির সন্তান সত্যেন্দ্রনাথ। তার বিজ্ঞানানুরাগী পিতার কেমিক্যাল ওয়ার্কশপের ব্যবসা ছিলো।
পাঁচ বছর বয়সেই স্কুলে ভর্তি হন সত্যেন বোস। প্রথম স্কুলের নাম ছিল ‘নিউ ইন্ডিয়া স্কুল’। পরবর্তীতে হিন্দু স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন।
প্রবেশিকায় সারা বাংলায় তিনিই প্রথম হন। দ্বিতীয় হন ঢাকার ছেলে আরেক বিখ্যাত বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা।
এরপর তিনি ভর্তি হন কোলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। সেখান থেকে পাস করে ভর্তি হন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তার সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ বিদ্বৎজন।
তার শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন বাংলার আরো দুই বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু ও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়। এদের অনুপ্রেরণা সারা জীবন তাকে চালিয়েছে।
কি স্কুল কি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, সব জায়গাতেই তিনি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজ চালু হলে তাতে যোগ দেওয়া প্রথম শিক্ষকদের মধ্যে অন্যতম সত্যেন বোস ।
পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হলে তিনি এখানে যোগ দেন।
আর তার সব মহান আবিষ্কার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার সময়েরই ঘটনা। তার কাছে আইনস্টাইনের নিজ হাতে লেখা দুটি চিঠি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের গর্বের ধন।
তিনি ছিলেন অসাধারণ শিক্ষক। ছাত্রদের পড়াতে যেয়েই তিনি কোয়ন্টাম পদার্থবিজ্ঞানের জনক ম্যাক্স প্লাঙ্কের সূত্রের অসঙ্গতি টের পান। আর এ নিয়ে তাঁর গবেষণার ফলই ‘বসু পরিসংখ্যান’।
দেশবিভাগের প্রাক্কালে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। যোগ দেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান কলেজে। সেখানে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এরপর বিশ্বভারতীর উপাচার্য ছিলেন দুইবছর। তারপর অবসর নেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘বিশ্ব পরিচয়’ বইটি সত্যেন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন। ভারত সরকার ‘পদ্মবিভূষণ’ খেতাব দিয়ে তাঁকে সম্মানিত করে।
আজীবন মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা প্রসারের জন্য কাজ করে গেছেন তিনি। বাংলা ও বাংলাভাষার প্রতি তার ছিলো অগাধ
ভালবাসা।
১৯৭৪ সালের ৪ ফেব্র“য়ারি কোলকাতায় নিজ বাসভবনে তিনি দেহত্যাগ করেন।
বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চার সমর্থনে তাঁর অমর বাণী, “যিনি বলেন বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব নয়, তিনি হয় বিজ্ঞান বোঝেন না অথবা বাংলা জানেন না। ”
সূত্র: বিডি নিউজ ২৪ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।