আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিপাইমুখে বাঁধ প্রকল্প নিয়ে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনা।

জীবন আসলে চিল্লাপাল্লা ছাড়া কিছুই না। সেটাই করতে চাই, মনের সুখে, ইচ্ছা মতন। আমাদের এই সেমিস্টারে ইংলিশ লিটারেচারের একটা কোর্স ছিল, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য কেন সাহিত্য প্রয়োজন তা আমি আজও বুঝিনি, কিন্তু এইটুক বুঝেছি যে মানুষ হওয়ার জন্য সাহিত্য অবশ্যই প্রয়োজন, তাই হয়তো সিলেবাসটা এভাবে সাজানো হয়েছে। যাক, এই বিষয়ে আলোচনা করা আমার এই লেখার উদ্দেশ্য না, সেই কোর্সে একটা গল্প আছে যার নাম Tolerance লিখেছেন E.M. Forster নামের একজন। গল্পটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা, এর সারমর্মটা কিছুটা এই রকম, “ একটা জাতি চলার জন্য কি প্রয়োজন? যদি প্রশ্ন করা হয় তবে অধিকাংশ মানুষ জবাব দেবেন যে মানুষের জন্য মানুষের ভালবাসা, কিন্তু এ ব্যাপারটা প্রশ্ন সাপেক্ষ।

আসলেই কি কোন দুজন অপরিচিত মানুষ কোন কারণ ছারাই একজন আরেকজন কে ভালবাসতে পারে? ভালবাসাটা আসলে ব্যক্তিগত ব্যাপার, এটা কোন সামাজিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিষয় না। একজন উগান্ডার মানুষ যদি বলেন যে সে বাংলাদেশকে ভালবাসে সেটা বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই হবেনা। কিন্তু তার পরও সভ্যতা ঘরে উঠেছে যুগে যুগে। এর ভিত্তি হল পরস্পরের প্রতি পরস্পরের দায়িত্ববোধ। আমার প্রতিবেশী যদি খারাপ হয় তবে আমার ২ টা পথ খুলা থাকবে, ১) প্রতিবেশী সম্প্রদায়কে নিঃশেষ করে দেয়া।

২) তাদের কে সহ্য করে যাওয়া এবং যুক্তি তর্ক দিয়ে ভাগে আনার চেষ্টা করা। ( যতক্ষণ নিজের ক্ষতি না করে পাড়া যায়। )। এর মাঝামাঝি কোন পদক্ষেপ কোন কাজে আসবে না। “ এই গল্পটা আমার আজ মনে পড়ল তার কারণ তার ঠিক কাছাকাছি একটা পরিস্থিতিতে আমরা পড়েছি।

আমাদের প্রতিবেশী দেশ আমাদের টানা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, এবং তারা টানা বাঁশ দেয়াও অব্যাহত রাখছে। এখন প্রথম পদক্ষেপটা আমাদের জন্য কতটা সম্বব তা সবার জানা। তাই দ্বিতীয়টাই আপাত দৃষ্টিতে সহজ মনে হচ্ছে। কিন্তু যখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায়, তখন? বর্তমানে আমাদের সামনে যে তত্ত্ব উপাত্ত প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে আমি যেটুকু বুজতে পারছি তা হচ্ছে, • টিপাই মুখে বাঁধ হলে সুরমা কুশিয়ারা নামের আর কোন নদী থাকবে না। • সমগ্র সিলেট অঞ্চল মরুভূমি হয়ে যাবে।

( যদিও সেখানে খেজুর উৎপাদন সম্বব কিনা সেটা ক্লিয়ার না। ) • দেশে খাদ্য সংকট দেখা দেবে, মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। • সমুদ্রের লুনা পানি নদীতে চলে আসবে, ফলে জীব বৈচিত্র্য হ্রাস পাবে। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশের সমস্যা, ভারতের কি কি সুবিধা অসুবিধা হবে তা নিয়ে এই মুহূর্তে আমার মাথা ব্যথা কম। আমি এতক্ষণ বলছিলাম যে গল্পের দ্বিতীয় সমাধানটাই ভাল, কিন্তু আমি যদি বেঁচে না থাকতে পারি, না খেয়ে মরে যাই, তা হলে প্রতিবেশীর সাথে ভাল সম্পর্ক ধুয়ে কি পানি খাব? এই হিসাবে তো প্রথম অপশনটা বেছে নেয়া ফরয হয়ে যায়।

কিন্তু এইরকম একটা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে লক্ষাধিক বার চিন্তা করতে হবে, সমীক্ষা করে দেখতে হবে যে আসলেই কি বাঁধের ফলে এই ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে কিনা। প্রথম আলোতে মহিউদ্দিন সাহেবের লেখা টা পড়ে তো অন্য কথা মনে হয়, আবার এর একটা জবাব ও ব্লগে প্রকাশ হয়েছে (কে লিখেছেন নামটা মনে করতে পারছি না), সেটা পড়লে সাথে সাথে মন পরিবর্তন হয়ে যায়। আমি প্রথম আলোকে ধন্যবাদ জানাই যে তারা একটা ভিন্ন মত তুলে ধরার মতো সাহস করেছেন। কিন্তু তারা ধন্যবাদের চেয়েও দিগুণ বকা খাওয়ার কাজ করবে যদি এর জবাবটা প্রকাশ না করে। সব জায়গায় দ্বিমত থাকবেই, সেই সবগুলো ধৈর্য ধরে শুনার মতো মানসিকতা থাকা একান্ত জরুরী।

সব দিক থেকে সব মতামত শুনে তবেই একমাত্র একটা ভাল সিদ্ধান্ত নেয়া সম্বব। আমার কাছে টিপাই নিয়ে এখন পর্যন্ত যা যা (সারা দেশের মানুষের এক মঞ্চে উঠে আসা, প্রতিবাদ, সভা-সমাবেশ, মিটিং, মিছিল, লংমার্চ, মানব বন্ধন, মহিউদ্দিন সাহেবের বাঁধের পক্ষ নেয়া, তার যথাযথ জবাব, আমার কিছু না জেনে, না বুঝে পণ্ডিতি করে বড় বড় কথা বলা... ... সব) হয়েছে, সবই স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। এখন অপেক্ষা করছি, কবে এর একটা সমাধান বের হয়ে আসবে, আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে তার পরিষ্কার চিত্র পাব, পরিসঙ্কান ও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা সহ। ভারতীদের কাছ থেকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ভালোবাসা কিংবা দয়া আশা করি না, চাই তাদের নিজস্ব বিচার বুদ্ধির জাগরণ। নিজে বাঁচা ও অন্যকে বাঁচতে দেয়ার মতো মানসিকতা।

এক বিষয় নিয়ে আর কতদিন? অনেক কাজ পড়ে রয়েছে যে!!! *** বিঃ দ্রঃ এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে আহবান নেটওয়ার্কে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.