আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘ঢাকার সায় ছাড়া টিপাইমুখে বাঁধ হবে না’

নয়া দিল্লি, জুন ০৪ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া বরাক নদীর টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ হবে না বলে আবার আশ্বস্ত করেছে ভারত। ভারতের পানিসম্পদ সচিব ধ্রুব বিজয় সিং সোমবার নয়া দিল্লিতে বাংলাদেশি সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ আমাদের সঙ্গে না এলে আমরা নির্মাণের দিকে (টিপাইমুখ প্রকল্প) এগোবো না। ” ভারতের মনিপুর রাজ্যের টিপাইমুখ বহুমুখী প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনের জন্য বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বর্তমানে ভারত সফর করছেন। সিলেট সীমান্তের কাছে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ করে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। ওই বাঁধ হলে তার বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশে পড়বে বলে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।

এনিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবাদ চলছে। বিজয় সিং বলেন, টিপাইমুখ প্রকল্পের কী কী প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়তে পারে, তার সব দিক খতিয়ে দেখার জন্য সমীক্ষা শুরু করতে উভয় দেশের যৌথ নদী কমিশনের উপ-কমিটি এ মাসের শেষ দিকে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে। ২০০ কোটি ডলারের এই প্রকল্পে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত এবং যৌথ নদী কমিশনের উপ-কমিটি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগের বিষয়টিও পর্যালোচনা করবে। ভারতের সচিব বলেন, এই প্রকল্প সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলে ভারতের কাছে মনে হলে অন্য কোথাও বাঁধ নির্মাণ করা হবে। টিপাইমুখে কোনো নির্মাণ কাজ এখনো শুরু হয়নি বলেও জানান তিনি।

‘টিপাইমুখ প্রকল্পের প্রস্তাব ১৯৭৪ সালে’ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী পবন কুমার বানসাল জানান, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৯৭৪ সালে টিপাইমুখ প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ সংক্রান্ত তথ্য দেখতে চাইলে তার দপ্তর থেকে ১৯৭৩ সালের নভেম্বরে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠকের সম্মতিপত্র তুলে ধরা হয়। তাতে লেখা হয়, “ভারত ও বাংলাদেশে বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে বরাক বাঁধ প্রকল্প নিয়ে সমীক্ষার বিষয় বিবেচনা করছে কমিশন এবং সুপারিশ করা হচ্ছে যে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং সিলেট, কাছাড় ও এর আশপাশের এলাকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের বিশেষজ্ঞরা এই প্রকল্প পর্যালোচনা করবেন। ” ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারেক এ করিম সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭২ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বিষয়টি এমনই ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে যখন দেখা যায়, এই প্রকল্প বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, তখন দৃশ্যপট পাল্টে যায়।

১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত যৌথ নদী কমিশনের ১৩টি বৈঠক হয়। এরপর ১৯৭৮ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত (বিএনপি আমলে) আটটি বৈঠক, ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১১টি বৈঠক হয়। তবে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত প্রতিবেশী দুই দেশের যৌথ নদী কমিশনের কোনো বৈঠক হয়নি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে তিনবার, ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল মেয়াদে দুইবার এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদে একবার বৈঠকে বসেছে যৌথ নদী কমিশন। বিদ্যুৎ টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পে ২২ হাজার হেক্টরের একটি জলাধার নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং বন্যার সময় এটা পূর্ণ করা হবে।

প্রস্তাবিত এই জলাধারে ৯০০ কোটি ঘনমিটার পানি ধারণ ক্ষমতা থাকবে, যা কাপ্তাই লেকের চেয়ে ছয় গুণ বড়। জলশক্তি ব্যবহার করে এই প্রকল্পে দেড় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভারতের উচ্চ পর্যায়ের এক কূটনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, এই প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন খুব বেশি লাভজনক হবে না। পানি সেচ প্রকল্প ভারতের পানিসম্পদ সচিব বলেন, সেচের কোনো পরিকল্পনা না থাকায় টিপাইমুখ প্রকল্পে পানি প্রত্যাহার করা হবে না। ফুলের তলে ব্যারেজ নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো প্রকল্পও তাদের নেই।

টিপাইমুখ থেকে একশ’ কিলোমিটার ভাটিতে ফুলের তলাতে ব্যারেজ নির্মিত হবে বলে কথা উঠেছে। তিস্তা চুক্তি ভারতের পানিসম্পদমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে উভয় দেশের সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক সদিচ্ছা রয়েছে এবং যত দ্রুত সম্ভব এ চুক্তি সইয়ের জন্য তারা চেষ্টা করছেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তা আটকে যায়। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এসএসজেড/এএইচ/এমআই/২১৩৪ ঘ. ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।