আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগের ফল পাওয়া যাচ্ছ, অবশেষে ইতিবাচক ধারায় পুঁজিবাজার

অবশেষে ইতিবাচক ধারায় ফিরছে পুঁজিবাজার। বাজার গতিশীল করতে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের সুফলই শেষমেশ পাওয়া যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১২ ডিসেম্বর ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। প্রধান সূচক ছিল ৪হাজার ৮৪৯ পয়েন্ট। ওই দিন মোট লেনদেন হয় ১৯৭ কোটি টাকা।

সর্বশেষ গতকাল ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রধান সূচক ছিল ৫ হাজার ২২০ পয়েন্ট। লেনদেন হয়েছে ৫২৬ কোটি টাকা। বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, এসইসির নেয়া পদক্ষেপে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে আসতে শুরু করেছে। ফলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তবে বাজারের সঙ্গে জড়িত সবারই এক কথা, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলে পরিস্থিতি হয়ত সেই তিমিরেই থেকে যেত। সূত্রে জানা গেছে, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) আইনের পরিবর্তন ও সংযোজনের পাশাপাশি সার্ভিলেন্স ও তদারকি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি নিয়মিত বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের পরামর্শ অনুসারে কাজ করছে। কমিশন পুনর্গঠনের পর ইতোমধ্যেই কয়েকটি বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে কমিশন সূত্র জানায়। এসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে অগ্রাধিকার শেয়ার ইসুর নীতিমালা প্রণয়ন, প্লেসমেন্ট শেয়ারের নীতিমালা, বুকবিল্ডিং পদ্ধতি চালু, স্থিরমূল্য পদ্ধতির পরিবর্তন করেছেন।

পাশাপাশি এসইসি রাইট শেয়ার বিধিমালায় পরিবর্তন, স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে শেয়ারের অভিন্ন অভিহিত মূল্য চালু করেছে। এছাড়া ইনসাইডার ট্রেডিং বন্ধে আইন প্রণয়ণও করেছে। সূত্রে জানা গেছে, স্টক এক্সচেঞ্জকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরের লক্ষ্যে বিন্যস্তকরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসইসি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ বিন্যস্তকরণের ধারণাপত্র চূড়ান্ত হয়েছে। সার্ভিলেন্স জোরদার করতে সার্ভিলেন্স সফটওয়্যারও চালু করা হবে বলে জানা গেছে।

লক্ষ্যণীয় হল, পূঁজিবাজারে কেলেঙ্কারির সঙ্গে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসইসির একজন কর্মকর্তা জানান, স্টক এক্সচেঞ্জের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্পোরেট ফাইনান্স বিভাগ চালু করা হয়েছে। এছাড়া স্টক এক্সচেঞ্জের পরিদর্শন ও সার্ভিলেন্স আগের চেয়ে জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বাড়ানো হয়েছে। জানা গেছে, পুঁজিবাজারের আধুনিকায়নে ১৯৬৯ সালের অধ্যাদেশ ও ১৯৯৩ সালের আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

যা শিগগিরই সংসদে পাস হবে। জানা গেছে, পুনর্গঠিত কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর ৭ কোম্পানির ৩৮০ কোটি টাকার আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। এ ছাড়াও ১টি কোম্পানির ৩১৪ কোটি টাকার রিপিট আইপিও অনুমোদন দিয়েছে। ৮ কোম্পানির রাইট ইসুর মাধ্যমে ১ হাজার ৪১৯ কোটি টাকার রাইট শেয়ারের অনুমোদন দিয়েছে। এছাড়া বাজারে চাহিদার সঙ্গে জোগানের মিল রাখার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬ কোম্পানির তালিকাভুক্তিতে কাজ করে যাচ্ছে।

যদিও এ নিয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি আছে। তবে সংশ্লিষ্টরা দাবি করছেন, কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠান শিগগিরই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হবে। এদিকে বিভিন্ন কোম্পানির মূলধন বাড়ানোর অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ৬০টি প্রাইভেট কোম্পানি এবং ৬৭টি পাবলিক কোম্পানির মূলধন বৃদ্ধির অনুমোদন দিয়েছে কমিশন। পুঁজিবাজারের ধারাবাহিক পতনরোধে কমিশন জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে।

ক্রান্তিকালে যখন বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় বিক্ষোভ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি আত্মহুতির হুমকি দিচ্ছিল তখন বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নেওয়ায় বাজারে অব্যাহত দরপতনরোধ হয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, স্টক এক্সচেঞ্জ, এবিবি, বিএবি ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করেছে এসইসি। এসএইসির একজন কর্মকর্তা জানান, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে একটি সময়োপযোগী প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে কমিশন। অবশ্য এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ছিল। যার ইতিবাচক ফল ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে পড়তে শুরু করেছে।

এদিকে ব্যাংকগুলোর এক্সপোজার বাড়ানো হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কর রহিত করা হয়েছে। এসইসি সূত্র আরও জানায়, ইতোমধ্যে সরকার গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো শিগগিরই করা হবে। সামগ্রিক বিষয়ে এসইসি চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, পুঁজিবাজারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সবধরনের অসঙ্গতি দূর করা হবে।

এজন্য আইনের পরিবর্তন ও প্রয়োজনে নতুন আইনের সংযোজন করা হবে। তিনি আরও বলেন, এসইসির নেওয়া পদক্ষেপে ইতোমধ্যে বাজার স্থিতিশীল হতে শুরু করেছে। বাকিগুলো বাস্তবায়িত হলে পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার ওপর দাঁড়িয়ে যাবে। প্রসঙ্গত, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর নভেম্বর মাসে এসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগী হন। ১৬ নভেম্বর বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে গণভবনে ৪ ঘণ্টার বৈঠক করে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেন তিনি।

আর এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০ নভেম্বর বাজার সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে ২৩ নভেম্বর ‘প্যাকেজ কর্মসূচি’ ঘোষণা করে এসইসি। এরপরও নানা ধরনের গুজব ছিল। কালো টাকার বিষয়ে এনবিআর স্পষ্টীকরণ করায় এবং উদ্যেক্তা পরিচালকদের শেয়ার কেনার ঘোষণা দেওয়া বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, সব ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকেই কেন উদ্যোগ নিতে হবে।

দায়িত্বপ্রাপ্তরা তাহলে কী করছেন? Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.