বাক্সবন্দী সময় জট... যাচ্ছে জীবন উদ্ভট...
_________________________________________
মুভিঃ A Separation (Original Title: Jodaeiye Nader az Simin)
পরিচালনাঃ Asghar Farhadi
কাহিনীঃ Asghar Farhadi
অভিনয়েঃ Peyman Maadi, Leila Hatami, Sareh Bayat, Shahab Hosseini, Sarina Farhadi, Kimia Hosseini.
ছবি মুক্তিঃ March 16, 2011 (Iran)
_________________________________________
সাইকিয়াট্রিস্টরা তাদের প্রশ্নোত্তরে এই প্রশ্নটা প্রায়ই করে থাকেন, "আপনি এবং আপনার সবচেয়ে প্রিয় দুইজন (হয়তো স্ত্রী-সন্তান/বাবা-মা) একসাথে নৌকায় করে কোথাও ঘুড়তে বেড়িয়েছেন, হঠাৎ নৌকা ডুবতে বসলো, এখন আপনি যদি যেকোন একজনকে বাঁচাতে পারেন তবে কাকে বাঁচাবেন?" সাধারণত এই প্রশ্নে উত্তরপ্রদাণকারী উভয় সংকটে ভুগে থাকেন। কেননা দুই জন প্রিয় মানুষের থেকে একজনকে বাছাই করে নেওয়া মোটেও সহজ কর্ম না। এমনি একটি ঘটণাকে উপজীব্য করে তৈরি হয়েছে ইরানী পরিচালক আসগার ফারহাদি'র চলচ্চিত্র "A Separation" (Original Title: Jodaeiye Nader az Simin) । ছবির গল্প খুবই সাধারণ; নাদের এবং তার স্ত্রী সিমিন, একমাত্র মেয়ে তেরমেহ্ এবং আলঝেইমার্স রোগে আক্রান্ত বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে নাদেরের পরিবার। সিমিনের ইচ্ছা স্বামী-কন্যাকে নিয়ে বিদেশে স্থায়ী হওয়ার যেন তার পরিবারকে নিয়ে সে সুখে থাকতে পারে যেখানে তার কন্যার ভবিষ্যত নিয়ে তাকে দুশ্চিন্তা করতে হবেনা।
এদিকে নাদের কোনভাবেই বাইরে যেতে সম্মত না তার অসুস্থ বাবাকে ছেড়ে এবং সে তার পরিবারকেও হারাতে চায়না। এ কারণে সিমিন চায় নাদেরকে তালাক দিয়ে মেয়েকে নিয়ে চলে যাওয়ার। এখান থেকেই শুরু হয় সিনেমার গল্প। কি করবে নাদের? স্মৃতিহীন বৃদ্ধ বাবা যে এখন আর নিজের ছেলেকেই চিনতে পারেননা তাকে দেখে রাখবে নাকি তার এগারো বছরের কন্যা এবং স্ত্রীকে নিয়ে নতুন করে সংসার গড়তে চলে যাবে? পারবে কি নিজের সে মানুষটাকে এভাবে অসহায় করে ফেলে যেতে যার আঙ্গুল ধরে হেঁটে, যার কাঁধে চড়ে ঘুড়ে-বেড়িয়ে বড় হয়েছে নাদের? আর কিভাবেই বা সে পারবে স্ত্রী ও আদরের ফুটফুটে মেয়েকে এভাবে সারাজীবনের জন্যে হারাতে? পরিবার-প্রিয়জনের ভালোবাসা পাওয়া ও হারানোর সংকটের গল্প A Separation ।
ছবির মূল সুত্র এটা হলেও এর সাথে যুক্ত রয়েছে আরো কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
বাবাকে দেখাশোনার জন্যে রাজিয়া নাম্নী এক অন্তসত্ত্বা মহিলাকে নিযুক্ত করে নাদের। রাজিয়ার স্বামী কয়েক মাস ধরে বেকার; পাওনাদারদের ধার শোধ হয়না। এ কারণে এমন অবস্থাতেও স্বামীকে না জানিয়েই ৪ বছরের মেয়ে সোমায়েহ্কে নিয়ে কাজ করতে আসে রাজিয়া। কিন্তু বাবার দেখাশোনায় অবহেলার কারণে রাজিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করে নাদের। এদিকে রাজিয়া ও তার স্বামী নাদেরের বিরুদ্ধে রাজিয়াকে নির্যাতনের মামলা করে।
স্ত্রী-কন্যা ও বাবাকে নিয়ে অসহায় নাদের সব মিলিয়ে আবদ্ধ হয় চরম দুর্বিপাকে। কি সিদ্ধান্ত হবে শেষ পর্যন্ত? রাজিয়া সংক্রান্ত জটিলতা থেকে মুক্তি মিলবে কখন আর কখনই বা নাদের এই বিচ্ছেদ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে? সব কিছুরই উত্তর পাওয়া যাবে ছবিটিতে।
যারা হলিউডের বিখ্যাত মুভি Sophie's choice (1982) এবং Kramer vs. Kramer (1979) দেখেছেন তারা নিশ্চই অনুভব করে থাকবেন ভালবাসার মানুষদের থেকে একজনকে বেছে নেয়া এবং অপরজনকে হারানোর বেদনা কতটা তীব্র হতে পারে। ফারহাদির A Separation -কে উপরোক্ত মুভির সাথে তুলনা না করা হলেও এই মুভি স্বমহিমায় উজ্জ্বল। মুভি দেখার সময় দর্শক নাদের, সিমিন, তেরমেহ্, রাজিয়ার কষ্ট অনুভব করতে পারবেন।
গল্পের চরিত্র গঠনে পরিচালক তার নৈপুণ্যের পরিচয় দেখিয়েছেন। ছবির প্রতিটি চরিত্রই নিজ নিজ চরিত্রে ছিল স্বাবলীল-স্বাচ্ছন্দ্যময়। ছবিতে নাদেরের মেয়ে তেরমেহ্র চরিত্রে অভিনয় করেছে আসগার ফারহাদির কন্যা সারিনা ফারহাদি। ছবিতে যেমন কিছু অসাধারণ শট ও ফ্রেমিং রয়েছে তেমনি কিছু অপ্রয়োজনীয় ক্যামেরা মুভমেন্ট লক্ষণীয় । কোন প্রকার আধুনিক লাইটিং টেকনিক কিংবা আবহ সঙ্গীত ব্যবহার না করেও পরিচালক আসগার ফারহাদি ছবির দৃশ্যায়নে মুন্সিয়ানার স্বাক্ষর রেখেছেন।
পিতা-কন্যা, পিতা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রী'র সম্পর্কের খুঁটিনাটি বিষয়গুলোও পরিচালক অত্যন্ত আবেগের সাথে চিত্রায়িত করেছেন । একইসাথে বর্তমান ইরানের উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবার এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের জীবনচিত্র নাদেরের এবং রাজিয়ার পরিবারের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। মুক্তির পর থেকেই Asia Pacific Screen Awards, Berlin International Film Fesitival সহ প্রায় গোটা ত্রিশেক পুরষ্কার অর্জন করে নিয়েছে ছবিটি। পরিচালক আব্বাস কিয়ারোস্তমি, মহসিন মাখমাল্বাফ, মাজিদ মাজিদি , জাফর পানাহি তাদের যোগ্য উত্তরসুরী পেয়েছেন বলতেই হবে।
প্রায় দুই ঘণ্টা ব্যাপ্তির মুভিটি দেখতে গিয়ে কোন সিনেমাপ্রেমী দর্শক হতাশ হবেন না আমার বিশ্বাস।
তাই সিনেমাপ্রেমীদের জন্যে আমার মতামত থাকবে সময় করে মুভিটা দেখে নেয়ার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।