আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে। ইচ এন্ড এভরিথিং। ঠিক কতক্ষণ এভাবে দাড়িয়ে ছিলাম বলতে পারবনা। ঘন কুয়াশায় গাড়ির বনেটে হেলান দিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলাম।
মনটা অনেক অশান্ত। সিগারেটেও টান দিতে ভুলে গেছিলাম। আগুন পাতলা কাগজ আর তামাকের স্তর ভেদ করে ফিল্টারে এসে পৌছায়। হাতের আংগুলে প্রচন্ড তাপের স্পর্শ অনুভব করায় চমকে উঠি। একনজর সিগারেটটার দিকে তাকিয়ে ফেলে দিলাম।
ফায়ার বার্নস দ্য ড্রিম, ফায়ার বার্নস দ্য হোপ, ফায়ার বার্নস ইউ। হা হা হা। পোড়া অস্তিত্ব।
পকেট থেকে সিগারেটের কেসটা বের করলাম। জেনীর দেয়া।
ভ্যালেন্টাইনস ডের উপহার। মেয়েটা অনেক করে বলেছিলো সিগারেটটা ছেড়ে দিতে। আমি পারিনি।
দুর্বল মানুষ আমি। চারপাশের মানুষের আন্তরিকতার উষ্ঞতা আমি অনুভব করতে পারিনা।
নি:সঙ্গ মনে হয়। সিগারেটের দুটা টানই তখন সঙ্গ দেয়।
মানুষ একা আসে পৃথিবীতে, যায় একা। সারাজীবনই একা। জন্মলগ্ন থেকে সিগারেট খাওয়া উচিত ছিলো।
আনটিল ডেথ। কিন্তু জন্মলগ্নে মায়ের শরীরের উষ্ঞতা বোধহয় একাকীত্বটা বোধ করতে দেয়নি। যখন বুঝলাম আমি একা ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে।
অনেকেই এসেছিলো জীবনে সঙ্গ দেয়ার জন্য। কারো উষ্ঞতাই নি:সংগতা দুর করতে পারেনি।
মানুষ অনেক দুর্বল, ক্ষমতা অনেক কম।
এতগুলো মানুষ যা পারেনি, তাই পেড়ে দেখিয়েছে সাদা কাগজে মোড়ানো কিছু তামাক।
ব্লাডি বিচেস।
দ্য স্পিরিট অফ লাইফ ইন অ্যা স্টিক অফ পেপার।
ফাক এম আপ।
কাপা কাপা হাতে একটা সিগারেট ধরালাম। প্রচন্ড ঠান্ডার এই রাতে রাস্তায় কোন পুলিশ নেই। তা না হলে এতক্ষণে অনেক ভেজালে পড়ে যেতাম। বাম হাতের গ্লাভসটা কোথায় যেন পড়ে গেছে। হাতটা অগত্যা পকেটেই ঢুকিয়ে সিগারেটে ঠোট লাগালাম।
একসময় এই ঠোটের উপর আধিপত্য ছিলো জেনীর ঠোটের। ও চাইতোনা জড় কিছু তামাকের সাথে আমার ঠোট শেয়ার করতে। আমি বলতাম সিগারেট তোমার সতীন। নিজের অধিকার আদায় করতে হবে যুদ্ধ করে। জেনী রাগ করতো, গাল ফুলাতো।
আমি নির্মল আনন্দ বোধ করতাম।
কেন জানি আমি মানুষের আন্তরিকতা ভালবাসা ফিল করতে পারিনা। যারাই ভালবাসার দাবী নিয়ে এসেছিলো কারো দাবীই পূরণ হয়নি।
আই লাভ দ্যা স্মোক, আই লাভ দ্যা স্মোকি লাইফ। সব ধোয়াটে থাকবে।
ইচ এন্ড এভরিথিং।
মুখভর্তি ধোয়া ছেড়ে দিলাম বাতাসে। সামনে কুয়াশার গাঢ় দেয়ালে ধাক্কা খেল। হলি স্মোক।
সিগারেটের ধোয়া উড়ে যায়।
নিয়ে যায় একরাশ হতাশা, একাকিত্ব।
প্রতিটা পাফের সাথেই ফুসফুসে আঘাত হানে কিছু রাগ, পূরণ না হওয়া প্রত্যাশা, হতাশা, বিষাদ। ফুসফুস থেকে সুদে আসলে বেরিয়ে যায় প্রচন্ড বেগে আরো কিছু হতাশা নিয়ে। আমি বিমলানন্দ অনুভব করি হালকা হচ্ছি ভেবে।
কানে ইয়ারফোন গান বাজছে।
ঠান্ডায় ঘাড় ভ্যাথা করছে। তা না হলে হেডব্যাং করতাম। কেন জানি হঠাৎ করেই অনেক খুশী লাগছে। সবই নিকোটিনের দোয়া। দ্যা হলি ক্যামিকেল।
কুয়াশার দেয়ালে সিগারেটের ধোয়ার ধাক্কা খাওয়াটা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে। জীবনের সাথে অনেক মিল।
আমরা চাই মুক্ত ধোয়ার মত ছুটে বেড়াতে। কিন্তু কুয়াশার দেয়াল রুখে দেয় সজোড়ে।
আমি ফেইলিউর মানে নিতে পারিনা।
সবকিছুতেই আমি জিততে চাই। জীবনটা তো বাজীর টেবিল। হারা যাবে কিন্তু বেশী হারা যাবেনা। আর কত হারবো? এখন জিততেই হবে। যদি অপোনেন্ট জিততে থাকে তখন তাকে সরিয়ে দাও।
আমিও সরিয়ে দিয়েছি।
আই ক্যান্ট বি অ্যা লুজার। জেনী চেয়েছিলো আমাকে হারিয়ে দিতে। ব্লাডি ফুল।
আমাকে হারানো এত সোজা না।
জেনীর হাজবেন্ডের মৃত্যুটাই সেটার প্রমাণ দিয়েছিলো জেনীকে। আই এম অ্যা ব্লাডসাকার। মাথায় কি যেন ভর করেছিলো। জেনীর হাজবেন্ডের গলা ছুয়ে আসা নাইফটায় একটু জিহ্বা লাগিয়ে চেটে দেখেছিলাম উষ্ঞ রক্ত।
জেনীর সামনেই।
জেনী ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিলো। আমার দিকে অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়েছিলো। আমার সামনের রাস্তা পরিষ্কার ছিলো। জেনীতে জোর করে গাড়ীতে তুলে অনেক দুর চলে যাওয়া। মেয়েটা কাদতো, বিদ্রোহ করতো।
কিন্তু একসময় বুঝতে পারতো। কারণ জেনীকেই বোধহয় আমি আমার নিকোটিন জমা বুকে একটু জায়গা দিয়েছিলাম। কিন্তু জেনীকে জোড় করে গাড়ীতে তোলার মত শক্তি আমার ছিলোনা। তাই জেনীকে জাপটে ধরে ওর পেটে নাইফটা ঢুকিয়ে দিলাম। জেনী অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো আমার দিকে।
রক্তমাখা ঠোটটা জেনীর ঠোটে স্পর্শ করালাম শেষবারের মত।
জেনী এখন গাড়ীর পেছনের সিটে বসে আছে। ওর আর আমার মাঝে এখন একটাই পার্থক্য। আমার হার্ট চলছে আর ওরটা বন্ধ। কিছুক্ষণ পর এই পার্থক্যটাও থাকবেনা।
কেসে আর দুটো সিগারেট আছে। পেট্রোল ট্যাংকটা লিক করে দিয়েছি। রাস্তায় পেট্রল পড়ছে। শেষ সিগারেটে শেষ টানটা দিয়েই জেনীর পাশে গিয়ে বসবো। লাইটারটা জালিয়ে ছুড়ে মারবো পেট্রলের উপর।
জোছনা রাত হলদে হয়ে উঠবে আগুনের ছটায়।
ফেইড টু ব্ল্যাক।
লাভ, ইমোশান, ব্লাড, ভায়েলেন্স। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।