একদিন জন্মের চিৎকারে পৃথিবীতে এসেছিলাম। আবার একদিন কিছু চিৎকারের মাঝ দিয়েই চলে যাব। গত ২২ ডিসেম্বর চতুর্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষার প্রথম পরীক্ষা দিলাম। ৪০১ নম্বর কোর্সের জন্য রেফারেন্স হিসেবে ১৮টি বই এবং ১৫টি শীট ছিল। বছর জুড়ে পড়ার পরও ৪০১ কোর্স নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় ছিলাম।
তবে পরীক্ষা ভালই হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর ছিল ৪০২ নম্বর কোর্সের পরীক্ষা। রেফারেন্স বই খুঁজতে গিয়ে দেখি মাত্র একটি বই রয়েছে বাংলায়। ইংলিশ বইয়ের রেফারেন্স থাকলেও তা গন্ডির বাইরে। বন্ধু বান্ধবদের কাছে খোঁজ নিতে বের হলাম।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের দূরবস্থা দেখে আমার লজ্জাই হলো। সত্যি বলতে পরীক্ষাটা দিতেও আমি লজ্জা পাচ্ছিলাম। অনেকের কাছেই রয়েছে অবিস্মরণীয় গাইড। গাইড পড়েই যদি অনার্স পাস করতে এসে থাক, তবে আর বিশ্ববিদ্যালয় কেন, কোন কলেজে কিংবা প্রাইভেটে পড়লেই পার। আমি কলেজকে খাটো করার জন্য বলছি না।
উচ্চশিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় বলেই বলছি।
এখানে গবেষণা হবে। এখানে গবেষণা পত্র বের হবে মাসে মাসে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা তো উচ্চ শিক্ষার অর্থই বুঝেন না। তাদের না বুঝার কারণে আমিও বুঝি না।
অনেকেই আমাকে গাল দিতে পারেন। কিন্তু একথা তো সত্য, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সত্যিকারের গবেষক বের হয় না। কেবল কতগুলো চাকরিজীবী বের হয়। বের হয় কতগুলো দূর্নীতিবাজ আমলা।
এর কারণ কি? আমাদের শিক্ষকরা পড়াশুনা যতটা না করেন, তার চেয়ে বেশি করেন রাজনীতি।
তাদের রাজনীতির ছোবলে ছাত্রদেরকেও রাজনীতি করতে হয় (সবাইকে নয়)। শিক্ষককে তৈল মর্দন না করলে নম্বর পাওয়া যায় না। শিক্ষকের পিছনে না ঘুরলে ভাল ছাত্র হওয়া যায় না। শিক্ষকের পিছনে ঘুরতেই হবে। ভাল ছাত্র হতে হলে এই গুন অবশ্যই থাকতে হবে।
কিন্তু রাজনীতির জন্য নয়। পড়াশোনার জন্য। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে পড়াশোনার জন্য পিছনের ঘোরার মতো শিক্ষক সম্ভবত খুব বেশি নেই। সে জন্যই অযোগ্য কোন শিক্ষকের সরাসরি বদনাম করা হলে অনেকেই চোখ রাঙ্গিয়ে মারতে আসে। তাদেরও আসলে কিছু করার নেই।
তারা কেবল হুকুমবরদার।
আমাদের উচ্চ শিক্ষা কোথায় যাচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত আমার চেয়ে বেশি পাঠকরাই ভাল বলতে পারবেন। কিন্তু একটি কথা না বলে পারছি না, আমাদের শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতির যে লুকোচুরি হচ্ছে, তার পরিণাম ভয়াবহ। শিক্ষক রাজনীতির শিকার অনেক ছাত্র। আবার অনেক শিক্ষকও ছাত্র রাজনীতির শিকার।
ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রাজনীতি নেই শুনেছি। এর ফলে কি তারা রাজনীতিবিদ তৈরি করছে না? অন্তত আমাদের দূর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের চেয়ে ভাল রাজনীতিবিদ তাদের রয়েছে।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের পড়ার সময় নেই। রাজনীতি আর প্রেম করার জন্য তাদের হাতে অফুরন্ত সময়। এ জন্যই পরীক্ষার আগের রাতে অবিস্মরণীয় গাইডের স্মরণাপন্ন হতে হয় তাদের।
কতগুলো পয়েন্ট মুখস্থ করে খাতার ওজন বৃদ্ধি করার সহজ উপায়!!
কিন্তু এসব করে কিছু ভার তৈরী ছাড়া আর কি করা সম্ভব হচ্ছে? আমরা অনেক কিছুর জন্যই খুব সহজ একটি উত্তর খুঁজে নেই, এটি বাংলাদেশ। অর্থাৎ, সব দোষ এই দেশটার। এই উত্তর খুঁজে নেয়া খুব সহজ। কেননা, এখানে তো কেউ আঘাত করতে আসবে না। দেশের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আমরা নিশ্চিন্তে পাড় পেয়ে যাই।
কিন্তু আমি বলি, আমি, আপনি কিংবা আর কেউ, সত্যিই পাড় পাবো না। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পাড় পাওয়া যায় না।
অসহায় আর্তচিৎকারে আমি শেষ পর্যায়ে কেবল এতটুকুই বলতে পারছি।
বি. দ্র. আমি অবিস্মরণীয় গাইড হাতে নিয়েও পড়িনি। এতে নম্বর হয়ত কম পাবো।
কিন্তু নিজের উপর ঘৃণা অন্তত জন্মাবে না। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল ভাই ও বোনেদের কাছে অবিস্মরণীয় গাইড খুব জনপ্রিয়, তাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।