এক দিনের জন্য নায়ক হতে চাই । আমি বাংলা ছবি খুব একটা দেখি না , তাই বলে আমার দেশের নিজস্ব শিল্প সংস্কৃতি কে ধংস করে দেব ? আমার একটা জিনিস জানতে খুব ইচ্ছা করছে বাংলাদেশের মানুষ এখন কি নিয়ে ভাবে ? ভারত কিছুই না দিয়ে একে একে সব নিয়ে যাচ্ছে, মানুষ হা করে চেয়ে আছে । তারা তো আমাদের ফারাক্কা দিয়েছে ! তিস্তার পানি দিবে ! ট্রানজিট দিচ্ছে! টিপাইমুখ এ বাধ দিছে! ভারতীয় সিনেমা দিচ্ছে পন্য হিসাবে ! ভারতীয় চ্যানেল দিচ্ছে ! বিনা শুল্কে পন্য রফতানি করতে দিচ্ছে !!!? বর্ডারে লাশ দিচ্ছে !! এ দেশের দাদারা দেশ থেকে যাবার সময় সব বিক্রি করে স্বর্ণ নিয়ে যাচ্ছে !! এমন বোকা --দা জাতি আমরা । বিরোধী দল ও নিশ্চুপ, সুশীল সমাজ ও নিশ্চুপ, দু এক জন কোন কথা বললে কে শনে কার কথা ।
শিল্পকে যারা পণ্য করেছে, সংস্কৃতিতে যারা আগ্রাসনের রাস্তা তৈরি করে দিচ্ছে, তাদের এ ধরনের নেতিবাচক প্রচেষ্টার জবাব জনগণ দেবেন- এমনটা মনে করেন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম।
শুক্রবার রাতে তিনি নয়া দিগন্তকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, দেশপ্রেমিক মানুষ ভারতীয় চলচ্চিত্র গ্রহণ করবে না। আমাদের মেধার কোনো ঘাটতি নেই। প্রযুক্তিগত দিক থেকে আমরা কিছুটা দূরে আছি। তাই বলে খোঁড়া অজুহাতে কয়েকজন লোক মিলে একটা সমিতি বানিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করবে, সেটি বরদাশত করা হবে না। ভারতীয় সিনেমা প্রতিরোধের বিকল্প নেই।
নয়া দিগন্ত : দেশের সিনেমা হলে ভারতীয় চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। আপনার মত কী?
চাষী নজরুল ইসলাম : পাঁচ-ছয়জন লোক মিলে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে ভারতীয় চলচ্চিত্র আমদানি করেছে ‘পণ্য’ হিসেবে। এ ধরনের খারাপ মনোবৃত্তির বিষয়ে মানুষ সচেতন আছে। তারা এটি ভালোভাবে নেবে না।
নয়া দিগন্ত : এটা সংস্কৃতিতে কোনো আগ্রাসন কি না...
চাষী নজরুল ইসলাম : আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি কেন? করেছি আমাদের নিজের ভাষা, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা- এসব রক্ষা করব বলে।
কিন' কিছু লোক এটা হতে দিচ্ছে না। তারা সংখ্যায় খুবই কম। পাঁচ থেকে ছয়জন। তারা ভারত থেকে চলচ্চিত্র আমদানি করে এখানে হিন্দির আগ্রাসন ঘটাতে চায়। তারা আমাদের এখানে সংস্কৃতির নামে অপসংস্কৃতি ঢোকাতে চায়।
এদের প্রতিহত করতে হবে। এভাবে এদের চলতে দেয়াটা ঠিক হবে না।
নয়া দিগন্ত : আমদানিকারকেরা বলছেন, দেশে ভালো চলচ্চিত্র হচ্ছে না।
চাষী নজরুল ইসলাম : এর সাথে আমি মোটেও একমত নই। অনেক ভালো চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে।
এটা নিয়ে প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো যারা এসব অভিযোগ করেন, তারা কী করছেন? তাদের সিনেমা হলের অবস'া কী? তারা তো ৪০ বছর ধরে বাংলাদেশের সিনেমা দিয়েই ব্যবসায় করে যাচ্ছেন। প্রযোজক ও পরিচালক চলচ্চিত্র বানিয়ে যা পেয়েছেন, তার চেয়ে বেশি পেয়েছেন হল মালিকেরা।
নয়া দিগন্ত : বাংলাদেশের সিনেমা হলের পরিবেশ নিয়ে আপনার বক্তব্য?
চাষী নজরুল ইসলাম : হলের পরিবেশ খুবই খারাপ। চেয়ার ভাঙা, ফ্যান চলে না।
বাথরুম ঠিক নেই। ছারপোকার উপদ্রব। এ রকম যখন হলের পরিবেশ, তখন মানুষ যাবে কিভাবে। যারা ভালো সিনেমা হচ্ছে না বলে দোহাই দিয়ে ভারতীয় সিনেমা আমদানি করেছেন, তাদের হলে গিয়ে দেখেন, একটির পরিবেশও ঠিক নেই। লোকে হলে যাবে কেন? হলে যাওয়ার পরিবেশ দিক তারা।
তারা তো সেটি করেন না। সরকারের ট্যাক্স ফাঁকি দেন। ১১০ টাকার টিকিট বিক্রি করেন ২০০ টাকায়। ব্ল্যাকে সব টিকিট ছেড়ে দিয়ে বলেন, কাউন্টারে টিকিট শেষ। দর্শকেরা এত অত্যাচার সয়ে হলে যাবেন কেন? বলেন, এসি হল; দেখা যায় গরমে অসি'র দর্শক।
সাউন্ড সিস্টেম খারাপ। তাহলে সেখানে সাধারণ মানুষ, সভ্য মানুষ সিনেমা দেখবেন কী করে? সিনেমা হল সুন্দর হলে লোকে যায় না? যায়। বসুন্ধরার দিকে দেখেন না। সেখানকার সিনেপ্লেক্সে লোকে যাচ্ছে না? যাচ্ছে।
নয়া দিগন্ত : ভারত থেকে চলচ্চিত্র আমদানি কতটা যৌক্তিক?
চাষী নজরুল ইসলাম : এটার যুক্তি আমরা তখনই খুঁজে পেতাম যদি ভারত আমাদের এখান থেকে ১০টি সিনেমা নিত, আমরা সেখান থেকে ১০টি আনতাম।
ভারত আমাদের ১০টি চ্যানেল দেখাত, আমরা তাদের ১০টি দেখতাম। এখন সেটি হচ্ছে না। হচ্ছে কী, আমাদের এখানে ভারতের ৫০টি টিভি চ্যানেল চলে, ভারতে আমাদের একটিও চলে না। ভারত থেকে এখানে সিনেমা আমদানি হচ্ছে। অথচ ভারতে আমাদের সিনেমা যাচ্ছে না (যৌথ প্রযোজনার সিনেমা বাদে)।
নয়া দিগন্ত : তাহলে এখন সমাধান কোথায়?
চাষী নজরুল ইসলাম : সমাধান দেবেন দর্শকেরা। তারা ভারতীয় ছবি দেখবেন না; বর্জন করবেন। তাহলেই সমাধান। আর সরকার শিল্পকে শিল্পের মূল্য দেবে, পণ্যের মূল্য দিয়ে আনা অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। তাহলেই হলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।