কি বলব ২০১১ সালের পুরোটাজুড়েই ভারতমুখী কূটনীতি চালানো হয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস সভানেত্রীসহ ছয় কেন্দ্রীয় নেতা বাংলাদেশে সফর করেছেন। কিন্তু আলোচিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি সফল হয়নি, সম্মত হলেও ছিটমহল বিনিময় হয়নি। বারবার আশ্বাসের পরও বন্ধ হয়নি সীমান্তে গুলি করে নিরীহ মানুষ হত্যা। বছর শেষে টিপাইমুখ প্রকল্প নিয়ে আরেক দফা অবিশ্বাসের পরিচয় দিয়েছে ভারত।
কিন্তু বিপরীতে পরীক্ষামূলকভাবে কোনো রকমের ফি ছাড়াই ট্রানজিট-সুবিধা পেয়েছে ভারত।
কিন্তু ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বেশকিছু সফলতা আছে বাংলাদেশের কূটনীতির। এর মধ্যে আছে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের চূড়ান্ত চুক্তি। জার্মানির চ্যান্সেলরের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছে। ভূমিকম্পের পর বিধ্বস্ত জাপান বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে বিনিয়োগের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল।
যদিও পরে দুর্নীতির অভিযোগে জাপান আর বিনিয়োগে রাজি হয়নি।
বিশ্বশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সফলতা আসেনি এ বছর। ড. ইউনূস ইস্যুতে বাংলাদেশকে বেশ কোণঠাসা করে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। একের পর এক মার্কিন প্রতিনিধি বাংলাদেশে এসে তাদের ক্ষোভের কথা জানান। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ডেকে নিজের উদ্বেগের কথা জানান হিলারি ক্লিনটন।
এ বছর মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তার মেয়াদ শেষে চলে গেছেন। এসেছেন নতুন রাষ্ট্রদূত মোজেনা। মরিয়ার্টির মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানির সঙ্গে হয়েছে জ্বালানি চুক্তি। আর মোজেনা এসেই টিফা চুক্তির নতুন আঙ্গিকের কথা বলেছেন। তবে বাংলাদেশ টিফার যেসব বিষয়ে আপত্তি ছিল সে অবস্থানে অনড় থেকেছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ বছর বিদেশ সফরের সেঞ্চুরি করেছেন। বেশকিছু দেশ সফর করেছেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রীও। কিন্তু চালু হয়নি নতুন কোনো শ্রমবাজার, খোলেনি পুরানো কোনো শ্রমবাজারও। তবে মালয়েশিয়া সরকার সেখানে বসবাসরত অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সেখানে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশিরাও বৈধতার সুযোগ পাচ্ছেন।
কিন্তু সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় 'আকামা' পরিবর্তনের সুযোগের বিষয়ে সরকারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সুফল মেলেনি। এ বছরই বাংলাদেশে সফর করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, ভারতীয় কংগ্রেসপ্রধন সোনিয়া গান্ধী। জুনে সোনিয়া গান্ধীর সফরে ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা জানায় বাংলাদেশ সরকার। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকা আসেন ড. মনমোহন সিং। তার সফরের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি কে চিদাম্বরমসহ কয়েকজন নেতৃস্থানীয় ভারতীয় বাংলাদেশ সফর করেন।
মনমোহনের সফরে তিস্তা চুক্তি, ছিটমহল বিনিময়, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট বিষয়ে বেশকিছু চুক্তি স্বাক্ষরের কথা বলা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নবনির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শেষ মুহূর্তের আপত্তিতে স্বাক্ষর হয়নি তিস্তা চুক্তি। হয়নি ট্রানজিট প্রটোকল। সীমান্ত প্রটোকল স্বাক্ষর হলেও কোনো ছিটমহল বিনিময় করা হয়নি। তবে তিনবিঘা করিডর প্রথমবারের মতো খুলে দেওয়া হয়েছে ২৪ ঘণ্টার জন্য।
সরকারপ্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিদেশ সফর করেছেন। তিনি বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় সফর ছাড়াও বহুপক্ষীয় সংস্থার বৈঠক বা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। বছরজুড়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের মেয়াদের শুরু থেকেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এ বছর তা সামনে চলে আসে।
সংসদে একাধিক সংসদ সদস্য প্রশ্ন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে চালান? সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর নেতৃত্বেই এ বছরের কূটনীতি পরিচালিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বা মন্ত্রণালয়কে অনেক ক্ষেত্রেই পাশ কাটানো হয়েছে। বহির্বিশ্বে দায়িত্ব পালনরত বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর মধ্যে তিন রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে সরকার। তবে নেপালের রাষ্ট্রদূত নিমচন্দ্র ভৌমিককে নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয় বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তা তদন্ত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সত্যতাও পাওয়া যায়, কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।