দুনিয়ায় নাই এরকম কিছু চিন্তা করিতে পারে না মানুষ। কোনো কোনো কাণ্ড দেখিয়া আমাদিগের মনে এই চিন্তার উদ্রেক হইবে যে আহা ইহা এক্কেবারে নতুন বিষয় ঘঠিল বুঝি জগতে। কিন্তু তলাইয়া দেখিলে বুঝা যাইবে ইহা আগেই ঘঠিয়া গিয়াছে। যুদ্ধ লইয়া জাহানে কত পুঁতি পুস্তক লিখিত হইল। আজিও মানবজাতির একাংশ যুদ্ধ লইয়া মানুষ মারিবার ব্যবসা পাতিয়াছে।
আবার আরেকাংশ হায় হায় রব করিতেছে। ইতিহাসের কসম এই যুদ্ধতো কখনোই শেষ হয় নাই। আনুমানিক খ্রীস্টপূর্ব ৪৮৪ সালে জন্ম লওয়া গ্রীক মনীষা একাডেমিক ইতিহাসের জনক হিরোদোতাস তাহার ‘ইতিহাস’ নামক কিতাবের এক্কেবারে পহেলাই বয়ান দিয়াছেন পুর্ব-পশ্চিমের এই চিরকালীন যুদ্ধকে।
মহাত্মা বয়ান করিলেন ‘আমার ইতিহাস জানিবার ফসল এই বহিখানার লক্ষ্য দুইটি, প্রথমত আমার স্বজাতি ও এশিয় জাতিগুলির সাফল্য লিপিবদ্ধ করে অতীত স্মৃতি বাঁচাইয়া রাখা। দ্বীতিয়ত আমি দেখাইতে চাই কি করিয়া এদুই মানবগোষ্ঠীর মধ্যে যুদ্ধের সূত্রপাত হইল।
অয়ো, ইউরোপা, মিডিয়া নামের শাহজাদীদের সওদাগরেরা জাহাজে করিয়া অপহরণ করিবার নিমিত্তে প্রথমে এই বিরোধের সূত্রপাত হয়। সে অনেক কাহিনি। একেকটা নারী বাগাইবার জন্য কত রাজ্য ও সাম্রাজ্য ধ্বংশ হইয়া গিয়াছে। পরে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পুরুষতান্ত্রিক দাপটে নারী যখন মূল্যহীন ও টাকায় বিনিময়যোগ্য পণ্য হইয়া উঠিল তখন সেই টাকা বা মুদ্রার জন্যই আবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘঠিল।
পশ্চিমারা সবসময় ধড়িবাজ, দুর্ধর্ষ, ঐক্যবদ্ধ।
প্রয়োজনে ওরা যেকোনো রকম ভোল পাল্টাতে পারে। যৌনতা আর যুদ্ধাস্ত্র তাহাদের প্রধান ব্যবসায়। আর তাহারা নৈতিকতার কথা কহিয়া দুনিয়ারে রক্ষা করিবার ভেক ধরিয়া জগতধর্ষণ করিতেছে। সবসময় এই দুর্ধর্ষরাই জগতে জয়ী হইয়াছে। হয়তো একেই ডারউইন মশায় বলিবেন সারভাইবেল ফিটেস্ট।
সাদ্দামের খুত ধরিয়া ইরাকের নিয়ন্ত্রন নেয়া বা লাদেন নামের তেলাপোকা মারিবার জন্য আফগানিস্তানে বোমাবৃষ্টি ঢালা। এই বোমাবৃষ্টি উপেক্ষা করিয়া আলজাজিরায় পশ্চিমকে ধ্বংশ করিবার বক্তৃতা দিয়া মাঝে মাঝে ভিডিও ফুটেজ দিবার জন্য লাদেনের বাঁচিয়া থাকা। বা বিদ্রোহীদের উস্কাইয়া দিয়া লিবিয়ার নিয়ন্ত্রন নিবার জন্য যুদ্ধ শুরু করা ইহা পুরানা কিচ্ছা। কিন্তু নতুন করিয়া ঘঠিতেছে। এশিয়ানরাও কম ঐক্যবদ্ধ ছিল তাহা নহে।
সেনাপতি আজিজের নেতৃত্বে যখন আরবীয়রা স্পেন দখল করে তখন কি কম নিষ্টুরতা ঘঠিয়াছে? রাজা রডরিক ও তাহার দুইসন্তানের পোড়া লাশের পাশে সেনাপতি আজিজ রাণী ইজিলোনার লগে সংসার পাতিয়াছিলেন। তাহা কি কম নিষ্ঠুরতা ছিল?
যাহা হউক আরবীয় অলস ভোগপরায়ণ ঘুমন্ত শেখদের দিন বুঝি শেষ হইয়া আসিল। মধ্যপ্রাচ্যে কোনো রাজতন্ত্র আর টিকিবে না। পশ্চিম ইহাতে মদদ দিবে। দীর্ঘদিন পরিবার তান্ত্রিকতার ভেতর আরব জনগণের নাভিশ্বাস উঠিতেছে।
হোসনি মোবারক তাবেদার হইয়াও ক্ষমতা ধরিয়া রাখিতে পারিলেন না। আরবীয় বীর সাদ্দাম গত। গাদ্দাফিও যায় যায়। মধ্যএশিয়ায় আপাতত আর কোনো বীর নাই আছে ইঁদুর। ক্ষমতা দখলের জন্য জনগণকে উন্মত্ত দেখিলে ইহারা লক্ষণসেনের মত বাটির পেছন দিয়া পলাইয়া যাইবে।
পশ্চিমের মদদতো আছেই আরবীয় জনগণের স্বাধীনতার তীব্রজোয়ারে সব রাজতন্ত্র ভাসিয়া যাইবে। স্বাধীনতা আজ বড় প্রয়োজন হইয়া দেখা দিয়াছে আরব জাহানে। আজ এক অদৃশ্য ঐক্য কাজ করিতেছে তাহাদের মধ্যে। এই রাজাদের সূত্র ধরিয়া অনেক বোমা ঢালিয়াছে পশ্চিম আরবের মাটিতে। কিন্তু ট্রাজেডি এখানেই যে আরবীয়দের আজ স্বজাতীয় একনায়কদের হাত হইতে রাজ্য ও স্বাধীনতা রক্ষা করিতে হইতেছে সাম্রাজ্যিক একনায়কদের হাত ধরিয়া।
যদিও স্বাধীনতা অর্জনের একশ বছরও যাইবে না এই জনগণই পশ্চিমকে দাঁড় করাইবে শত প্রশ্নের সম্মুখে। ইতিহাস তাহাই বলে। লাদেনের নেতৃত্বে আলকায়দাকেতো আমেরিকাই সৃষ্টি করিয়াছিল সোভিয়েতদের পরাজিত করিবার জন্য কিন্তু একশ বছরও গত হয় নাই সেই আলকায়েদা আজ আমেরিকার প্রধান শত্রু। ইহাকেই বলে ইতিহাসের মাইর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।