বিয়ের উপযুক্ত বয়স কোনটি? প্রাপ্তবয়স্ক একটি বালক অথবা একটি বালিকা যখন তীব্রভাবে যৌনমিলনে আকাঙ্খী হয়, তবে সে সময়টিই তার বিয়ের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এ শুভক্ষণটি কারো জন্য ১২ বছরে হতে পারে, কারো জন্য ১৫ বছরে, কারো বা ১৮ বছরে আবার কারো সারা জীবনে নাও হতে পারে। এক কথায়, যৌনমিলনে শরীর ও মনের উপযুক্ততাই বিয়ের সঠিক বয়সের মাপকাঠি। বিয়ের সময় হয়েছে কি না, বিয়ের জন্য শরীর ও মন প্রস্তুত কি না তা সবচেয়ে ভালো বুঝতে পারে ব্যক্তি নিজেই। যদিও কেউ কেউ আছে মন বিষন্ন করে বসে থাকে, কোন কাজে মন বসাতে পারে না, মহাশুন্যের মতো হৃদয়জুড়ে হাহাকার নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, কারনে অকারনে প্রাণখুলে কাঁদতে ভালোবাসে, এমন সব উপসর্গের পরও যারা বুঝতে পারে না যে আসলে মন নয়, বরং না পাওয়ার যন্ত্রণাই তার মনোযাতনার কারন, সে সকল বালক-বালিকাদের অভিভাবকদের সচেতনতা জরুরী।
আর সবচেয়ে বড় কথা অভিভাবকরা তো এ সময়টা পার করেই বুড়ো হয়েছেন, তাদের নতুন করে মিলনের গল্প শোনানের কোন মানে নেই।
কথায় বলে, ভদ্রতার দাম নেই। এ কথাটি রাজনীতি, সমাজনীতি, বিভিন্ন নীতিতে যেমন সত্য, বিয়ের ক্ষেত্রে ততোধিক বেশি সত্য বলে মনে হয়। যতক্ষণ না ছেলের বিরুদ্ধে পাশের বাড়ীর চালে ঢিল মারার অভিযোগ আসছে ততক্ষণ অনেক অভিভাবক বুঝতেই চাননা ছেলের বিয়ের বয়েস হয়েছে। এক কথায় অনেক অভিভাবকের কাছে ছেলের বিয়ের উপযুক্ততার উৎকৃষ্ট প্রমাণ হলো ইভটিজিং।
ছেলে ইভটিজিং করছে মানেই হলো ছেলের বিয়ের বয়েস হয়েছে, অপরদিকে ছেলেটি ভদ্রভাবে লেখাপড়া করছে, লেখাপড়া শেষে চাকুরী করছে, মাথায় টাক পড়ে যাচ্ছে, চুল পেকে যাচ্ছে, তবু্ও ছেলেটির বিয়ের বয়েস হয়নি, কারন সে অতি ভদ্র। যে সকল ছেলে মেয়েরা ভদ্রতা বজায় রেখে বিয়ের গোপন ইচ্ছেটা মনের সিন্দুকেই তালাবদ্ধ রাখে, আজকালকার অভিভাবকরা সবকিছু বুঝেও না বোঝার ভান করেন, পারেনতো মনের সিন্দুকটাকে শেকলবন্দী করে সমুদ্রের তলদেশে ডুবিয়ে দেন। অবশ্য এ ক্ষেত্রে মেয়েরা অনেকটা ভাগ্যবতী। অতীতকাল থেকেই মেয়েদের উপাজর্নে বাবা-মা অভ্যস্ত নয় বলে যতদ্রুত পারেন মেয়েকে পার করার চেষ্টা করেন, কিন্তু ইদানিং হঠাৎ করেই অভিভাবকরা অতিআধুনিক হয়ে উঠেছেন, মেয়ের লেখাপড়া শেষে রোজগেরে না হওয়া পর্যন্ত বিয়ের চিন্তা করাকে তারা সেকেলে মনে করেন। ফলাফল, উপযুক্ত পাত্রের অভাবে দীর্ঘকাল আইবুড়ো থেকে থেকে কমবয়েসী ও কম যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেকে বিয়ে করছে।
এক তথ্যে দেখা যায় যুক্তরাজ্যে স্বামীদের চেয়ে স্ত্রীদের বয়স ৫ বছর বেশী, এমনকি সদ্য বিবাহিত প্রিন্স উইলিয়াম ও কেট মিডলটনের মাঝেও ৫ মাসের বয়সের ফারাক।
আসল কথাই বলা হয় নি। এ প্রশ্নটি মনে জাগাটাই স্বাভাবিক যে বিয়ে কেন প্রয়োজন। বিয়ে পরিবার গঠনের জন্য একটি সামাজিক চুক্তি যা একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মাঝে সম্পাদিত হয়। আর পরিবার গঠনের উদ্দেশ্যেই হলো মানব সভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা, নতুন প্রজন্মকে স্থান করে দেয়া, আর প্রজননের মূলেই যে যৌন মিলন তা বুঝতে কারো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
অনেকে যৌনতাকে প্রাকৃতিক ক্রিয়া কর্মের মতোই স্বাভাবিক বিষয় মনে করেন এবং এ কাজের জন্য কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করার পক্ষপাতি। অথচ এমন কোন সভ্য দেশ নেই যে প্রাকৃতিক ক্রিয়া কর্মের জন্য একদমই নিয়মকানুন মানে না, জনসম্মুখে প্রস্রাব-পায়খানা করে সমাজকে কলুষিত করে না। এমনটি কেউ করলে সমাজের সবাই একবাক্যেই পাগল বলে। অথচ এরাই আবার আধুনিকতার নাম করে যেখানে সেখানে যেমন খুশি তেমন ভাবে যৌনমিলনকে বৈধ মনে করে। হ্যা, যৌন মিলন শারীরিক একটি অতি স্বাভাবিক বিষয়, তবে তা অবশ্যই নিয়মনীতি মেনে, নিয়ন্ত্রিতভাবে প্রয়োগ করতে হবে।
আর মনে রাখা উচিত, যৌন মিলনের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখা, বংশ বৃদ্ধি করা; এক্ষেত্রে শারীরিক ও মানসিক সুখটুকু বাড়তি পাওনা মাত্র। এটি মানবজাতির পরম সৌভাগ্য যে আল্লাহ মানুষকে তাদের সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা তথা ভালোবাসাকেই নির্ধারণ করেছেন। হাইড্রা কিংবা আণুবীক্ষণিক এ্যামিবার মতো মানুষের বংশবদ্ধি যন্ত্রণাদায়ক শরীর বিভাজনের মাধ্যমে হতে পারতো, তবে তাতে নতুন প্রজন্মের জন্য আদৌ ভালোবাসা থাকতো কি না তা চিন্তার বিষয়, কিংবা জানোয়ারের মতো মৌসুমী যৌনতাড়না দিয়ে প্রজনন ঘটাতে পারতেন, তাতে আর যাই হোক নারী-পুরুষের প্রাত্যহিক এই সীমাহীন ভালোবাসা তা থেকে মানবজাতি বঞ্চিত হতো। যে বংশবৃদ্ধির জন্য বছরে একবার যৌনমিলনই যথেষ্ট ছিল তাকে চীরস্থায়ী করার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের প্রতি সীমাহীন উদারতা দেখিয়েছেন, তা অনিয়ন্ত্রিতভাবে, যত্রতত্র ব্যবহারের মাধ্যমে অকৃতজ্ঞ আচরণ করা মানুষের জন্য মোটেই শোভনীয় নয়।
ছেলে-মেয়ে বিয়ের উপযুক্ত হোক বা নাই হোক বাংলাদেশে বিয়ের জন্য ন্যূনতম বয়স নির্ধারিত আছে, ছেলেদের জন্য ২১ বছর এবং মেয়েদের জন্য ১৮ বছর।
এর পূর্বে কেউ বিয়ে করতে পারবে না। অবশ্য বিকৃত যৌনাচার করতে পারবে না এমন কোন নিয়ম বেধে দেয়া হয় নি। অথচ উন্নত বিশ্বে আমরা সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখতে পাই। প্রতিটি দেশে বিয়ের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ন্যূনতম বয়স নির্ধারিত আছে। যে আমেরিকা বলতে আমরা অজ্ঞান, সে দেশের স্টেটগুলোর মাঝে নেবরাস্কা স্টেটেই সর্বোচ্চ ১৯ বছরকে বিয়ের ন্যূনতম বয়স নির্ধারন করা হয়েছে, বাকী সকল স্টেটেই বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৩ থেকে ১৮ এর মধ্যে সীমাবদ্ধ।
শুধু তাই নয়, কোন কোন স্টেটে এমন বিধানও রাখা হয়েছে যে, যদি কেউ এর আগেই গর্ভবতী হয়ে পরে তবে তাদের ক্ষেত্রে বয়স শিথিলযোগ্য অর্থাৎ গর্ভধারণ করে বিয়ের যোগ্যতার পরীক্ষায় পাশ করে তবেই বিয়ের অনুমোদন। ইউরোপিয়ান দেশগুলোতেও একই রকম বিষয় পরিলক্ষিত হয়। যুক্তরাজ্যের ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলস এবং নর্থ আয়ারল্যান্ডে পুরুষের জন্য ১৮ এবং নারীর জন্য ১৬ বছর নির্ধারণ করা হয়েছেম তবে স্কটল্যান্ডের জন্য ন্যূনতম ১৬ বছর বয়স হলেই পুরুষ কিংবা নারী উভয়েই আইনত বিয়ের যোগ্য হয়, এমনকি এক্ষেত্রে অভিভাবকের অনুমোদনেরও কোন প্রয়োজন পড়ে না। মজার ব্যাপার হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিয়ের ন্যূনতম বিয়ের বয়স নির্ধারণ করা হলেও অভিভাবক কিংবা আদালতের অনুমোদন সাপেক্ষে আরো কম বয়সেই বিয়ে করার বিধান রাখা হয়েছে যেখানে বাংলাদেশে সুদীর্ঘকাল অপেক্ষা না করে বিয়ে করা যাবে না। তবে যে আইন সাধারণ বিবেক বুদ্ধি বিরোধী, তা মানতে জনগণের বয়েই গেছে, আর তাইতো আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রতিনিয়ত দেশের আনাচে কানাচে বাল্য বিয়ে ঘটেই চলেছে।
কেন? কারন একটাই, শরীর ও মন যৌনমিলনে উপযুক্ত হলে বিয়ে দেয়াটাকেই সচেতন মহল গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।