আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়ে করে যে বিপদে পড়লাম !!! সাজানো বিয়ে !!

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! চোখ খুলতেই দেখলাম নিশি চায়ের কাপটা বিছানার পাশের টেবিলটাতে রাখলো । চায়ের কাপটা থেকে ধোয়া উঠছে । বিছানায় বেড টি খাওয়ার অভ্যাস আমার কোন কালেই ছিল না । কিন্তু এ বাড়ীর নিয়ম কানুন সব আলাদা । কেমন একটা বড়লোক বড়লোক ভাব ।

অবশ্য নিশিরা এমনিতেই বড় লোক । বড় লোক ওয়ালা ভাব না থেকে কি পারে ! চায়ের কাপ থেকে চোখ সরিয়ে নিশির দিকে তাকালাম । মুখটা কেমন একটু চিন্তিত লাগল । উঠে বসতে বসতে বললাম -কি হয়েছে ? চেয়েহারা এমন কেন লাগছে ? আমার দিকে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল -নাহ কিছু না । নে চা নে ।

-নিশি তোর কি লজ্জা শরম বলে কিছু নেই । -মানে কি ? লজ্জা শরম থাকবে না কেন ? -আরে তোর জামাই, রীতিমত পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহ দিয়ে বিয়ে করেছি । আর তুই আমাকে তুই তুই করছিস । -ওহ ! অপু ফাজলামো করবি না তো ! এমনিতেই টেনশন লাগছে খুব । আর তার উপর তুই ফাজলামো শুরু করেছিস ।

-টেনশনের কি আছে ? নিশি বলল -তোর কোন টেনশন নাই । সব টেনশন তো আমার ! কি ঝামেলায় যে আমি পরেছি ! দাদী মনে হয় এবার রিকভার করে ফেলবে ! -কি বলছিস তুই ? কথাটা এমন ভাবে বললাম যেন নিশির দাদি এ যাত্রায় বেঁচে গেলে আমার বড় ক্ষতি হয়ে যাবে । কিন্তু একটু পরে নিজের কাছেই লজ্জা লাগল । ছি ছি কি ভাবছি আমি । আমি বললাম -সরি !! কিছু মনে করিস না ।

-না ঠিক আছে । আমিও খানিকটা চিন্তিত । আমি ভাবিনি এমনটা হবে ! নিজে আটকেছি তোকেও আটকেছি । তার উপর ... নিশি চুপ করে গেল । -তার উপর ? নিশি বলল -বাবা তোকে আজ অফিস নিয়ে যাবে বলছিল ! -কি বলিস তুই ? উনি কি সিরিয়াস ? -হুম ।

-সেকি ! কি সর্বনাসের কথা ? কেন ? -কেন মানে ? তুমি তার এক মাত্র মেয়ের একমাত্র জামাই । তোমাকেই তো সব কিছুর দায় দায়িত্ব নিতে হবে ! -আরে জামায়ের গুল্লি মারি ! কথাটা মনে হয় একটু জোরেই বলেফেলেছিলাম । নিশি বলল -আরে আস্তে ! আমি গলা নামিয়ে বললাম -জামায়ের গুল্লি মারি । জামাই তো আর আসল না । ভূয়া জামাই ।

-জামাই যে ভূয়া সেটা তুই জানিস , আমি জানি , কিন্তু তোর শ্বশুর মশাই তো আর জানে না । -নিশি তা তো আমি জানি । তুই কি বুঝতে পারছিস যে এই খবর যদি আমার বাসায় পৌছায় তাহলে কি হবে ? আমার বাপ যদি জানতে পারে যে আমি বিয়ে করে ফেলেছি তাহলে আমাকে স্রেফ গুলি করে দিবে । আর তুই আমার বৌ না তোকেও গুলি করবে । আমার বাবার কাছে একটা ব্রিটিস আমলের দোনালা বন্দুক আছে ।

আমার দাদার । -বন্দুক আছে বুঝলাম কিন্তু আমাকে কেন গুলি করবে কেন ? আমি কি করেছি ? -কি কয়েছিস ? আমার বাপ কি মনে করে জানিস ? আমার বাপ মনে করে আমি হলাম গাধা আর আমাকে যে বিয়ে করবে সে হবে আমার থেকেও বড় গাধা । আর তার মতে গাধাদের বেশি দিন বেঁচে থাকার অধিকার নাই । নিশি বলল -ঠিক আছে । বেশি কথা বলতে হবে না ।

ফ্রেস হয়ে জলদি নাস্তার টেবিলে আয় । নিশি চলে গেল । আমি বাধরুমে ঢুকলাম । আমার মনটা ভাল হয়ে গেল । নিশির এই বাধরুমটা আমার খুব পছন্দ ।

পুরো বাধরুম টা একদম নীল রংয়ের । বাথটাব টাও নীল রংয়ের । যখন বাথটাবে গা ভিজিয়ে শুয়ে থাকি জীবনটা বড় আনন্দ ময় মনে হয় । ইস যদি নিশি ঐ দিন আমাকে কথাটা না বলতে তাহলে এই নীল বাথরুমে গোছল করাই হত না । জীবনটা অর্ধেক বৃথাই হয়ে যেত ! নিশি সাথে সাখ্যতা প্রথম থেকেই ছিল ।

তুই তোকারির সম্পর্ক । প্রথম থেকেই ও আমার খুব ভাল বন্ধু । তাই বন্ধুর উপকার করতে এসেছিলাম আর এসে যে এমন ভাবে আটকে যাবো ভাবি নি । ক্লাসে একদিন নিশি আমাকে দেকে বলল -তুই কি কয়দিনের জন্য আমার হাজবেন্ড হতে পারবি ? আমি প্রথমে ভেবেছিলা নিশি হয়তো এমনিতেই ফান করছে কিন্তু ওর মুখ দেখে মনে হল না ও বেশ সিরিয়াস ! -তুই কি সিরিয়াস ? -রাজি কি না বল ? না হলে অন্য কারো কাছে যাই ! -কেস টা কি আগে বল ? তারপর না হয় বলি । নিশি বলল -এখানে বলা যাবে না ।

আগে বাইরে চল । ক্যাম্পাসে বাইরে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলাম । -এবার বল ! নিশি কিছুক্ষন চিন্তা করে নিল । যেন কিছু গুছিয়ে নিল । তারপর বলল -আামর দাদীর অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল ।

আই সিইউ তে আছে । খু বেশি দিন আর স্টে করবে না । -ও ! -দাদীর খুব ইচ্ছা মরার আগে উনি তার নাত জামাই দেখ যাবেন । -ও ! -ও ! মানে ? আম কিছু বুঝলাম না । নিশি বলল -আরে গাধা , মানে হল আমার জামাই দেখতে চান উনি !! আমি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম নিশির দিকে ।

এই মেয়ে ঠিক কি বলতে চাইছে ? নিশি বলল -আমি চাই তুই আমার হাসবেন্ড হয়ে দাদীর সামনে যাবি !! -একটা কথা বলব? -বল ! -আমি যতদুর জানি তুই তোর দাদিকে একদম পছন্দ করিস না । তাহলে ? -আর বলিস না । আমি পছন্দ না করলে কি হবে আমার বাপতো তার মাকে পছন্দ করে ! নিজের মার শেষ ইচ্ছা বলে কথা ! আমাকে তো আর জোর করে কিছু বলতে পারছে না কিন্তু আব্বুর মুখটা দেখে আমা রকেমন জানি খুব মায়া লাগছে ! -তাহলে সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেল ! নিশি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল -দেখ এডভাইস দিবি না । তুই হেল্পটা করবি কি না বল !! -তা না হয় করলাম ! কিন্তু যখন সত্য টা সামনে আসবে তখন কি করবি ? তোর বাপকে কি জবাব দিবি ? -সে চিন্তা আমার !! এখন এই ঝামেলাটা তো দুর হোক !! তুই হবি ? আমি হাসলাম । বললাম -হতে পারি !! একটু নাইসলি বল ! আমার সামনে হাটু গেড়ে বল যে অপু হাসান আমি তোমার প্রেমে দেওয়ানা হয়েছি ।

তুমি কি আমার হাসবেন্ড হবে ? -আহা !! সাধ কত !! -কি বলবি না ? -মরে গেলেও না । -ওকে আর কি করা ! তবে একটা কথা । এই কথা যেন আমার বাসায় না পৌছায় !! যদি আমার বাপ জানতে পারবে তাহলে কিন্তু আমার খবর আছে ! -আরে কোন সমস্যা নাই ! ভার্সিটি তো এখন বন্ধ ! সপ্তাহ খানেক তুই আমাদের বাসায় থাকবি । ব্যাস ! আর কিছু না । -তোদের বাড়ি মানে ঘর জামাই ! নিশি হাসলো ! আমরা ভেবেছিলাম নিশি দাদি খুব বেশিদিন টিকবে না ।

আর আমাদের কোন সমস্যা হবে না । কিন্তু এখন দেখছি অবস্থা খারাপ ! যদি এ যাত্রায় টিকে যায় আমার তো খবর আছে !! আর কোন ভাবে যদি বাসায় জেনে যায় তাহলে তো আর কোন কথাই নাই !! চুপচাপ নাস্তা খাচ্ছিলাম । এমন সময় নিশি বাবা বলল -আজকি তোমাদের দুজনের কোন প্লান আছে নাকি ? নিশি বলল -কেন আব্বু ? -না আলসে আমি অপুকে আমাদের অফিসে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলাম । কি বল অপু? আমি নিশির দিকে তাকালাম । ও চোখ দিয়ে ইসারা করলো না বলতে ।

আমি নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বললাম -আমি অফিসে গিয়ে কি করবো ? নিশির বাবা বলল -এটা কেমন কথা ! সামনে গিয়ে তুমি তো অফিরের দায় দায়িত্ব নিবে ! -আমি ? আমি হাসলাম ! বললাম -কিন্তু আমি কিভাবে নিবো ? -এ সব তো এখন তোমারই ! -আঙ্কেল আপনার একটু ভুল হচ্ছে মনে হয় ! আপনি হয়তো ভেবেছেন নিশির হাসবেন্ট হিসাবে আমি এসব কিছুর দায়িত্ব আমি নিব কিন্তু আমি এটা করতে পারবো না । নিশির বাবা আমার দিকে জিজ্ঞাসা নিয়ে তাকিয়ে থাকলো । আমি বললাম -এসব কিছু আপনার আপনার থেকে নিশি পাবে । এগুলোর মালিক নিশি হবে । এর দেখোশুনার দায়িত্বও নিশির ।

যদি এর সব কিছুর দায়িত্ব আমি নেই তাহলে মানুষ বলবে যে আমি শ্বশুরের টাকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছি । এটাতে আমার আপত্তি আছে । আমি আমার নিজের যোগ্যতায় বড় হতে চাই ! আমার কথা শুনে নিশির বাবা বেশ পুলকিত হলেন বলে মনে হল । নিশিও দেখলাম অর্থপূর্ণ চোখ তাকালো ! নিশির বাবা বলল -আচ্ছা তুমি যা চাও তাই হবে ! আমি জোর করবো না । তা তোমার বাবার নাম্বার টা আমাকে একটু দাও !! আমার বুকের ভিতর কেমন করে উঠল ।

-জ্বি?? নিশি বলল -আব্বু তোমাকে আমি কি বলেছিলাম ! -আরে আমার মনে আছে তো ! আমি ওনাকে আগেই বিয়ের কথা বলবো না । আমি ওনাকে আগে বিয়ের জন্য প্রপোজাল পাঠাবো ! রাজিতো হয়েও যেতে পারে । তারপর দেখা যাবে । আর যদি না রাজি হয় তাহলে ফোন রেখে যাবো ! কোন তো সমস্যা নাই ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল -দাও নাম্বার টা দাও ! আমি একবার নিশির দিকে তাকালাম আর একবার নিশির বাবার দিকে তাকালাম । মোবাইল টা বের করতে যাবো ঠিক তখনই ফোন বেজে উঠল ।

আব্বার ফোন !! আমার বুকটা ধুক করে উঠল ! আমি ফোন রিসিভ করলাম -আস্লামালাইকুম আব্বা ! -কোথায় তুমি? সর্বনাশ ! তুমি?? আমার আব্বা আমাকে সবসময় তুই করে বলেন কিন্তু যখন কোন সিরিয়াস বিষয় হয় তখন তুমি ! তারমানে কিছু হয়েছে !! কি হয়েছে ? -কি হল কথা বলছো না ? কোথায় তুমি ? -আমি ? -শ্বশুর বাড়ি ?? আমার বুকটা মনে হল এখনই ফেটে যাবে । আমি শ্বশুর বাড়ি এটা আমার বাপ জানলো কিভাবে ? -তুমি থাকো ওখানে আমি আসছি তুমি এতো বড় লায়েক হয়ে গেছ যে আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে ফেলেছ । তার উপর শ্বশুর বাড়ি গিয়ে উঠছ,ঘর জামাই হয়ে ! তুমি থাকো আমি আসছি !! আব্বা ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পর নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কি হয়েছে ? আমার আব্বা আসছে ! -মানে ? উনি জানলেন কি ভাবে ? -আমি কিভাবে বলবো ? আমি উঠে পড়লাম । এখানে থাকা এখ ন একদম নিরাপদ নয় ।

আমার অবস্থা আসলে খারাপ । নিশির আব্বা বলল -আরে তুমি এতো ভয় পাচ্ছ কেন ? -আপনি আমার বাবা কে চিনেন না ? উনার মত রাগি মানুষ আমাদের এলাকাতে আর একটাও নাই ! আমাকে যদি এখন এখানে পায় একদম চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে ! আমাকে এখ পালাতে হবে । যে করেই হোক !! -আরে পালাবে কেন ? নিশির বাবা কি যেন ভাবলো ! আচ্ছা ঠিক আছে । তোমাদের তো হানিমুন হয় নি ! আর মার অবস্থাও এখন মোটামুটি ভাল । তোমরা এক কাজ কর, সিলেট চলে যাও ! ঠিক আছে ! ওখানে আমার একটা বাংলো বাড়ি আছে ।

ওখানে কয়দিন থেকে আসো ! আর আমি এদিকে তোমার বাবার জন্য ওয়েট করি । উনি আসলে না হয় ওনাকে সামলাবো আমি ! আমি আর কিছু ভাবলাম না । আসলে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । আমার কেবল মনে হচ্ছে আব্বা আসার আমাকে এখান থেকে পালাতে হবে ! আমি জলদি ঘরের দিকে রওনা দিলাম । নিশি আমার পেছন পেছন এল !! ( গল্পটা অনেকটা নাটকের মত হয়ে গেল তাই না ।

কাল রাতে এমন একটা থিম মাথায় আসলো তাই নামিয়ে দিলাম । এখনও শেষ হয় নি । আরো একটা পর্ব লিখবো হয়তো) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.