আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিয়ে করে যে বিপদে পড়লাম !!! সাজানো বিয়ে !! (দ্য এন্ড)

আমার চোখে ঠোটে গালে তুমি লেগে আছো !! বাবা আমার পেছন পেছন দৌড়াচ্ছেন তার ব্রিটিস আমলের বন্দুক নিয়ে ! আমি দৌড়াচ্ছি প্রানপনে কিন্তু যতই দৌড়ানোর চেষ্টা করছি কেন জানি খুব বেশি এগিতে পারছি না । প্রতি মুহুর্তে বাবার দোনালা বন্দুকটা এগিয়েই আসছে । আমি তো টেনশনে পড়ে গেলাম । -এই একটু আস্তে দৌড়াও ! আমি ডান দিকে তাকিয়ে দেখি আমি কেবল একা দৌড়াচ্ছি না আমার সাথে নিশিও দৌড়াচ্ছে । সব চেয়ে অবাক হওয়ার কথা নিশি দৌড়াচ্ছে বউ এর সাজে ।

যেন বিয়ের আসর থেকে আমি ওকে নিয়ে পালিয়েছি । নিশির পরনে লাল রংয়ের একটা ল্যাহেঙ্গা । আর সারা শরীর জুড়ে গহনা ভর্তি !! গ হনার ভারে ঠিক মত দৌড়াতেও পারছে না । আমি বললাম -তুমি এরকম গহনা আর ল্যাহেঙ্গা পরে দৌড়াচ্ছ কেন ? -গাধার মত প্রশ্ন করবে না । গহনা ফেলে দৌড়ানোর থেকে গুলি খেয়ে মরে যাওয়া ভাল ! আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম ।

পেছনে একজন বন্দুক নিয়ে দৌড়াচ্ছে আর এই গহনার পেছনে লেগে আছে ! আশ্চর্য মেয়েদের সাইকোলজি !! আমি দৌড়াতে দৌড়াতেই হোচট খেয়ে পরে গেলাম । ভেবেছিলাম খুব ব্যাথা লাগবে কিন্তু ঠিক তখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল । বিছানায়উঠে বাসেও দেখলাম বুকের ভিতর কেমন ধরফর করছে ! মাই গড !! যদি এই স্বপ্ন সত্যি হয়ে যায় !! তাহলে উপায় আছে !! অবশ্য সত্যি হবার সম্ভাবনা কম !! আব্বা এখানে আসতে পারবে না ! মনটা একটু শান্ত হলে বিছানা ছেড়ে জানালায় কাছে আসলাম । বাইরে তখনও খুব বেশি আলো ফোটে নি । বাড়ান্দার দিকে চোখ পড়তেই আমার মনটা ভাল হয়ে গেল ।

এই সকাল বলা নিশিকে দেখলাম বারান্দায় উপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে , হাতে একটা কাচের মগ ! ভিতরের তরলের রং দেখেতো মনে হচ্ছে কফি ! কি রে ভাই চা বাগানে বেড়াতে এসে কফি খাচ্ছে !! আমি বারান্দার বেড়িয়ে এলাম ! আামর পায়ের আওায়জ পেয়ে নিশি আমার দিকে ফিরে তাকালো ! -চারিদিকে চা বাগান রেখে কেউ যদি তার মাঝখানে কফির মগ নিয়ে বসে থাকে তাহলে তাকে কি বলা উচিত্‍ ? ধোয়া ওঠা কফির মগে একটা চুমুক দিয়ে নিশি আমার দিকে তাকাল ভাল করে। কাল নিশিকে যত খানি চিন্তিত মনে হচ্ছিল আজ ততখানি মনে হচ্ছে । নিশি বাংলোর বারান্দায় বসে আছে পা ঝুলিয়ে । আমি ওর পাশে গিয়ে বসলাম । -এই চা বাগানে কফি পেলি কোথায় ? নিশি এবারও কিছু বলল না ।

কাচের মগটা আমার পাশে রেখে সামনে তাকাল । -জানিশ এই জায়গা আমার খুব পছন্দের । এখানে বসে থাকলে মনে হয় বসেই থাকি । আর সকালবেলাটা কি যে চমৎ‍কার লাগে এখানে বসে থাকতে ! -হুম তাই তো দেখছি । শ্বশুর মশাই জব্বর একখ্যান বাড়ি কিনছে ! নিশি আমার দিকে তাকাল ।

-খুব আনন্দে আসিছ মনে হচ্ছে ! কাল তো লেজ গুটিয়ে কেমন দৌড় মারলে ! দেখলাম তো আমি ! আর এখন ? -আসলে এখন কেন জানি আর ভয় লাগছে না । মনে হচ্ছে না যে আব্বা এখানে আসতে পারবে ! আর সকাল বেলা এমন একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল !! আর ...... -আর ? -আর সকালবেলা তোকে এই এখানে বসে থাকতে দেখে কেন জানা খুব ভাল লাগল । মনে হল .. মনে হল যে গল্পের কোন নায়িকা বসে আছে বারান্দায় । একটু একটু করে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে । চমৎ‍কার একটি গল্পের শুরু ।

মগটা তুলে এবার আমি চুমুক দিলাম । আমি ভেবেছিলাম নিশি হয়তো চিত্‍কার করে উঠবে । কিন্তু কিছু বলল না । আমার দিকে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন । তারপর -বলল চল ঐ দিকটা যাই ।

বলেই নিশি বারান্দা থেকে ঘাসের উপর লাফ দিল । -দাড়া ঘুরে আসছি । -আরে এই খান দিয়ে আয় না । -স্যান্ডেল পরে আসি । নিশি বলল -আমি খালি পায়ে আসতে পারলে তুই পারবি না ? আর সকাল বেলায় খালি পায়ে হাটার মজাই আলাদা ।

আয় । আমি ওখান থেকেই নিচে নেমে এলাম । নিশির সাথে হাটতে লাগলাম । সত্যি বলব কি আমি কখনও ভাবি নি আমার জীবনে এমন দিন আসবে ! এমন একটা চমৎ‍কার একটা দিন । আমরা দুজন এমন সুন্দর সকালে হাটছি পাশাপাশি ।

নিশি টুকটাক কথা বলছে । আমি চারিদিক দেখছি । চারিদিকের পরিবেশ আমাকে মুগ্ধ করে ফেলছে । হাটতে হাটতে আমি দাড়িয়ে গেলাম কিছুক্ষনের জন্য । নিশি তখনও কথা বলতে বলতে এগিয়ে চলেছে ।

আমি যে দাড়িয়ে পরেছি ও এইটা লক্ষ্য করে নি । যখন লক্ষ্য করলো তখন আমার দিকে তাকিয়ে বলল -কিরে দাড়িয়ে পরলি কেন ? আমি একটু দৌড়ে ওর সামনে এসে দাড়ালাম । নিশি আবার বলল -দাড়িয়ে পড়লি কেন ? -তোকে দেখছিলাম । নিশি আবারও কিছুক্ষন তাকিয়ে রইল । দিন ভালই কাটতে লাগলো ।

সারাদিন এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াই নিশির সাথে । সকাল বেলা একসাথে হাটতে বের হই খালি পায়ে, রাতে একসাথে জোঁছনা দেখি দুজন ! জীবনটা কেন জানি খুব সুন্দর হয়ে গেল । কিন্তু কয়দিনের জন্য ! এই মিথ্যা আর কয়দিন !! এখান থেকে ফিয়ে গেলে আবার তো ....... আচ্ছা এই মিথ্যা টা কি সত্যি হতে পরে না ? ছিঃ কি ভাবছি ? নিশি শুনলে কি ভাববে ? তবে চিন্তা টা আবার আমার মাথায় এলো । ঐদিন রাতে বারান্ডায় বসে ছিলাম দুজন । বাইরে খুব সুন্দর জোঁছনা উঠেছে ।

আমি মাঝে মাঝে নিশির দিকে তাকাচ্ছি । নিশি তাকিয়েই আছে বাইরের দিকে ! হঠাৎ নিশি বলল -অপু ঘুম আসছে ! -ভিতরে যাবি । -না ভিতরে যেতে ইচ্ছা করছে না । তোর কোলে মাথা রেখে একটু শুব ? আমি একটু অবাক হলাম । হেসে বললাম -শুবি ? শো ! নিশি আমার মাথা রেখে শুয়ে পড়লো ।

আমি আস্তে আস্তে নিশির মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম । আমার মনে মধ্যে কেমন যেন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হতে লাগলো ! আশ্চার্য ভালা লাগার অনুভুতি !! -অপু ! -হুম ! -আমি একটা অন্যায় করেছি । তুই কি আমার উপর রাগ করবি ? -কি করেছিস ? নিশি কিছু না বলে আমার দিকে তাকিয়েই রইলো । -কি হল বল ! -না বলব না । থাক ! আমি আর কিছু জানতে চাইলাম না ।

একন না হোক পরে একসময় জিজ্ঞেস করে নিবো । এখন এই চমৎকার সময়টা নষ্ট করতে ইচ্ছে করছে না । সকাল বেলা আবার সেই একই স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গল । আব্বা বন্দুক নিয়ে আমার পেছনে দৌড়াচ্ছে । তবে আজ হোচট খাওায়ার আগেই ঘুম ভাঙ্গল ।

নিশির ডাকে । -উঠ ! -গুড মর্নিং ! -তোকে গড মর্নিং বলতে পারছি না ! -কেন ? নিশি কোন কথা না বলে ঘর থেকে বের হয়ে গেল । আমি বিছানা থেকে উঠে ওর পেছন পেছন গেলাম । বারান্দায় এসে আমার বুকে ৪২০ ভোল্টের একটা শক লাগলো !! আমার মনে হল নিশির পেছন না আসাই বোধ হয় ভাল ছিল । বারান্দায় একটা টেবিল পাতা ছিল ।

টেবিলের চারপাশে চারটা চেয়ার । সেই চারটা চেবিলের একটাতে আব্বা বসে আসে । আর একটাতে নিশির আব্বা ! তিন নম্বরটাতে নিশি গিয়ে বসলো । আমার প্রথমে মনে হল আমি স্বপ্নই দেখছি । এইটা তো হতে পারে না ।

কিন্তু স্বপ্নতো একটু আগে দেখছিলাম । নিশি আমাকে দেকে আলনো । তাহলে কি স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন দেখছি । ইনসেপ্শন মুভিতে যেমন হয় ! আব্বা চা খাওয়ায় ব্যস্ত আমার দিকে তাকায় নি এখনও । আম কি করবো ঠি এখনও আমার মাথায় কাজ করছে না ! দৌড় কি মারবো ?? নিশির আব্বা বলল -দাড়িয়ে কেন ? বস ! নিশি একে চা দে ! নিশি টিপট থেকে চা ঢালতে শুরু করলো ।

আমি দুরুদুরু বুক নিয়ে বসলাম চেয়ারে । চায়ে একটা চুমুক দিয়ে আব্বা নিশির দিকে তাকিয়ে বলল -তোমারা কবে বিয়ে করেছ ? নিশি বলল -জি আঙ্কেল, এই দুই সপ্তাহ আগে ! আব্বা নিশিকে জোরে একটা ধমক দিল । এতো জোরে যে আমার হাত থেকে চায়ের কাপ পরে যেত । আব্বা বলল -আঙ্কেল বলছো কেন ? আমি তোমার আঙ্কেল হই ? আমি ভেবেছিলাম নিশি ধমক খেয়ে ভয় পাবে অথবা মন খারাপ করবে কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে নিশি হেসে ফেলল। আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ? এই মেয়ে হাসে ক্যান??? নিশি বলল -সরি বাবা !! আব্বা বলল -কোথায় করেছ বিয়ে ? -জ্বি মগবাজার কাজী অফিসে !! -দেন মোহর কত করেছ? আমি পড়লাসম বিপদে ।

আল্লাই জানে নিশি কি বলে !!! -জ্বি ! ৫ লক্ষ্য এক টাকা !! এবার আব্বা আমার দিকে তাকাল -বিয়ে যে করলি বউকে দেন মোহরের টাকা দিবি কোথা থেকে ? আমি মনে মনে একটু প্রসন্ন বোধ করলাম । আব্বা তুমি থেকে তুই তে নেমে এসেছে ! তার মানে রাগ একটু কমেছে ! কিন্তু !! পরক্ষনেই আমার মনে আর একটা চিন্তা মাথায় এল ! আব্বার ভাব চক্কর দেখে মনে হচ্ছে তো আব্বা আমার আর নিশির বিয়েটা সত্যি বলে ধরে নিয়েছে ! ও মাই গড !! এটাতো আরো বড় সমস্যা !! বাবা যদি কাবিনা নামা দেখতে চায় ?? ওটা নীলক্ষেত থেকে বানানো !! আমার মনের কথা মনেই রইল । বাবা বলল -কাবিন নামা কোথায় ? সর্বনাশ !! -আঙ্কেল ওটা তো সঙ্গে আন নি । বাবা আবার নিশির দিকে তাকাল । নিশি একটু জিহ্বা কামড়ে বলল -বাবা !! নিশির বাবা এতোক্ষন চুপ ছিল ।

বাবাকে বলল -আরে বিয়াই সাহেব এবার একটু শান্ত হোন !! আমি তো আপনাকে বললামই ওদের খুব একটা দোষ নাই । আমার ময়ের জন্য ওরা এমন করেছে ! তারপর নিশি কে বলল -তুই জামাইকে ঘরে নিয়ে যা । আমি বিয়াই সাহেবের সাথে একটু কথা বলি !! নিশি আমাকে নিয়ে পেছনের বারান্দায় চলে এল । আমি একটু হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । আব্বার সামনে ঠিক মত দম নিতেও কষ্ট হচ্ছিল ।

নিশি আবার বারান্দা থেকে পা ঝুলিয়ে বসল আমি বললাম -আমার বাপ এখানে আসলো কিভাবে ? আর তুই বুঝতে পারছিস কি হতে চলেছে ? এরাতো আমাদের সত্যি সত্যি বিয়ে দিবে !! আমি তো কিছু ভাবতেই পারছি না । নিশি আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো কিছুক্ষন !! তারপর আমার হাত ধরে বলল -আমার সাথে বিয়ে হলে কি তোর অনেক সমস্যা হয়ে যাবে ? নিশির কথা আমি কিছুই বুঝতেই পারলাম না ! বললাম -মানে ? -মানে হল আমি চাই তো সাথে আমার ........ নিশি চুপ করে গেল। আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম নিশির দিকে । এতোদিনের পরিচিত নিশিকে বর অপরিচিত মনে হতে লাগলো !! কিছুক্ষন চুপ থাকার পর নিশি বলল -আব্বু যখন বিয়ের কথা বলল, জানিস সবার আগে আমার তোর কথাই মনে হয়েছে ! নকল হোক আর আসল হোক আমি এটাই চেয়েছি ! নিশি আমার হাত টা ছেড়ে দিল । -কিন্তু তুই যদি না চাস তাহলে এখনও তেমন কিছুই হয়নি !! আমার কেন জানি রাতের সেই ভাল লাগার অনুভুতিটা ফিরে এল ।

বললাম -তুই কি আমাকে তুই করেই বলবি বিয়ের পর ? তাহলে কিন্তু হবে না ! তুমি করে বলতে হবে ! পারবি ?? নিশি হেসে ফেলল -তোকে কোনদিন তুমি বলব না !! -আচ্ছা যা ইচ্ছা বলিস । কিন্তু যে মিথ্যাটা ওনারা সত্য ভেবে বসে আছে, সেটার কি হবে ? -ব্যাপার না ! -তবে একটা ব্যাপার আমি বুঝতে পারছি না যে আমার আব্বা কে এই খবে দিলো কে ! এবার নিশি আমার দিকে তাকাল । বলল -আসলে তোকে একটা কথা বলতে চেয়েছিল । কিছুক্ষন চুপ করে থেকে আবার বলল -তোর আব্বা কে আমি ফোন করে সব বলেছিলাম\ -কি?? -প্লিজ রাগ করিস না ! -রাগ করবো না ?? নিশি আর দাড়াল না । বারান্দা থেকে লাফ দিয়ে বাগানের দিকে দৌড় মারলো ! -তুই কোথায় যাস ! দাড়া !! আমি নিজের ওর পেছন পেছন দৌড় লাগালাম ! প্রথম পর্ব (বাস্তবতার সাথে এই গল্পের কোন মিলই নাই ।

তবে গল্পটা লিখটে আমি খুব মজা পেয়েছি ! ইস যদি জীবন টা এমন সুন্দর হত । না, আমার জন্য বলছি না । আমার জীবন আল্লাহর কৃপায় এমননিতেই অনেক সুন্দর । সবার জীবনটা এমন সুন্দর হোক) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.