"খিদা লাগলে আর কিছু ভাললাগেনা ।
তখন চুরিও করতে পারি,সন্ত্রাসীও হইতে পারুম"
একদিন ট্রেনভ্রমণে আমার পাশে ছয়-সাত বছরের এক পথশিশু বসেছিল ।
কথাগুলো তার মলিন মুখ হতে নিঃসৃত ।
বেশ কিছুক্ষণ কথোপকথন হলো তার সাথে ।
সে বলছিল তার এই অল্প বয়েসী জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কথা ।
বাড়ি ভোলা ।
থাকে কমলাপুর রেলস্টেশনে ।
মা আরেকজনকে বিয়ে করে চলে গেছে ।
বাবার কাছে থাকতো ।
একদিন তার বাবারও একটা নতুন বৌ জুটল ।
সত্মায়ের ঐ সংসারে জায়গা হয়নি ছোট্ট এই অপ্রস্ফুটিত শিশুটির ।
নামটা তার জানা হলোনা ।
ছোট বলে কোন সালাদিয়া হোটেলেও কেউ তাকে কাজ দিতে চায়না ।
কখনও ভিক্ষে করে ,কখনওবা যাত্রীদের কাকুতি করে বোঝা বয়ে নেয়ার বিনিময়ে ক্ষুধাকে বিদায় জানায় সে ।
এক বন্ধুর প্ররোচনায় চট্টগ্রাম গিয়েছিল ।
সেখানে নাকি ভিক্ষে করলে প্রতিদিন দু-তিনশো টাকা রোজগার করা যায় ।
পড়নের কাপড়ও মেলে মাঝে
মাঝে ।
কিন্তু ভাগ্য সেখানেও তাকে ঠাঁই পেতে দেয়নি ।
বড়লোকদের থাপ্পড় আর ছোটলোকদের লান্ছনায় কাটল , চট্টগ্রামে তার একটি সপ্তাহ ।
নগ্ন গায়ে তাই আবার ফিরে যাচ্ছে সে , তার আবাসস্থলে - কমলাপুর রেলস্টেশনে ।
তাকে পড়ালেখার পরামর্শ দিতে গিয়ে মনে হচ্ছিল ,আমি বুঝি তাকে উপহাস করছি !
সংসার হতে তাড়িত এক পথের শিশু ,ক্ষুধাই যার একমাত্র শত্রু ,তার কাছে জ্ঞানার্জন নিছক এক বিলাসিতা ।
বিদ্যালয়ে গিয়ে নষ্ট করার মতো সময় যে তার হাতে নেই । ক্ষুধাকে যে সে বড্ড ভয় পায় !
সেই পথশিশুটির মনে প্রতিশোধ স্পৃহা প্রবল ।
পরিবার দেখে তার ঈর্ষা হয় ।
ভয়াবহ সেই ঈর্ষা !
বড়লোকদের থাপ্পড় তার অবুঝ মনকে সবুজ করে তোলে প্রতিনিয়ত , প্রতিশোধের মোহে ।
তাকে পথশিশু বলছি ।
কারণ ,সমাজ তাদেরকে পথশিশু নামটি দিয়েই তো আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ।
শেখায়নি তাদেরকে পথ দেখানো ।
শিখিয়েছে ধিক্কার ,
এড়িয়ে গেছে তাদের ক্ষুধার্ত চিত্কার ।
আমার গন্তব্য চলে এল ।
বাকীসব সামাজিক জীবদের সাথে নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে ,পথের শিশুটিকে পথে ফেলে.......
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।